somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহা প্রতাপশালী এক বিতর্কিত নায়কের পতন : ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

১১ ই এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহা প্রতাপশালী এক বিতর্কিত নায়কের পতন
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী


অবশেষে বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশ থেকে এক দুষ্টগ্রহের পতন হয়েছে। হঠাৎ ক্ষমতা হাতে পেয়ে উন্মত্ত হয়ে ওঠা দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান (অবঃ) লে. জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধূরী পদত্যাগ করেছেন। আত্মস্বীকৃত এই দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি দুদকর চেয়ারম্যান পদে আসীন হয়ে দুধারী তলোয়ার হাতে দিগ্বিদিক আঘাত হেনে গোটা দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে বিরাট ভূমিকা পালন করেছেন। ক্ষমতার অহঙ্কারে মদমত্ত এই চেয়ারম্যান সাহেব দুর্নীতি দমনের জন্য চুনোপুঁটি থেকে রাঘব বোয়ালদের পর্যন্ত তাড়া করে ফিরেছেন। তার উন্মত্ত কর্মকাণ্ডে ব্যবসায়-বাণিজ্য গেছে, শিল্প বিনিয়োগ গেছে, কর্মসংস্থান গেছে। গুদামে গুদামে অকারণে হানা দিয়ে আমদানিকারকদের মধ্যে ত্রাসের সৃষ্টি করা হয়েছে। সর্বোপরি দেশের রাজনীতিবিদদের হেয় করার জন্য হেন অপকর্ম নেই যা করেনি হাসান মশহুদের নেতৃত্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন। দেশকে নিঃরাজনীতিকরণের অপপ্রয়াসে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্য এক সিপাহসালার। তবে সিপাহসালার তিনি হয়েছিলেন প্রকৃত পক্ষেই, সেও রাজনীতিবিদদের বিবেচনায়ই। নইলে তার সমান যোগ্যতাসম্পন্ন আরো একাধিক সেনাকর্মকর্তা ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান হওয়ার যোগ্য।

আমরা তাকে আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ বলেছি। কারণ তিনি বিধি ভঙ্গ করে ডিওএইচএস এলাকায় তার নিজের বাড়ি তৈরি করেছিলেন। তখন তিনি নিজেই ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান এবং নিজেই আইন করেছিলেন যে, তার সময়কালের মধ্যে যারা বিধি ভঙ্গ করে বাড়িঘর তৈরি করেছে, তারা নির্দিষ্ট হারে জরিমানা দিলে সেই বাড়িঘরে কেউ হাত দেবে না। কিন্তু অবৈধ কাজ বৈধ করা যাবে না। তিনি নিজের রচা বিধান অনুযায়ী তার দুর্নীতির জন্য আড়াই লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে ওই বাড়িটি বৈধ করেছিলেন এবং এ বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে দুর্নীতি বা বিধি লঙ্ঘনের অন্যদের উৎসাহিত করেছিলেন। ড. ফখরুদ্দীন আহমদের উড়ে এসে জুড়ে বসা সরকার দুর্নীতি দমনের জন্য খুঁজে খুঁজে এমনই এক ব্যক্তিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান করেছিল। ওই সরকারকে সাধুবাদ জানাতে হয় বৈকি।

সদ্য পদত্যাগকারী দুদক চেয়ারম্যানের গুণের অবধি নেই। সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে পদাধিকারবলে তিনি ট্রাস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। সে সময় ফরেন এক্সচেঞ্জের ব্যবসা করতে গিয়ে ৩৩ কোটি টাকার পুঁজির ওই ব্যাংকের সাড়ে ২২ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়। অভিযোগ আসে, এই সাড়ে ২২ কোটি টাকা তিনি বিদেশে পাচার করেছেন। পরে ক্ষতির কথা স্বীকার করলেও পাচারের কথা অস্বীকার করেন হাসান মশহুদ চৌধূরী। বরং ক্ষতির দায়দায়িত্ব তিনি চাপান ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপরই। ট্রাস্ট ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর তিনি ঘোষণা করেন, যেকোনো সময় তিনি পদত্যাগে প্রস্তুত। কিন্তু তখন আর তার পদত্যাগ করা হয়ে ওঠেনি। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে তিনি একজন উপদেষ্টা ছিলেন। উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেই সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনীর সমর্থনে ক্ষমতায় আসীন হন ড. ফখরুদ্দীন আহমদের অসাংবিধানিক স্বৈরাচারী সরকার। আর পদত্যাগ করে ওই অসাংবিধানিক সরকারকে ক্ষমতায় আনায় অবদান রাখার পুরস্কার হিসেবে ২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি (অবঃ) লে. জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধূরীকে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তার পর থেকে তিনি ছিলেন এক দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ব্যক্তি।

