somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধ্বংসের মুখে আমাদের সংস্কৃতি।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো আমাদের দেশে উম্মুক্ত করে দেয়ায় দর্শক এখন ভারত মুখী হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে ভারতের সংস্কৃতি গ্রাস করে ফেলছে। স্যাটেলাইট টিভির কল্যাণে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন ভারতের চ্যানেলগুলো দেখা যাচ্ছে। বাংলা হিন্দি উভয় চ্যানেলই তারা দেখছে। চ্যানেলগুলোর মধ্যে স্টার জলসা, জি বাংলা, জি বাংলা সিনেমা ইত্যাদি। আমাদের দেশের বাংলা চ্যানেলগুলো তারা দেখছে না। বিশেষ করে শহরের গৃহবধূ ও তরুণ-তরুণীরা ভারতের চ্যানেলগুলো বেশী দেখছে। এসব চ্যানেলে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত একই নাটক ধারাবাহিকভাবে দেখায়। এসব চ্যানেল দেখে আমাদের দেশের নারীরা কি শিখছে? কিভাবে অন্যের সংসারে আগুন লাগানো যায়, কিভাবে পরকীয়া প্রেম করা যায়, কিভাবে সম্পত্তি নিয়ে ষড়ষন্ত্র করা যায়, ভালো মানুষ সেজে অন্যের বুকে কিভাবে ছুরি যায় ইত্যাদি শিখছে।
ভালো মানুষ সেজে ছুরি মারার প্রবণতা শিখার একটি কৌশল নিয়ে একটি নাটকের অভিজ্ঞা এখানে তুলে ধরতে চাই। আমি বাসায় টিভি রাখছি মূলত খবর দেখার জন্য। সারাদিন কর্মস্থলে থাকি। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরি। বাসায় গিয়ে যখন খবর দেখার জন্য রিমোট হাতে নেই তখনই আমার স্ত্রী রিমোট কেড়ে নিয়ে ভারতীয় চ্যানেল দেখা শুরু করে। বলে যে, তুমি একটু পরে খবর দেখ আমি নাটকটা দেখে নেই। কারণ হিসেবে জানতে পারলাম প্রতিদিন সে সন্ধ্যার পরে বেশ কিছু ভারতীয় নাটক দেখে। নিরুপায় হয়ে স্ত্রীর সাথে মাঝে মাঝে একটু একটু করে নাটক শেয়ার করতে লাগলাম। তারমধ্যে সন্ধ্যা সাতটায় জি বাংলা চ্যানেলে প্রচার করা হয় রাশি তার নাম নামে একটি সিরিয়াল। সেই সিরিয়ালটির বেশ কিছু পর্ব দেখার অভিজ্ঞা হয়েছে আমার। নাটকটি এ পর্যন্ত দেখে যা অভিজ্ঞতা হলো তার সারসংক্ষেপ এখানে তুলে ধরছি। রাশি নামে একজন বুদ্ধিমতি প্রতিবাদী নারী বিক্রমপুর নামক গ্রামে বাস করে। শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অপলা রায়। অপলা রায়ের তার বড় বোনের স্বামীর সম্পদের প্রতি লোভ পড়ে এবং এক পর্যায়ে বোনকে মানসিকভাবে পাগল বানিয়ে বোনের স্বামীকে বিয়ে করে। বোনের এক ছেলেকে নিয়ে সংসার পাতে। পরে তার সংসারে দুটি সন্তান হয়। সন্তান হওয়ার পর থেকে তার স্বামীকেও পাগল বানিয়ে এক হোটেলে বন্ধি করে রাখে সম্পদ দখলের জন্য। বাড়ির সবাইকে বলে যে, তার স্বামী মারা গেছে। তিন সন্তান নিয়ে বর্তমানে তার সংসার। অপলা রায়ের ছেলের সাথে রাশির পরিচয় হয়, তারপর বিয়ে, কিন্তু এ ঘটনা অপলা রায় মেনে নিতে পারেনি। রাশিকে বাড়ী থেকে তাড়ানোর জন্য সব ধরনের ষড়যন্ত্র করলো অপলা রায় কিন্তু রাশির বুদ্ধির কাছে অপলা রায় হার মানল। এবার অপলা রায় রাশিকে বোন ও স্বামীর মতো পাগল বানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এখানেও অপলা রায় রাশির কাছে হার মানে। বরং অপলা রায়ের সকল ষড়যন্ত্র রাশি