somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১০০ দিনের ডিজিটাল দিনবদল : মাহমুদুর রহমান

১৬ ই এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৩:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১০০ দিনের ডিজিটাল দিনবদল
মাহমুদুর রহমান


গত কাল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের প্রথম শতদিন পার হয়েছে। যেসব ভোটার ডিজিটাল বাংলাদেশে বসবাস করার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন, তারা ইতোমধ্যে দিনবদলের আলামতে নিশ্চয়ই দারুণভাবে অনুপ্রাণিত বোধ করছেন। ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হওয়ার পর দলটির সমর্থকদের একাংশকে আওয়ামী লীগের ম্যানিফেস্টো এবং তাদের দিনবদলের স্লোগানের প্রশংসা করতে শুনেছি। বেগম খালেদা জিয়ার দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও স্লোগান তুলনামুলক ভাবে পুরনো ধাঁচের-এমন অভিযোগও কানে এসেছে। আমি অবশ্য বুঝতে অক্ষম, সম্প্রসারণবাদী শক্তি দ্বারা প্রায় তিন দিক দিয়ে অবরুদ্ধ, সামরিক শক্তিতে দুর্বল এবং অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র একটি দেশের জন্য দেশ এবং মানুষ বাঁচানোর আহ্বান পুরনো হয় কি করে? যাই হোক, নির্বাচনের অস্বাভাবিক ফল থেকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নবিলাস এবং দিনবদলের অঙ্গীকার দেশের জনগণের মন সার্থকভাবেই জয় করতে সক্ষম হয়েছিল। এখন থেকে ভবিষ্যতের সব নির্বাচনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই সম্ভবত নির্বাচনে জয়লাভ করার কৌশল হিসেবে অবাস্তব ও অবাস্তবায়নযোগ্য প্রতিশ্রুতি সংবলিত, চাকচিক্যময় ইশতেহার প্রণয়নের মাধ্যমে ভোটারদের মন মাতানোর দিকে অধিকতর ঝুঁকে পড়বেন। এমন আশঙ্কা প্রকাশের মধ্য দিয়ে আমি অবশ্য বাংলাদেশের জনগণের মেধা কিংবা বিচারবোধের উন্নতি হবে না এমনতর ভবিষ্যদ্বাণী করতে চাচ্ছি না।

যাই হোক, পুর্বের সরকারগুলোর অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সরকার গঠনের পর প্রথম ১০০ দিন জনগণের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের একপ্রকার প্রীতির সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মতো রাস্তাঘাটের সহিংস আন্দোলনে পোক্ত বিরোধী দলের চরম অসহযোগিতা স্বপ্নেও বেগম খালেদা জিয়া সরকারের মধুচন্দ্রিমা একেবারে মন্দ কাটেনি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার শোকে মুহ্যমান শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে ঘোষণাও দিয়েছিলেন যে, তৎকালীন সরকারকে একদিনের জন্যও তিনি শান্তিতে থাকতে দেবেন না। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৫৯টি আসন পাওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে অসাংবিধানিক পন্হায় ক্ষমতা রেখে দেয়ার বিশেষ প্রয়াসও নেয়া হয়েছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তুলনামুলকভাবে ২০০৯ সালে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের একেবারেই নিরুপদ্রবে থাকার কথা ছিল। আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারতের সঙ্গে তো আওয়ামী লীগের বরাবরই আত্মার সম্পর্ক। তার ওপর এবার সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীর মাখামাখি। সামরিক, বেসামরিক উভয় প্রশাসনের ডিজিটাল সহযোগিতায় ১৯৭৩ সালের মতো প্রায় বিরোধী দলশুন্য সংসদও গঠন করা গেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সংসদের প্রথম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে দাবি করেছেন, ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সামরিক বাহিনী নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করার কারণেই নাকি আওয়ামী লীগের এই অবিশ্বাস্য বিজয় সম্ভব হয়েছে। মহাজোট সাথী জেনারেল (অব.) এরশাদ আরেকটু আগ বাড়িয়ে বলেছেন, যেহেতু এক-এগারো না হলে আওয়ামী লীগ কোনোদিনই ক্ষমতায় আসতে পারত না, কাজেই ওই বিশেষ দিনের কুশীলবদের প্রতি আওয়ামী লীগের সব সদস্যের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। এতদিন ধরে জানতাম নির্বাচনে বিজয়ী দল সচরাচর জনগণের কাছে ভোটদানের জন্য কৃতজ্ঞ থাকে। এখন ভিন্ন কথা শুনছি। যাই হোক, চারদলীয় জোট সরকারকে ক্ষমতা থেকে হঠানোর লক্ষ্যে সুশীল (?) সমাজ এবং দেশের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমের সম্মিলিত প্রচারণা সফল হওয়ার কারণে তাদেরও আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার কথা। সবই অনুকুল; কিন্তু কোনো এক অভিশাপে মধুচন্দ্রিমা যাপন হলো না। নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একমাত্র ধারক-বাহক, দেশপ্রেমিক সরকার মধুচন্দ্রিমা যাপন করে অযথা সময়ক্ষেপণ করতে চায়নি। তারুণ্যে উদ্বেল মন্ত্রিসভা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কর্মযজ্ঞে প্রথম দিন থেকেই সরাসরি ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ফল হয়েছে-হরিষে বিষাদ।

