somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~ ~ ভালবাসা পুড়ে যায় , স্মৃতি সব রয়ে যায় ~ ~

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১)



ফুটপাথে হাটাটা ইদানিং প্রায় অভ্যাসের মতো হয়ে গিয়েছে । হায় ফুটপাথ ! বানানো হয়েছে হাটার জন্য , অথচ এখানে জায়গায় জায়গায় টং দোকান আর উদ্বাস্তুদের বসবাস । আজকাল ফুটপাথে হাটাও নিরাপদ না । হাটতে গিয়ে কয়েকবারই ফুটপাথে শুয়ে থাকা উদ্বাস্তুদের গায়ে লাথি মেরে বসেছিলাম । ফলাফল ছিল ভয়াবহ । রাস্তায় স্ট্রিট লাইট নিভানো ছিল । অবশ্য আদৌ নিভানো ছিলো নাকি গাপ করে দেওয়া হয়েছে তা আমার জানা নেই । যেহেতু স্ট্রিট লাইট নেই সেহেতু আমি প্রায় অন্ধ । এখন স্ট্রিট লাইট না থাকার ফলে যে ধরনের সমস্যা হয় এজন্য আমি কিভাবে দায়ি হলাম ? আর মানুষগুলোও যে কেমন ! একেবারে ফুটপাথের মাঝখানে শুয়ে থাকে । প্রথমবার এক বুড়ির পা মাড়িয়ে দিয়েছিলাম । বুড়ি কোথা থেকে যেন একটা চ্যালা কাঠ বের করে সোজা আমার পেট সই করে ছুড়েছিলো । এ ধরনের পরিস্থিতিতে যে কেউ হয়তো পড়ি মড়ি করে দৌড় দিতো । কিন্তু আমি পেট চেপে ধরে হ্যাবলার মতো দাড়িয়ে ছিলাম । আমি আসলে বুড়িকে "দুঃখিত" বলতে চেয়েছিলাম । কিন্তু সবসময় যে ক্ষমা চাওয়া লজ্জা পাওয়া নয় বরং রিতিমতো কাঠগড়ায় দাড়ানোর মতো অপরাধ , তা কি আর আমি জানতাম ? আমার মিন মিন স্বরে উচ্চারিতো "দুঃখিত" শব্দটা , বুড়ির দরাজ গলার গালিগালাজের অভ্যন্তরে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেলো । মানুষ আসলে দুটি কারনে পালিয়ে বাঁচে , এক হলো জানের মায়ায় এবং দুই হলো পরিস্থিতির ঠ্যালায় । কিভাবে যেন আমার ক্ষেত্রে দুটোই সত্য হয়ে গেলো সেদিন । যে দৌড় দিয়েছিলাম , তাতে বোধ হয় ইংলিস চ্যানেল পাড়ি দেওয়া সম্ভব । ঠিক বললাম কি ? কল্পনার রাজ্যে সবই সম্ভব । আমার মতো মানুষের জন্য কল্পনাই তো শেষ ভরষা । কল্পকদের জন্য যদি নোবেল প্রাইজের ব্যাবস্থা থাকতো তাহলে নিশ্টই আমার নামটা উপস্থাপকদের হাতে ধরা , কোটি মানুষের উত্‍সাহের কেন্দ্রবিন্দু কাগজটাতে লেখা থাকতো । যাই হোক , একদম ইংদানিং এক বুড়ো ফকিরের হাত মাড়িয়ে দিয়েছিলাম । ব্যাটা ফকির নাকি অন্ধ ! ব্যাটার হাতের টিপ এতো নিখুঁত যে , তার ছুড়ে মারা ইটের আঘাতে আমার হাতে ধরা জলন্ত বেনসনখানা অর্ধেক ভেঙ্গেই গিয়েছিল । ইদানিং তাই বুদ্ধি করে মোবাইলের ফ্ল্যাস লাইটের আলোয় ফুটপাথে হাটি । এতে সফলতার হার শতভাগ । কিন্তু এখানের সমস্যা আছে । আমি জানতাম আলো দেখে কীট পতঙ্গ এসে হাজির হয় । কিন্তু মোবাইলের আলো দেখে যে মলম মামারাও হাজির হয় জানা ছিল না । মামাটা একটু দয়ালু ছিল , পকেট থেকে একশো টাকার নোট , মোবাইল আর বেনসনের প্যাকেটখানা কব্জা করে , যাওয়ার সময় একটা বেনসন গিফট্ করে গিয়েছিল । ইদানিং সিগারেট জ্বালাতে গেলেও সমস্যা , লাইটার দিয়ে শত চেষ্টা করেও আগুন জ্বালাতে পারি না । দোকানদার হারামি তখন বত্রিশ পাটি দাঁত দেখিয়ে , চোখে তাচ্ছিল্য নিয়ে খস্ করে লাইটার জ্বালিয়ে দেয় । অপমান আর কাকে বলে ! আরেকবার এক কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলাম । ফুটপাথে হাটতে হাটতে হটাত্‍ই আশপাশে শূন্যতা অনুভব করলাম । ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের নিচে বসে থাকা মামার কাছ থেকে আজকে সিগারেট কিনেছিলাম । ব্যাটা নাকি সিগারেটে গাঁজা ভরে দেয় । ভাবলাম ওটারই ইফেক্ট । কিন্তু যখন ছপাত্‍ শব্দ হলো আর , আমার পা থেকে মাথা অবধি পানির অস্তিত্ব টের পেলাম । তখন নিজেকে সিটি ড্রেনের কোকা কোলা পানিতে আবিস্কার করলাম । এতো বিড়াম্বনার পরও ফুটপাথে হাটা বন্ধ হয় না । আমার ভাল লাগে হাটতে । প্রত্যাশার সাথে এই ফুটপাথেই তো হাটতাম । এখন সে নেই , তবুও কেন যেন মনে হয় সে আছে । হয়তো পিছিয়ে পড়েছে , এখনি এসে হাত চেপে ধরবে । তারপর আমি যখন পাশ ফিরে তাকাবো , মুচকি হাসবে আমার দিকে তাকিয়ে । গত তিনটা বছর এমন আশা নিয়েই তো বেঁচে আছি । একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ি । অনেকের ধারনা সব প্রাইভেট ভার্সিটির স্টুডেনদের টাকা কচ কচ করে । একেবারে ভুয়া কথা । বরং তাদের টানাটানি বেশি ।