দুদকর প্রধান হিসেবে তিনি শীর্ষ ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের যেমন তাড়া করতে থাকেন, তেমনি তাড়া করেন রাজনীতিবিদদেরও। কার্যত রাজনীতিবিদদের হেয় করাই যেন দুদকর প্রধান কাজ হয়ে ওঠে। তার দুই বছরের একচ্ছত্র শাসনকালে দুদক দেশের দু্ই শীর্ষ নেত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে প্রহসনমূলক মামলা দায়ের করা হয়। গ্রেফতার করা হয় শত শত সাবেক এমপি ও মন্ত্রীকে। আর সম্পদের হিসাব চেয়ে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিক দেখিয়ে শত শত মামলা দায়ের করা হয়। কেউ হয়তো ফার্নিচারের মূল্য দেখিয়েছেন ৫ লাখ টাকা, দুদক বলল না, ওই ফার্নিচারের মূল্য হবে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা। তাই তিনি সম্পদের হিসাব বিবরণীতে কারচুপি করেছেন। বাপ-দাদার আমলের ফার্নিচার। কেউ নিলামে উঠিয়ে তার মূল্য নিরূপণ করতে যায়নি। তাই দুদকই সত্য। সেভাবেও দুদক বহু মামলা দায়ের করেছে। দুদক দেশকে নিঃরাজনীতিকরণ এবং রাজনীতিকদের জনসমক্ষে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রত্যেক রাজনীতিককে সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করতে বলে। সে হিসাবের সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই, এমন অভিযোগ এনে একের এর এক মামলা দায়ের করতে থাকে।

কিন্তু তার সবই ছিল সাজানো। বেগম খালেদা জিয়াসহ জোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকর দায়ের করা একটি মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা কোনো তথ্য-উপাত্ত না পেয়ে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দেন এবং অভিযুক্তদের সবাইকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হাসান মশহুদ ওই তদন্ত কর্মকর্তাকে ওএসডি করেন। নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ করে বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্যদের অভিযুক্ত করে ফরমায়েশি চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন।

হাসান মশহুদ চৌধূরীর এ ধরনের খামখেয়ালি কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট ছিলেন না দুদকর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তিনি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে এসেছেন হানিফ ইকবাল নামে এক রোবটসদৃশ মহাপরিচালককে। তিনি রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে অভিযোগনামা পাঠ করেন, কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে হেঁটে চলে যান। সাংবাদিকরা যাতে হাসান মশহুদের কারসাজির কোনো কথা বের করতে না পারেন, সে জন্য তিনি দুদকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন।

এই হাসান মশহুদ দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করেন বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার সম্পদের হিসাব চেয়ে। একটি চাঁদাবাজি মামলায় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের পরদিনই তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠায় দুদক। ১৮ জুলাই অপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সম্পত্তির হিসাব চেয়েও চিঠি পাঠায় দুদক। কিন্তু হা-হতোস্মি। দীর্ঘ তদন্ত শেষে এই দুদকই জানায়, তাদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কোনো সম্পদ নেই। তাই যদি না থাকে, তাহলে কী ঔদ্ধত্য! এককালে তাদের অধীনস্থ কর্মচারী এত বড় অভিযোগ উত্থাপন করলেন অবিরাম সীমা লঙ্ঘনকারী এই হাসান মশহুদ!
আত্মস্বীকৃত এই দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা দায়ের করতে গিয়েছিলেন সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা ও দৈনিক আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান। প্রথমে তিনি যান রমনা থানায়। কিন্তু দুদক চেয়ারম্যানের দাপটে রমনা থানা মামলা নিতে অস্বীকার করে। তারা জানায়, ব্যাংকটির কার্যালয় যেহেতু মতিঝিলে সুতরাং তাকে মামলাটি দায়ের করতে হবে মতিঝিল থানায়। মাহমুদুর রহমান মতিঝিল থানায় গেলে মতিঝিল থানা কর্তৃপক্ষ তার মামলা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে তিনি এজাহারটি দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়ের করেন।

