somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২৬)

২৬ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রভূর রহম পেতে লাখো জন আরাফার মাঠে সমবেত,
ক্ষমা লভি আমাদেরো যদি মনের কালিমা ধুয়ে যেত।

হামদ ও সানা সবটুকু আল্লাহ জাল্লা জালা-লুহুর শানে আজিমে:

আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি লা- তারাহুল উয়ূন, ওয়ালা তুখা-লিতুহুজ্জুনূন, ওয়ালা- ইয়াছিফুহুল অ-ছিফূন। ওয়ালা- তুগাইয়্যিরুহুল হাওয়াদিদ। ওয়ালা- ইয়াখশাদ্দাওয়ায়ির। ইয়া'লামু মাসাকি-লাল জিবাল ওয়া মাকাহিলাল বিহার। ওয়া আদাদা কতরিল আমতার। ওয়া আদাদা অরাকিল আশজার। ওয়া আদাদা মা- আজলামা আলাইহিল্লাইল। ওয়া আশরাকা অালাইহিন্নাহা-র। ওয়ালা- তুওঅরি- মিনহু ছামা-য়ুন ছামাআ। ওয়ালা আরদুন আরদা। ওয়া্লা বাহরুন মা ফি কারি। ওয়ালা- জাবালুন মা- ফি ওয়ারি। হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম। লা- তা'খুজুহু ছিনাতুও ওয়ালা- নাউম। হুআল আহাদুচ্ছমাদ। আল্লাজি লাম ইয়াত্তাখিজ ছ-হিবাতাও ওয়ালা- ওলাদ। ওয়া খলাকাল খলকা ওয়া আহছ-হুম আদাদা। ওয়া রফাআচ্ছামাআ বিকুদরতিহী বিগইরি আমাদ। ওয়া বাছাতাল আরদা বিকুদরতিহী আলা মা ফি জামাদ। ওয়া কচ্ছামার রিযকা ফালা ইয়ানছা- বিখলকিহী আহাদ। ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুআন আহাদ। হুয়াল আলিয়্যুল আজিম।

দরুদ ও সালাম প্রিয়তম সরকারে দোজাহানের রওজায়ে আতহারে:

ওয়াচ্ছালাতু ওয়াসসালামু আলা হাবিবিনাল মুসতাফা। আল্লাজি আ'তাহু খুলুকা আদাম। মা'রিফাতা শীশ। শুযাআ'তা নূহ। খুল্লাতা ইবরাহীম। লিছানা ইসমাঈল। রিদাআ ইসহাক। ফাসাহাতা ছা-লিহ। হিকমাতা লূত। বুশরা ইয়া'কূব। জামালা ইউসুফ। ছবরা আইয়্যুব। ত্ব-আতা ইউনূস। জিহাদা ইউশা। ছওতা দাউদ। হুব্বা দানিয়াল। অকারা ইলিয়াস। যুহদা ঈসা। কুওয়্যাতা মূসা। হাইবাতা সুলাইমান। ওয়া ইলমাল খিদর। সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়া আলা আলিহী ওয়া আসহাবিহী ওয়া আতবায়িহী ইলা ইয়াওমিদ্দিন।

আরাফার ময়দান: ইতিহাসের আলোকে

আরাফার ময়দান। একটি ইতিহাস, একটি মর্যাদাপূর্ণ ময়দান। একটি ফরজ ইবাদতের কেন্দ্রস্থল। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আরাফার ময়দানে অবস্থানই হচ্ছে হজ’।

৯ জিলহজ (বাংলাদেশ সময় ৮ জিলহজ)। হাজীরা বাদ ফজর মিনা থেকে আরাফার ময়দানের দিকে রওনা হন এ ময়দানের উদ্দেশ্যে। হজের ফরজগুলোর মাঝে এ ময়দানে অবস্থান করা অন্যতম। এ ময়দানে নির্ধারিত দিনে হাজীদের অবস্থান না করলে হজই আদায় হবে না। এতেই স্থানটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য ফুটে উঠে।

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ময়দানেই দিয়েছেন বিদায় হজের ভাষণ। তিন পাশে পাহাড় ঘেরা এ ময়দানটিতে অবস্থানের তাৎপর্য কেন এতো বেশি? জেনে নেয়া যাক এর আদ্যোপান্ত।