একমাসের মেস ভাড়া দেওয়া হয়নি । আজকে নিশ্চিত হায়দার ভাই এসে গরম কথা শুনিয়ে যাবে । বেড শিটটা ধোয়া দরকার , ওটাতে কেউ বসলেই কয়েক মন ধুলা উঠে । তাছাড়া সমগ্র রুম ব্যাপি তেলাপোকা আর ইদুরের রাজত্ব তো আছেই । তবুও এই মলিন হয়ে আসা রুমটাতেই চলে আমার স্মৃতিচারন । প্রত্যাশার চিঠিগুলো দেখি , চিঠিগুলো পড়ি বার বার । মাঝে মাঝে চিঠিগুলোর গন্ধ শুকে তার অস্তিত্ব খোঁজার চেষ্টা করি । প্রত্যাশার সাথে পরিচয়টা খুব সাদামাটা । জুলাইয়ের শেষ দিক ছিলো তখন , পরদিন হরতাল । কর্মব্যাস্ত ঢাকা শহর তখন রিতিমতো এক্সপ্রেস ট্রেনের গতিতে ছুটছে । ফার্মগেট টু মিরপুর ১০ এর লেগুনাগুলোর পিছনে মানুষ ছুটছে পাগলের মতো । বহু কষ্টে লেগুনায় উঠার পর দেখি একটা মেয়ে পিছনের হেল্পার দাড়ানোর জায়গায় উঠেছে অনেক কষ্টে । মেয়েটাকে বসতে বলে আমি উঠে দাড়ালাম সেখানে । মেয়েটা কৃতজ্ঞচিত্তে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে । চোখগুলো এতো সুন্দর ছিলো যে নজর ফিরাতে পারছিলাম না , শেষে ফলাফল হলো এমন , লেগুনা হটাত্‍ চলতে শুরু করায় , ধপাস করে কাটা কলাগাছের মতো উল্টায়ে পড়েছিলাম রাস্তার উপর । আশে পাশে হাসির রোল উঠেছিলো , এমন কি মেয়েটাও হাসতেছিলো । মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিলো আমার । যার জন্য করলাম চুরি , সেই বলে চোর অবস্থা । লেগুনাটায় উঠলামই না আর । পিছনে তাকিয়ে দেখি মেয়েটার মুখ ভাড় হয়ে এসেছে । হয়তো অনুতপ্ত হয়েছে , ভেবে খুশি খুশি লাগলো আমার । পরবর্তি দেখা হয়েছিলো বইমেলায় । বইমেলায় আমি বই কিনতে নয় বরং বই দেখতে যাই । একটা স্টলে দাড়িয়ে হূমায়ুন আহমেদের "প্রিয়পাদরেখা" বইটা উল্টে পাল্টে দেখছিলাম । হটাত্‍ পাশ থেকে একটা মেয়ে কন্ঠ বলে উঠলো "বইটা খুবই ভাল । আমি পড়েছি ।" পাশ ফিরে দেখতেই দেখি সেদিনের মেয়েটা দাড়িয়ে আছে । সেদিনই ভালভাবে কথা হয়েছিলো । জানতে পারলাম মেয়েটার নাম প্রত্যাশা । হ্যা , মেয়েটা আমার কাছে পরম প্রত্যাশার বিষয়বস্তু হয়ে দাড়িয়েছিলো । আস্তে আস্তে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে । প্রত্যাশা তখন সবে কলেজে ভর্তি হয়েছে । সদ্য কলেজে উঠা কিশোরী রঙ্গিন স্বপ্ন বুনে নিজের মাঝে । সব কিছুই হয়তো তার কাছে রঙ্গিন লাগে । আর আমি কলেজ লেভেলটা পাড় করেছি মাত্র । বাস্তবতার কঠিনত্য বুঝে নিতে হচ্ছে প্রতিটি স্তরে স্তরে । তারপর কোন এক বৃষ্টিস্নাত দিনে প্রথম ভালবাসার কথা বলা । একে অপরের কাছে কিছু প্রতিজ্ঞা করার মাঝেই সম্পর্কটা হয়ে যায় । ধানমন্ডি লেকের পাড়ে অনেকদিন বসে ছিলাম দুজনে । আমার হতাশার মাঝে আলো হয়ে এসেছিলো সে । আমার দিনগুলো তখন দুঃসহ হয়ে গিয়েছিলো । একদিকে পরিবারের চাপ অন্যদিকে ব্যার্থতার পর ব্যার্থতা । চেষ্টা করেও যখন কোন পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পেলাম না তখন একদমই হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম আমি । আমার হতাশাগুলোকে নিপুন হাতে মুছে দিয়েছিলো সে । বার বার আমাকে সাহস দিয়ে যাচ্ছিলো । একাকী নির্জন রাজপথে নিজেদের ছায়ার পিছনে ছুটেছি আমরা । আমার খুব প্রিয় ঋতু বর্ষা । আমার মনে পড়ে বৃষ্টির দিনগুলোতে প্রত্যাশার জন্য অপেক্ষার প্রহরগুলোর কথা । বৃষ্টি ভিজে , ঠান্ডা কাঁপতে কাঁপতে অপেক্ষা করতাম প্রত্যাশার জন্য । মেয়েটা এসে ভয়ানক রেগে যেতো । কেন বৃষ্টিতে ভিজলাম , কেন নিজের খেয়াল রাখি না ইত্যাদি ইত্যাদি । প্রিয় মানুষের জন্য অপেক্ষা করার মাঝেও অনেক ভাল লাগা কাজ করে । প্রত্যাশাকে অসম্ভব সুন্দর লাগতো যখন সে কাজল দিতো চোখে ।এই একটা জিনিসের প্রতি আমার ভীষন রকমের দুর্বলতা কাজ করে । আগে কখনো কোন মেয়েকে কাজল চোখে এতোটা সুন্দর লাগেনি যতটা প্রত্যাশাকে লেগেছে । হয়তো প্রিয় মানুষের সব কিছুর মাঝেই বাড়াবাড়ি রকমের ভাল লাগা কাজ করে বিধায় এমনটা লাগতো । মেয়েটা মাঝে মাঝে খুব বেশিই পাগলামি করতো । একবার তো কাজলের স্টিক এনে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলো ওর চোখে কাজল লাগিয়ে দিতে । আমাকে যদি বলা হতো কয়েকশো ফুট উপর থেকে লাফ দিতে , তাতেও বোধহয় আমি এতোটা হতভম্ব হতাম না । কিন্তু কিছুতেই সে মানবে না । অবশেষে তার চোখে কাজল লাগিয়ে দিতেই হলো । মাঝে মাঝেই কপালের টিপ খুলে আমার হাতে লাগিয়ে দিয়ে বলতো "নাও । আমার স্মৃতিচিন্হ ।" বলেই মুচকি হেসে ফেলতো । আমি খুব বেশি পরিমানের খামখেয়ালী ছেলে । দেখা যেতো বেশিরভাগ দিন কোন না কোন ভাবে শরীরের বেশিরভাগ অংশ কেটে অথবা ছড়ে যেতো । প্রত্যাশা এসব জানতে পেরে প্রথমে আমাকে আচ্ছামতো ঝাড়তো তারপর নিজেই ভ্যাঁ করে কেঁদে দিত । মেয়েটা এতো কাঁদতে পারে ! অথচ আমার সামনে কখনো কাঁদেনি । প্রত্যাশা কখনো জানতে পারেনি তার প্রতিটি অশ্রুকণার মাঝে আমার সত্তা মিশে আছে । সুতরাং তার প্রতিটি অশ্রুকণাই আমার কাছে দামী । কিন্তু পারিপাশ্বিক অবস্থা আর হতাশায় আমার মধ্যে রুক্ষতা বাসা বাধলো । দেখা যেতো খুব ছোটখাটো ব্যাপারে প্রত্যাশার সাথে ঝগড়া হতো খুব । মেয়ে করুন কন্ঠে বলতো "ধ্রুব । আমাকে আর কষ্ট দিও না প্লিজ ।" কথাটা শুনে আমার ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যেতো । নিজেকে কঠোর শাষন করতাম ।