দিনবদল একঃ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা যথার্থই বলেছেন, তাদের ইশতেহারে বর্ণিত কর্মসুচি দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য একটি সহায়ক প্রশাসন আবশ্যক। সেজন্যই ১০০ দিনের মধ্যে প্রশাসনের খোলনলচে বদলে ফেলার লক্ষ্যে রেকর্ড পরিমাণ সরকারি কর্মকর্তাকে ওএসডি, বদলি, এমনকি কর্মচ্যুতও করা হয়েছে। এই গত সপ্তাহেও ২৩ জেলার ডিসিকে একবারে পরিবর্তন করেছে মহাজোট সরকার। অথচ তার একদিন পুর্বে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন সময় সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের নিরপেক্ষতার প্রশংসা করেছেন। সংসদের প্রথম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি এমন মন্তব্যও করেছেন যে, প্রশাসন এবারের নির্বাচনে নিরপেক্ষ ছিল বলেই আওয়ামী লীগের পক্ষে এই বিশাল বিজয় সম্ভব হয়েছে। স্মরণে রাখা দরকার যে, চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদান্তে অন্তত গোটা দুয়েক তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধান বর্ণিত ৯০ দিনের পরিবর্তে দীর্ঘ সোয়া দুবছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। সে সময়ও একাধিকবার প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাকে ব্যাপকভাবে রদবদল করা হয়েছে। এখানেই হিসাব মেলাতে পারছি না। যে প্রশাসন নির্বাচনে এমন নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিল, তাদের প্রতি শেখ হাসিনার সরকারের হঠাৎ বিরাগের কারণ কি? সরকারের মধ্যকার বিশেষ ক্ষমতাশালী গোষ্ঠী ব্যক্তিগত রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কিংবা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য এই বদলি নাটকের আয়োজন করছেন কিনা, তা তারাই ভালো জানেন। মোট কথা, প্রথম ১০০ দিনে যতজন সরকারি কর্মকর্তাকে অদল-বদল করা হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে পুর্বের যে কোনো সরকারের রেকর্ডকে অতিক্রম করেছে। অবস্হাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সামরিক এবং বেসামরিক প্রশাসনকে কেবল আওয়ামীকরণ করেই সরকার ক্ষান্ত দেবে না, যতদুর সম্ভব তারা গোপালীকরণও নিশ্চিত করবে। অবস্হা এতটাই সঙ্গীন যে, সরকারের কট্টর সমর্থক পত্রিকা সমকাল পর্যন্ত ৭ এপ্রিল ডিএমপির অর্ধেক থানার ওসি গোপালগঞ্জের শিরোনামে নিম্নোক্ত সংবাদ ছাপতে বাধ্য হয়েছেঃ

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৩৫টি থানার মধ্যে ১৭টির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বাড়ি গোপালগঞ্জে! এছাড়া মোট ২৬ জন ওসির বাড়ি বৃহত্তর ফরিদপুরে। তাদের মধ্যে কয়েকজন বিতর্কিত কর্মকর্তাও রয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নিয়ে অনেক টানাহেঁচড়া তো হলো। আশা করব অন্তত এবার মহাজোট সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যান্য গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব পালনে মনোনিবেশ করবে।

