একজন রাজিবের মৃত্যু ও গুটিকয় বোধ বা চেতনার জন্ম
মিনার রশীদ
বিপদগামী সন্তানদের জীবন বৃত্তান্ত অধ্যয়ন করলে একটি বিষয় চোখে পড়ে। বাবা- মা বিশেষ করে মায়ের অন্ধ স্নেহ বেশীর ভাগ সময় তাদেরকে এই অবস্থার দিকে ঠেলে দেয় । বাস্তব অবস্থা যাই হোক না কেন কিংবা আত্মীয় স্বজন বা পাড়াপড়শীরা তাদের সন্তান সম্পর্কে যাই ভাবুক না কেন - মায়ের ভাবনা তাদের থেকে প্রায়শই ভিন্ন হয়। তাদের বদ্ধমূল বিশ্বাস যে তাদের সন্তান এমন কাজ কখনই করতে পারে না। কাজেই নিজের ছেলে বা মেয়েকে সংশোধনের চেয়ে পাড়া পড়শী বা অভিযোগকারীদের সাথে এসব নিয়ে গলাবাজি,চাপাবাজি বা ঝগড়াতেই তাদের বেশী সময় ব্যয় হয়ে যায় ।
এই সব পিতামাতার এক সময় বোধোদয় ঘটে । কিন্তু তা হয় অনেক বিলম্বে। যতক্ষণ অন্য মানুষকে জালায় - ততক্ষণ এই সব বাবা মায়ের শক্ত টনকটি তেমন করে নড়ে না। তবে সোনার ছেলের সোনার হাতটি যখন নিজের ঘরের চালের দিকে ধাবিত হয় তখন সেই টনকটি নড়ে উঠে । পরিস্থিতি তখন এমন বেসামাল হয়ে পড়ে যে সোনার ছেলেটির কুকীর্তি এই মুখরা মায়ের পক্ষেও আর ঢেকে রাখা সম্ভব হয় না।
ঢাক ঢোল পিটিয়ে তখন সেই সোনার ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করা হয় । এই ছোট গল্পগুলি তাই শেষ হয়েও হয় না শেষ। কারন তখন পাড়া প্রতিবেশীদের অনেক কিছু বলার থাকে।
মায়ের এই অন্ধ ভালোবাসা একই ভাবে উপভোগ করেছে এদেশের ছাত্র রাজনীতি। এই সব অন্ধ মায়ের স্নেহে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র রাজনীতি আজ পুরোদস্তুর ফ্রাংকেনস্টাইনে পরিণত হয়েছে। এব্যাপারে ফর্মূলাটি অত্যন্ত স্পষ্ট । যে মা যত অন্ধ হয়েছে,তার ছেলেরা তত সোনার ছেলে হয়েছে।
নেত্রী ছাত্র লীগের সাংগঠনিক প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার এই পদটি গ্রহনের খবর অনেক বড় বড় কলামিস্টও জেনেছেন তিনি এই পদটি ত্যাগ করার পর। তার এই পদত্যাগটি আসলে দায়িত্ব এড়ানোর কৌশল বা দায় ত্যাগ। আমার ছেলেরা চুড়ি পড়ে থাকতে পারে না, এক খুনের বদলায় দশটি খুন বলে ধীরে ধীরে যাদের তৈরি করা হয়েছে তার সকল দায় এসব অভিমানী পদত্যাগের মাধ্যমে এড়ানো সম্ভব হবে না। কাজেই ব্যর্থ নেতৃত্বের সাথে সাথে একজন অন্ধ মায়ের অভিমানই এই পদত্যাগের মাধ্যমে অত্যন্ত করুণভাবে ফুটে উঠেছে। কাজেই তার সেই অভিমান ভাঙাতে ছাত্রলীগ মানববন্ধন সহ অনশন ধর্মঘট করে যাচেছ। মানব বন্ধনের এই অভিনব ব্যবহারে অনেকেই অবাক হচেছন।