আরাফার ময়দানে হাজীরা: ইতিহাস ও তাৎপর্য

আরাফার ময়দান কোথায়? পবিত্র নগরী মক্কা থেকে ১৩-১৪ কিলোমিটার পূর্বে জাবালে রহমতের পাদদেশে আরাফার ময়দান অবস্থিত। এর দৈর্ঘ এবং প্রস্থ যথাক্রমে দুই কিলোমিটার। ঐতিহাসিক এ ময়দানটি তিন দিক থেকে পাহাড় পরিবেষ্টিত। এ ময়দানের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে রয়েছে মক্কা-হাদাহ-তায়েফ রিং রোড। এ রোডের দক্ষিণ পাশেই আবেদি উপত্যকায় অবস্থিত মক্কার ঐতিহাসিক ‘উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়’। উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফার ময়দানের সীমানাও প্রায় ১ কিলোমিটার। সেখান থেকে দক্ষিণে গিয়ে মসজিদে নামিরায় আরাফার ময়দানের সীমানা শেষ হয়েছে।

আরাফা ময়দানের ইতিহাস:

আরাফার ময়দানের ইতিহাস হজরত আদম আলাইহিস সালাম ও আদি মাতা হাওয়া আলাইহাস সালাম এর সঙ্গে জড়িত। আদম আলাইহিস সালাম ও হাওয়া আলাইহাস সালাম মহান আল্লাহর নির্দেশে বেহেশত থেকে বের হওয়ার পর পৃথিবীতে সর্বপ্রথম তাদের পরস্পর সাক্ষাৎ এই আরাফাত ময়দানে হয়। আদম আলাইহিস সালাম আরাফাত ময়দানে জাবালে রহমতের ওপর বিশ্রাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে অবস্থানকালে দেখতে পান, হাওয়া আলাইহাস সালাম জেদ্দার দিক থেকে আরাফাতের ময়দানের দিকে আসছেন। তখন আদম আলাইহিস সালাম দৌঁড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেন এবং অঝোরে কাঁদতে থাকেন। এ সময় আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম আসমানের দিকে তাকান।

অত:পর মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের দৃষ্টি থেকে পর্দা উঠিয়ে দিলে তাদের দৃষ্টি আল্লাহর আরশের ওপর গিয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

فَتَلَقَّى آدَمُ مِن رَّبِّهِ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

‘অত:পর আদমকে তার প্রতিপালক কতিপয় বাক্য শিখিয়ে দেন। এতে রব তার প্রতি মনোযোগী হন, নিশ্চয়ই তিনি তওবা কবুলকারী ও দয়ালু।’ (সূরা বাকারা : ৩৭)।

এছাড়াও আমাদের নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণ এ ময়দান সংলগ্ন জাবালে রহমত পাহাড়ে দাঁড়িয়ে দিয়েছিলেন। একারণেও স্থানটি উম্মতে মুহাম্মদির কাছে স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান।

আরাফার ময়দানে অবস্থানের বিধান:

হাজীদের জন্য আরাফার ময়দানে অবস্থান করা ফরজ। ৯ জিলহজ্ব সূর্য ঢলা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার ময়দানে হজের নিয়তে কিছুক্ষণ অবস্থান করলেই এ ফরজ আদায় হয়ে যাবে। তবে সূর্যাস্তের আগে কোনোভাবেই আরাফার ময়দানের সীমানা ত্যাগ করা যাবে না। না হয় দম আদায় ওয়াজিব হবে। নির্ধারিত সময়ের আগে ও পরে আরাফার ময়দানে অবস্থান করলে হজের বিধান পালন হবে না। তবে আরাফাহ দিবসের রাতে আরাফার ময়দানে অবস্থান করা সুন্নত।

আরাফার ময়দানের আমল:

৯ জিলহজ্ব বাদ ফজর থেকেই আরাফার ময়দানের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রত্যেক হাজীকে এ দিন সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার আগেই অর্থাৎ জোহরের আগেই আরাফার ময়দানে এসে হাজির হওয়া আবশ্যক। এ ময়দানে প্রদত্ত খোতবা শ্রবণ করে আল্লাহ তাআলার দরবারে দোয়া ও ইসতেগফারের মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করতে হয়। এ দিনটি মহান আল্লাহ তাআলার নিকট অন্য দিনগুলোর থেকে আলাদা এবং এ দিনের ইবাদাত-বন্দেগির সাওয়াব অন্য দিনের তুলনায় দিগুণ।

