somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম ধর্ম সকলের মাতৃভাষা চর্চাকে দিয়েছে সমান গুরুত্ব। "বাংলা আমার মাতৃভাষা, খোদার শ্রেষ্ঠ দান।"

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন মানবজাতিকে যতগুলো নিয়ামত দান করেছেন, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ামত হলো- ভাষা বা কথা বলার শক্তি। মনের ভাব প্রকাশ করার মাধ্যমই হলো- ভাষা। আল্লাহ্‌ সুবহানু তাআলা বলেন, তুমি যদি আমার কুদ্‌রত ও নিদর্শন দেখতে চাও, আমার অনেক কুদ্‌রতই তুমি দেখতে পাবে, তার কয়েকটি বিশেষ কুদ্রত এর মধ্যে একটি হলো মাতৃভাষা।#আর এ প্রসঙ্গে আলাহ্‌ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘তার এক নিদর্শন হলো তোমাদের রঙ, ধরণ এবং ভাষার বিভিন্নতা।’ আল্লাহর শৈল্পিক নিপুর্ণতা কত সুন্দর ও বিচিত্র। তিনি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের ভাষাকে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা বৈচিত্র্যপূর্ণ উপায়ে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে সক্ষম হয়। আল্লাহ্‌ মানুষকে তাদের মনের আকুতি প্রকাশের জন্য দান করেছেন বাক শক্তি। আল্লাহ্‌ নির্বোধ মানবজাতিকে বোধশক্তি দান করেছেন ভাষার মাধ্যমে। আল্লাহ্‌ পাক যখন আদম (আ.) কে তৈরি করেছিলেন, তখন তিনি তাকে সকল ভাষা শিখিয়ে দিয়েছিলেন। হযরত আদমকে সৃষ্টি করার পর যত ভাষা দুনিয়াতে আছে সব কিছুর জ্ঞান তাকে তিনি দান করেছেন।
এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘‘খালাকুল ইনসানা আল্লামাহুল বায়ান- অর্থাৎ তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ তিনিই তাকে শিক্ষা দিয়েছেন ভাব প্রকাশের উপযোগী ভাষা।

এই আয়াতের আলোকে বুঝা যায়, পৃথিবীর সব ভাষা আল্লাহ্‌ কর্তৃক সৃষ্ট। তাই আল্লাহ্‌ কোনো নির্দিষ্ট ভাষা সৃষ্টি করেছে, এ মত পোষণ করা যাবে না। সকল ভাষাই আল্লাহ্‌ সৃষ্টি করেছেন। তবে মুসলমান হিসেবেই প্রত্যেকের প্রিয় ভাষা হলো আরবি। কারণ মহাগ্রন্থ আল কোরআন ও মুহাম্মদ (সা.) এর ভাষা ছিল আরবি। তাই প্রতিটি মুমিনকে আরবি ভাষাকে ভালোবাসতে হবে ও চর্চা করতে হবে। তবে আরবি ভাষাকে ভালোবাসার অর্থ এই নয় যে, নিজের ভাষাকে ভালোবাসা যাবে না। আমরা দেখতে পাই, সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহ্‌র নবীর যুগেই অনেক দূরে গিয়ে দ্বীনের দাওয়াত প্রচার করেছেন। যে জাতির কাছে তারা গিয়েছেন তাদেরকে সেই ভাষায় দাওয়াত দিয়েছেন। বিভিন্ন জাতির নিকট যে ভাষাগুলো ছিল সেগুলোকে আলাহ্‌ নিষিদ্ধ করে দেননি।

সুরায়ে ইব্রাহীমে আল্লাহ্‌ পাক বলেছেন, ‘আমি দুনিয়ার বুকে অনেক নবী-রাসুল প্রেরণ করেছি। কিন্তু আমি এমন কোনো নবী রাসুল প্রেরণ করিনি, যারা তাদের ভাষা জানত না। যেই জাতির কাছে যে নবী-রাসুলকে প্রেরণ করেছি, সে জাতির ভাষায় অভিজ্ঞ করে তাদেরকে আমি প্রেরন করেছি।’