দুদকর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগটি তদন্তের উদ্যোগ নেয় কেবিনেট ডিভিশন। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয় তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগটি নিষ্পত্তি এবং তদন্তকালে চেয়ারম্যান পদ থেকে হাসান মশহুদকে ছুটি নিয়ে দুদকর সব ধরনের কার্যক্রম থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেয়। কিন্তু এই পরামর্শ মানেননি হাসান মশহুদ চৌধূরী। চেয়ারম্যানের পদে বহাল থেকে তার দুজন অধস্তন কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করান এবং সেই তদন্ত রিপোর্টে স্বাভাবিকভাবেই হাসান মশহুদকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়।

হাসান মশহুদ চৌধূরীর একনায়কত্বে গত দুই বছরে দুদক রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ ২২০ জন দুর্নীতিবাজের তালিকা প্রকাশ করে। কিন্তু তাদের অর্ধেকের বিরুদ্ধেই কোনো অভিযোগ আনা সম্ভব হয়নি। দুদকর মামলায় অত্যন্ত খামখেয়ালিভাবে রাজনৈতিক নেতাদের ১৩ বছর ও তাদের স্ত্রীদের ৩ বছর করে সাজা দেয়ার অভিন্ন নজির সৃষ্টি হয়। কিন্তু এর কোনোটাই উচ্চতর আদালতে টেকেনি। ফলে শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়েছে, রাজনীতিকদের হেয়প্রতিপন্ন এবং দেশকে রাজনীতিশূন্য করার জন্যই অত্যন্ত উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলাগুলো দায়ের করেছিল দুদক।

আবার এই মামলা পরিচালনার এক তুঘলকি কারবারে দুদক জড়িয়ে পড়ে। গত দুই বছরে দুদক চেয়ারম্যান সরকারি আইনজীবীদের বাইরেও দেশের খ্যাতিমান আইনজীবীদের নিয়োগ দেন রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার জন্য। তিনি নিজের একক ক্ষমতাবলে ওই সব আইনজীবীকে ১৩ কোটি টাকা পরামর্শ ফি দিয়েছেন। তার মধ্যে শুধু একজন আইনজীবীই পরামর্শ প্রদান বাবদ দেড় কোটি টাকার বিল জমা দেন। মশহুদ সে বিলও অনুমোদন করেছেন। তুঘলকি আর কাকে বলে!
এর সবই করা হয়েছিল দেশকে রাজনীতিশূন্য করতে। তার অংশ হিসেবে এসেছিল মাইনাস টু ফর্মুলা। দুদক চেয়ারম্যান সেই ঘোরের ভেতরেই এই অপকর্মগুলো চালিয়ে যেতে থাকেন। তিনি যে কত বড় মতলববাজ, তার প্রমাণ পাওয়া যায় ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে আনা এক অভিযোগ থেকে। তাতে দুদক জানায়, বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমানসহ ১৮ ব্যক্তি এক কোম্পানির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা ঘুষ খেয়ে তা বিদেশের ব্যাংকে জমা করেছেন। রিপোর্ট অনুযায়ী ওই ঘুষ প্রদানপ্রক্রিয়া আওয়ামী লীগ আমল থেকে বিএনপি আমল পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত ছিল। সে ক্ষেত্রে দুদক ঘুষ গ্রহীতা আর কারো নাম প্রকাশ না করে শুধু আরাফাত রহমানের নাম কেন প্রকাশ করল, সে রহস্য এখনো অনুন্মোচিত। এ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক জানায়, অন্যদের নাম প্রকাশের এখনো সময় হয়নি। এ থেকেও দুদকর মতলব আর অস্পষ্ট থাকে না।

তবে শেষ পর্যন্ত হাসান মশহুদ চৌধূরী সাহেবদের সে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হয়নি। যেভাবেই হোক আমরা মনে করি, বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে জবাবদিহিতাপূর্ণ একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছে। হাসান মশহুদও সেখানে জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নন। সরকারের আইনমন্ত্রী বলেছেন, হাসান মশহুদ চৌধূরীর নেতৃত্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের দুই বছরের কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হবে। সরকারি দল ও বিরোধী দল উভয়ই অভিযোগ করেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন রাজনীতিবিদদের অযথা হয়রানি করেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, গত দুই বছরে দুদকর প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আসলে সে ব্যবস্থা নেয়াই বাঞ্ছনীয়।

সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে যেসব ভুয়া অভিযোগ এনে দুদক তাদের মাসের পর মাস কারান্তরালে আটক রেখেছিল, হাসান মশহুদ চৌধূরীর বিরুদ্ধে সে রকম ভুয়া অভিযোগ আনার প্রয়োজন হবে না। সে ক্ষেত্রে তিনটি অভিযোগই তার কারাগারে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট বিবেচিত হতে পারে। সেগুলো হলোঃ (১) সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে শুধু তার মেয়াদকালে ডিওএইচএস-এ বিধি ভঙ্গ করে বাড়ি তৈরির অনুমতি প্রদান এবং বৈধ করার জন্য জরিমানা আদায়ের ব্যবস্থা করা। শুধু নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য এ ধরনের কাজ গর্হিত অপরাধ। (২) ট্রাস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে ওই ব্যাংকের ২২ কোটি ৪১ লাখ ৭১ হাজার ১৪০ টাকা বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ। তিনি স্বীকার করেছেন, তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালে ব্যাংকের ওই পরিমাণ ক্ষতি হয়। তবে এ জন্য তিনি দায়ী নন। দায়ী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ব্যাংকের যদি ওই বিপুল অর্থের ক্ষতি হয়ে থাকে তবে তারই যুক্তি অনুযায়ী সে দায়দায়িত্ব তাকে বহন করতে হবে। কারণ ওই ক্ষতি রাষ্ট্রের। দুদক সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি করার অভিযোগ এনে তাদের কারান্তরালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। তাহলে রাষ্ট্রের প্রায় ২৩ কোটি টাকা ক্ষতি করার জন্য তিনি কারাগারে যাবেন না কেন? সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি করার প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু তিনি যে ক্ষতি করেছেন, সেটা প্রমাণিত ও স্বীকৃত সত্য। (৩) সরকারি আইনজীবীদের বহর থাকতেও তিনি কোন এখতিয়ারে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য আইনজীবী নিয়োগ করে রাষ্ট্রের ১৩ কোটি টাকা অপচয় বা আত্মসাৎ করলেন। একজন আইনজীবীকেই দুই বছরে দেড় কোটি টাকা পরামর্শ ফি দিয়েছেন। এই আইনজীবীরা এমনই দক্ষ যে, তারা আঁচই করতে পারেননি দুদকর এসব মামলা উচ্চতর আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে না। তাহলে এই বিপুল অর্থ অপচয় করার জন্য অবশ্যই দুদক চেয়ারম্যান হাসান মশহুদ চৌধূরীকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

দুদকর এই সীমানা লঙ্ঘনকারী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আমরা এই কলামে বারবার তাদের সতর্ক করেছি। আমরা বলেছি, যৌক্তিক ও ন্যায়বিচারের পথে অগ্রসর হোন। আমরা বলেছি, ক্ষমতা কারো জন্য চিরস্থায়ী নয়। এসব অন্যায় বাড়াবাড়ির জন্য এক সময় আপনাদেরকেও বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হতে পারে। ক্ষমতান্ধ এসব ব্যক্তি সে দিকে কর্ণপাত করেননি। এখন প্রকৃতি চলুক নিজস্ব নিয়মে। আর প্রকৃতি সরলতা পছন্দ করে, শূন্যতা রাখে না।

এই লেখাটি যখন শেষ করে এনেছি, তখন মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্তমাফিক, ১৯৮২ সালে শহীদ পরিবার হিসেবে সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে যে বাড়িটি দান করেছিল, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সে বরাদ্দ বাতিল করে দিয়েছে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে বীর উত্তম মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে শাহাদত বরণ করেন। তখন ঢাকায় তার পরিবারের বসবাসের কোনো বাড়ি না থাকায় সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়িটি সাফকবলা দলিলে বরাদ্দ দেয়। এর আগে পিলখানায় সাম্প্রতিক বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সেনাকর্মকর্তাদের পুনর্বাসনের জন্য ওই বাড়িটি ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শহীদ পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য অপর এক শহীদ পরিবারের বাড়ি কেড়ে নেয়ার যে ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করল, তা-ও একটি ইতর উদাহরণ হিসেবে দীর্ঘকাল আলোচিত হতে থাকবে। যা হোক, ক্ষমতার মদমত্ততায় হাসান মশহুদ চৌধূরী সব নিয়মশৃঙ্খলা ও ভব্যতা লঙ্ঘন করে যে ঔদ্ধত্যমূলক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ধারণা করি সে জন্য তাকে অনেক দিন মাশুল গুনে যেতে হবে। বর্তমান সরকার যেন মনে রাখে, ক্ষমতা কারো জন্য চিরস্থায়ী নয়। সব ক্রিয়ারই প্রতিক্রিয়া আছে।

লেখকঃ সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
ই-মেইলঃ [email protected] (সুত্র, নয়া দিগন্ত, ১১/০৪/২০০৯)
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×