আরাফাতের ময়দানে হজ পালনকারীদের জন্য রয়েছে কিছু করণীয়। যা পালন করা অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ-

এক. মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করে একনিষ্ঠ তাওবার সঙ্গে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওয়ানা হওয়া।

দুই. মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে আসার নিয়তে গোসল করা; সম্ভব না হলে ওজু করে আরাফায় প্রবেশ করা।

তিন. ৯ জিলহজ সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার আগেই অর্থাৎ দুপুর ১২ টার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পুরো সময় অবস্থান করা ওয়াজিব।

চার. নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে নামিরাসহ আরাফাতের ময়দানের যেকোনো জায়গায় অবস্থান করা এবং নিজ নিজ জায়গায় নামাজ আদায় করা। অর্থাৎ জোহরের সময় জোহর এবং আসরের ওয়াক্তে আসর নামাজ আদায় করার এবং দোয়া ইসতেগফার করা।

জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে মসজিদে নামিরায় জোহর ও আসরের জামাত এক আজানে দুই ইকামাতে (জময়ে’ তাক্বদিম) একত্রে আদায় করলে একত্রে দুই ওয়াক্ত আদায় করা করা যাবে। কিন্তু তাবুতে বা অন্য কোনো স্থানে একত্রে আদায় না করে আলাদা আলাদা আদায় করা।

পাঁচ. আরাফার দিনে দুই হাত উত্তোলন করে বেশি বেশি দোয়া করা। বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ পূর্ববর্তী নবী রাসুলগণ যে দোয়া পাঠ করেছেন, তা পাঠ করা। আরাফার ময়দানের অন্যতম দোয়া হলো,

لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل قدير

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির।’

ছয়. পঞ্চ ইন্দ্রিয় তথা চোখ, কান, নাক, জিহ্বা তথা স্পর্শসহ যাবতীয় হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা। হাদিসের পরিভাষায় যে ব্যক্তি তার কান, চোখ ও জিহ্বাকে সঠিক কাজে ব্যয় করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন।

সাত. বিশেষ করে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দরূদ প্রেরণ হলো আরাফাতের ময়দানের সর্বোত্তম আমল।

আট. সম্ভব হলে আরাফাতের ময়দানে সিজদায় দোয়া ও ইসতেগফারের মাধ্যমে সময় অতিবাহিত করা।

নয়. সূর্যাস্তের পর সঙ্গে সঙ্গে মাগরিব না পড়ে মুজদালিফার দিকে রওয়ানা হওয়া।

অন্যান্যদের জন্য আরাফা দিবসের আমল:

এক. রোজা পালন করা। এটা এই দিনের সর্বোত্তম আমল। সহিহ মুসলিম শরিফের এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আরাফার দিবসের রোজা, পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়।’ তবে এ রোজা হাজীদের জন্য নয়, যারা হজে যায়নি তাদের জন্য। হাজীদের জন্য আরাফার দিবসে রোজা রাখা মাকরুহ। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের সময় আরাফার দিবসে রোজা রাখেননি। বরং সবার সম্মুখে তিনি দুধ পান করেছেন। (মুসলিম)

ইকরামা থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এর বাড়িতে প্রবেশ করে আরাফার দিবসে আরাফার ময়দানে থাকা অবস্থায় রোজা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফার ময়দানে আরাফার দিবসের রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। (মুসনাদে আহমদ: ২/৩০৪)

দুই. তাকবিরে তাহরিমাসহ জামাতে নামাজ আদায় করা। বেশি বেশি সিজদা করা অর্থাৎ নফল নামাজ পড়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বেশি বেশি সিজদা করা তোমার দায়িত্ব। কেননা, তুমি যদি আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করো তাহলে আল্লাহ তোমার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন, আর একটি গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।’ (সহিহ মুসলিম: ৭৮৮)

তিন. পুরুষের জন্য উচ্চ আওয়াজে একাকি তাকবির পাঠ করা। মহিলাগন নিম্নস্বরে তাকবির বলবেন।

