ক্লোজ ভিউতে পবিত্র বাইতুল্লাহ এবং মাকামে ইবরাহীম।
আলহামদুলিল্লাহ! সকল শুকরিয়া মহান রবের জন্য, আমার মালিকের জন্য যার সীমাহীন দয়ায় বেঁচে আছি। যিনি দয়া দিয়ে-মায়া দিয়ে-অফুরন্ত ক্ষমা দিয়ে, কৃপা দিয়ে-রহম দিয়ে-করম দিয়ে, শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষার বৈচিত্র দিয়ে, খাবার দিয়ে-পানি দিয়ে-পানীয় দিয়ে, দিনের আলো-রাতের জোছনা দিয়ে, প্রেম-ভালবাসা-প্রনয় দিয়ে-দহন-প্রতাপ-তাপ বিলিয়ে বাঁচিয়ে রাখেন গোটা সৃষ্টি জগত। অপরূপ সৌন্দর্য্যে ভরপুর নয়নাভিরাম, মনমুগ্ধকর আকাশ-পৃথিবীকে সাজিয়ে রেখেছেন নক্ষত্র-নিহারিকা-নদী-সাগর-বৃক্ষতরু-ঝর্না-ছায়ার মোহনীয় কমনীয়তায়। বিপুলা এ পৃথিবীর অবারিত সৌন্দর্য্য-সৌকর্যে বিমোহিত প্রকৃত মানব হৃদয় অজান্তেই বুঝি মহান স্রষ্টার কাছে মস্তক অবনত করে দেয়! সৃষ্টি সুষমা দর্শনে অলক্ষ্যেই বুঝি তার কন্ঠে ধ্বনি-প্রতিধ্বনি করে ওঠে 'সুবহানাল্লাহ!' 'কতই না মহান আপনি, প্রভূ মহিয়ান!'
সংখ্যাতীত দরুদ ও সালাম প্রিয় নবী, প্রিয় হাবিব, প্রিয় শাফিউ'ল উমাম, সাইয়্যেদুল কাওনাইন ওয়াসসাক্কালাইন, ইমামুল আম্বিয়া ওয়ালমুরছালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র রূহের প্রতি, তাঁর পবিত্র আহাল-আওলাদ, আজওয়াজায়ি মুতাহহারাহ, উম্মাহাতুল মু'মিনীন, সাহাবায়ে কিবার কিরাম, আশারায়ে মুবাশ্বিরাহ আলাইহিম আজমাইনের প্রতি।
হিজরাহ রোড। মক্কার ঐতিহাসিক একটি রোডের নাম। ৬২২ খৃস্টাব্দের ১৭ জুন প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্বস্ত সঙ্গী আবু বকর সিদ্দীক্ক রদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুকে সাথে নিয়ে হিজরতের উদ্দেশে মক্কা থেকে মদিনার পথে যাত্রা শুরু করেন। যে পথে প্রিয় নবীজী সিদ্দীক্কে আকবরসহ মক্কা থেকে বেরিয়ে যান সেই পথটিই 'হিজরাহ রোড' নামে খ্যাত হয়ে আছে।
বাইতুল্লাহর বাইরের চত্বরের সাথে লাগোয়া হিলটন টাওয়ারের একাংশ। টাওয়ারের মাঝ বরাবর ঠিক লাল বৃত্ত চিহ্নিত জায়গাটিতে ছিল হযরত আবু বকর রদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর বাড়ি। এই স্থান থেকে রসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের উদ্দেশে মক্কা থেকে মদিনার পথে যাত্রা করেন।
হযরত আবু বকর রদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর বাড়ি এবং বাড়ি সন্নিহিত স্থানজুড়ে গড়ে তোলা বিশাল হিলটন টাওয়ার। যার নিচের দিকের কয়েকটি ফ্লোর মার্কেট হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং বাকি তলাগুলো আবাসিক হোটেল হিসেবে হাজি সাহেবান ও অন্যদের থাকার জন্য নির্ধারিত।
হিলটন টাওয়ারের আরেকটি দৃশ্য।