বলা যায় তিনি ছাত্রলীগকে আপাতত ত্যাজ্য ঘোষণা করেছেন। ছাত্রলীগের ভবিষ্যত কোন দায় দায়িত্ব তিনি বা তার দল নিবে না। কিন্তু যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দেয় তাহলো অতীতের দায়গুলি তাহলে কে গ্রহন করবে ? উর্ধতন সরকারী কর্মকর্তাকে দিগম্বর করা,জলন্ত বাসে আগুন দিয়ে নিরাপরাধ যাত্রীকে পুড়িয়ে মারা এবং লগি বৈঠা দিয়ে সাপের মতো বিরোধী দলের কর্মী মারার দায় সহ আরো অনেক দায় যে মাথায় চেপেছে।
ছাত্রলীগের পর লাইনে এসেছে শ্রমিক লীগ। এখনও জানা যায় নাই এই দলটিরও সাংগঠনিক প্রধান হিসাবে তিনি আছেন কি না কিংবা সেই পদ ত্যাগের মানসিক প্রস্তুতি তিনি নিয়েছেন কি না। এই জাতীয় অন্যান্য ছোট গল্পের মতো এই গল্পটিও শেষ হয়েও হলো না শেষ। জনগণের অনেক কিছু বলবার আছে।
ছাত্রলীগের প্রতি অভিমান দেখালেও জাতিকে দেখাচেছন ভিন্ন মানসিকতা। নিজের সোনার ছেলেদের এই সব কীর্তির সকল দায়ও চাপিয়ে দিয়েছেন ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের উপর। তার সোনার ছেলেদের মাঝে এই সব অপয়ারা ঢুকে পড়েছে বলেই তাকে এই ঝামেলাটুকু পোহাতে হয়েছে। এই বিশ্বাস শুধু নেত্রীর না। তার পার্টির লাইন বরাবর নিরপেক্ষ থেকে গোড়া সমর্থক সবার বদ্ধমূল বিশ্বাস এটি। এখন জানা গেছে ছাত্রলীগের সভাপতি এসেছে ছাত্র শিবির থেকে এবং সাধারন সম্পাদক এসেছে ছাত্র দল থেকে। কারন পিওর বা বিশুদ্ধ ছাত্রলীগ এসব কাজ কখনই করতে পারে না।
এই ঘটনার পরে আওয়ামী বুদ্ধিজীবি বলে সমধিক পরিচিত এক সম্পাদকের দৈনিক পত্রিকা অন লাইন জরীপে জানতে চেয়েছে , ছাত্রলীগ কি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে ?
পাঠকদের জন্যে মালটিপল চয়েসের এই প্রশ্নটিতে হ্যা,না এবং মতামত নেই এই তিনটি জবাবের অপশন থাকলেও এই তিনটির কোনটিতে মনের পিপাসাটা হয়তো মিটবে না। কারন প্রশ্নটির জবাবে অন্য একটি প্রশ্ন মনের মধ্যে চলে আসে · ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে তাতে এখনও কি কোন সন্দেহ রয়েছে ?
