somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মিথ্যাচারের রাজনীতি : ড. নাজিবুল ইসলাম

০৬ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মিথ্যাচারের রাজনীতি
ড. নাজিবুল ইসলাম


যখনই নির্বাচন আসে তখনই দেখা যায় আওয়ামী লীগ ও আওয়ামীপন্থী কিছু বাম দল ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র ধুয়া তোলে। তাদের বশংবদ কিছু চিহ্নিত বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী ও পারফর্মারদের দিয়ে নামে-বেনামে কিছু সংগঠন তৈরি করা হয়। এসব সংগঠনের প্রায় প্রত্যেকটাতেই গুটিকয়েক চিহ্নিত ব্যক্তিকেই ভূমিকা রাখতে দেখা যায়। এরা প্রথমে ‘নিরপেক্ষতা’র ভান করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই ‘নিরপেক্ষতা’র মুখোশটাও নিজেরাই ছিঁড়ে ফেলে এবং সরাসরি দলীয় পক্ষপাত প্রকাশ করে। বিগত কুড়ি বছর ধরে আমরা এই রকমই ঘটতে দেখছি। মুক্তিযুদ্ধের এই স্বঘোষিত প্রেমিকরা সারা বছর ঘুমিয়েই কাটায়। তাদের ঘুম ভাঙে নির্বাচন এলে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেও আমরা তাদেরকে একই কায়দায় সক্রিয় হতে দেখেছি।

এদের বক্তৃতা, আলোচনা ও লেখালেখি থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে তারা ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতাকে বোঝায়। আরো পরিষ্কার করে বললে, তারা ধর্ম, বিশেষত ইসলাম, ইসলামী মূল্যবোধ, ইসলামী সংস্কৃতি, ইসলামী সংগঠন ও ব্যক্তিত্বকে উচ্ছেদ ও বর্জন করাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রধান ও প্রথম স্তম্ভ বলতে চায়। এবং এই চেতনা কোনো সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালে কোনো ব্যক্তি যদি রাজাকার-আলবদর হয়েও থাকে, কিন্তু এখন যদি সে আওয়ামী লীগ সমর্থক হয় তাহলে তার সাথে দহরম-মহরমে অসুবিধা নেই। যেমন নূরুল ইসলাম, ফয়জুল হক প্রমুখ যারা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছিলেন তাদেরকে নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে বা মন্ত্রী বানাতে আওয়ামী লীগের অসুবিধা হয় না। আবার ১৯৭১ সালে যদি কেউ সরাসরি স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েও থাকে কিন্তু পরে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে, তাহলেও সে স্বাধীনতাবিরোধী। যেমন মেজর জলিল। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমাণ্ডার হওয়া সত্ত্বেও স্রেফ তার আওয়ামী-ভারত বিরোধিতার কারণে তাকে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে।

মুক্তিযুদ্ধের আরেক সেক্টর কমাণ্ডার মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। আর কেউ যদি হয় ইসলামপন্থী, তাহলে তো কথাই নেই। রাজনীতির বাইরের মানুষ সমকালীন বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি আল মাহমুদের কথাই ধরা যাক। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, তবু স্রেফ ইসলামকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার জন্যে তাকে স্বাধীনতাবিরোধী বলে গালাগাল করা হয়। কারো জন্ম যদি হয় ১৯৭১ সালের পরেও, তবু রক্ষা নেই। যেমন ইসলামী ছাত্রশিবির বা তার নেতা-কর্মীদের জন্ম ১৯৭১ সালের পরে হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে স্বাধীনতাবিরোধী বলে চিহ্নিত করে আওয়ামীপন্থীরা। ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমীর রফিকুল ইসলাম খান ১৯৭১ সালে শিশু ছিলেন। সে সময় তার পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয়া তো দূরের কথা যুদ্ধ কী তা বুঝতে পারারই কথা নয়। তা সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ থেকেই বোঝা যায় তথাকথিত স্বঘোষিত স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের এসব গবেষণা, তথ্য এবং মোটিভ কী।

একথা অস্বীকার করা যাবে না, করা উচিতও নয় যে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তার একটা পরম্পরা আছে। সেই পরম্পরাকে স্মরণ করলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বোঝা এবং আওয়ামী লীগের ধর্মব্যবসা ও মিথ্যাচারের রাজনীতি অনুধাবন করা সহজতর হবে।

