সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জাতিয় ঐক্যের অর্থ কি আওয়ামিলীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা ? নাকি বিএনপি-কে ক্ষমতায় বসিয়ে দিলেই সব কিছু অটোমেটিক কায়েম হয়ে যাবে।গণতন্ত্রের অর্থ যদি হয় যে কোন উপায়ে জামাত/বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়া সেই গণতন্ত্রের প্রয়োজন নেই আমার।আর দুটি দলের মধ্যে আলোচনাই যদি হয় জাতিয় ঐক্য সে ঐক্য দিয়ে কি হবে তা বোধগম্য নয় আমার কাছে।দু'টি দলের রাজনিতী/সমাজনিতী ও লক্ষ সম্পুর্ন ভিন্ন।দু'টি দলের রাজনৈতিক আদর্শ হোচ্ছে উত্তর মেরু আর দক্ষিন মেরুর তাহোলে কেনো ঐক্যের প্রয়োজন।একটি দলের মূল শক্তি জঙ্গীবাদ আর অপরটির অবস্থান ঠিক তার বিপরীত।এখানে ঐক্য হয় কি করে।জঙ্গীদের সাথে আলোচনা করে জঙ্গীবাদ বিরোধী ঐক্য!!এটাই হোচ্ছে আমাদের রাজনিতীর চোরাগলি।এই গোলক ধাধাঁর আবর্তেই নিমজ্জিত আজকের বাংলাদেশের রাজনিতী।
যদি জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হোতেই হয় সেটা হোতে হবে সাধারণ মানুষের ঐক্য।সাধারন মানুষকে জাগ্রত করার মাধ্যমেই ঐক্যবদ্ধ হওয়া সম্ভব।১৯৭১ সালেও সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়নি আসলে।যারা এই কথাগুলো বলেন ,তারা খুব ভুল কথাই বলে থাকে।তিক্ত সত্য হলো ৭০-এর নির্বাচনেও ৩০% ভোট পড়েছিলো ৬দফার বিরুদ্ধে।মুসলিম লীগ/জামাত/সকল মৌলবাদি দল ও পিকিং পন্থি বামরাও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তির পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছিলো।সেটা নিছক একটি ক্ষুদ্র অংশ কিন্তু ছিলোনা।আর স্বাধীনতার পর আওয়ামিলীগ বিরোধী ক্ষমতালিপ্সু একটি অংশ যোগ হয়েছে সেই অংশের সাথে ।যাদের মূল শ্লোগান ছিলো ভারত জুজু।সেই ৩০% অপশক্তিকে নিয়ে কি জাতিকে ঐক্যব্দ্ধ করা আদৌ সম্ভব? না সম্ভব নয় -বরং এই ৩০% শক্তিকে বাইরে রেখেই ঐক্যবদ্ধ হোতে হবে দেশপ্রেমিক সকল নাগরিকদের।দেশের প্রতি বিন্দুমাত্র কমিটমেন্ট যাদের নেই তাদের সাথে ঐক্য হয়না।
জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সফল হোতে হলে সাধারণ মানুষকে আস্থায় এনে সম্পৃক্ত করতে হবে । এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।আর এর প্রথম শর্তই হোচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবেনা।এমনকি বিরুদ্ধ শক্তির মতকেও প্রকাশ করতে দিতে হবে।যত স্বাধীনভাবে মানুষ মত প্রকাশ করতে পারবে ততই শক্তিশালি হবে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ঐক্য।সাধারণ মানুষই তাদের সকল অপব্যাক্ষ্যার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে দিবে মুক্ত মত প্রকাশের মাধ্যমে।একটু চিন্তা করে দেখুন যুক্তিতে না টিকতে পেরেই কিন্তু জঙ্গীরা কলমের জবাব দিচ্ছে চাপাতি ও বুলেটের মাধ্যমে।জঙ্গীদের মুসলিম বা বাংলাদেশের নাগরিক ভাবার কোন কারন নেই।এদের কোন দেশ ও দল হয়না।যদি হোতো তাহলে দেশের ক্ষতি হয় কিংবা সাধারন মানুষের জিবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কাজ করা সম্ভব নয়।আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ভুল ধারণা ছিলো এই জঙ্গীদের নিয়ে।তারা মনে করতো এরা মুসলিম ,তাই এদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত লেগেছে বিধায় এরা অস্র তুলে নিয়েছে।একরকম মৌন সমর্থন ছিলো তাদের প্রতি।কিন্তু ২/৩টি ঘটণায় তাদের সেই ভ্রান্ত ধারনার শতভাগ ভুল ভেঙ্গেছে বলেই মনে হয় আমার।তারাবির নামাজ না পড়ে ও ঈদের জামাতে যারা হত্যাযজ্ঞ চালায় তারা আর যাই হোক মুসলমান বা বাংলাদেশের নাগরিক হোতে পারেনা।দেশের উন্নয়নে বাধা দেয় এমন দেশপ্রেমিক পৃথিবিতে আছে কিনা খুজে দেখুন দয়া করে।