দিনবদল দুইঃ নির্বাচন সমাপ্ত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দখলের মহোৎসবের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গসংগঠনগুলো দিনবদলের সুচনা করেছে। তবে এ প্রতিযোগিতায় নিঃসন্দেহে শীর্ষস্হানে রয়েছে তাদের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন। দখলের লড়াইয়ে টিকতে না পেরে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠন মাঠ ছেড়ে দেয়ার পর ছাত্রলীগের বিবদমান অংশ আধিপত্য কায়েমের প্রচেষ্টায় নিজেরাই খুনোখুনি করায় তাদের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা ভয়ানক রুষ্ট হয়েছেন। ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসে অবশ্য বিস্মিত হওয়াটাই বেয়াকুবের লক্ষণ। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্রলীগের মধ্যে তৎকালীন কথিত শেখ মনি গ্রুপ এবং তোফায়েল গ্রুপের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে মুহসীন হলে এক লোমহর্ষক হত্যাকান্ড ঘটেছিল। ১৯৮৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর ওই ঘটনাকে উপজীব্য করে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় যে প্রচ্ছদ কাহিনী ছাপা হয়েছিল, সেখান থেকে উদ্ধৃত করছি, তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল মুহসিন হলের সাত হত্যা একটি উল্লেখযোগ্য কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার প্রথমবারের প্রধানমন্ত্রিত্বকালে ছাত্রলীগের এক জাঁদরেল নেতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী নির্যাতনের যে রেকর্ড সৃষ্টি করে গেছে, সেটা ভাঙা হয়তো তার সংগঠনেরও আর কোনো সদস্যের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। বর্তমান সরকারের প্রথম ১০০ দিন প্রমাণ করেছে-দশকের পর দশক পেরিয়ে যেতে পারে, কিন্তু ছাত্রলীগের মহান ঐতিহ্য ধরে রাখার মতো লড়াকু নেতাকর্মীদের অভাব এই বিশেষ ছাত্র সংগঠনটিতে কোনোদিনই হয় না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদের ভাষণে অবশ্য তারই সাংগঠনিক নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংগঠনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ছাত্রগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশের বিস্ময়কর কাহিনী দেশবাসীকে শুনিয়েছেন। মুল দল ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তাদের বিশাল অঙ্গসংগঠনে কেন অন্যান্য দলের ক্যাডারের প্রয়োজন পড়ে-এ প্রশ্নের জবাব অবশ্য শেখ হাসিনা দেননি। ছাত্রলীগের মারামারির ফলে নতুন একটি তথ্য জেনেও আমরা চমৎকৃত হয়েছি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যে পদাধিকারবলে তাদের ছাত্রসংগঠনেরও সাংগঠনিক প্রধানের পদ অলঙ্কৃত করেন, এ বিষয়টি অধিকাংশ দেশবাসীর জানা ছিল না।

শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ওই পদটি থেকে সরে দাঁড়ানোর পরই কেবল সংবাদমাধ্যমে এই বিশেষ পদ নিয়ে চর্চা শুরু হয়। আমজনতার ধারণা, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের দায় না নেয়ার কৌশল হিসেবেই শেখ হাসিনার এমন সিদ্ধান্ত। এই প্রচারণার বিপরীতে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে তার বক্তৃতায় জানিয়েছেন যে, আরপিওর বিধান মানতেই নাকি তিনি পদত্যাগ করেছেন। সমালোচকরা এখন সঙ্গত কারণেই জানতে চাইতে পারেন-আরপিওর বিধানটি মান্য করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এত বিলম্ব হলো কেন? সম্ভবত দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় রক্তারক্তির ঘটনাই শেখ হাসিনাকে আরপিওর বিধানের বিষয়টি হঠাৎ স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয় যে প্রশ্নটি উত্থাপনের অবকাশ রয়েছে, এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তিনি পদত্যাগপুর্ব সব সহিংসতা এবং সন্ত্রাসের দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিচ্ছেন কিনা? পুর্বেই উল্লেখ করেছি, দখল এবং সন্ত্রাসের মহোৎসবে আওয়ামী লীগের অন্যান্য অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠন বিশেষ করে শ্রমিক লীগ, যুবলীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ বেশ উৎসাহের সঙ্গেই ছাত্রলীগের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছে।

