শিশুদের বিনোদনের জায়গা ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে । বিশেষ করে শহরে । শিশু বিনোদন গতানুগতিক ধারায় চলে যাচ্ছে । খেলার মাঠের অভাবের জন্য আমাদের শিশুরা ঘর মুখো বিনোদনে অভ্যস্ত হচ্ছে । খেলাধুলা নিয়ে একটু বলে নেই । আমরা সবাই জানি খেলাধুলা মানুষের শারীরিক ও মানুষিক বিকাশে সহায়ক ভুমিকা পালন করে । শিশু মানেই তো বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দে ছোটাছুটি চঞ্চল চরিত্র । বইয়ের পাতায় রূপকথার জগতে বিচরন । দাদা– দাদীর মুখে বিস্ময় চোখে গল্প শোনা । আজকের শিশুরা ঝিমানো চেহারা আর সহ্য হয় না । তাদের নিশ্চিন্ত জীবনে কেন হতাশার চাপ ? খেলার মাঠ নেই । কেন ? একটু লাভের আশায় মনের অজান্তে পরবর্তী প্রজন্মকে ঘরবন্দি রাখার পাকা ব্যবস্থা করে রেখেছি। মানুষিক ও শারীরিক ভাবে হতাশা নিয়ে এক প্রজন্ম গড়ে উঠছে ।
মাঠ নেই শহরে । তাই শিশুদের চোখ টেলিভিশনের পর্দায় । এখন প্রশ্ন কি দেখছে আমাদের শিশুরা ? আমাদের মিডিয়া শিশুদের নিয়ে কতটা ভাবছে ?
দ্বিতীয় প্রশ্নটা একটু বলি । আমি একজন মিডিয়ার ছাত্র হয়ে খুব বিরক্ত । সব চাইতে দুঃখ জনক আমাদের নাটকে শিশুরা হারিয়ে গেছে । লম্বা লম্বা সিরিয়ালে একটু জায়গা হয় না শিশুদের । শিশুদের জন্য যা দেখানো হয় তা নাম কা ওয়াস্তে ।
এখন আসি শিশুরা কি দেখছে । আমি বলব আমরা কি দেখাচ্ছি । সমাজের সব গুলো সমস্যা একটা আরেকটার সাথে জড়িত । আমাদের মায়েরা দেখেন হিন্দি সিরিয়াল ও রিয়েলিটি শো । সাথে সন্তান ও দেখছে । এই সিরিয়াল গুলোর সুক্ষ চাল আমাদের কোমল মতি শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে বাঁধা সৃষ্টি করছে । রিয়েলিটি শোগুলোর ভাষা কুরুচিকর ও আমাদের শিশুদের ভাল কিছু শিখাচ্ছে না। তারা পরিবারে সমস্যা তৈরি করছে । পৃথিবীর একজন হিসেবে যে কোন সিরিয়াল আমার দেখবার অধিকার আছে কিন্তু তাই বলে যেটা আমার সমাজে বাঁধা সৃষ্টি করবে সেটা থেকে দূরে থাকাই ভালো । আমাদের দেশে এখন অনেক ভাল নাটক হচ্ছে এবং শুধু তাই নয় আমাদের রিয়েলিটি শোগুলো যেমন মার্জিত তেমনি উপভোগ করার মত। আমরা যদি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি যদি বদলাই, তবেই আমাদের এসব ভাল লাগবে।
শিশু বিনোদনের আরেক মাধ্যম হল কার্টুন । কার্টুন আমাদের শিশুদের সবচাইতে প্রিয়। এখন কার শিশুদের প্রিয় ডরিমন । এ কার্টুন নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা । বিদেশী কাটুন কি বাচ্চারা দেখবে না । দেখবে কিন্তু সেটা যেন নেশা না হয়ে যায় । অন্য ভাষা শেখা দোষের নয় তবে সেটা মাতৃভাষা শিক্ষায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে।
আপাতত দৃষ্টিতে ডরিমন কার্টুনে বেশ কিছু সমস্যা আমার চোখে ধরা পড়েছে ।
১। বাংলা শিক্ষায় আঘাত হানছে । যা মাতৃভাষার গুরুত্ব কমাচ্ছে ।
২।অবাস্তব জিনিসের সাথে পরিচিত হচ্ছে ।
৩।মিথ্যা শিখছে ।
৪।ঘরকুনো করছে ।
৫। জীবনকে ডরিমন কার্টুনের সাথে মিলিয়ে ফেলছে।
৬।হিন্দির চর্চা হচ্ছে যা প্রকাশ্যমান দৃষ্টিকটু ।
এভাবে বাস্তবের বাইরে বেড়ে উঠছে আমাদের শিশুরা ।
এখন আসি গেমস বিষয়ক ব্যাপারে । সব গেমস খারাপ ব্যাপারটা তা নয় । আমারা সঠিক গেমস বাচ্চাদের হাতে তুলে দিতে পারিনা। শিক্ষামূলক , পাজল গেমস বাচ্চাদের মেধা বিকাশে সহায়তা করে । এমন গেমস আমাদের বাচ্চাদের হাতে যাচ্ছে যা তাদের নেশা গ্রস্থ করছে ।
আমাদের শিশুদের বিশেষ করে শহরের শিশুদের বিনোদন বলতে টেলিভিশন ও গেমসের মধ্যে সীমাবদ্ধ । বাচ্চাদের ছোটা – ছুটি করার জন্য একটু জায়গা করে দিতে পারলে তারা শারীরিক ও মানুষিক ভাবে আরও উন্নত হয়ে বাঁচতে পারত । সকল শিশুর শুভ ভবিষ্যৎ কামনা করছি ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




