somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~ ~ প্রতিবিম্ব ~ ~

১৭ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৃষ্টি মাত্রই ধুয়ে দিয়ে গিয়েছে রাজপথটাকে । ঢালু রাজপথের উপর পানির আধারে চুপচাপ খেলে বেড়ায় বাতাস । আর বাতাসের সাথে পানির মৈত্রিতে তৈরি হয় মৃদু স্রোত । পানি মাঝে বিশাল আকাশের উজ্জ্বল প্রতিবিম্ব ফুটে উঠে । স্রোতের মাঝেও পানির আপ্রান চেষ্টা থাকে আকাশের প্রতিবিম্বকে ধরে রাখার । দৃশ্যপট বদলে যায় না , শুধু চরম নিঃসঙ্গতার মাঝে নিজের নিরব অস্তিত্ব ধরে রাখে । খুব ভোর এখন , সচারচর এতো ভোরে সাধারনত মানুষ বের হয় না । কিন্তু আমি বের হয়েছি , হ্যা এই ঘন বর্ষনের দিনও বের হয়েছি । ক্ষনে ক্ষনে আবেগ আর বাস্তবতার মধ্যে যুদ্ধ চলছে । এশা তো বলেই দিয়েছে সে আসবে না তারপরও কেন আসলাম ? আমি সত্যিই জানি না কেন আদৌ আসলাম , শুধু জানি আমি আসতে বাধ্য ছিলাম । অনেকদিন বৃষ্টিতে ভিজা হয়নি , এখন বৃষ্টি হচ্ছে না । কিন্তু আমি জানি বৃষ্টি আসবে , অন্তত আমাকে ভিজিয়ে দেওয়ার জন্য হলেও আসবে । ধানমন্ডি লেকের পাশে রাস্তাটা দিয়ে হাটছি আমি । কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে রাস্তাটাকে ঘিড়ে ! জমে থাকা পানিতে পায়ের স্যান্ডেল ডুবে যায় , পা ভিজে গিয়েছে , তবুও আপনমনেই চলতে থাকে আমার হাটা । হাটতে হাটতে ফিরে গেলাম অতিতে । কুমিল্লা টু সিলেট বাস কাউন্টারের নিচে চোখ কুচকে দাড়িয়ে আছে মেয়েটা । চোখে দেয়া কাজল লেপ্টে গিয়েছে , কিন্তু তাতে যেন সৌন্দর্য আরো কয়েকগুন বেড়ে গিয়েছে মেয়েটার । মুখের ভঙ্গিমাই বলে দেয় প্রচন্ড রেগে আছে মেয়েটা । কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম , তারপর ধিরে সুস্থে সিগারেটের দিকে মনোযোগ ফিরিয়ে নিলাম । লাইটারটা একদম নতুন , ছোট একটা পিস্তলের মতো । লাইটারটা বের করে ট্রিগারে টিপ দিয়ে আগুন জ্বালানোটায় বেশ মজা লাগে । বাসটা আর মাত্র পাঁচ মিনিট পর ছেড়ে যাবে সিলেটের উদ্দেশ্যে । কয়েকটা গভীর টান দিয়ে সিগারেটটা ফেলে দিলাম । বাসটা বিশেষ সুবিধার না , মুড়ির টিনকে টেনে টুনে লম্বার করার ব্যার্থ প্রয়াস বলা যেতে পারে । হেলে দুলে এগোতে থাকলাম দু সারি সিটের মাঝখান দিয়ে । সিট খুজতে গিয়ে দেখি মেয়েটা আমার পাশের সিটেই বসে আছে । বন্ধুদের সাথে আড্ডায় যতই বলি না কেন যে "দোস্ত পাশে একটা সুন্দরি মাইয়া থাকলে জীবনডা পাত্থরকুচি হইয়া যাইতো । খালি সুখের পাতা সৃষ্টি হইতো !" । কিন্তু বাস্তবে ভ্যাবাচ্যাকা ছাড়া কিছুই খেলাম না । যথাসম্ভব ভদ্রভাবে বসতে না বসতেই সুন্দরি নাক কুচকে বলে উঠলো "আপনি স্মোক করেন ! ছিঃ ! প্লিজ অন্য সিটে গিয়ে বসুন !" । আমার মান ইজ্জত যাই ছিল না কেন সব কিছু বেনসনের ধোয়ার মতো উবে গেলো । মুখ কালো করে পাশের সিটে বসলাম । বাস ভর্তি হতে থাকলো এবং যাত্রীরা বেশিরভাগই এলিট শ্রেণীয় অর্থাত্‍ নিন্মবিত্ত । কয়েকজন তো