সেই পত্রিকাটিতে রাজিব সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। মেধাবী ছাত্র রাজিব কিভাবে রাজনীতির নষ্ট কীটে রূপান্তরিত হয়েছে সে সম্পর্কে আদ্যোপান্ত বর্ণনা রয়েছে। সবচেয়ে কৌতুহলের বিষয় হলো প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রথমে সে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করে। তারপরের বছর ছাত্র লীগে যোগদান করে। রাজিবকে একজন ছাত্র রাজনীতির কীট হিসাবে তুলে ধরতে শিবির সম্পৃক্ততা সামনে নিয়ে আসা হয়।
একই দিন আওয়ামী বলয়ের অন্য একটি পত্রিকাতে রাজিবকে সোনার ছেলে হিসাবে তুলে ধরে । আগের পত্রিকাটির সাথে ভিন্ন মত গ্রহন করে তার বিরোধী গ্রুপের ডাঃ বিদ্যুৎ বড়ুয়াকে রাজনীতির নষ্ট কীট হিসাবে উল্লেখ করেন । এখানেও বিদ্যুৎ বড়ুয়ার এক সহযোগীকে শিবির কর্মী হিসাবে বর্ণনা করা হয়। রাজিবের চরিত্র নিয়ে দুটি পত্রিকা ভিন্ন মত পোষন করলেও উল্লেখিত বিষয়টিতে মিল ঠিকই রয়েছে।
কাজেই পদত্যাগী নেত্রী সহ তাদের ঘরোয়া বুদ্ধিজীবিদের চিন্তার নৈকট্যটুকু সহজেই আচ করা সম্ভব। সারা দেশের মানুষের মগজ বা চিন্তার জগতটি ঘুরাতে গিয়ে এখন নিজেরাই এই মানসিক বিভ্রান্তির মর্মান্তিক শিকারে পরিণত হয়েছেন। বাস্তবতা যাই বলুক, অন্ধ মায়ের ভালোবাসায় সবাই মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। সারা দেশের মানুষ যাই বিশ্বাস করুক তারা মানতে পারছেন না যে ছাত্রলীগ এমন কাজ করতে পারে।
এই সব সোনার ছেলেরা সবচেয়ে বড় প্রশ্রয়টি পেয়েছে মিডিয়া নামক মুখরা জননীদের কাছ থেকে। গত ১০/১৫ বছর বা তারও কিছু পেছনে দৃষ্টি ফেরালে এই প্রশ্রয়ের নমুনাগুলি স্পষ্ট হয়ে পড়ে । তিলকে তাল বানিয়ে বা কখনও তালকে তিল বানিয়ে কিংবা কোন তিল ছাড়াই আস্ত একটি তাল বানিয়ে ফেলে এই মিডিয়া নামক জননী নিজ নিজ সোনার ছেলেদের প্রশ্রয়টি দিয়ে গেছে।
নিজের সোনার ছেলেদের হাতে মারাত্মক অস্ত্র দেখলেও তাদের ক্যামেরা ক্লিক করে না। নাছোরবান্দা কোন সাংবাদিক সেই ছবি তুলে ফেললে বড় বড় কলামিস্টরা তার ব্যাখ্যা দেয় , ‘ আরে ওসব কিছু না , ওগুলো হলো ক্যামেরা ট্রিঙ্।’ কিন্তু অন্যের ছেলেদের প্যান্টের পকেটটি কোন কারনে সামান্য উচু দেখালেও বলে, ইউরেকা ইউরেকা । সেই উচু পকেটের ছবি লাল কালিতে চিহ্নিত করে প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপিয়ে দেয়।
কোন দলের অনুকূলে বলার জন্যে আমার এই মন্তব্য করছি না। এই অদ্ভুত মাইন্ড সেট বা মানসিকতা আমাদের কি ক্ষতি করছে সেদিকে সকলের মনোযোগ আকর্ষন করছি। রাজিবের মৃত্যু আমাদের এই অন্তর্দৃষ্টিটি খুলে দিক , কামনা করি।
কারন রাজনীতি বা ছাত্র রাজনীতিতে কোনদিন না জড়ালেও তার উত্তাপ করুণভাবে উপভোগ করেছি।