আওয়ামী লীগের জন্ম ১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগের পেট থেকে। তখন তার নাম ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। মুসলিম লীগের কিছু নেতা-কর্মী মূল দল থেকে বেরিয়ে এসে এই দল গঠন করেছিলেন। কারা ছিলেন তারা? যারা মুসলিম লীগের অর্ন্তদলীয় দ্বন্দ্বে পর্যুদস্ত হয়ে নেতৃত্ব ও ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। শুরুতে মুসলিম লীগের আদর্শ-লক্ষ্য থেকে তাদের আদর্শ-লক্ষ্য আলাদা কিছু ছিল না। এই দলের গঠনতন্ত্রের ১১টি উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের ১০ম ধারাটি ছিলঃ ‘To disseminate knowledge of Islam and its high moral and religious principles among people.’ (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ও দলিলপত্র, গতিধারা, ঢাকা; পৃষ্ঠা ৪৫)। সেটা প্রকৃতপক্ষে ছিল দ্বিতীয় মুসলিম লীগ। লোকে সেটাই মনে করত। সেজন্যে গঠনতন্ত্রে জোর দিয়ে বলা হয়ঃ ‘Awami Muslim League is definitely a separate organization. মূলত ক্ষমতায় যেতে না পারার ক্ষোভ এবং ক্ষমতায় যাওয়ার তুমুল উন্মাদনা থেকেই আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম। তাই ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়ি-বাড়াবাড়ির স্বভাব আওয়ামী লীগের জন্মগত দোষ।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক-শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলামী এবং গণতন্ত্রী দল মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে যে ২১ দফা কর্মসূচী দিয়েছিল তাতে ধর্মনিরপেক্ষতা বা বা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের উল্লেখ পর্যন্ত ছিল না। সমাজতন্ত্রের কথা তো দূর অস্ত্। বরং শুরুতেই লেখা ছিল- ‘নীতিঃ কোরাণ ও সুন্নার মৌলিক নীতির খেলাফ কোন আইন প্রণয়ন করা হইবে না এবং ইসলামের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে নাগরিকগণের জীবন ধারণের ব্যবস্থা করা হইবে। (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ও দলিলপত্র, গতিধারা, ঢাকা; পৃষ্ঠা ৮৩)।

এদেশের হিন্দুরা তখনো কংগ্রেস করত। মুসলিম লীগ তো নয়ই আওয়ামী মুসলিম লীগকেও তারা সমর্থন করত না। কিন্তু কালক্রমে কংগ্রেস বুঝতে পারল আলাদা ভাবে কংগ্রেস করে ভারতীয় কংগ্রেসের পাকিস্তানবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। বরং মুসলমানদেরই কোনো একটা দলে ঢুকে পড়ে দলের ভেতর ধীর অথচ অবিরাম মোটিভেশন এবং প্রেশারগ্রুপের ভূমিকার মাধ্যমেই সেটা অধিকতর সহজে ও ভালভাবে করা যাবে। আর আওয়ামী মুসলিম লীগ মনে করল কংগ্রেসকে পেলে তাদের ভোটের শক্তি বাড়বে। বলা বাহুল্য, এই মিলনে উভয়েরই উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে। আওয়ামী মুসলিম লীগ তার নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ দিয়েছে এবং ক্রমে ক্রমে ইসলাম ও মুসলিমচেতনা থেকে দূরে সরে গেছে। ১৯৫৫ সালের ২৩শে অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ গঠিত হয় এবং ১৯৫৬ সালের আগস্ট মাসে প্রকাশিত প্রচারপত্রে আওয়ামী লীগ ‘সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ দূর করিয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্ত নির্বাচন’ দাবি করে। কিন্তু তখনো একটি তত্ত্ব হিসেবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’কে হিসেবে গ্রহণ করেনি। ১৯৬৯ সালে আইউব খানের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করার জন্য ৮টি রাজনৈতিক দল নিয়ে যে ‘ডেমোক্রেটিক একশন কমিটি (ডাক)’ গঠন করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ ছাড়াও তার অন্যতম প্রধান শরিক ছিল জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম ও কাউন্সিল মুসলিম লীগ। কারণ তখনো আওয়ামী লীগ পাকিস্তান বা পাকিস্তানের আদর্শিক ভিত্তি বা দ্বিজাতি তত্ত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি।

