বাস ছাড়তে আর মাত্র এক ঘণ্টা বাকি। এখন রাত ৮ টা। এস. আর. ট্রাভেলসের টিকিট কাউন্টার, রংপুর।
কাউনটারের সামনে দাঁড়িয়ে উজ্জ্বল আর সোহানা । ঠাণ্ডায় সোহানা এখনও কাঁপছে । হাতে ধরা চায়ের কাপ থেকে ক্রমাগত ধোঁয়া উঠছে । সেই ধোঁয়া যেন উজ্জলের ছলছল করে ভিজে ওঠা দুই চোখকে আড়াল করার বৃথা চেষ্টায় বাস্ত। কখনোবা নিজেই মাথা নিচু করে নিজের চোখকে আড়াল করতে চাইছে উজ্জ্বল। সোহানা নির্বিকার।
সকল স্তব্ধতা ভেঙ্গে দিয়ে উজ্জ্বলই কথা বলতে শুরু করল : "এই সামান্য কথা বলার জন্যই কি তুমি এত দুর কষ্ট করে এসেছিলে ?"
সোহানা : "আমার কাছে এটাই ভালো মনে হয়েছে।"
-আর কিছুদিন পর বললে কি খুব সমস্যা হত?
-দেখ উজ্জ্বল, আর সপ্তাহ দুয়েকের ভিতর আমার পরীক্ষা শুরু। আমি চাই যা হবার এখনি হোক। পরে আমি কোনও ঝামেলা চাই না।
-ও। কতক্ষন লাগবে তোমার ঢাকা পৌঁছাতে?
-ভোর হতেই তো পৌঁছে যাবার কথা।
-পৌঁছে ফোন দিও।
-অত ভোরে তুমি জেগে থাকবে কি? আর আমি চাই না, তুমি আমার আর কোনও খবর রাখ।
-ফোন নম্বরটা কি আগেরটাই থাকবে না বদলাবে?
-যদি তুমি ডিস্টার্ব না কর তবে এটাই থাকবে।
উজ্জলের চোখ বেয়ে যেন ঝরনার ধারা বেরুল। প্রচণ্ড শীতের রাত বলেই হয়ত লোকজন কম, আর তাই উজ্জলের এই চোখের ঝর্ণা থেকে বঞ্চিত হল দর্শন পিপাশুরা।
কি যেন বলতে গিয়েও বলতে পারলনা সোহানা।
উজ্জ্বল যেন আজ ছোট এক শিশু। কে বলবে ও আর ছ'মাসের মধ্যে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করবে?
এবার সোহানাই প্রথম বলল, "বাসের সময় হয়ে গেল। এভাবে কাঁদলে লোকে কি বলবে? আর এভাবে কাঁদার কি আছে, আমি কি মরে যাচ্ছি?"
উজ্জ্বল: "কিন্তু তুমিত বল্লেনা, আমার দোষটা কোথায়?"
- আমি তোমাকে কোনও দোষ দিতে পারিনা, কিন্তু আমি আর এসব চাই না।
তুমি একটু আমার দিকটা বুঝার চেষ্টা কর।
এরই মধ্যে বাস চলে এসেছে। উজ্জ্বল নিজের পরে থাকা জ্যাকেটটা খুলে সোহানাকে পরালো- "শীতের ভিতর বাসে ঠাণ্ডা লাগবে, জ্যাকেটের উপর তোমার শালটা জড়িয়ে নাও।"
এতক্ষণ না না করলেও এবার সোহানা কোনও প্রতিবাদ করল না।
সোহানা বলল, "আমাকে বিদায় দাও, আমি তোমার জীবন থেকে চলে যাচ্ছি।"
উজ্জ্বল সোহানার ডান হাতের উল্টো পাশে চুমু খেল। সোহানা বলল- "ভালো থেক, নিজের যত্ন নিও, আর আমাকে ভুলে যেও। আমাকে ভুলে গিয়ে যদি ভালো থাক তবে সেটাই প্রকৃত ভাল থাকা।"
এবার যেন সোহানার চোখও যেন চিকচিক করে উঠল, যা উজ্জ্বলের দৃষ্টি এড়ায় না।
উজ্জ্বল যেন বোবা হয়ে গেছে, চোখের সামনে গত ৮ টি মাস যেন ভেসে উঠছে।
জানালার কাঁচ সরিয়ে সোহানা হাত নাড়ল, ভেজা চোখেও উজ্জলের বুঝতে অসুবিধা হয়না। উজ্জ্বলও হাত নাড়ে। একসময় বাস ছেড়ে দেয়।
ভেজা চোখ নিয়া যতদুর বাস দেখা যায় তাকিয়ে থাকে উজ্জ্বল। সোহানা হয়ত জানেও না যে, চোখের পানিতে উজ্জলের শার্ট ভিজে গেছে, অথবা কাল সকালে উজ্জ্বলের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা।
আলোচিত ব্লগ
আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন
মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন
তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।