চার. আরাফার দিনে বেশি বেশি দুআ পাঠ করা। আরাফার দিনের উত্তম দোয়া হলো, যেগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও পূর্ববর্তী নবীগন আলাইহিমুস সালাম পাঠ করেছেন। ওই সব দুআর অন্যতম হলো,

لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل قدير

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদির।’ এ ছাড়া আরাফার দিনের দোয়ায় আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার দোয়াও করা। আলেমরা

سُبْحَان الِلّه وَ الْحَمْدُ لِلّهِ وَ لآ اِلهَ اِلّا اللّهُ، وَ اللّهُ اَكْبَرُ وَلا حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ اِلَّا بِاللّهِ الْعَلِىّ الْعَظِيْم

‘সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লা- হাওলা ওয়ালা- কুওয়াতা ইল্লা- বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম’ বেশি বেশি পাঠ করার কথা বলেন।

পাঁচ. চোখ, কান ও জিহ্বাকে হারাম কাজ থেকে বিরত রাখা। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আরাফার দিবসে যে তার কান, চোখ, জিহ্বাকে সঠিক কাজে ব্যয় করবে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (শোয়াবুল ঈমান: ৩৭৬৬)

ছয়. কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা। কুরআনের অর্থ ও তাফসির পাঠ করা।

সাত. হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দরূদ পাঠ করা।

আট. সৎ কাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজ থেকে অন্যকে বিরত রাখা।

পবিত্র কুরআন হাদিসের আলোকে আরাফা দিবসের ফজিলত:

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে,

وَالْفَجْرِ وَلَيَالٍ عَشْرٍ وَالشَّفْعِ وَالْوَتْرِ

'শপথ উষার। শপথ ১০ রজনীর, শপথ জোড় ও বেজোড়ের। (সূরা ফজর: আয়াত নং-১-৩)।

এ আয়াতে জোড় বলতে ঈদুল আজহার দিন আর বেজোড় বলতে আরাফা দিবসকে বুঝানো হয়েছে। হজরত জাবির রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জোড় ও বেজোড়ের এ ব্যাখ্যাই করেছেন (তাফসিরে ইবনে কাছীর ও মাআরিফুল কোরআন), অবশ্য জোড় বেজোড়ের অন্যান্য ব্যাখ্যাও রয়েছে।

হাদীসে আরাফার দিবসের অনেক ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। আরাফার ময়দানের হাজীদের নিয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন। এ দিন হাজীদের ওপর বিশেষভাবে মহান আল্লাহর রহমত বর্ষণ হয় এবং জাহান্নামিদের অধিক পরিমাণে মুক্তি দেওয়া হয়। এছাড়াও বান্দার গোনাহ মার্জনার কারণে এই দিন শয়তান চরমভাবে অপমানিত হয়। তাই আরাফাত আল্লাহ প্রদত্ত একটি শ্রেষ্ঠ নেয়ামত।

এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন আরাফাতের দিন আসে, তখন মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার নিকটতম আসমানে আসেন। হাজীদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন এবং বলেন যে, দেখ, আমার বান্দাদের দিকে, তারা আমার কাছে এসেছে এলোমেলো কেশে, ধুলাবালি গায়ে, ফরিয়াদ করতে করতে বহুদূর-দূরান্ত থেকে। আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। তখন ফেরেশতারা বলেন, হে আল্লাহ! অমুককে তো বড় গোনাহগার বলা হয়। আর অমুক পুরুষ ও অমুক স্ত্রীকেও। প্রত্যুত্তরে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি তাদেরও ক্ষমা করে দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এমন কোনো দিন নেই, যাতে জাহান্নাম থেকে অধিক পরিমানে মুক্তি দেওয়া হয়ে থাকে আরাফাতের দিন অপেক্ষা। (শরহে সুন্নাহ)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, শয়তানকে কোনো দিন এত অধিক অপমানিত, ধিকৃত, হীন ও রাগান্বিত দেখা যায় না আরাফাতের দিন অপেক্ষা। যেহেতু সে দেখতে থাকে যে, বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমত নাজিল হচ্ছে এবং তাদের বড় বড় গোনাহ ক্ষমা করা হচ্ছে। কিন্তু যা দেখা গিয়েছিল বদরের দিনে; তা ব্যতীত। কেউ জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! বদরের দিন কী দেখা গিয়েছিল? উত্তরে তিনি বলেন, সেদিন যখন সে নিশ্চিতরূপে দেখছিল যে, জিবরাইল আলাইহিস সালাম ফেরেশতাদের সারিবন্দি করছেন (মালেক মুরসালরূপে)।