১৯৬৯ সালের ১লা আগস্ট আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিল তাতে রাষ্ট্রীয় আদর্শের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। ইসলাম, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ বা সমাজতন্ত্র কোনো কিছুরই প্রসঙ্গ তাতে ছিল না। ৬ দফার ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসিত পূর্ব পাকিস্তান গড়ার অঙ্গীকারই ছিল মূখ্য। সে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে থাকে। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তারা পাকিস্তানের জন্যে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে। এই সংবিধানের Preamble শুরু হয় ‘In the name of Allah, the Beneficial, Merciful, দিয়ে। এই প্রস্তাবিত সংবিধানের ৭ম অনুচ্ছেদে বলা হয়ঃ ‘Further resolving that guarantees shall be embodied in this Constitution to enable the people of Pakistan, Muslim, Hindu, Buddhist, Christian, Persian and of other religions to profess and practice their religions and to enjoy all rights, privileges and protection due to them as citizen of Pakistan, and in pursuance of this object to enable the Muslims of Pakistan, individually and collectively, to order their lives in accordance with the teachings of Islam as set in the Holy Quoran and the Sunnah.’ (আওয়ামী লীগ সংবিধান কমিটি কর্তৃক ৬-দফার ভিত্তিতে প্রণীত পাকিস্তানের খসড়া শাসনতন্ত্র (অংশ); বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র, দ্বিতীয় খণ্ড, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা, ১৯৮২, পৃষ্ঠা ৭৯৩)। অর্থাৎ প্রস্তাবিত এই সংবিধানে সকল নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলা হয় কিন্তু আদর্শ হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ বা সমাজতন্ত্রের কোনো উল্লেখ মাত্র ছিল না। বরং মুসলমানরা যাতে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে পারে তার ব্যবস্থার কথা সুস্পষ্টরূপে বলা হয়। বলা বাহুল্য, পাকিস্তানী সামরিক জান্তা আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে এই সংবিধানই কার্যকর হতো।
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। কে কখন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এ নিয়ে বিতর্ক আছে। শেখ মুজিবুর রহমান বা জিয়াউর রহমান যে-ই তা করে থাকুন, তারা কেউই তাদেও সে ঘোষণায় বলেননি স্বাধীন বাংলাদেশের মূলনীতি কী হবে। শেখ মুজিব তার ঘোষণা ‘জয় বাংলা’ বলে শেষ করার আগে বলেন- ‘May Allah bless you (দেখুন আওয়ামী লীগের ওয়েব সাইট)।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের পর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং পাকিস্তান গণপরিষদ ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত বেশির ভাগ সদস্য ভারতে আশ্রয় নেন। তারা ১০ এপ্রিল কলকাতায় সমবেত হয়ে একটি প্রবাসী আইন পরিষদ গঠন ও ’স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ প্রণয়ন করেন। ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী বৈদ্যনাথতলায় (পরবর্তী নাম মুজিবনগর) এটি আনুষ্ঠানিকভাবে জনসমক্ষে পাঠ করা হয়। এই ঘোষণার মাধ্যমে নবগঠিত আইন পরিষদ ২৬শে মার্চ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কার্যকর বলে ঘোষণা করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই ঘোষণাপত্র প্রবাসী সরকার পরিচালনার অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান হিসেবে গৃহীত হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান প্রণীত হওয়া পর্যন্ত কার্যকর ছিল।

এই ঘোষণাপত্রে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়, ১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বর এবং ১৯৭১ সালের ১৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়েছিল। জনগণ আওয়ামী লীগের ১৬৭ জনকে নির্বাচিত করে। কিন্তু পাকিস্তানী সেনাবাহিনী গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। এ অবস্থায় জনপ্রতিনিধিদের পক্ষে একত্রিত হয়ে শাসনতন্ত্র প্রণয়নপূর্বক জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। সেজন্যে ‘পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে’ ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণাকে অনুমোদন করা হয়। একই সঙ্গে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে স্বাধীন বাংলা সরকার ‘আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ ১৯৭১’ জারী করে। এতে বলা হয়ঃ ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে সকল আইন চালু ছিল, তা ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একইভাবে চালু থাকবে, তবে প্রয়োজনীয় সংশোধনী সার্বভৌম স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের জন্য করা যাবে’ (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র, তৃতীয় খণ্ড, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা, ১৯৮২, পৃষ্ঠা ৪-৬)।