কোদাল , শাবল , কড়াই নিয়ে উঠলো ! সুন্দরির দিকে আড়চোখে তাকাতেই দেখি আতংকিত দৃষ্টিতে লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে সে । তাদের মধ্যে একজন সুন্দরির পাশে বসার উপক্রম করতেই সুন্দরি আমার দিকে ফিরে প্রায় চিত্‍কার দিয়ে বলল "এই যে এই এই আপনার টিকেটে ১৫ লেখা না ? এই যে এটা আপনার সিট তো । এখানে এসে বসেন ।" এ সুযোগ হাতছাড়া অথবা বলা যেতে পারে সিটছাড়া করার পাত্র আমি না । সুতরাং লক্ষী ছেলের মতো সুন্দরির পাশে বসে গেলাম । একটু পর বাস ছেড়ে দিলো , সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো বাসটার ভিতরে তিল ধারনের জায়গাটাও আর রইলো না । রাতের বাসে উঠার অসুবিধা এটাই , সিটিং বাস লোকাল হয়ে যায় । যদিও আমার কোন সমস্যা নেই , আমি দিব্যি ঘুমিয়ে যেতে পারবো । কিন্তু পাশে বসা সুন্দরির কপালের রেখা ঘন হতেই বুঝলাম উনি আজকে অন্তত ঘুম কি জিনিস ভুলে যাবেন । আমি ভাবিনি আমার ভাগ্য এতটা খারাপ হবে । সুন্দরি সময় কাটানোর জন্য আমার সাথে খাজুরা আলাপ জুড়ে দিল ! জানতে পারলাম তার নাম এশা । কিছুক্ষন আলোচনায় অংশগ্রহন করলেও একটু পর ঘুমের দিকেই কেন যেন আমার মস্তিস্ক বেশি আকর্ষন অনুভব করলো । এই আকর্ষন যখন ভাঙ্গলো তখন দেখি আমার পিছনের সিটে বসা পিচ্চি আমার চুল টানাটানি করছে আর এশা সুন্দর করে এই দৃশ্য ভিডিও করছে । মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো , তবুও আস্তে করে পিচ্চিটার হাত সড়িয়ে দিলাম । তারপর এশার দিকে শীতল দৃষ্টিতে যেই তাকাতে গিয়েছি , পিচ্চি আর শক্ত করে চুল চেপে ধরলো ! এবার আর সহ্য করলাম না , পিছন ফিরে বললাম "বেয়াদপ পোলা থাপড়ায়ে বেহুশ কইরা দেমু !" । যদিও পিচ্চি ভয় পেলো কিনা যথেষ্ঠ্য সন্দেহ আছে আমার । আসলে ভয় তো দূরের কথা পিচ্চি নিজের আত্মসম্মানের উপর আঘাত মনে করলো আমার ধমকটাকে । সোজা চুলের মধ্যে চুইংগাম লাগিয়ে দিলো ! রাগে দুঃখে দিশেহারা হয়ে গেলাম একদম ! কিছু বলতে গেলাম কিন্তু তার আগেই দেখি পিচ্চির মা পিচ্চিকে বেদম বকা দিচ্ছে । কিন্তু আমার মস্তিস্ক তখন অন্যদিকে ঘুড়ে গিয়েছে । খিল খিল করে হাসছিলো এশা , অদ্ভুত হলেও সত্য জীবনে কখনো কাওকে এতো সুন্দর লাগেনি হাসতে দেখে । চুপচাপ হয়ে গেলাম একদম , একটু লজ্জাও পেয়েছিলাম বোধহয় , সুতরাং এশাকে হাসতে দিয়ে চুল চুইংগাম মুক্ত করার ব্যার্থ চেষ্টা করতে থাকলাম । মূলত এটাই ছিল এশার সাথে আমার প্রথম পরিচয় । তারপর আর কি ছয় ঋতুর আগাগোনা শেষে দেখি ওর হাত ধরে ধানমন্ডির এই রাস্তাটায় হেটে যাচ্ছি আমি । এশা মাঝে মাঝে যখন রেগে যায় তখন তার পুরো মুখটা টমেটোর মতো লাল হয়ে উঠে । আমার তখন মাথায় একটাই চিন্তা থাকে যে মানুষ রেগে গেলে তার মুখ টমেটো আকার ধারন করে কেন ! আমি ভবঘুরে , আপনভোলা টাইপের একটা ছেলে । এশার ভাল লাগা , মন্দ লাগাগুলো কখনো বুঝতে চেয়েছি বলে মনে পরে না আর যখন চেয়েছি তখন হয়তো এশা বলে না । আমার