(২)



প্রত্যাশার এইচএসসি পরিক্ষা শেষ যখন হয় তখন আমি একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি । প্রত্যাশা ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পায় । সম্ভবত সেদিন ওর পরিবারের বাইরে আমার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হয়নি । কিন্তু বাস্তবতার রূঢ়তা সবে মাত্র শুরু হয়েছিল । আস্তে আস্তে আমার মনে হতে থাকলো প্রত্যাশা দূরে চলে যাচ্ছে আমার কাছ থেকে । দেখা যেতো আমার কথা বার্তা তার বিরক্ত লাগতো । ঢাকা ভার্সিটিতে গিয়েছি বহুবার । দেখেছি সে তার বন্ধুমহলের সাথে ভালই আছে । প্রত্যাশার হাসি মাখা মুখটা এতো নিষ্পাপ ছিল যে সে মুখের দিকে তাকিয়ে আমি আমার সব দুঃখ ভুলে যেতাম । প্রথমবারের মতো তার হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে খুব বেশি কষ্ট হলো । জীবনে প্রথমবারের মতো কেঁদেছিলাম সেদিন । জুলাই মাসের শেষ দিক তখন । ঝম ঝম করে সারাদিন বৃষ্টি হয়েছিলো । বৃষ্টি ভেজা পিচ ধালা রাস্তার মাঝেও কিন্তু আবছা একটা ছায়া পরে । আমি একাকিই ছুটেছিলাম ছায়ার পিছনে । অনুভূতিগুলো পুরোনো হয় না । বরং প্রতি মুহূর্তে প্রত্যাশার অভাবের কথা স্বরন করিয়ে দিয়ে যায় আমাকে । প্রত্যাশার সাথে ব্রেক আপ হয়ে যাওয়ার পর অনেক চেষ্টা করেছি ভাঙ্গা সম্পর্কটাকে জোড়া লাগানোর । কিন্তু আমার প্রিয় মানুষটা কিভাবে যেন বদলে যায় বেমালুম । যোগ্যতা , প্রতিষ্ঠাই তখন তার কাছে বড় হয়ে দাড়ায় । জীবনের সবচেয়ে দুর্বিসহ দিনগুলো নিরবতায় কেটে যাচ্ছিলো আমার । পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছিলো আমার মানসিকতা । সিগারেট খাওয়ার হার বেড়ে গিয়েছিলো ভয়াবহ রকমের । অবশ্য প্রত্যাশাকে দোষ দেওয়া যায় না । আমার সাথে নিজেকে জড়িয়ে তার জীবনটা ধ্বংস করবে নাকি সে ? তবুও কেন যেনো মনে হয় সে ফিরে আসবে । আমার মধ্যে একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে । সেটা হলো নিজেকে লুকিয়ে রাখার ক্ষমতা । প্রত্যাশা জানে না প্রায় প্রতিটা দিনই তাকে অনুসরন করি আমি । বুকের ভিতর হাহাকার উঠে । আমি ভাবতেই পারি না প্রত্যাশা অন্য কোন ছেলের হাত ধরে হাটবে । অন্য কোন ছেলের ঘাড়ে মাথা রেখে চুপ করে বসে থাকবে । আমার দিনগুলো অবাস্তব কল্পনায় কেটে যায় । আচ্ছা অনুভূতিগুলো এতো নিষ্ঠুর কেন ? নিজ অবস্থান থেকে একটুও নড়তে চায় না । ইস্ কম্পিউটার ট্রাসবক্সের মতো যদি আমাদেরও একটা ট্রাসবক্স থাকতো তাহলে ভাল হতো । যেসব স্মৃতি মনে করে কষ্ট হয় সেসব স্মৃতি ট্রাসবক্সে ফেলে দিতাম । ভার্সিটিতে লাস্ট সেমিস্টারে আমি । প্রতি বছর জব ফেয়ার হয় এখানে । কখনো অংশ নেইনি । এবার নিবো ভেবেছি । এখন প্রত্যাশার কথা ভেবে পাগলামি করার হারটা কমে গিয়েছে । সময় অনেক বড় একটা ডাক্তার । সময়ের সাথে সাথে শারিরিক , মানসিক সব ধরনের ক্ষত পূরন হয়ে যায় । প্রত্যাশা আমার মনে যে ক্ষত তৈরি করেছে তা শুকাতে বেশ সময় লাগবে । তবুও আশা নিয়েই তো মানুষ বাঁচে । আমিও সেই নষ্ট আশা নিয়ে বেঁচে আছি । জব ফেয়ারটাতে এটেন্ড করলাম । মজার ব্যাপার হলো একটা চাকরিও জুটিয়ে ফেললাম । একটা মোবাইল কম্পানি