এই হিজরাহ রোডেরই একটি হোটেলে থাকার ব্যবস্থা হয় আমাদের। ব্যবস্থাপনার দিক থেকে হোটেলটির মান ভাল। চার তলায় যে রুমটিতে আমরা ছিলাম, লিফট থেকে নেমেই তার অবস্থান বামে। আমরা পাঁচজন ছিলাম এই রুমে। রুম লাগোয়া বাথ রুম। টেপ এবং শাওয়ারের পানি ২৪ ঘন্টাই উষ্ণ। 'শরীরে সয় না' এমন ধরনেরই উষ্ণ। কিন্তু, আশ্চর্য হতাম, যখনই এই রোদের তাপে প্রচন্ড গরম পানি দিয়ে গোসল করে নিতাম, মনে হত শরীরের ধুলো-ময়লার সাথে সাথে যেন শরীরের রোগ-জীবানুও প্রতিবার ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে বেরিয়ে যেত। পরিচ্ছন্নতা আর পবিত্রতার ভিন্ন আমেজে প্রতিবার সজিব-সতেজতা অনুভব করেছি। রুমের জানালায় প্রায়ই কবুতরের 'বাকুম বাকুম' শব্দে হিজরাহ রোডের চিরচেনা নিরবতায় ছন্দপতন ঘটতো। মক্কার সর্বত্রই কবুতরের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। তারপরেও আমার মনে হয়েছে, অন্য এলাকাগুলো থেকে এই এলাকায় বিশেষ করে 'হিলটন' এবং 'আবরাজ' বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে শুরু হওয়া হিজরাহ রোডের প্রায় অর্ধ কিলোমিটারের মত প্রশস্ত খালি যে জায়গাটি রয়েছে এই স্থানটির মত এত অধিক সংখ্যক কবুতর আর কোথাও নেই। এখানে কবুতরের যেন মেলা বসে প্রতি দিন। সংখ্যায় গননা করা অসম্ভব। শত শত নয়। হাজার হাজার নয়। বোধ করি এ সংখ্যা তারও অনেক বেশি। রাস্তাটির এই অংশটিকে 'কবুতর চত্বর' বললেই দেখেছি সবাই চিনেন। যেন কবুতরদের জন্যই এই স্থান। কবুতরদের অভয়ারন্য। বিভিন্ন দেশের সম্মানিত হাজি সাহেবানগনকে দেখেছি, অনেকেই কবুতরের খাবার কিনে পরম মমতায় পাখিদের নিজ হাতে খাওয়াচ্ছেন। চত্বরের এখানে-সেখানে কিছু লোক কবুতরের খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। বিশেষ করে, আফ্রিকান কালো লোকদের এই ব্যবসাটি করতে দেখেছি। ক্রেতারা কিনছেন। বিশাল চত্বরের পুরোটাই যেন কবুতরদের নিজস্ব এলাকা। শত শত, হাজার হাজার কবুতর, উড়ছে, ঝাকঝাক, পাখার ঝাপটায় বাতাসের দোলা দিয়ে যাচ্ছে রুক্ষ মরুর বুক চিরে এগিয়ে চলা হিজরাহ রোডের পথিক-আগন্তুকদের। কোলাহল করছে বাকবাকুম শব্দে, আসলে ওরা কি বাকবাকুম বলছে? না কি নিজেদের ভাষায় ওরা মহান মনিবেরই গুনকীর্তন করে যাচ্ছে, যা শুধু আমাদের বোধগম্যতার বাইরে। কবুতরদের বিচিত্রতায় এই এলাকার পুরো পরিবেশটাই যেন অন্যরকম! আবেশে মাতোয়ারা! আপনি কাছে গেলেও এরা উড়ে যাবে না! 'যেন ছুঁয়ে দিলেও কেউ কোন ক্ষতি করবে না' বলে ওরা বিশ্বাস করে! যেন এ পথের হাজারো-লাখো পথিকের সাথে ওদের জন্ম-জন্মাতরের সখ্য! যেন হাজার জনপদের কালো-ধলো নানান বর্নের মানুষের সাথে ওদের চিরকালীন অদৃশ্য আত্মীয়তা-অটুট বন্ধন!