আরাফাত দিবস দুআ কবুল হওয়ার সময়। এ দিনের দুআই শ্রেষ্ঠ দুআ। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সব দুআর শ্রেষ্ঠ দুআ হলো আরাফাতের দিনের দুআ। (তিরমিজি : ৩৯৩৪)।

হাদিসে আরো আছে, আরাফাতের দিন বিকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় উম্মতদের (হাজীদের) জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন। উত্তর দেওয়া হলো অন্যের প্রতি জুলম ব্যতীত সব গোনাহ আমি ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু আমি মজলুমের পক্ষে তাকে পাকড়াও করব। (ইবনে মাজাহ : ৩১২৭)।

আরাফার ময়দানে খুৎবা:

হাজীদের উদ্দেশ্যে এবছর হজের খুতবা দিয়েছেন মসজিদে নববির সিনিয়র ইমাম ও খতিব, মদিনা সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি শায়খ ড. হুসাইন আলে শাইখ। আরাফাতের ময়দানে যুহরের ওয়াক্তে এক আজান ও দুই একামতে দুই রাকাত করে যুহর ও আসর একসঙ্গে আদায় করা হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। এই নামাজের পরই ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরার মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দেন হজের খতিব।

সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ শাইখ হুসাইনকে এ বছর আরাফার খতিব নিয়োগ করে রাজকীয় ডিক্রি জারি করেন। নিয়মানুযায়ী রাষ্ট্র প্রধান বা তার নিযুক্ত প্রতিনিধিই কেবল এ খুতবা দিতে পারেন।

ইসলামের ইতিহাসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম অষ্টম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর হজের আমির নিযুক্ত করেন স্থানীয় সাহাবি হজরত আত্তাব বিন উসাইদ উমাওয়ি রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুকে। পরের বছর নবম হিজরি মদিনা থেকে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান হজরত আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুকে। দশম হিজরিতে বিদায় হজে আরাফার ময়দানে নিজের কসওয়া নামক উটের পিঠে বসে সর্বপ্রথম আরাফার খুতবা দেন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তার পর থেকে প্রতি বছর মুসলিম খলিফা বা তার প্রতিনিধি এ খুতবা দিয়ে আসছেন।

আলে সউদ শাসনামলে বাদশাহর প্রতিনিধি হিসেবে ১৩৪৪ হিজরি থেকে ১৩৭৬ হিজরি পর্যন্ত খুতবা প্রদান করেন শাইখ আবদুল্লাহ বিন হাসান বিন হুসাইন আলে শাইখ, ১৩৭৭ থেকে ১৪০১ হিজরি পর্যন্ত শাইখ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ বিন হাসান আলে শাইখ, ১৩৯৯ হিজরি শাইখ সালেহ বিন মুহাম্মদ আল লাহিদান, ১৪০২ থেকে ১৪৩৬ হিজরি পর্যন্ত শাইখ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আলে শাইখ, ১৪৩৭ হিজরিতে শাইখ ড. আবদুর রহমান আস সুদাইস ও ১৪৩৮ হিজরিতে শাইখ ড. সাদ বিন নাসের শাছারি।

এই সিরিজের আগেকার পোস্টগুলো। ইচ্ছে করলে ঘুরে আসতে পারেন পেছনের পর্বগুলোয়-

বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৩)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৪)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৫)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৬)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব৭)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৮)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৯)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১০)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১১)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১২)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১৩)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১৪)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১৫)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১৬)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১৭)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১৮)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১৯) ব্লগে দেড়শোতম পোস্ট
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২০)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২১)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২২)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২৩)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২৪)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২৫)

'বাইতুল্লাহর মুসাফির' সিরিজের এই পর্বগুলো যারা নিয়মিত পড়ছেন, মন্তব্যে আসছেন এবং গুরুত্বপূর্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন, সর্বোপরি পাশে থেকে প্রেরনা দিয়ে এগিয়ে যাওয়ায় উতসাহ দিয়ে যাচ্ছেন সকলকে হৃদয় নিংড়ানো শুভেচ্ছা। ভাল থাকুন নিরন্তর।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৯:২৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×