সাধারন মানুষকে আস্থায় ও ঐক্যবদ্ধ করতে হোলে তথ্যের আদান -প্রদান খুব জরুরী।মানুষের সহযোগিতা চাইলে তাদের কাছে তথ্য চাইলে তাদেরকেও সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে হবে।সকল ঘটণার আপডেট ও ফলোআপ খুব জরুরী বিভ্রান্তি রুখতে হলে।ভুল হলে তার প্রতিকার করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।মানুষকে নির্বোধ মনে করে জজ মিয়া কাহিনি সরবরাহ না করাই বাণ্ছনিয়।মানুষের মতামতের গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে।সাধারন মানুষ ভুল মত গ্রহণ করলে সেটাকে খন্ডন করতে হবে যৌক্তিক প্রমাণ দেখিয়ে।প্রতিটি নাগরিকের অধিকার আছে প্রশ্ন করার।দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কিছু বাদ দিয়ে সকল তথ্য জানার অধিকার আছে প্রত্যেক নাগরিকের।এগুলো নিশ্চিত করলে সাধারণ মানুষ নিজের ও সমাজের তাগিদে স্বেচ্ছায় শহযোগিতা করবে সকল বাহিনি ও সরকারকে।মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে অসঙ্গতি দেখলেও মানুষ কথা বলবেনা।বিপদ আসছে জানলেও অবগত করবেনা হয়রানির ভয়ে।
নিউ ইয়র্কে একটি কথা খুব বেশি করে মানুষের মনে গেথে দেওয়া হয়েছে-"ইফ ইউ সি সামথিং ,সে সামথিং -ডোন্ট কিপ ইট ইয়োরসেল্ফ" নিউ ইয়র্কার কিপ সেফ নিউ ইয়র্ক"/যদি বারো-মিশালি মানুষের শহর নিউ ইয়র্ক সফল হোতে পারে তাহোলে আমরা অধিকাংশ এক জাতি এক ভাষার মানুষ কেনো পারবোনা !!
বিশিষ্ট অর্থনিতিবিদ আবুল বারাকাত সহ আমরা ক্ষুদ্র কিছু মানুষ অনবরত চিৎকার করেই যাচ্ছি জঙ্গীবাদের অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ না করে এর নির্মূল করা দিবা স্বপ্নের মতই অবাস্তব।কিন্তু সত্যি কথা হলো এর প্রতিকারে বাস্তব কোন পদক্ষেপ আজো পরিলক্ষিত হয়নি তেমন জোড়ালোভাবে।এতেই প্রমাণ হয় অর্থনৈতিক শক্তির কতটা শক্তি।জঙ্গীবাদের অর্থায়ন বন্ধ না করতে পারলে কোনদিনই শেষ হবেনা এর বিস্তার।বাংলাদেশের সবচাইতে শক্তিশালী অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ঘটে দল হিসেবে জামাত ও জঙ্গীদের প্রতিষ্ঠানে।এগুলো সরকারকে বাজেয়াপ্ত করতে হবে।এই অর্থ ব্যায় করতে হবে জঙ্গীবাদ নির্মূলে।আইন করে বন্ধ করতে হবে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনিতী ও ব্যাবসা বানিজ্য।সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে এই অপশক্তির সকল দোষরদের।কোন যুদ্ধপরাধীর সন্তান ,আত্মিয় ও তাদের আদর্শে বিশ্বাসি কাউকে সরকারি চাকুরিতে নিষিদ্ধ করতে হবে।সমাজসেবামূলক কোন প্রতিষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া যাবেনা।কোনরকম অনুকম্পা পাওয়ার যোগ্য এরা নয়।নিশ্চই স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরে হোলেও এটা উপলব্দী করা গেছে আজ।শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির জন্যই এরা বার বার আইনের ফাক ফোকর দিয়ে বেড়িয়ে এসে আবারো সম্পৃক্ত হোতে পারছে জঙ্গী তৎপরতায়।২য় বিশ্বযুদ্ধের পরাজিত শক্তিকে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সমগ্র বিশ্বে।নুন্যতম মৌলিক অধিকারও দেয়না কোন রাষ্ট্র তার সাথে সম্পৃক্ত কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে।
যে দেশে জামাত/শিবির ও তাদের ত্রানকর্তারা বিদ্যমান-সেই দেশে আইএস/আল-কায়েদা বা তালেবান খুজে দেখা কি খুব জরুরী।৭১-এর ভয়াবহতা যারা দেখেছে সেই শহিদের সন্তান ও পরিবারকে জিজ্ঞেস করে দেখুন।৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই ভুমিকে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছিলো সেদিন।সেটা অতিক্রম করতে পারেনি হিংস্র আইএস আজও।কাজেই শর্ষের মধ্যে ভুত রেখে জঙ্গীবাদ দুর করা যাবেনা।
সর্বোপরি এখানে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোন রাজনিতী করার অবকাশ নেই।সবাইকে রাজনিতী করতে হবে ১৯৭১ সালকে স্যালুট করে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৪:৩৪