somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুন..........

১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ত্রয়ীর স্কুলে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করতে
তা প্রায় ত্রিশ টাকা লেগে যায় । ওর টিফিন
বাবদ খরচটা তেমন হয়না বললেই চলে ।
কারণ , ত্রয়ীর আম্মু বাসা থেকে টিফিন
তৈরী করে দেন ।
গেল বছর ত্রয়ীর বাবা হঠাত্ হৃদরোগে
আক্রান্ত হয়ে মারা যান ! সংসারের কর্তা
না থাকলে একজন মহিলার দ্বারা সংসার
চালাতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হয় । যদিও
ত্রয়ীর আম্মু একটা স্কুলের শিক্ষিকা ।
শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারে " আয় বুঝে ব্যয়
করাটাই যেন রীতি " ।
ত্রয়ীর জন্য ওর মা একটা রিক্সা ঠিক করে
দিলেন । ত্রয়ী এই রিক্সাতে করেই প্রতিদিন
স্কুল থেকে বাসা পর্যন্ত আসা-যাওয়া
করবে । মেয়েটা যে দিন দিন তাল গাছের মত
লম্বা হয়ে যাচ্ছে এ বিষয়টা ওর মায়ের
চোখকে এঁড়ায়নি ।
একটা মেয়ের সবচেয়ে বিশ্বস্থ বন্ধু মা ছাড়া
কেউ নন । পৃথিবীতে একটা মেয়ে শুধু তার
মায়ের কাছেই সবচেয়ে নিরাপদ । অনেকে
হয়তো আমার কথার প্রতিবাদ করতে চাইবে
। দেখুন , একটা মেয়ে তার বাবা , ভাই কিংবা
স্বামী দ্বারাও ধর্ষিত হয় ।
হ্যাঁ , ত্রয়ীর মা এবং ত্রয়ী পরস্পরের খুব
ভালো বন্ধু । আর বন্ধুত্ব সম্পর্কটাই
যেন পৃথিবীর সবচেয়ে খাঁটি একটা সম্পর্ক ।
হয়তো সে কারণেই ঈশ্বর পয়গম্বরদের
সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন ।
ত্রয়ী কাল থেকে যেই রিক্সায় করে স্কুলে
যাবে সেই রিক্সাওয়ালা ছেলেটার বাড়ি
বিরিশিরি এলাকায়। ত্রয়ীদের গ্রামের বাড়ির
পাশেই হৃদয়দের বাড়ি । ত্রয়ীর আম্মুর
পরিচিত বলেই হৃদয়কে এ দায়িত্বটা দেয়া
হয়েছে । হৃদয় একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি
হয়েছিল । সংসারের অভাব-অনটন সীমা
অতিক্রম করায় তাকে বাধ্য হয়েই রিক্সা
নিয়ে নামতে হয়েছে ।
হৃদয় ছিল ক্লাসের ফ্রাস্ট ছিল । সে গণিত ,
রসায়ন ও পদার্থ বিদ্যায় এস. এস সি তে
জিপিএ-৫ পেয়েছিল ।
কিন্তু অভাগার কপালে সব বিষয়ে এ+ পাওয়া
হয়নি !
ময়মনসিংহের মত শিক্ষা শহরে এসে হৃদয়
যেন স্বপ্নের জগতে পা রেখেছে ।
হৃদয়ের ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল চাঁদে
যাবে ! তাই , রকেটের প্রতি ওর একটা নেশা
আছে । সে রিক্সার পেডেলে পা রেখে ভেসে
বেড়ায় তার স্বপ্নে !
ঠিক সকাল ন'টায় ত্রয়ীদের বাসার সামনে
হৃদয় তার রকেট নিয়ে হাজির !
আসলে বাস্তবে একটা অতি নগন্য রিক্সা
কী করে যে স্বপ্ন নভোযান হয়ে যায় তা
সত্যিই অদ্ভূত !
ত্রয়ী স্কুল ব্যাগটা কাধে নিয়ে আম্মুর কাছ
থেকে বিদায় নিল ।
বাসার গেইটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে একটা
রিক্সা ।
ত্রয়ী রিক্সাওয়ালা ছেলেটিকে জিজ্ঞেস
করল তোমাকেই কি আম্মু আমার আনা-
নেয়ার দায়িত্ব দিয়েছে ?