দিনবদল তিনঃ সরকার যে প্রকৃতপক্ষেই দিনবদলে বিশ্বাসী, সেটি প্রমাণ করতেই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাসগৃহের লিজ বাতিল করা হয়েছে। ১৯৮১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান এবং মহান মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর একটি বিপথগামী, ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর হাতে চট্টগ্রামে নিহত হওয়ার পর তৎকালীন মন্ত্রিসভার অনুমোদনক্রমে, জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং যথাযথ দলিল সম্পাদন করে মরহুম রাষ্ট্রপতির অসহায় পরিবারকে এই বাড়িটি দেয়া হয়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ১৯৮১ সালের জুন মাসের মধ্যেই সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বেগম খালেদা জিয়ার বরাবরে প্রয়োজনীয় দলিল সম্পাদন করা হয়। দীর্ঘ ২৮ বছর পর সরকার এখন দাবি করছে যে, সেই সময়ের সম্পুর্ণ প্রক্রিয়াটি নাকি অবৈধ ছিল। দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তির জন্য ইতোমধ্যেই বিখ্যাত বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান তার খ্যাতির প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে মন্তব্য করেছেন-এই বাড়িটিতে ২৮ বছর ধরে বেগম খালেদা জিয়া অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন।

ইসলামের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণাকারী আইনমন্ত্রী জনাব শফিক আহমেদই বা নেত্রীকে তুষ্ট করার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকবেন কেন। তিনি বলে বসেছেন, যে ব্লকে শহীদ জিয়ার পরিবারকে বাড়িটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, সেই ব্লকে দেশের কোনো বেসামরিক নাগরিককে জায়গা-জমি বরাদ্দ দেয়ার বিধান নেই। মুশকিল হলো, দেশের আমজনতাকে একেবারে নির্বোধ মনে করা ক্ষমতাবানদের ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আইনমন্ত্রী মহোদয়, আমরা ভুলি কি করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি বাড়িটি ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানানোর কারণ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন যে, ওই জমিতে বিডিআর হত্যাকান্ডে নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করে পরিবারপিছু দুটি করে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া হবে। একটিতে তারা বসবাস করবেন এবং অপরটি ভাড়া দিয়ে তাদের সংসার খরচ চালাবেন। ক্যান্টনমেন্টের যে ব্লকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক, একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানের পরিবারকে জমি বরাদ্দ দেয়া যায় না, সেই ব্লকে তুলনামুলকভাবে নিম্নপর্যায়ের নিহত কর্মকর্তাদের পরিবার কোন আইনে বসবাস করবে-তার উপযুক্ত ব্যাখ্যা আইনমন্ত্রীর কাছেই চাওয়া ব্যতীত আর তো কোনো উপায় দেখি না। আমাদের মহানুভব প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে যেসব পরিবার ফ্ল্যাটের বরাদ্দ গ্রহণ করবেন, তাদের আবার বাকি জীবন অবশ্যই দরিদ্র থাকার প্রতিজ্ঞা করতে হবে। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বরাদ্দ গ্রহীতা পরিবারের পুত্র-কন্যা অথবা যে কোনো সদস্য চাকরি কিংবা ব্যবসা করে আর্থিক সচ্ছলতার মুখ দেখা মাত্র রাষ্ট্র তাদের ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল করে সেই পরিবারকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করবে। বরাদ্দ গ্রহীতা কিংবা যারা ভবিষ্যতে সেখানে ভাড়া থাকবেন, তাদের মধ্যে কেউ কস্মিনকালেও রাজনীতির সঙ্গে কোনোরকম যুক্ত হওয়া মাত্র বরাদ্দ বাতিল করে তাদের বাস্তুচ্যুত করা হবে ইত্যাদি, ইত্যাদি। শুনেছি অনেক মন্ত্রী-এমপিও নাকি এখনও ক্যান্টনমেন্ট এলাকাতে বসবাস করছেন। এমনকি স্বয়ং বাণিজ্যমন্ত্রীর পৈতৃক বাসস্হানও নাকি একই এলাকায়। যাক, এসব অপ্রিয় প্রসঙ্গ উত্থাপন করে সরকারের মহৎ একটি কাজের ছিদ্রানুসন্ধান করে ফ্যাসিস্ট মনোভাবাপন্ন বলদর্পীদের আর রোষের শিকার হতে চাই না।

চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নীতিনির্ধারকের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তহীনতার অভিযোগ ছিল। বর্তমান সরকার ১০০ দিনে প্রমাণ করেছে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা অবশ্যই ডিজিটাল দর্শনে বিশ্বাসী। আমাদের মতো কিছু দুর্জন ব্যক্তি এই দেশে না থাকলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে ঘোষিত দিনবদলের সনদ তারা মাত্র ১০০ দিনের মধ্যেই নির্বিঘ্নে অনেকটাই বাস্তবায়ন করে ফেলতে পারত। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এবং ইসলামপন্হী কুপমন্ডুক ব্যক্তিদের বাধার কারণেই এখন পর্যন্ত ভারতকে করিডোর, মার্কিন-ভারত সম্প্রসারণবাদী জোটকে টাস্কফোর্স উপহার না দিতে পারার যন্ত্রণা ক্রমেই ক্ষমতাসীনদের সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য-বিবৃতিতে সেই ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার প্রকাশ জনগণ দেখতে পাচ্ছে। আশা করি, অন্যান্য মন্ত্রীও বিরোধী মতাবলম্বীদের শায়েস্তা করার মহান দায়িত্ব পালন না করে পিছিয়ে থেকে তাদের মন্ত্রিত্ব হারাতে চাইবেন না। ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে ডিজিটাল দিনবদলের সনদপ্রাপ্ত সরকারের পরবর্তী ১০০ দিন অধিকতর চাঞ্চল্যকর হওয়ার সব লক্ষণই দৃশ্যমান। ক্ষমতার দর্পে বেপরোয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎগতির সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য দেশবাসীর উন্মত্ত চালকের হাতে দ্রুতগামী গাড়ির অসহায় যাত্রীর মতো সিট বেল্ট বেঁধে আতঙ্কিত চিত্তে আল্লাহর নাম জপ করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।
(সুত্র, আমার দেশ, ১৬/০৪/২০০৯)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারত সোনার ডিম পাড়া হাঁস হারিয়েছে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫২



শেখ হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র-অপপ্রচার করছেন। ভারত চাচ্ছে বাংলাদেশে একটি অশান্তি হোক। কারণ ভারত একটি মসনদ হারিয়েছে। সোনার ডিম পাড়া হাঁস হারিয়েছে।

আওয়ামী লীগ প্রতিদিন একটি সোনার ডিম পেড়ে নরেন্দ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমানের এখনই সময়।

লিখেছেন শাহিন-৯৯, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৮




দেশ এখন বেশ বহুমুখী চ্যালেন্জ মুখাবেলা করছে বিশেষ করে ভারতের মিডিয়াগুলোর সর্বদা মিথ্যচার বেশ অস্বস্থিকর অবস্থা তৈরি হচ্ছে।
বর্তমান সরকার অবশ্য বেশ শান্ত মেজাজে সব কিছু চমৎকারভাবে হ্যান্ডেল করছে তবুও জনপ্রতিনিধির... ...বাকিটুকু পড়ুন

পত্রিকায় শেখ মুজিবের শাসন-আমল ১৯৭২,১৯৭৪

লিখেছেন রাকু হাসান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:০২



ইতিহাস বহমান নদীর মত। তাকে তার মত চলতে দেওয়াই শ্রেয়। সে নদীতে কেউ পূর্ণার্থে
স্নান কিংবা সে পানি পান করবে না ,সেটা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার । যে বই,ইতিহাস উগ্রবাদ,জঙ্গিবাদ কিংবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনধিকার চর্চা নয়, শান্তিরক্ষি ভারতে প্রয়োজন

লিখেছেন মোহাম্মদ সজল রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৫৫

বাংলাদেশে একজন রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় অভিযুক্ত এবং ইসকন সংগঠন থেকে বহিঃস্কৃত ধর্ম প্রচারক বিতর্কিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, তার মুক্তির জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের এক শ্রেণীর জনগণ যেভাবে ক্ষেপে উঠেছে, তাতে মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমরা উকিলরা কেউ চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াবো না , না এবং না

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২




সাবাস বাংলাদেশের উকিল । ...বাকিটুকু পড়ুন

×