থেকে অফার এসেছে । প্রথমে বুঝতে পারলাম না কি করা উচিত । তারপর প্রথমে আব্বা আম্মা জানালাম । তারপর ফোনের মেমরি থেকে প্রত্যাশা নামটা বের করে দুরু দুরু বুকে ফোন দিলাম । অপর পাশে দুবার রিং হলো । তারপর ফোন রিসিভ করে অতি পরিচিত একটি গলা হ্যালো বলে উঠলো । কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম "প্রত্যাশা আমি ধ্রুব । কেমন আছো ?" অপর প্রান্ত থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ভেসে এলো , তারপর জবাব এলো "হমম ভালো । তুমি ?" । "আমিও ভালই । তুমি কি আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবা প্লিজ ?"-"কেন ?"-"দেখা করলেই বলবো"-"হম । কোথায় দেখা করতে চাও ?"-"জাহাজ বাড়িতে চলে আসো ?" সম্মতিসূচক কথা বলে খট করে ফোট কেটে গেলো । তৈরি হয়ে জাহাজবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । আমি পৌছানোর পাঁচ মিনিট পরই প্রত্যাশা এসে পৌছালো । এসে আমার প্রায় এক হাত দূরে বসলো । আমি চুপচাপ লেকের সবুজাভ পানির দিকে তাকিয়ে আছি । সূর্য দিগন্তের শেষ সীমায় নেমে এসেছে তখন , গাছের ফাঁক দিয়ে সূর্যরশ্মির একটা রেখা এসে লেকের পানিতে পরে সামান্য অংশ আলোকিতো করে রেখেছে । প্রত্যাশাও চুপচাপ বসে আছে । খুব ইচ্ছা করছে তার হাতটা একটু ধরতে । কিন্তু সাহস হচ্ছে না । প্রত্যাশা এবার আমার দিকে ফিরে একটু রূঢ় কন্ঠেই বলল "ডেকেছো কেন ?" । আমি খুব আস্তে করে বললাম "প্রত্যাশা আমার একটা চাকরি হয়েছে । আমরা কি আমাদের সম্পর্কটা ঠিক করে নিতে পারি না ?" । প্রত্যাশা কিছু বলল না অনেক্ষন , স্থির চোখে সামনে দিকে তাকিয়ে রইলো সে । তারপর ধীরে ধীরে বলল "ধ্রুব । বাস্তবতার কাছে সবার মাথা নত করতে হয় । আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । পাত্র বুয়েট থেকে পাশ করা । আশা করি আর কখনো বিরক্ত করবে না আমাকে ।" বলেই উঠে দাড়ালো প্রত্যাশা , উল্টো ঘুড়ে হাটতে লাগলো । আমি তখনো তাকিয়ে আছি লেকের দিকে , আশপাশের পরিবেশ দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে । আলোকিত পৃথিবীর মাঝে আধাঁর স্বমহিমায় নিজের অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছে । পকেট থেকে একটা বেনসন বের করলাম । আজকে লাইটারটা একবারের চেষ্টাতেই খস্ করে জ্বলে উঠলো । সিগারেট ধরিয়ে ধোয়া ছাড়লাম । ধোয়ার মাঝে সামান্য সময়ের জন্য হারিয়ে গেলাম আমি । প্রত্যাশা ফানুশ জিনিসটা খুব পছন্দ করতো । ওর জন্য আজকে একটা ফানুশ নিয়ে এসেছিলাম । যার শরীরের কাগজটাতে লেখা ছিল "তোমাকে ভালবাসি" । ফানুশটা জ্বালিয়ে দিলাম । আঁধারের কায়া কাটিয়ে ফানুশটা ধিরে ধিরে উঠে যাচ্ছে উপরে , লেকের পানিতে তার অসাধারন প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে । অবাক হয়ে দেখলাম আমার চোখজোড়া ভিজে গেছে । প্রত্যাশার স্মৃতিগুলো অমলিন রয়ে গেছে এখনো , শুধু ভালবাসা পুড়ে গেছে । ভালবাসা পুড়িয়ে দিয়ে গেছে আমার অস্তিত্বকে , শুদ্ধ করে দিয়ে গেছে আমার সত্তাকে । রাত বাড়তে থাকে , সিগারেটের ধোয়ার ঘনত্ব বাড়ে , অস্পষ্ট হয়ে আসে জ্বলন্ত ফানুশ । টিকে থাকে স্মৃতি , বিমূত সাক্ষী হয়ে ।