জেনে যায়। অপলা রায়ের স্বামী অর্থ্যাৎ রাশির শ্বশুর যে জীবিত আছে এ খবর রাশি জেনে যায়। এবার অপলা রায় রাশিকে মারার জন্য ফন্দি করে। এখন থেকে বাড়ির সবার সাথে ভালো মানুষ সাজে যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে, তিনি রাশিকে মারতে যাচ্ছে। এক সময় তার ছেলে উজ্জল ও রাশির বিয়ে মেনে নেয় এবং হানিমুনে পাঠায়। সেখানে তার লোক পাঠিয়ে পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর রাশির কি হবে আর অপলা রায় নতুন কি চাল চালবে তা আমার জানা নেই। নাটক দেখলে বলা যাবে। এখন প্রশ্ন হলো এ নাটকটি দেখে আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীরা কি শিখছে। কিভাবে স্বামীকে ঠকানো যায়, কিভাবে পুত্রবধূকে মারা যায়। কিভাবে বোনকে ঠকানো যায়। সর্বপরি কিভাবে ভালো মানুষ সেজে তলে তলে ছুরি মারা যায়।
এছাড়াও আরো অন্যান্য চ্যানেলে প্রায়ই একই ধরনের নাটক প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিটি নাটকই কয়েকটি পরিবার নিয়ে রচিত হয় প্রতিটি পরিবারে এক বা একাধিক দুষ্ঠু প্রকৃতির মহিলা চরিত্র থাকে যারা সবসময় পরিবার ভাঙ্গনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। যা আমাদের সমাজে প্রভাব পড়ছে।
ভারতের নাটকগুলো থেকে আমাদের নাটকগুলো বাস্তব সম্মত। তারা নাটকে দেখায় ঘুমাতে যাওয়ার সময়, খাওয়ার সময় অর্থ্যাৎ সর্বাবস্থায় তারা দামী শাড়ী গয়না পরে থাকে। তাদের নাটকের প্রতিটা চরিত্রের বেশভূশা সর্বাস্থায় একই থাকে। চমকপদ কিছু দৃশ্য থাকে। মাঝে মাঝে কিছু রিয়েলিটি শো দেখানো হয় যেখানে আবার অশ্লীল দৃশ্যও থাকে। পোশাক আশাকে তেমন শালীনতা নেই। এছাড়া রিয়েলিটি শো বলা হলেও এগুলোর ঘটনা থাকে সাজানো। এমনকি শুটিং এ যেসব দর্শক থাকে তাদেরকেও নাকি ভাড়া করা হয়। শুধু তাই নয় এসব শোয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনে প্রতিযোগীদের সম্পর্কে বিচারকদের মতামত পরিবর্তন করা হয়! এসব বিষয় বিবেচনা করলে আমাদের রিয়েলিটি শোতে আলোর ঝলকানি না থাকলেও অনেক ভাল। নাটককে বলা হয় সমাজের দর্পণ। অথচ ভারতীয় এসব নাটকের মধ্যে সমাজের কোন চেহারায় খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ আমাদের দেশের নাটকগুলির মধ্যে বাস্তবতা থাকে। কিন্তু এগুলো আমরা দেখছি না।
এখন কথা হচ্ছে এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? আমি আপনি ইচ্ছে করলেই এইসব চ্যানেল থেকে সরে আসতে পারব না। কারণ রিমোট টিপলে চ্যানেল সামনে আসে। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ঠিকিয়ে রাখার জন্য সরকারীভাবে এসব চ্যানেলের অনুমতি বন্ধ করতে হবে। আমাদের চ্যানেল যদি ভারত না দেখায় তাহলে আমরা কেন তাদের চ্যানেল দেখব? তাদের সংস্কৃতি গলদকরণ করব। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে জানব, বুঝব। যেসব চ্যানেল আমাদের সংস্কৃতির সাথে মিল নয় সেসব চ্যানেল বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান করছি। তা না হলে আমাদের দেশে নিজস্ব কোন সংস্কৃতি থাকবে না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×