কাজেই নিজের জাতীয় ভাষাকে আয়ত্ব করা, শ্রদ্ধা করা কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে কর্তব্য। মহানবী (সা.) এর ভাষা দক্ষতার আরও অপূর্ব নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায় ইসলামে। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো জ্ঞান না থাকার পরেও আল্লাহ্‌র রাসূলের মুখ নিসৃত শব্দগুলো ছিল ভাষাশৈলীর দৃষ্টিকোন হতে অত্যন্ত উঁচু মাপের। এর কারণ, তার মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

আল্লাহ্‌ পাক বলেছেন, ‘আমি নবী ও রাসুলদের কেন সৃষ্টি করেছি? যাতে তারা সুন্দর এবং সহজভাবে আমার বাণী, মানবজাতির কাছে পৌঁছে দিতে পারে।’ তাছাড়া বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলা উঁচু ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। আর নবী রাসুলগণ ছিলেন বড় ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
পৃথিবীর সব জনমণ্ডলীয় ভাষা আল্লাহর নিকট সমান এবং সব মানুষের মাতৃভাষা সমান গুরুত্বের অধিকারী। এ সম্পর্কে আল্লাহর সুস্পষ্ট ঘোষণা, ‘ওয়ামা আর সালনা মিররাসূলিন ইল্লা বিল্লিসানি কাওমিহি লিউবাইয়েনা লাহুম।’অর্থাৎ আমি (আল্লাহ) প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের নিকট পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৫)
আল কুরআনে আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘ইন্না আরসালনাকা বিল হাক্‌কি বাশিরাও ওয়া নাজিরাও ওয়াইমমিন উম্মুতিন ইলা খালা ফিহা নাযির।’ অর্থাৎ আমি তোমাকে (রাসুল) সত্যসহ প্রেরণ করেছি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে।
অন্য আয়াতে বলেন, ‘এমন কোনো সম্প্রদায় নেই, যার নিকট সতর্ককারী প্রেরীত হয়নি।’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ২৫)

এর পরবর্তী আয়াতে বলেন, ‘যায়াতাহুম রুসূলুম বিল বাইয়্যিনাতি ওয়াবিন নাসূরি ওয়াবীল কিতাবীল মুনীর।’ অর্থাৎ তাদের (পূর্ববর্তী মানব সম্প্রদায়ের) নিকট এসেছিল তাদের রাসুলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শন, গ্রন্থাদি ও দিপ্তীমান কিতাবসমূহ।’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ২৫)

অতএব, বিশ্বস্রষ্টার পবিত্র বাণী থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ্‌ পৃথিবীর সব অঞ্চল, যুগ ও জনমণ্ডলীর জন্যই নবী-রাসুল ও আসমানী কিতাব নাযিল করেছেন এবং নাযিলকৃত স্থানের প্রচলিত ভাষাই বিভিন্ন যুগ, জনমণ্ডলী ও স্থানের উপযোগী করে আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছিল। সুতরাং, পৃথিবীর কোন ভাষাই তুচ্ছ বা নিন্দনীয় নয়, সব ভাষাই আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে গণ্য এবং সে হিসেবে সমমর্যাদার অধিকারী।

অতএব মহাগ্রন্থ আল-কোরআন ও বিভিন্ন দৃষ্টান্ত থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম, তা সে যে ভাষাই হোক, ইসলাম কোন বিশেষ স্থান কাল বা সম্প্রদায়ের জন্য নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সকল মাতৃভাষা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে পৃথিবীতে অনেক ভাষা আছে যা উন্নত বা সাবলীল নয়। ভাষার সঠিক চর্চা বা অনুশীলন না করলে ভাষা উন্নত হতে পারে না। আর তাই বলে উন্নতর ভাষার প্রতি মর্যাদা দেখাতে গিয়ে নিজের মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করা অসঙ্গত। অনুরূপভাবে, মাতৃভাষার প্রতি অন্ধভক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে অন্যভাষাকে অশ্রদ্ধা করাও অনুচিত, ইসলাম সমতার ধর্ম, মানবতার ধর্ম, ইসলাম কোনো ভাষাকেই তুচ্ছ বলেনি। ইসলামের দৃষ্টি সকল ভাষার মর্যাদা সমান।

