somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২৭)

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আহা! মায়াবি সবুজ গম্বুজ রওজা মোবারক রাখে ঢেকে,
মৃদু কন্ঠে সালামের মৌতাতে মাতোয়ারা দর্শনার্থী থেকে।

রাসূলের রওজায় অশ্রুসিক্ত বিদায়ের প্রস্তুতি

মদিনাতুল মুনাওওয়ারাহতে ছিলাম! দিনগুলো পেরিয়ে যাচ্ছিল যেন পরম মমতায় মায়ের কোলে সীমাহীন সুখের কাঁথা বুকে জড়িয়ে! রওজা পাকের চৌকাঠ ধরে চোখের পানিতে ভাসতাম! বাবে জিবরীলে বসে হৃদয় সিক্ত করতাম! অবুঝ মন যখন হারানোর শঙ্কায়, অপ্রাপ্তির বেদনায় গুমরে কেঁদে উঠতো, ছুটে যেতাম রওজা শরিফের কিনারে! সবুজ গম্বুজের পানে তাকিয়ে থাকতাম অনিমেশ-পলকহীন চোখে! এই সেই সবুজ গম্বুজ যার নিচে শুয়ে আছেন সাইয়্যিদুল মুরছালীন, শাফিয়ে উমাম, সারওয়ারে কায়েনাত, রহমাতুল্লিল আলামীন! আহ! কি মায়াময় সবুজ গম্বুজ! আশিক হৃদয়ে কি অদৃশ্য অনুভব-অনুভূতি-টান সবুজ গম্বুজের প্রতি! সবুজ গম্বুজের অবারিত সৌন্দর্য্য অবলোকন করে করে সময়ের কাটা কোথা থেকে ঘুরে কোথায় এসে যে থিতু হতো তারও কি কোনো ইয়ত্তা থাকতো! মন মুকুরে ভেসে ওঠে শৈশবে গাওয়া প্রিয় সেসব না'ত-

রওজা পাকের চৌকাঠ ধরি,
চুমু খেয়ে থাকতাম পড়ি,
বলতাম যদি না দাও দেখা,
মরিব হেথায় রে, মরিব হেথায়।।

বলতাম আরও বিনয় করে,
সেই ভয়ানক রোজ হাশরে,
উম্মত বলে কদমে ঠা্ঁই,
দিওগো আমায় রে, দিওগো আমায়।।



রওজার বহির্ভাগে চোখ জুড়ানো মুক্ত প্রাঙ্গন,
বুঝা যায়, প্রিয় রাসূলের এখানেও হতো বিচরন।

মন উচাটন হলে ছুটে যেতাম রিয়াজুল জান্নাহর শান্তিময় কান্তিময় প্রাঙ্গনে! চোখ শীতল হত! অন্তর শান্ত-প্রশান্ত-প্রানবন্ত হত! মন এলোমেলো হলে, ছুটে যেতাম বাইরের প্রান্তরে! মদিনার পথপানে! আহ! এই পথেই তো হেটে চলতেন আমার প্রিয় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তাঁর স্মৃতিময় পথগুলো খুঁজে খুঁজে বেড়াতো অবুঝ-অবোধ-অচেনা মন! তিনি কেমন করে হাটতেন! কেমন ছিল তাঁর মায়াময় ছান্দসিক চলন! তাঁর স্মৃতির পানে মন এত উতলা হয় কেন! তাঁর ভালবাসা এতটা কাঁদায় কেন! তাঁর মুহাব্বত, তাঁর প্রেম, তাঁর ইশক, তাঁর মায়া, তাঁর বন্ধন এত অটুট কেন! সব কিছু ভেঙ্গে চূড়ে চুরমার হয়ে গেলেও তাকে ছাড়তে পারি না কেন! তাঁর একটি সুন্নতের জন্য এত মায়া কেন! তাঁর প্রতিটি সুন্নতের জন্য হৃদয়টা বিগলিত কেন! একটিমাত্র সুন্নত ছুটে গেলে এমন অস্থির-অধীর হয় কেন মন! তাকে দেখার জন্য আকুল-ব্যাকুল হয় কেন প্রান! আহ! কত দিন যে আনমনে গেয়েছি-

নেকাব সরাও বদন হতে একবার দেখাও দিদার তোমার,
পেয়ারা নবী আল আরাবি গম সহে না যে দিলে আর।।



ঘুমিয়ে আছেন, রহমতে আলম দুই সাথীকে নিয়ে পাশে,
অমৃত সুধায় মন ভরে যায়, হুব্বে রাসূল পাওয়ার আশে।