১৯৭১ সালের ১৪ই এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের প্রচার দপ্তর একটি সার্কুলার জারী করে। সেটি শুরু হয় ‘আল্লাহু আকবর’ দিয়ে, আর ‘জয় বাংলা’ বলে শেষ করার আগে লেখা হয়ঃ ‘স্মরণ করুনঃ আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ‘অতীতের চাইতে ভবিষ্যৎ নিশ্চয়ই সুখকর।’ বিশ্বাস করুনঃ ‘আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তী।’

১৯৭১ সালের ২০শে মে হিন্দুস্তান টাইমস-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এইচএম কামারুজ্জামান বলেনঃ ‘Our struggle is not opposed to Islam. The value and teachings of Islam shall be preserved(বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ও দলিলপত্র, গতিধারা, ঢাকা; পৃষ্ঠা ৪৫)।
১৯৭১ সালের ২১শে জুলাই আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপি ও এমএন-রা আবার সভায় মিলিত হন। সেখানে তারা যেসব সিদ্ধান্ত নেন তার মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ বা সমাজতন্ত্র সম্পর্কে কোনো কথা ছিল না। ১৯৭১ সালের ৭ই ডিসেম্বর, ভারত কর্তৃক স্বীকৃতি পাওয়ার পরদিন, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতির উদ্দেশে দেয়া তার ভাষণে প্রথম বাংলাদেশের মূলনীতি হিসেবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ ও ‘সমাজতন্ত্র’ শব্দ দুটি উচ্চারণ করেন। পরদিন অর্থাৎ ৮ই ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদও শব্দ দুটি উচ্চারণ করেন। ১৩ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শাসনব্যবস্থা ও পুনর্গঠন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়ঃ ‘The government of Bangladesh is committed to a socialist pattern of economy based on democracy and democratic’ (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র, তৃতীয় খণ্ড, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা, ১৯৮২, পৃষ্ঠা ৪৫৮)। এই কথাটা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। আওয়ামী লীগ ইতোপূর্বে কখনই সমাজতান্ত্রিক ধরনের অর্থনীতির অঙ্গীকার করেনি। বলা বাহুল্য এই প্রতিবেদনেও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের কথা বলা হয়নি।

ওপরের এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও তথ্যাবলী এটাই প্রমাণ করে যে, মুসলিম লীগের ধারাবাহিকতায় গঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ। সে কারণে তার মূলনীতিও ছিল মুসলিম লীগের মতোই মুসলিম জাতীয়তাবাদী আদর্শে উজ্জীবিত। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনাও তা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল না। ডিসেম্বর মাসে এসে আমরা এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করি। ১৯৫৫ সালের পর মাঝে-মধ্যে ‘ধর্মনির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকার’-এর কথা বলা হলেও রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’, ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ’-এর কথা বলা হয়নি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনী মেনিফেস্টো, প্রস্তাবিত সংবিধান এবং স্বাধনিতার ঘোষণাপত্রেও এসব কথা ছিল না। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত পাকিস্তান গণপরিষদ ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের আওয়ামী লীগ সদস্যবৃন্দ স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র প্রণয়ন করেন এবং প্রবাসী সরকার গঠন করেন। সুতরাং এই সরকারের কোনোও ম্যাণ্ডেট ছিল না রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’, ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ’ আমদানী করার। স্বাধীনতা লাভের পর এই গণপরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরাই ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন করেন। এতে গণতন্ত্রের পাশাপাশি ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’, ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ’-কে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ১৯৭০ ও ১৯৭১ সালের নির্বাচনে জনগণ তাদেরকে সে ম্যান্ডেট দেয়নি। ভারত ও রাশিয়ার চাপে অথবা তাদেরকে সন্তুষ্ট করতেই এটা করা হয়েছিল এতে কোনো সন্দেহ নেই। ১৯৭২ সালের এই সংবিধানকে অনেক বিশেষজ্ঞই তখন ‘clone or copy of Indian constitution’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। এ থেকে একটা সন্দেহ জাগে যে, আওয়ামী লীগ ১৯৫৫ সালে তার মূল নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি ঝেড়ে ফেলার সময় থেকেই ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’-কে মনে মনে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু সে কথা বললে বা ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে জনগণের সমর্থন পাওয়া যাবে না এই ভয়ে তখন তা প্রকাশ করেনি। ১৯৭১ সালের শেষ পর্যায়ে এসে তারা মনে করেছে এখন তারা যা-ইচ্ছা-তাই করতে পারে। আর মুখোশ পরে থাকার প্রয়োজন নেই। তাই বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’কে এতটা মর্যাদার সঙ্গে সামনে আনা হলো।

ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেই আওয়ামী লীগ ক্ষান্ত হয়নি। রাষ্ট্রীয় ও সরকারীভাবে ধর্মহীনতাকে উৎসাহিত করেছিল। এর ফলে ধর্ম, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ধর্ম পালনকারী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী শুধু যে নিগৃহীত হতে শুরু করে তা-ই নয়, এদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছিল। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও ধর্মের ভিত্তিতে দল গঠন নিষিদ্ধ করা হলো। মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী বা নেজামে ইসলামী স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করে থাকলে বড় জোর ঐ দলগুলোকে নিষিদ্ধ করা যেত। ব্যক্তিগত ভাবে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিল তাদের রাজনীতি করার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারী করা যেত। তা না করে ধর্মকে, বিশেষত ইসলামকে, রাষ্ট্র ও জনগণের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হলো, প্রতিপক্ষ বানানো হলো স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও প্রগতির। আধুনিক গণতন্ত্রের সূতিকাগার ও পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত ইউরোপ-আমেরিকা কিংবা যে ভারতের ডিকটেশন বা প্রেসক্রিপশনে এই সংবিধান প্রণীত হয়েছিল সেই ভারতেও ধর্মকে প্রতিপক্ষ বানানো হয়নি। তাতে তাদের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়নি। ধর্মের ভিত্তিতে দল গঠনকে নিষিদ্ধ করে আওয়ামী লীগ শুধু যে গণতন্ত্রকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তা-ই নয়, এর মাধ্যমে এই দলটি নিজেই নিজেকে ধর্মবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে। অথচ ১৯৭১ সালের শেষ পর্যন্তও আওয়ামী লীগ সম্পর্কে মানুষের এই ধারণা ছিল না।

পরবর্তী কালে আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে এতটাই আঁকড়ে ধরে যে, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম এবং সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ সন্নিবেশ করার প্রবল বিরোধিতা করে। অদ্যাবধি তার এই অবস্থানের কোনো নড়চড় হয়নি। কিন্তু গত শতাব্দীর নব্বই দশকে এসে আওয়ামী লীগ অনুধাবন করে, অর্থ, পেশীশক্তি এবং বিদেশী মুরুব্বীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকা সত্ত্বেও স্রেফ ধর্মবিরোধিতার কারণে সে ভোটের রাজনীতিতে বারবার মার খাচ্ছে। তখন অতীতের জন্য জনগণের কাছে মাফ চাওয়া, মাথায় স্কার্ফ পরা, নেতা-কর্মীদের মসজিদে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া এবং ‘নৌকার মালিক তুই আল্লাহ’ ্লোগান আসতে থাকে। এই করে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় গিয়ে তখন আবার স্বমূর্তি ধারণ করে। ধর্মীয় সংগঠন, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে দেয় দলটি। ২০০১ সালে তার আবার পতন হয়। তারপর থেকে অদ্যাবধি তার ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী স্বভাবের কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ সপ্তাহখানেক আগে আওয়ামী লীগের মুখে নতুন কথা শোনা গেলো। সে কথাটা হচ্ছে, আসন্ন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় গেলে ‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন প্রণয়ন করা হবে না’। মজার ব্যাপার হলো, কথাটা প্রথমে বলেন সাবেক সমাজতন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। তারপর সেটা স্পষ্ট ভাষায় উচ্চারণ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং।

বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের নেতৃত্বে আসীন একটি দলের মুখে ‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন প্রণয়ন করা হবে না’ কথাটা খুবই বেমানান, অস্বাভাবিক, স্ববিরোধী, আর সেই কারণে অবিশ্বাস্য। এটা যে সাধারণ, অশিক্ষিত, অসচেতন ধর্মপ্রাণ মানুষকে ভুলিয়ে ভোট পাওয়ার জন্যে করা হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে এখনো কঠিন হাতে আঁকড়ে ধরে আছে। তা থাকতেই হবে। কারণ এই অস্ত্র দিয়ে ভুলিয়ে সংখ্যালঘুদের সিংহ ভাগ ভোট পেতে হয় দলটিকে। সংখ্যালঘুদের অর্ধেক ভোট থেকেও যদি বঞ্চিত হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ ২৫/৩০টার বেশি আসনে বিজয়ী হতে পারবে না সে কথা সবার জানা। সেজন্যে তাদেরকে সন্তুষ্ট বা আশ্বস্ত রাখার স্বার্থেই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে ত্যাগ করতে পারবে না আওয়ামী লীগ।