মাতৃভাষা, আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত মানবজাতির জন্য অনেক বড় একটি নিয়ামত বা নিদর্শন। তাই মাতৃভাষাকে শ্রদ্ধা করা উচিত। মাতৃভাষা চর্চা ছাড়া কোনো জাতিই উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারবে না। তারই একটি সুন্দর উদাহরণ দিতে চাই। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ন্যায় বিরাট প্রতিভা ও আজন্ম ইংরেজী ভাষা শিক্ষা ও চর্চার পরও ইংরেজী ভাষার খ্যাতি লাভ করতে ব্যর্থ হন। অতঃপর যে মাতৃভাষাকে বাংলায় সাহিত্য সৃষ্টিতে তিনি চরম অবজ্ঞা করেছেন, সে মাতৃভাষা বাংলায় সাহিত্য সৃষ্টির পর তিনি খ্যাতি অর্জন করেন।

ইসলাম জীবনের সর্বক্ষেত্রে এ সহজাত প্রবণতারই স্বপক্ষে। তাই ইসলামকে বলা হয় ফিৎরাতের (স্বভাব বা প্রকৃতির) ধর্ম। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘ল অব নেচার’। মাতৃভাষার প্রতি মানুষের সহজাত স্বভাব এই ‘ল অব নেচার’এর অন্তর্ভুক্ত।###স্বকীয় প্রতিভা বিকাশের সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম হল মাতৃভাষা। কিন্তু তাই বলে অন্য কোনো ভাষা শিক্ষা করা ও চর্চা করা, ইসলাম নিষেধ করে না, বরং উৎসাহ করে।
ফেব্রুয়ারি মাস বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য গর্বের মাস। নিজের মায়ের ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাংলার জনগণ রাজপথ রঞ্জিত করেছিল। প্রসঙ্গক্রমে আমাদের স্পষ্ট জেনে নিতে হবে, যে অঞ্চলে মুসলিম প্রেরিত হবে, সেটিই হবে তার মাতৃভাষা। এই ভাষা অন্য ধর্মাবলম্বীদের ভাষা বলে বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না। কারণ মাতৃভাষা চর্চা করা আল্লাহ্‌র আদেশ, নবী-রাসুলদের সুন্নাত। তার আরও চমৎকার দৃষ্টান্ত মিলে, মুহাম্মদ (সা.) এর যুগে। আবু জেহেল, আবু লাহাব প্রমুখের মাতৃভাষাও ছিল ‘আরব’। কিন্তু তাই বলে, মুহাম্মদ (সা.) ধর্মের সঙ্গে ভাষার বিভেদ সৃষ্টি করেননি। আর এভাবেই ইরান ও পারস্য দেশগুলোতে ইসলামের প্রচার ঘটে ভাষার মাধ্যমে। মুসলমানরা যখন ফার্সি ভাষাতেই ইসলাম চর্চা শুরু করল, তখন ফার্সি ইসলাম সাহিত্যে দ্বিতীয় নম্বর ভাষায় সমৃদ্ধ হয়ে যায়।
ঠিক একইভাবে মুসলমানরা যদি বাংলাভাষা চর্চা শুরু করে, তারা ইসলামী সংস্কৃতির প্রভাব এই ভাষায় সৃষ্টি করতে পারে। অনেক মুসলিম কবি যুগ যুগ ধরে ইসলামী সাহিত্য চর্চা করেছেন বাংলায়।