একটা উদ্ভট লেখাঃ



তবুও নিরবে বেঁচে থাকা , কষ্ট পুষে রেখে হাসি মুখে বাঁচা । জীবনের আঁকা বাকা রেল লাইনের মাঝে উদ্দেশ্যহীন হেটে চলা , অশ্রু হয়ে বয়ে চলা । প্রতিদিনের খড়তাপে পুড়তে থাকা রাজপথে নিজের প্রতিচ্ছবি খোঁজা , মেঘ হয়ে শূন্যতায় পথ করে নেওয়া । বৃষ্টি হয়ে ছুঁয়ে যাওয়া তোমাকে , স্মৃতি হয়ে জেগে থাকা প্রতিটি মূহুর্তে । তোমার জন্য প্রতিক্ষার প্রহর গুনে যাওয়া , অথবা অশ্রুহীন বেদনায় কাটিয়ে দেওয়া নিদ্রাহীন রাত । সিগেরেটের চাপা আগুনে কষ্টরা সব নিরবে জ্বলে , ছাই চাপা অতীত দৃশ্যপটে জেগে রয় । আমার ভালবাসা পুড়ে যায় , স্মৃতিরা সব থেকে যায় ।



কিছু কথা এবং প্রশ্নঃ

আচ্ছা আপনি যদি প্রত্যাশার জায়গায় হতেন তাহলে আপনি কি করতেন ? আমার দৃষ্টিতে প্রত্যাশা যা করেছে তার জন্য তাকে আপনি দোষ দিতে পারেন না । কারন প্রত্যেকটা মানুষেরই নিজের ভাল মন্দ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে ।


আর যদি এমন হতো ধ্রুবর জায়গায় প্রত্যাশা থাকতো এবং প্রত্যাশার জায়গায় ধ্রুব থাকতো তাহলে কি হতো ?


জীবনে চলার পথে প্রতিনিয়ত তীক্ষ বাকের মুখোমুখি হতে হয় । মুখোমুখি হতে হয় কঠিন বাস্তবতার । মাঝে মাঝে কঠোরতার মধ্যেও নিজের ভালটুকু বুঝে নিতে হয় । আপন মানুষ খুব কমই থাকে । আমরা তাদের সব ধরনের অন্যায় অবিচারও হাসিমুখে মেনে নিই । আপন মানুষদের কখনো দূরে সরিয়ে দেওয়া ঠিক না । অনেক সময় প্রচুর কষ্ট হলেও প্রিয় মানুষকে খুশি করতে হলে অনেক ত্যাগ স্বিকার করতে হয় । ভালবাসলে বিশুদ্ধভাবে বাসুন । না হয় বাসবেন না ।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×