১৯৮৭ সালে যখন সামুদ্রিক জীবন শুরু করি তখন আমার সঙ্গে একই জাহাজে ছিল আমার ব্যাচমেট আসিফ। দুজন থাকতাম একই রুমে। ফলে সুখ দুখের অনেক গল্পও শেয়ার করতাম। ওরা ছিল দুই ভাই। পিঠাপিঠি ছোট ভাইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। নাম ছিল মুন্না। এক কথায় বলতে গেলে তারুণ্যে টগবগ চমৎকার একটি ছেলে। জাহাজ চিটাগাং গেলে ও চলে আসতো। কয়েকদিন আমাদের সঙ্গেই কাটাতো। ফলে ওর সাথেও জাহাজের অন্যান্যদেরও একটা চমৎকার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে যায়।
আসিফের মা সারাক্ষণ চিন্তা করে আসিফকে নিয়ে। সারা পৃথিবীর কোন সমুদ্রে কিছু ঘটলেই তাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। মায়ের মন বুঝে না বিক্ষুদ্ধ সাগর থেকে বাঁচার অনেক কৌশল ও যন্ত্রপাতি আবিস্কার হয়ে গেছে। কাজেই পাচ তারকা হোটেল তুল্য জাহাজে আসিফ নিশ্চিন্তে ঘুমুলেও তার মা প্রথম কয়দিন ঠিকমতো ঘুমাতে পারে নাই।
কিন্তু পরের সামুদ্রিক ভ্রমনটি শেষ করে দেশে এসে জানতে পারি সেই মুন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র সংঘর্ষে নিহত হয়েছে। যে আসিফের জন্যে তার মা সারাক্ষণ টেনশনে থাকতো, সেই আসিফ সাত সমুদ্র চষে নিরাপদে মায়ের কোলে ফিরে এসেছে। কিন্তু যার জন্যে ঘুনাক্ষরেও কোন দিন দুশ্চিন্তা করে নাই , সেই মুন্না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে আসতে পারলো না।
তার সহপাঠীরা এসে এডভোকেট বাবাকে সান্ত্বনা দেয় , ‘ আংকেল, আপনার ছেলে দেশের জন্যে শহীদ হয়েছে।’ সচেতন বাবার শীতল জবাবটি ছিলো, আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিও না। আমি জানি আমার ছেলের অপমৃত্যু হয়েছে। ’
কাজেই ছাত্র রাজনীতি টিকিয়ে রাখার পক্ষে অনেক যুক্তি থাকলেও তাকে মনে প্রাণে মেনে নিতে পারি না। মুন্নার সেই চেহারাটি চোখের সামনে ভেসে উঠে। বিশেষ করে বর্তমানে ছাত্র রাজনীতি যে পর্যায়ে চলে এসেছে তাকে মেনে নেয়া সত্যি কঠিন। তবে এটার জন্যে বিক্ষিপ্তভাবে ছাত্র রাজনীতিকে দোষারূপ করে লাভ নেই।
পুরো সমাজটিতে নৈতিকতার যে ধ্বস নেমেছে সেখান থেকে শুধু ছাত্ররা বিরত থাকবে তা আশা করা যায় না । পরবর্তি জীবনে যে লুটপাটে অংশ নিতে হবে, তার একটা মহড়া তো ছাত্র জীবনে চলতেই পারে। যে শিক্ষক নিজেই নীতিহীন, সে তার ছাত্রকে কি নীতি শিখাবে ? যে দলবাজ ও সুবিধাবাদী শিক্ষকটি প্রিন্সিপাল বা ভিসির পদটি বাগিয়ে নিয়েছে তার উপর তো ভর্তি বাণিজ্যের দলীয় চাপ আসবেই। দলের মোয়া খাবেন ,তবে চাপ খাবেন না তা কি করে হয় ? আর যেখানে মোয়া থাকবে সেখানে এরূপ লাঠালাঠি তো অত্যন্ত স্বাভাবিক। কাজেই দিন বদলের শ্লোগান দিয়ে যে নেত্রী আমাদের আশান্বিত করেছিলেন তার পদত্যাগটি গোড়ায় কেটে আগায় পানি দেয়ার শামিল মাত্র ।
প্রতিটা সমাজে কিছু ঘৃণার কামান থাকে। এই ঘৃণার কামানগুলি একটি সমাজের রক্ষাকবজ। সাহিত্য সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গন এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনি মিডিয়া গুলি এই কামান হিসাবে ভূমিকা রাখে। সেজন্যে সুশীল সমাজ বা বুদ্ধিজীবি সমাজকে একটি জাতির বিবেক বলে বিবেচনা করা হয়। কেউ মন্দ কাজ করলে সামাজিক ঘৃণার সেই কামানটি মন্দ লোকগুলির দিকে তাক করে সেই মন্দ কাজের প্রভাব থেকে সমাজকে নিরাপদ রাখা হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো এই অস্ত্রটিকে আমরা আমাদের কল্যাণে খুবই কম ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছি।
