somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিজরাবল জার্নি টু ব্যাঙ্গালোর

০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১১ সালের মে মাসে কমনওয়লথ এর একটি প্রোগ্রামে যোগ দিতে ব্যাঙ্গালোর যাওয়ার সুযোগ ঘটেছিল। তবে বিভিন্ন কারণে যাত্রা এবং ভ্রমণ সবই ছিল নানারকম সমস্যা আর প্রতিকূলতায় পরিপূর্ণ। ঘটেছিল অনেক মজার ঘটনাও। সেসব ঘটনা থেকে কয়েকটি এখানে তুলে দিচ্ছি আপনাদের অবগতির জন্য।

কালো আঙুররে বনে

একদিন আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো বিশাল একটি আঙুর বাগানে। ধর্ম বইতে পড়েছি আঙুর বেহেশতের ফল। জানিনা সেটি কালো আঙুর, নাকি সবুজ। তবে কালো আঙ্গুরের বাগানে প্রবেশ করে গাছে থোকা থোকা আঙুর ঝুলতে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মনে হলো, সত্যি সত্যি বুঝিবা কোন স্বর্গোদ্যানে প্রবেশ করেছি।
বাস থেকে নেমে সবাই মুগ্ধ বিস্ময়ে ছুটে গেলাম আঙুর বাগানে। গাছে গাছে ঝুলছে বড় আকারের টসটসে কালো আঙুরের থোকা। যা দেখে আমরা কেউ আর লোভ সামলাতে পারলাম না। ছুটে গিয়ে সবাই আঙুর ছিঁড়ে টপাটপ মুখে দিতে লাগলাম।
আমা্দের কান্ড কারখানা দেখে বাগানের কেয়ারটেকার ছুটে এসে কন্নড় ভাষায় আমাদরে টীম লিডারকে কিছু বললেন। সাথে সাথে টীম লিডার আমাদেরকে সর্তক করে দিয়ে বললেন, আপনারা কেউ আঙুর খাবেন না। কারণ আমরা এখানে আসার কিছুক্ষণ পূর্বে আঙুরে হরমোন স্প্রে করা হয়েছে। ফলমূলে হরমোন স্প্রে করা হয় মূলত আকারে বড় করা এবং পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য। তাছাড়া যে সকল আঙুর থেকে ওয়াইন বানানো হয় সেসব আঙুরে হরমোন স্প্রে করা হয় ফল বড়, রসালো আর বিচিহীন করার জন্য।
টীম লিডারের সর্তক বাণী শুনে সবার মুখ শুকিয়ে গেল। কারণ ততক্ষণে সবার পেটে বেশ কয়েকটি আঙুর চালান হয়ে গিয়েছে। টীম লিডার আশ্বস্ত করে বললেন, যে কটি খাওয়া হয়েছে তাতে তেমন কোন ক্ষতির সম্ভবনা নেই।
যদিও আঙুর খাওয়ার পর কোন কিছুই অনুভূত হয়নি কিন্তু হরমোন স্প্রের কথা শোনার পর থেকেই আমার কেমন যেন মাথা ঘোরা এবং গা-বমি বমি করার অনুূভূতি হতে লাগলো। জানিনা এটি হরমোনের র্পাশ্ব-প্রতিক্রিয়া নাকি মনের ভয়।
এতক্ষণ সবাই ব্যস্ত ছিল আঙুর খাওয়া নিয়ে। আঙুরে হরমোন স্প্রের কথা শোনার পর সবাই আঙুর খাওয়া বাদ দিয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
আঙুর বাগানে আমরা সবাই মেতে আছি ছবি তোলা নিয়ে, এমন সময় আমাদের টীম লিডার চিৎকার করে বললেন, আপনারা সবাই দ্রুত বাসে গিয়ে উঠুন... বৃষ্টি আসছে...।
এতক্ষণে আমাদের খেয়াল হলো, আকাশ কালো করে চারিদিক অন্ধকার হয়ে গিয়েছে! দূর থেকে দেখা যাচ্ছে কুয়াশার মত হয়ে বৃষ্টি এগিয়ে আসছে। সবাই ছুটে গিয়ে বাসে উঠলাম। দু’টো বড় বড় বাস ভর্তি করে আমরা এসেছি। আমাদের বাসের চালক বার বার জানতে চাইলেন, দলের সবাই এসেছে কিনা?
আমাদের দিক থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে বাস ছেড়ে দিলেন তিনি। আমাদের বাসকে অনুসরণ করে পিছনের বাসও ছেড়ে দিল। প্রায় মাইল খানেক যাওয়ার পর আমাদের বাসের টীম লিডারের কাছে একটি ফোন এলো। বিব্রত কন্ঠে তিনি জানতে চাইলেন, আমাদের ভিতর মেসি নামে কেউ ছিল কিনা? এ সময়ে সবার খেয়াল হলো, মেসি নেই! ‘মেসি গন মিসিং... মেসি গন মিসিং...’ শুরু হয়ে গেল বাসের মধ্যে চিৎকার চেঁচামেচি। বাস থেমে গেল।
জানা গেল, আঙুর বাগান থেকে কেয়ারটেকার ভদ্রলোক ফোন করে জানিয়েছেন, মেসি ওখানেই আছেন। তিনি ওয়াস রুমে গিয়েছিলেন, বের হয়ে দেখেন আমরা সবাই চলে এসেছি।
মেসি এসেছেন সেন্ট্রাল আফ্রিকা থেকে। বয়স প্রায় ষাটের কাছাকাছি কিংবা তার চাইতেও কিছু বেশি। সবাই চিন্তায় পড়ে গেল। টীম লিডার বললেন, গাড়ি ঘুরিয়ে নিতে। কেউ একজন বললেন, এই বৃষ্টির মধ্যে ফিরে যাওয়া ঠিক হবে না। তাছাড়া আমরা প্রায় আধাঘন্টার রাস্তা চলে এসেছি। বিকল্প কোন উপায়ে তাকে আনানোর ব্যবস্থা করুন।
আমাদের পিছনে অন্য একটি গাড়িতে স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার কয়েকজন অফিসার ছিলেন। ফোন করে মেসিকে আনার দায়িত্ব তাদের ওপর ছেড়ে দেয়া হলো। অতএব আমাদের বাস আবার চলতে শুরু করলো। ('মিজরাবল জার্নি টু ব্যাঙ্গালোর' বই থেকে সংগৃহীত)-

৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×