জানা হয়নি এই জানা শোনা আর চেনা অচেনার বেড়াজালে কখন আমরা দূরে সরে গেলাম । প্রথম ব্যাপারটা উপলব্দি করলাম সেদিনই যেদিন বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় আমার পাশে এশা ছিল না । অথবা ধোয়া উঠা কফির কাপ দুটোর একটা একদম ভর্তি ছিল । কিংবা হয়তো লেকের পানিতে রোদ্রের প্রতিচ্ছবি শুধু আমাকেই রাঙ্গিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো তখন ।

রায়হানের ব্যাপারটা আসলে আমি তেমন পাত্তা দিতাম না । ছেলেটা এশার ক্লাসমেট এবং বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল । কখনো দেখিনি ছেলেটাকে , তবে সুদর্শন যে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই । এশার কাছে শুনতে শুনতে মোটামুটি মুখস্থ হয়ে গেছে ছেলেটার সবকিছু । প্রথমদিকে বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনতাম সবকিছু । কিন্তু যেদিন শুনলাম ছেলেটা এশাকে ভালবাসে । কেন যেন খুব অসহ্য লাগতো ছেলেটাকে । এশা পছন্দ করতো না তাই সিগারেট প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম । আবার বেড়ে গেলো সিগারেট এর মাত্রা , বিশাক্ততার মাঝে হারিয়ে যেতে থাকলাম আমি । তবুও বিশ্বাস ছিল এশার উপর । মেয়েটা যখন চুপচাপ হাত ধরে বসে থাকতো , কিংবা আলতো করে মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিতো সত্যিই সব ভুলে যেতাম । একটা সময় পড়াশোনার তাগিতে চলে আসলাম অন্য একটা জেলায় । জীবন যুদ্ধ এক অদ্ভুত যুদ্ধ , যেখানে সব খানে আহত হতে হয় । এশার সাথে যোগাযোগ সেলফোনে এসে ঠেকলো । ফোনের এপাড় ওপাড় শুধু অনুভূতির আদান প্রদান চলল । কতো যে ইচ্ছা করতো এশাকে একটা বার দেখার । ঢাকায় যখন যেতাম অল্প কিছুদিনের জন্য তখন এশার নানান মুখি সমস্যা থাকতো । সন্দেহ জাল বুনতে শুরু করে দিয়েছিলো ততদিনে , এশাকে সাফ বলে দিলাম রায়হানের সাথে না মিশতে । আমাকে অবাক করে দিয়ে এশা অস্বিকার করলো । আমার কি হয়েছিলো জানি না , ভয়াবহ রেগে গিয়ে যা তা বলে ফেলেছিলাম তাকে । সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হলো সেখান থেকেই । আমার জানা হলো না এশার দুঃখের সময়টা রায়হান আপন করে নিয়েছে ততদিনে । প্রতিদিনের ঝগড়ায় একদিন হুট করে এশা বলে ফেলল কথাটা । নিয়তিকে বড় নিষ্ঠুর মনে হলো হটাত্‍ । তারপর একদিন সম্পর্কের ইতি টানতেই হলো আমাদের । এশা জানিয়ে দিলো আমার সাথে আর হচ্ছে না , মিলছে না তার কিছুই । আমি শুধু চুপচাপ শুনে গিয়েছিলাম কথাগুলো । তারপর আবারো সেই সিগারেট । শুধু মাঝে মাঝে অনেক খারাপ লাগা নিয়ে লেকের পাশে চুপচাপ বসে থাকার মাঝে নিজের অস্তিত্বকে খোঁজার চেষ্টা করে যাই ।