কাজী নজরুল ইসলাম পবিত্র কুরআনে বাংলা অনুবাদ কাব্যের রচনার কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার অসুস্থার কারণে তিনি তা সম্পূর্ণ করতে পারেননি। শুধু আমপারা কাব্যের অনুবাদ সমাপ্ত করেছেন। একইভাবে ফররুখ আহমদ, বেনজীর আহমদ, কায়কোবাদ, আল মাহমুদ প্রমুখসহ আরো অনেক কবি ও সাহিত্যিক বাংলা ভাষায় ইসলামী ভাবধারাকে প্রচার করেছেন।
বাংলাভাষা চর্চা করা বাঙালি মুসলমানদের জন্য আবশ্যক এবং বাংলাতে ইসলামী ভাবধারাকে প্রচার করা ও ইসলামী সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা তাদের কর্তব্য। ইসলামে মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্বের যে নজির তা হয়তো কোথাও অন্য কোনো ধর্মে পাওয়া যাবে না।

ইসলাম মাতৃভাষাকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসতে শিখিয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, আমরা তা করি না। আমরা ভাষা দিবসকেও অপসংস্কৃতিতে আচ্ছন্ন করে রেখেছি। যে মহান ব্যক্তিগণ বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য শহীদ হয়েছেন, আমরা তাদেরকে রীতিমত অসম্মান করে চলেছি। আমরা ভাষা দিবসকে ৮ই ফাল্গুনের পরিবর্তে ২১শে ফেব্রুয়ারিতে পালন করি। ৮ই ফাল্গুন মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা দরকার। যাতে এ ভাষার জন্য যে ভাইয়েরা রক্ত দিয়েছেন তাদের সঙ্গে সংগতি থাকে। একদিকে আমরা এই দিবসকে বাংলা ভাষার দিবস হিসেবে পালন করি, কিন্তু তা পালন করি ইংরেজী তারিখ অনুযায়ী ২১ শে ফেব্রুয়ারি। একজন ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসেবে আমি দূঢ় বিশ্বাস রাখি যে, মুসলমানের জন্য তার নিজের ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি করা ইবাদত ও ঈমানী দায়িত্বের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ। নিজের মাতৃভাষাকে ত্যাগ করা ঈমানের অংশ নয় বরং এতে পাণ্ডিত্য গ্রহণ করা উচিত। যাতে বাংলাভাষা, কোটি কোটি মুসলমানদের এই ভাষার মাধ্যমে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়। আমাদের মনে রাখা উচিত, যে জাতি নিজের ভাষাকে সমৃদ্ধ করবে সে জাতি নিজেই সমৃদ্ধ হতে পারে। আমাদের ভাষা সমৃদ্ধ হলে এই অঞ্চলের মুসলমানরাও সমৃদ্ধ হবে। মাতৃভাষায় ইসলাম চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা ইসলাম চর্চার মাধ্যমে সমাজ থেকে কু-সংস্কার বিদূরীতহ হয়।
অমুসলিম মনিষী গিরিশচন্দ্র মাতৃভাষায় কোরানের অনুবাদ করে আমাদের কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেন। তিনি এ দূরূহ কাজটি সম্পন্ন করে বাংলাভাষী মুসলমানদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।

এভাবে আমাদের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে মাতৃভাষায় কোরান-হাদীস, সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চায় ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন করেন। বহু ইসলামী চিন্তাবীদ ও মোহাদ্দেছ, মোফাচ্ছের তাদের শ্রম ও মেধা দিয়ে এ- সম্ভাবনাকে সমৃদ্ধ করেছেন।প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি যখন আসে, বই মেলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হয়, তবে সবচেয়ে বেশী লক্ষ্য রাখা দরকার, যাতে আমাদের ভাষাকে বিভিন্ন জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়। অন্য ভাষার উপর নির্ভর না করে নিজের ভাষার মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষিত হওয়া যায়। এ জন্য জ্ঞান বিজ্ঞানের বিদেশী বইগুলো বাংলা মাধ্যম করা উচিৎ। ইসলাম জীবনের সম্পূর্ণ ধারক ও বাহক। ইসলাম মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষুদ্র ও বড় জিনিসের ব্যবহার ও গুরুত্বের নজির রেখে গেছে, এর মধ্যে ভাষা চর্চাও অন্যতম। মাতৃভাষা দিবসে প্রতিটি প্রকৃত মুমিনের বা ধর্মপ্রাণ মানুষের কিছু দায়িত্ব আছে বলে আমি মনে করি। তার মধ্যে প্রথমেই বলবো, সকলকেই সম্মিলিত চেষ্টার মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে আর্ন্তজাতিক আরও জোরদার করার স্বীকৃত করার জন্য চেষ্টা করতে হবে।