আমার বারবার অবাক প্রশ্ন জাগতো, কবুতররা এখানে কেন থাকছে? বাইতুল্লাহর পাশে, বাইতুল্লাহর ছায়ায়-মায়ায় ওরা এত অধিক সংখ্যক কেন? এখানের এই প্রচন্ড গরম, ৪৬/৪৭ ডিগ্রি তাপমাত্রার আগুনঝরা রোদেও ওরা কেন এই প্রিয় প্রাঙ্গনে বসতি গড়ে থাকছে? হাজিদের প্রতি, প্রিয় মক্কার এই পবিত্র পাথুরে মাটির প্রতি, প্রিয়তম প্রভূর প্রিয় বাইতুল্লাহর প্রতি ওদের কি কোন অদৃশ্য-অদেখা টান রয়েছে? কোন বন্ধন, কোন মায়ার বাধঁন ওদের এখানে আটকে রেখেছে?
কবুতরের কম বেশি উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় মক্কার প্রায় সর্বত্রই। মিনা থেকে জামারতের দিকে যেতে রাস্তার উপরাংশে শেড দেয়া রয়েছে। এই কয়েক কিলোমিটার লম্বা শেডের পুরোটাতেই কবুতরের বসবাস। হাজার হাজার সংখ্যায়। একইরকম শেড বাইতুল্লাহ থেকে টানেল দিয়ে পায়ে হাটা পথে মিনায় যাওয়া-আসার পথেও রয়েছে। সেখানেও একইরকম দৃশ্য বিদ্যমান। অগনন কবুতরের সতস্ফুর্ত উড্ডয়ন-অবতরন আর পাখার ঝাপটায় মায়াময় প্রানবন্ত পরিবেশ-প্রতিবেশ।
এই পর্বেও যুক্ত করা হল প্রিয় বাইতুল্লাহ এবং রিলেটেড আরও কিছু ছবি। আশা করি ভাল লাগবে প্রত্যেকের। প্রত্যেকের জন্য প্রানঢালা শুভকামনা, অফুরন্ত দোআ এবং ভাল থাকার কামনা। আল্লাহ পাক পৃথিবীর সকল প্রানীকে ভাল রাখুন।
মুসল্লিদের ভিড়ে টইটুম্বুর পবিত্র বাইতুল্লাহর একটি সুন্দর দৃশ্য। দূরে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে আকাশ ছোঁয়া ১২০ তলাবিশিষ্ট সুবিশাল যমযম টাওয়ার।
বাইতুল্লাহর ভিতরের মনোরম অবকাঠামোগত শিল্পনৈপূন্যের মুগ্ধকর দৃশ্য।
অনেক উঁচু থেকে তোলা বাইতুল্লাহ এবং সন্নিহিত মক্কা অঞ্চলের ক্লিয়ার ভিউ।
বাইতুল্লাহর ভিতরের মনোরম অবকাঠামোগত শিল্পনৈপূন্যের মুগ্ধকর দৃশ্য।
রাতের অন্ধকারে তোলা ছবিতে কা'বা কমপ্লেক্সের আলো ঝলমলে মুখচ্ছবি। দূরে অাঁধারের লুকোছায়া প্রতিভাত।
পুরনো এ্যালবাম থেকে। বন্যা কবলিত পানিসিক্ত প্রাচীন বাইতুল্লাহ।
সাফা মারওয়ায় সায়ী করার বর্তমান স্থান। মাঝখানে সবুজ চিহ্নিত স্থানটুকুতে রমল করতে হয়, মানে এই স্থানটুকু দ্রুত অতিক্রম করতে হয়।
১৮৮০ খৃস্টাব্দ থেকে ২০১৩। একনজরে সংস্কারের ধারাবাহিকতায় পবিত্র কা'বার আজকের রূ্প পরিগ্রহ।
পরিশেষে শিল্পীর তুলিতে আঁকা অপরূপ বাইতুল্লাহ কমপ্লেক্স।
শিল্পীর নিপূন হাতে অঙ্কিত বাইতুল্লাহ কমপ্লেক্সের আরেকটি ইমেজ।
সকলের জন্য শুভকামনা আবারও। হামদ এবং সানা পরম প্রিয় মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার জন্য। দরুদ ও সালাম প্রিয়তম রসূল মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র রূহের প্রতি। শুরু এবং শেষে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:২১