আজকে অনেকদিন পর এশাকে আসতে বলেছি । স্কলারশিপটা পেয়ে গিয়েছি , জার্মানিতে চলে যাব এই তো কিছুদিনের মধ্যেই । অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে আসলাম বৃষ্টির প্রথম ফোটা মুখের উপর পরায় । ডিঙ্গি রেসটুরেন্টের কাছাকাছি এসে পরেছি , একটু দ্রুত হেটে ডিঙ্গির নিচে দাড়িয়ে পরলাম । সিগারেট ধরালাম একটা , এক টান দিয়ে ধোয়া ছাড়তেই বৃষ্টির পানির সাথে মিশে গেলো । এশা যখন এলো তখন ঝুম বৃষ্টি নেমেছে , সেই আগের মতোই ধীর পায়ে ছাতা মায়া এগিয়ে আসছে সে । সে কাছাকাছি আসতেই সিগারেটটা ফেলে দিলাম । বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে পরে ছ্যাত্‍ করে নিভে গেল সেটা । "তুমি আবার সিগারেট ধরেছো ?" ছাতা বন্ধ করতে করতে বলল এশা । জবাব দিলাম না , এশার দিকে তাকিয়ে আছি । ছাতা বন্ধ করে সরাসরি আমার দিকে তাকালো এশা । মনে হলো একটু যেন ধাক্কা খেয়েছে সে । এশাকে সেজে আসতে বলেছিলাম একটু , চোখে কাজল দিয়ে আসতে বলেছিলাম । এশা চোখে কাজল দিয়ে আসেনি , তার সিগ্ধ মুখটা কেমন যেন খালি খালি দেখাচ্ছে । "কি ব্যাপার চুপ করে আছো কেন ? বলো কেন ডেকেছো ?" আবার বলল এশা । এশার চিবুক বেয়ে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে নামছে , হটাত্‍ করে মনে হলো খুব আস্তে এশার চিবুক স্পর্শ করি , মুছে দিই পানির ফোটা । সামলে নিলাম দ্রুত , বললাম "কেমন আছো ।" এশা হাসলো , সে হাসির মাঝে কোন উচ্ছলতা নেই । বলল "হমম ভালই আছি । তুমি ?"-"হ্যা এই তো আছি একরকম"--"তারপর কি করছো আজকাল ?"-"তেমন কিছু না , জার্মানিতে চলে যাচ্ছি কিছুদিনের মধ্যে ।"--"ও আচ্ছা । ভাল" নিস্পৃহ কন্ঠে জবাব দিলো এশা । কি বলবো বুঝে উঠতে পারলাম না , খুব অসহায় লাগলো নিজেকে । আশে পাশে গুমোট অন্ধকার হয়ে আসা প্রকৃতির মাঝে যদি হারিয়ে যেতে পারতাম ! "আচ্ছা তুমি কি কিছু বলবা ? আমার যেতে হবে । রায়হান ওয়েট করতেছে আমার জন্য ।" আবারও বলে উঠলো এশা । কিছু বলতে পারলাম না , ধক্ করে উঠলো বুকের ভিতরে । অনুভূতিটা সুখকর নয় মোটেই , মাথা নিচু করে রইলাম । "অযথা এতো নাটক না করলেও পারতা । আর শোন আর কখনো কল করে এসব নাটক দেখাবা না আমাকে ।" এশা আবার বলল । ঝট করে উঠে দাড়ালো সে , তাড়াহুড়ো করে ছাতা খুলতে গিয়ে ছাতার একটা শিক ভেঙ্গে গেলো । আমি তখন এশার যাত্রাপথের উল্টোদিকে বসে আছি । ছপ ছপ আয়োয়াজ তুলে পায়ের শব্দ দ্রুত বৃষ্টির পানির সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে । শেষ সিগারেটা ধরালাম , লাইটারটা বেশ পুরোনো হয়ে গিয়েছে , গ্যাস প্রায় শেষের দিকে । সিগারেট ধরিয়ে লম্বা একটা টান দিলাম , তারপর ধোয়াগুলো ছেড়ে দিলাম বাতাসের মাঝে । মানুষের জীবনের সমীকরনগুলো ক্ষণে ক্ষণে শাখা প্রশাখা বিস্তার করে , সব সময় তারা সুখকর হয় না । এই জ্বলন্ত সিগারেট আর ধূসর ধোয়ার মাঝে দেখা দুনিয়াটাকে খুব ঘোলাটে লাগে । জমে থাকা পানিরা আর আকাশের প্রতিবিম্ব ধরে রাখতে পারে না , বিক্ষিপ্ততার মাঝে হারিয়ে ফেলে প্রতিবিম্বকে । সিগারেট প্রায় শেষের দিকে , হটাত্‍ পিঠে ভয়াবহ একটা বাড়ি লাগায় হাত থেকে ছিটকে পরে গেলো সিগারেটটা । অবাক হয়ে পিছনে ফিরে দেখতেই দেখি এশা