somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় খালামণি, হৃদয়ের সবটুকু আবেগ দিয়ে তোমার সুস্থতা কামনা করছি।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক নারীকে দেখেছি সংগ্রাম করতে,অনেক বিখ্যাত নারীদের জীবন কাহিনী পড়েছি, কিন্তু খালামণির মত এত আত্মত্যাগ, তিতিক্ষা, সংগ্রাম নিজের চোখে আর কাউকে করতে দেখিনি। প্রিয় পাঠক, আমি অত ভাল লিখতে পারি না, হয়তো আবেগে অনেক ভুল লিখতে পারি, তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
এত বিষয় থাকতে খালামণিকে নিয়ে লিখছি এই কারণে যে আমাদের সমাজের নারীদের যে জীবন সংগ্রাম তার মূর্ত প্রতীক হিসেবে আমি খালামণিকে খুব কাছ থেকে দেখেছি বলে। শুরু করছি খালামণির বিবাহিত জীবনের শুরু থেকে – কারণ সেখান থেকেই প্রায় ৪০ বছরের বিবাহিত জীবনের ঘানি/গ্লানি/দুঃখ যাই বলেন না কেন তা বয়ে বেড়ানোর শুরু। আর বাবার বাড়িতে জীবনটা তার এমন ছিল না। ৪ সন্তানের সংসারের বড় মেয়ে আমার খালামণি। নাম সেলিনা। ডাক নাম শেলি। নানু রংপুর শহরে বেড়ে ওঠা আদরের মেয়েকে বিয়ে দিলেন ব্যাংকে চাকরি করা ছেলেকে দিয়ে। কিন্তু সেই হল কাল। সেই সময়ের প্রেক্ষাপটটা আমি অতটা ভাল জানি না। তবে যেটুকু শুনেছি যে কোন কারণেই হোক খালু ২/৩ বছরের মাথায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে শশুর বাড়ি চলে এলেন। এখানে এসে উনি শশুরের সংসারে বেশ আরাম আয়েশে জীবন যাপন করতে লাগলেন। তবে কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাবসায় জড়ায় পড়লেন। বেশ বন্ধুও জোগাড় হয়ে গেল। ঢুকে পড়লেন নেশার অন্ধকার জগতে। শুরু হল ব্যাবসায় মন্দা আর সংসারে টানাপড়েন। বলে রাখা ভাল যে ব্যাবসা শুরুর পরে আলাদা বাসায়ই থাকতেন খালামণি। খালুর যখন বেহাল দশা ততদিনে সংসারে ৩ মেয়ের আগমন। তাদের খরচ চালাতে প্রায় হিমশিম অবস্থা। একদিকে নেশা অন্যদিকে কর্মহীনতা এই দুই মিলে সংসার যায় যায়। অগত্যা নানু আবার খালামণিকে বাসায় ডেকে নিলেন। শুরু হল খালামণির কষ্টের জীবন। পি.টি.আই পাশ করে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। টানাপড়েনের মাঝেই ৩ মেয়ের লেখা পড়ার খরচ চালাতে থাকেন। এছাড়াও সংসারের টুকিটাকি খরচও খালামণিই করেন। নানুও অনেক সাহায্য করছেন। এরপর খালামণি ছোট ছোট বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়াতেন। এভাবে কিছুদিন বেশ ভালই চলতে থাকে। কিন্তু বিপদ শুরু হয় যখন প্রাইমারি স্কুলটা বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে মেয়েরাও বড় হতে থাকে। বলে রাখা ভাল যে আমার ২ মামা,নানা,নানী আর খালামণিরা একসাথেই থাকতেন। ওদিকে আমার বড় মামারও ৩ ছেলে। ৩ পরিবারের দায়িত্ব বড় মামার ঘাড়ে। তাই বাধ্য হয়ে খালুর গ্রামের বাড়ির জমি বিক্রির টাকা দিয়ে কেনা জমির উপর কোনরকম একটা বাড়ি করে থাকতে থাকেন খালামণিরা। বাড়ি বদল হলেও খালুর অভ্যাস বদল হয়নি। তাই সংসার চালাতে খালামণিকে আশ্রয় নিতে হয় লোনের। প্রথমে নিজের নামে লোন করলেও সংসারের খরচ বাড়তে থাকায় এলাকার অনেক পরিচিত মহিলার নাম দিয়ে লোন করতে থাকেন খালামণি। বড় মেয়ের ডিগ্রি পরীক্ষার মাঝেই বেসরকারি মহিলা কলেজের এক পাষণ্ড প্রভাষকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। বিয়ের পরও খালামণিকেই পড়াশুনার খরচ চালাতে হত। পরে অবশ্য ওদের সংসার টিকেনি। সে আর এক কাহিনী। এর ওর কাছে ধার করে চালাতে থাকেন সংসার। একজন মাত্র মহিলার দ্বারা সংসার চালানো যে কি কষ্টের তা যারা চালান শুধু তারাই বুঝতে পারবেন, এছাড়া পৃথিবীর আর কেউ এই গ্লানি বুঝতে পারবে না, এ কথা আমি হলফ করে বলতে পারি। যাই হোক অনার্স পরীক্ষার মাঝামাঝিতে মেঝ মেয়েরও পেট্রোবাংলায় চাকুরিরত সুপাত্রের সাথে বিয়ে হয়ে যায়। ছোট মেয়ে নিজেকে খুব চালাক ভাবে, কিন্তু ওর মত বোকা কমই আছে। মায়ের এত দুর্গতি দেখেও ও শিক্ষা নেয়নি। পালিয়ে বিয়ে করে এক নেশাগ্রস্ত বেকার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ছেলেকে। ফল যা হবার তাই। গ্লানিময় জীবন! এদিকে সংসার চালাতে চালাতে কখন যে ঋণের বোঝা ১৫ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে গেছে তার হিসাব কষতে পারেন নি খালামণি। সংসার খরচ, ডায়াবেটিস + হাইপার টেনশন + হার্টের অসুখের খরচ তার উপর ঋণের বোঝা সব মিলিয়ে দিন দিন বাড়তে থাকে অসম্ভব চাপ। সংসারের জটিল যাঁতাকলে পড়ে বিক্রি করে দিতে হয় তিল তিল করে গড়ে তোলা শখের বাড়িটা। গত দুই বছরে নানা রোগে জড়িয়ে পড়ে শরীরের উপরেও চলছে নির্যাতন। এর মাঝে ২ বার হার্ট ব্লক হয়েছে। ডাক্তার বলেছে হার্টে রিং বসাতে। কিন্তু মেয়েদের সংসার থেকে তো আর কোন সাহায্য পাওয়া যায় না তাই ওষুধ খেয়ে না খেয়ে দিন পার হচ্ছে খালামণির। কোন রকমে সাহায্য সহযোগিতায় চলছে বেদনা বিধুর দিন গুলো। মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে ছোট মেয়ের এক সন্তানের সংসারটাও এখন খালামণির ঘাড়ে। অফুরান মানসিক শক্তি নিয়ে খালামণি এখন লালবাগ মোড়, কে ডি সি রোডে আমার ছোট্ট দোকানটা চালাচ্ছে। খালামণি তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠ।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×