আহ! কত দিন তাকে দেখি না! তাকে দেখেছিলাম! পূর্ন অবয়বে! প্রানভরে! থাক, সে কথা! সব কথা বলা যায় না! বলতে হয় না! বলা হয়তো উচিত নয়! বন্ধু, শুধু এতটুকু বলি, শুধু আপনার ইবরাতের জন্য বলি, শুধু আপনার মন ও মননে সে শুভ প্রত্যাশা জাগিয়ে তোলার মানসে বলি, নূরানী সে চেহারার ঝলক বর্ননার সাধ্য নেই! জানি, কারও নেই! পূর্নিমার চাঁদ থেকে উজ্জ্বল, আরও আলোকিত, আরও খুবসুরত, আরও কান্তিময়, আরও দ্যুতিময়, আরও ঝলকে ঝলমল-ঝকমকে; ফুটন্ত গোলাপের মত বুঝি! নাহ! গোলাপ থেকে, ফুল থেকে, খুশবু থেকে, পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য্য থেকে ভিন্ন তাঁর সৌন্দর্য্য-জামাল! তিনি উপমাহীন সুন্দর! তিনি তুলনাহীন অপরূপ! তাঁর চেয়ে সুন্দর-কান্তিময়-সৌম্যদর্শন কেউ পৃথিবীতে ছিলেন না! কেউ নেই! কেউ আসবেন না! তিনি উজ্জ্বল, প্রোজ্জ্বল, আলোকিত, সিরাজুমমুনির, বাশিরুননাজির, কামারুমমুনির! তুলনাহীন! অতুলনীয়, লা- মেসাল! তাঁর সৌন্দর্য্যের জামাল ছড়িয়ে মাশরিক থেকে মাগরিবে! জুনূব থেকে শিমালে! গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে! নক্ষত্র থেকে নক্ষত্রালোকে! আকাশে-বাতাসে-অন্তরীক্ষে-গিরি-কন্দরে!



রওজা মোবারকের অবাক করা নিঃসীম সৌন্দর্য্য ছায়ায়,
বাকিটা জনম কেটে যদি যেত, কেন জানি শুধু মনে চায়।

বাবে জিবরাইল

উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহার হুজরা মোবারকে প্রবেশের একটি দরজাকে বলা হয় বাবে জিবরাইল। এই দরজা দিয়ে হুজূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসার অনুমতি পেতেন জিবরাইল আলাইহিস সালাম। বাবে জিবরাইল থেকে মাত্র কয়েক কদম গেলেই বিশ্ব জাহানের সরদার আকায়ে মাওলা, তাজেদারে মদিনা প্রিয়তম রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজা শরিফ! এখানে না গেলে অনুভূতিতে সব কথা আয়ত্ব করা যায় না! অনুধাবনের আয়নায় সকল ব্যথা জড়ো করে মালা গেঁথে নেয়া যায় না! প্রান যে কী চায় কেমনে বোঝাবো! মন যে কী হাতড়ে বেড়ায় কি করে শুধাবো! হৃদয়ে যে কি ব্যথার পাহাড় উঁকিঝুকি দেয় কিভাবে দেখাবো! মন তো বলে ওঠে, আহ! এখানেই যদি মৃত্যু হতো আমার! সাহাবীদের পাশে যদি কবর হয়ে যেতো! কী সৌভাগ্যই না হত! আহ! এই রাসূলের মদিনায় যাদের মৃত্যু হয়, কতই না ভাগ্যবান তারা!



চোখ জুড়ানো মন ভুলানো প্রিয় মসজিদে নববীর ছবি,
আহা! কি নিরুপম রূপের ছোঁয়ায় নির্বাক হল কত কবি!

আস্তে আস্তে বিদায়ের ক্ষন কাছে আসতে থাকে! বিদায় নিতে হবে প্রিয় নবীজীর প্রিয় শহর থেকে! মন বিষন্নতায় আচ্ছন্ন হতে থাকে! হৃদয় বিগলিত হতে থাকে! অন্তর কাঁদতে থাকে! প্রানে ব্যথার বারিবর্ষনে বড় হতে থাকে শোকের বারিধি! রওজা পাকের এই সৌন্দর্য্য ছেড়ে যাব! আর দেখতে পাব না! আহ! একথাগুলো ভাবলেই মন শিউরে ওঠে!

এই সিরিজের আগেকার পোস্টগুলো। ইচ্ছে করলে ঘুরে আসতে পারেন পেছনের পর্বগুলোয়-

বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৩)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৪)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৫)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৬)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব৭)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৮)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৯)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১০)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১১)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১২)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১৩)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১৪)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১৫)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১৬)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১৭)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১৮)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১৯) ব্লগে দেড়শোতম পোস্ট
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২০)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২১)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২২)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২৩)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২৪)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২৫)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২৬)

'বাইতুল্লাহর মুসাফির' সিরিজের এই পর্বগুলো প্রকাশে যারা পাশে থাকছেন, নিয়মিত পড়ছেন, মন্তব্যে আসছেন এবং গুরুত্বপূর্ন পরামর্শ দিয়ে ধারাবাহিকটিকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে যাচ্ছেন, সকলকে হৃদয় নিংড়ানো শুভেচ্ছা। সকলের জন্য অাল্লাহ পাকের নিকট অবারিত কল্যান প্রার্থনা করছি।



এই সৌন্দর্য্য আভা দেখে দেখে যদি অনন্তকাল কাটে,
ঘোরের মধ্যে শুধাবো না জানি, কেন সূর্য্য নামে না পাটে!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৯
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×