সুতরাং ‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন প্রণয়ন করা হবে না’ কথাটা ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। তার জ্বাজ্বল্যমাণ প্রমাণ শেখ হাসিনার পুত্র, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি লেখা। লেখার শিরোনাম ‘Stemming the Rise of Islamic Extremism in Bangladesh, এটি ছাপা হয়েছে Harvard International Review (অনলাইনে দেখুন)। তিনি একা এটি লিখতে পারেননি, লিখেছেন কার্ল সিয়োভাকো নামক একজন সাবেক আমেরিকান সৈনিকের সঙ্গে যৌথভাবে। এই ভদ্রলোক ইরাক ও সউদী আরবে কাজ করেছেন। এই প্রবন্ধে জয় কোনো রাখ-ঢাক না করে সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছেন, ইসলামই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শত্রু। তারপর বলেছেনঃ ‘If Sheikh Hasina and the Awami League win the upcoming December election, Islamism will be averted. This de-radicalization plan has great potential for success. The Bangladeshi people are starting to see the connection between secularism and success in Bangladesh. The time is ripe for them to support these initiatives. In the careful balancing act between Islam and governance in a Muslim country, it appears that the pendulum has tipped to the side of secularism. The Awami League must build on this momentum to ensure its long-term success. অর্থাৎ তার সার কথা হলো, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে ইসলামকে দূরে সরিয়ে রাখা হবে।

বাংলাদেশের সাফল্যের জন্যে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। এখনই তার সর্বোৎকৃষ্ট সময়। মুসলিম দেশে ইসলামের চেয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকেই অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের জন্য আওয়ামী লীগকে অবশ্যই এই পথে এগুতে হবে। শেখ হাসিনার পুত্র এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় অবশ্যই তার মা এবং আওয়ামী লীগ নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে পরামর্শ করেই এই নীতি-নির্ধারণী প্রবন্ধ লিখেছেন এবং বিশ্ববাসীকে জানানোর জন্যে তা ইন্টারনেটে ছেড়েছেন। অথবা তারা এই মতামতকে সমর্থন ও অনুমোদন করছেন। সেজন্যেই তারা এর প্রতিবাদ করছেন না। এর থেকেই বোঝা যায় ‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন প্রণয়ন করা হবে না’ কথাটা কত বড় ধাপ্পাবাজি।

যাই হোক, যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম সেখানে ফিরে যাওয়া যাক। বলছিলাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা। আমরা ওপরের তথ্যাবলী থেকে সহজেই বুঝতে পারছি যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ও তার আগে আওয়ামী লীগের সংগ্রাম, নীতি ও নির্বাচনী অঙ্গীকারে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ-এর কোনো অস্তিত্ব ছিল না। পরে এটা জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বিগত প্রায় দেড় যুগ থেকে। ওপরের আলোচনা ও তথ্য থেকে এটাই প্রতীয়মাণ হয় যে, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ছিল গণতন্ত্র ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উজ্জীবিত, স্বাধীন ও সার্বভৌম, বৈষম্য ও শোষণহীন, রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা। এই কথাই বলা হয়েছে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মেনিফেস্টো, ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের মেনিফেস্টো ও প্রস্তাবিত সংবিধান এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার রাজনীতি করতে গিয়ে বারবার এ নিয়ে মিথ্যাচার করেছে। বিগত নির্বাচনকে উপলক্ষ করে নতুন করে শুরু হয়েছে সেই পুরনো মিথ্যাচার ও ভণ্ডামি, এখনো চলছে তার জের। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ-এর নামে আওয়ামী লীগ একদিকে যেমন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে, তেমনই এখন ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে চাইছে। আওয়ামী লীগের এই ব্যবসা সম্পর্কে সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। তা না হলে আবার বাংলাদেশে সৃষ্টি হতে পারে নতুন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি।
লেখকঃ গবেষক, ই-মেইল, [email protected]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×