একটা অপ্রিয় সত্য কথা হচ্ছে ,
রিক্সাচালক , কুলি , মেথর অথবা অন্যান্য
ছোট পেশায় নিয়োজিত বিশাল
জনগোষ্ঠীর মানুষগুলোর কোনো নাম নেই
। আধুনিক যুগে রিক্সাওয়ালারা শিয়াল
মামাদের মত কোনো এক প্রকার মামা
শ্রেণীর মানুষ । এই শ্রেণীর মামা অনেক
দোকানদার , বাসের হেল্পার ইত্যাদি
অনেকেই ।
ত্রয়ী একটু চঞ্চল টাইপের মেয়ে বলেই
নগন্য রিক্সাওয়ালাকে তুমি ডেকে বসল
এবং জানতে চাইলো সেই রিক্সাওয়ালার
নাম ।
গম্ভীর টাইপের মানুষগুলো কেন যেন
অহংকারী হয়ে থাকে ।
কিন্তু চঞ্চল মানুষের দিলটা বড়ই সাচ্চা ।
ত্রয়ী আর হৃদয়ের মধ্যে দীর্ঘ কথা চলতে
থাকে । ত্রয়ী হৃদয়ের মনে লুকিয়া থাকা
দুঃখের কথা জেনে নিজেও ব্যথিত হয় ।
কারণ , সেও তো পিতৃহীন এক দুঃখীনি ।
ত্রয়ী জেএসসি তে গোল্ডেন এ+ পেয়েছে ।
এই গোল্ডেন এ+ পাওয়ার পেছনে হৃদয়েরও
অবদান ছিল । সে জটিল বিষয়গুলো ছন্দের
মাধ্যমে শেখাতে শেখাতে ত্রয়ীকে স্কুলে
আনা-নেয়া করত ।
ত্রয়ী আর হৃদয় এখন খুব ভালো বন্ধু হয়ে
গেছে ।
হৃদয় এবার এইচ এস সি পরীক্ষা দেয়ার কথা
ভাবছে । সে রিক্সা চালালেও দৈনিক দু-ঘন্টা
সময় নিয়মিত অধ্যয়ন করে ।
সুসং-দুর্গাপুর কলেজে সে শুধু টার্ম
পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পায় ।
আসলে প্রত্যয়ী হৃদয় হেরে যেতে চায় না ।
ত্রয়ীটা ইদানিং হৃদয়কে বড্ড জ্বালাতন
করে ।
এইতো গতকাল হৃদয়কে পার্কে নিয়ে যেতে
বললো ।
ওর বান্ধবীদের সামনে হৃদয়কে ডেকে নিল
এবং ফুস্কা খাওয়াল । হৃদয়কে নিয়ে গেল
রেস্টুরেন্টে । অঁজপাড়া গাঁয়ের ছেলেটি
কোনোদিন ফাস্ট ফুড খায়নি ।
জীবনের প্রথম ওসব খাবার খেতে যেয়ে
নানান বিড়ম্বনার মুখে পরল হৃদয় ।
হদয় এইচ এস সিতে জিপি-এ পাঁচ পেয়েছে ।
পত্র-পত্রিকায় হৃদয়ের ছবি ছাপা হল ।
হৃদয়ের পাশে এসে অনেকেই দাঁড়াল । এরা
ক্ষণিকের জন্য আসে ।
কিন্তু এই হতদরিদ্র ছেলের পক্ষে
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তুতি নেয়াটা
অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে । ত্রয়ীর
আম্মুর কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে হৃদয়
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা
ফরম তোলে ।
যাতায়ত খরচ দেয়ার মত সাধ্য ছিলনা বলে
অন্য কোথাও পরীক্ষা দেয়া হয়নি হৃদয়ের ।
ত্রয়ী মুমিনুন্নেসা কলেজে ভর্তি হয় । হৃদয়
বাকৃবিতে এগ্রিকালচারে পড়ে । হৃদয়
ত্রয়ীদের বাসায় জায়গীর হিসেবেই থাকে
এবং ত্রয়ীকে পড়ায় ।
হৃদয়কে এখন আর রিক্সা চালাতে হয়না ।
রকেট বানানোর চিন্তাটা এখনো জীবিত
আছে ।
ত্রয়ী ঠিক করেছে হৃদয়ের কাছে সত্যটা
প্রকাশ করবে ।
কাল ১৪ ফেব্রুয়ারী । ত্রয়ী হৃদয়কে নিয়ে
বোটানিক্যাল গার্ডেনে যায় ।
ত্রয়ী হৃদয়কে তার সুপ্ত ভালোবাসার কথা
ব্যক্ত করে ।
ঐ মায়াবী চোখের দিকে চেয়ে হৃদয় নির্বাক
হয়ে যায় । দুজনেই নিষ্পলক দৃষ্টিতে
দুজনের দিকে চেয়ে থাকে ।
ত্রয়ীর প্রিটেস্ট পরীক্ষা চলছে । ত্রয়ী ও
হৃদয়ের সম্পর্কটা ত্রয়ীর আম্মুর চোখে
ধরা পড়ে যায় ।
হৃদয়কে ডেকে নিয়ে ত্রয়ীর আম্মু অপমান
করে । হৃদয় নিচু বংশের ছেলে, হৃদয় একজন
রিক্সা চালক , হৃদয় গরীব ।
হৃদয় আজ রাতে ত্রয়ীদের বাসা ছেড়ে চলে
যায় ।
এদিকে ত্রয়ীর মামা হৃদয়কে মেরে ফেলার
ছক আঁকে ।
ত্রয়ীকে কিছু না জানিয়ে হৃদয়ের এভাবে চলে
যাওয়াতে ত্রয়ী বেশ অভিমান করেছে ।
ত্রয়ীর টেস্ট পরীক্ষা শেষ । রাতে ত্রয়ী
আর তার আম্মু রাত ন'টার খবর দেখছিল।
@ ব্রেকিং নিউজ
...............
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী
ছাত্র হৃদয় সন্ধ্যে সাতটার দিকে
সন্ত্রাসীদের হাতে খুন ! ! !
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×