বরং এই দেশটিকে যারা অকার্যকর ও ব্যর্থ হিসাবে দেখতে চায় , এই কামানটির উপর তারাই,বেশী দখল নিয়ে ফেলেছে । সত্যকে অর্ধ সত্য দিয়ে ঢেকে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করে। সংবাদকে এমন প্রক্রিয়ায় ‘ হাই লাইট ও ব্ল্যাক আউট’ করে যে তাতে প্রকৃত পরিসংখ্যান চাপা পড়ে যায়। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছে যায় যে তাদের এই সব অপকৌশলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অর্থ হয়ে দাঁড়ায় দুর্নীতি বা সামাজিক ইভিলের পক্ষে অবস্থান নেয়া। ফলে অনেকটা বাধাহীনভাবে তারা তাদের এজেন্ডা নিয়ে অগ্রসর হতে পারে ।
প্রকৃত অপরাধীর দিকে এই কামানটি তাক না করে বিরোধী মতের বা বিরোধী দলের দিকে তাক করা হয়। ফলে এই সব দুর্নীতি ও সামাজিক সন্ত্রাশের বিরুদ্ধে যতই তর্জন গর্জন করা হয় ততই তা চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পায় । যে হামান দিস্তা নিয়ে দুর্নীতি বা অপশাসনের বিরুদ্ধে এই সব জেহাদে নামা হয় , দেখা যায় সেই সব হামান দিস্তার নিজের শরীরটিই কিছুদিনের মধ্যে সংক্রমিত হয়ে পড়ছে।
এই কামানটিকে যে প্রক্রিয়ায় ‘ হাওয়া ভবনের’ দিকে তাক করা হয় তাতে অনেকেই প্রমাদ গুণেছিল। তাদের সামগ্রিক কৌশলের কাছে জাতির প্রকৃত বিবেকটি অসহায় ও অকেজো হয়ে পড়ে। হাওয়া ভবনের সাথে যে অর্ধ সত্য জড়িয়ে ছিল, সেখান থেকে পুরো সত্যটি জনগণকে বোঝানো সম্ভব হয় নাই। এই দুর্বলতাটি শুধু বিএনপির ছিল না, এটি ছিল সারা জাতির দুর্বলতা। হাওয়া ভবনের দুর্নীতি নির্মূল তাদের লক্ষ্য ছিল না। তাদের আক্রোশটি ছিল হাওয়া ভবনের সাথে যে জাতিয়তাবোধটি জড়িয়ে ছিল তার দিকে।
হাওয়া ভবন গুড়িয়ে গত দুবছর ‘ফেরেশতা ভবন’ বসিয়েও আমরা সেই দুর্বলতা থেকে মুক্ত হতে পারি নাই। বরং রোগ আরো বেড়ে গেছে। ছাত্র লীগ ,শ্রমিক লীগের যে উন্মাদনা শুরু হয়েছে তা আমাদের ধারনার বাইরে নয়। প্রকারান্তরে এক হাওয়া ভবন গুড়িয়ে দিয়ে হাজার হাজার ‘ জল ভবন’ তৈরি করেছি। এই সব জল ভবন থেকে আজ ভর্তি বাণিজ্য এবং টেন্ডার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রিত হচেছ। মেধাবী ছাত্র রাজিব তারই শিকার। অন্ধ মায়ের আবেশ থেকে মুক্ত হয়ে এই বাস্তবতার দিকে চোখটি রাখলে এই অভাগা জাতিটির বড় উপকার হতো। এভাবে ‘ হাওয়াভবন’ ভেঙে ‘ জলভবন ’ আবার জলভবন ভেঙে হাওয়া ভবন বানাতে হতো না।
জানি না রাজিবের এই মৃত্যু আমাদের এই বোধ বা চেতনাগুলির জন্ম দিতে পারবে কি না, অনেক ধাক্কা খাওয়ার পরও এই অন্ধ মায়েরা শক্ত মা হতে পারবেন কি না।
[email protected]
Click This Link