১৯৫২ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত এই দিনকে উদ্‌যাপন করলেও ১৯৯৯ সালে এ দিবসটি আর্ন্তজাতিকভাবে প্রতিটি দেশে বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এটা আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়। এ স্বীকৃতি বাংলাদেশের মানুষের জন্য বড় অর্জন। কাজেই এ দিন আমরা বিভিন্ন জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের তত্ত্বকে এই ভাষায় আলোচনা করা এবং বাংলাভাষায় ইসলামী সাহিত্য সৃষ্টি করার মাধ্যমে এই ভাষাকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করব। এই ভাষা এই দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে যেন সুস্থ থাকে। অপসংস্কৃতির কু-প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে, শিরকের প্রভাব থেকে যেন মুক্ত থাকে। সুন্দরভাবে কথা বলা ও আবৃত্তির মাধ্যমে মাতৃভাষাকে উন্নত করা সম্ভব।

আরবি ভাষা থেকে কিছু শব্দ এসে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে। যেমন শহীদ আরবি শব্দ। মিনারের পাশে শহীদ শব্দটি একে সমৃদ্ধ করেছে। তেমনি উকিল শব্দটি আরবি তা বাংলা ভাষায় আইনজীবী বলে ব্যবহৃত। এজন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে কাজ করতে হবে এবং আরেকটি কাজের প্রতি মুসলমানদের সজাগ থাকতে হবে। আর তা হলো বাংলাভাষাকে আরবি ভাষার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো যাবে না। যা বর্তমান বিভিন্ন সেমিনার, বুদ্ধিজীবীদের আলোচনায় লক্ষ্যণীয়। তারা আরবি ভাষাকে ভিন্ন ভাষা বলে হেয় করে থাকে। আরবি ভাষার প্রতি আমাদের ঈমানী আবেগ আছে এবং বাংলা ভাষার জন্য আছে স্বভাবজাত আবেগ। এ দুই আবেগকে একসঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে হবে। বিভিন্ন বক্তব্য, রচনা এবং কলামের মাধ্যমে দুই আবেগকে সাংঘর্ষিত করার একটি সুক্ষ ষড়যন্ত্র এখানে চলছে। প্রতিটি মুসলমানকে এ ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে যে, মুসলমান হিসেবে আমি আরবি ভাষা চর্চা করব তার মানে এ নয় যে, আমি বাংলা ভাষাকে পরিহার করব। আবার বাংলা ভাষা চর্চা করব তার মানে এই নয় যে, আমি আরবি ভাষাকে ত্যাগ করব।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, ইসলাম মাতৃভাষাকে যথার্থ মর্দাদা ও গুরুত্ব প্রদানের শিক্ষা দেয়। আর এই শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদেরকে মাতৃভাষাকে সম্মান করতে হবে এবং মাতৃভাষার মর্যদা রক্ষার জন্য আমরা সংগ্রাম করব এবং প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করব।

অবশেষে বলতে চাই, আরবি ভাষা আমরা চর্চা করব। কারণ এটি কুরআন ও হাদিসের ভাষা। আল্লাহ পাক একুশের যে গৌরব বাঙালি মুসলমানদেরকে দান করেছেন, তা যেন ইসলামের কল্যাণে, এই দেশের মুসলমানদের কল্যাণে আমরা ব্যবহার করতে পারি ও এ ভাষার মাধ্যমেই যেন আমরা বিশ্বের দরবারে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারি, মহান আল্লাহ্‌ আমাদেরকে সে তাওফিক দান করুন। আমীন ।

আমার ইসলাম ধর্ম ভিত্তিক বাংলা ব্লগ দীপ্তিময় ইসলাম
পোস্টটি পূর্বে এখানেই প্রকাশিত হয়েছে। ইসলাম সম্পর্কে আরও জানুন। বিদ্বেষ দূর করুন, কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×