হাতা ভাজ করা অবস্থায় চুপচুপে ভেজা অবস্থায় দাড়িয়ে আছে । "অসভ্য ছেলে । দেখস নাই ছাতা ভেঙ্গে গেছে ? দেখস নাই আমি ভিজতেছিলাম ? যাই নাই কেন ফিরিয়ে আনতে ? সব সময় আমাকেই কেন তোর কাছে আসতে হবে ? এরপর যদি কখনো আসতে হয় প্রত্যেকবার দশটা করে ছাতার বাড়ি খাবি তুই ।" অশ্রুশিক্ত চোখে বলল এশা । আমি তখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে । হটাত্‍ করেই মনে হলো ধূসর ধোয়ার আড়ালের পৃথিবীটাও অনেক সুন্দর । বিক্ষিপ্ত পানির আধারও আকাশের প্রতিবিম্ব ধরে রাখে তার প্রতিটি পানি কণার মাঝে । এশা হু হু করে কাঁদছে , খুব মায়া লাগছে দেখতে । এগিয়ে গিয়ে এশাকে জড়িয়ে ধরলাম । কান্নার মাঝেই ব্যাগ থেকে কাজলের স্টিক বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো সে । হেসে ফেললাম এবার , এশাও হেসে ফেলল । বাহিরে বৃষ্টির বেগ বাড়ছে , রাস্তার উপর জমা পানির বিক্ষিপ্ততা বাড়ছে । বিক্ষিপ্ততার মাঝে আমাদের প্রতিবিম্ব যদিও দেখা যাচ্ছে না তবুও আমি জানি পানির প্রতিটি কণা তাদের অভ্যন্তরে আমাদের প্রতিবিম্ব ধারন করেছে । শুধু কখনো প্রতিবিম্বের পরিস্ফুটন হবে না কখনো । থাকুক না অনেক গোপনে , সব কিছু পরিস্ফুটিত না হলেও তো চলে ।

কিছু কথা এবং উত্‍সর্গঃ

গল্পটা হ্যাপি এন্ডিং কেন দিলাম ? কেন দিলাম হ্যা ? আসলে রাগে দুঃখে হতাশায় হ্যাপি এন্ডিং দিয়ে দিছি কারন স্যাড এন্ডিং দিলে নায়ক ধোয়ার মাঝে অস্পষ্ট পৃথিবী দেখতে চাইতো যার ফলে তার অনেক অনেক সিগারেট লাগতো । এমনিতেই সরকার সিগারেটের দাম বাড়াইছে , নায়ক গরীর মানুষ আর যদি গরিব নাও হয় তাইলে অস্পষ্ট পৃথিবী দেখতে গিয়ে যে গরিব হয়ে যাবে তাতে আমার কোন সন্দেহ নাই । তাই অবিলম্বে সিগারেটের দাম কমাবার দাবি জানাচ্ছি নাইলে আমার গল্পের নায়কের কি হবে বলেন ?

এশার দৃষ্টিভঙ্গিটা উহ্য রাখলাম । এশা রায়হানকে কখনো ভালবাসেনি , ভালবেসেছে গল্পের নায়ককে । মাঝখানে ব্রেকআপের ব্যাপারটা আসলে ভুল বোঝাবুঝি আর অতিরিক্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের ফলে হয়েছে । এশার দৃষ্টিভঙ্গির বিশ্লেষন আর করবো না । কারন রহস্য থাকা ভাল ....

এবার আসি উত্‍সর্গে । আমি জানি গল্পখানা পড়ে অলরেডি জুতা ছেড়ায় ব্যাস্ত আপনারা । কারন খুব ভাল করেই জানেন যে ভাল জুতা আমার গায়ে মারলে আমি জুতার ব্যাবসা শুরু করে দিব । আমার হাইট মাত্র পাচ ফুট দশ ইন্চি । জুতা মারলে মুখ মিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে । এজন্য আমার পিছনে অর্নব ফায়েককে দাড় করায়ে দেওয়ার জোড় আবেদন জানাচ্ছি । তাতে আমার মুখ মিস হলেও ছয় ফুটি ঐ দৈত্যেরটার কখনই মিস হবে না । তাতে অন্তত মুখ সই করার আনন্দটা পাইবেন । হে হে :D

ফারিহা জহির মেয়েটাকে আমার একদমই সহ্য হয় না । আমার কাছে যা কিছু ভাল লাগে সব এই মেয়ের কাছে বাজে লাগে । জিকু ভাইয়ের পাংখা দাড়ির স্টাইল তার ভাল লাগে না । অর্নইব্বার হেয়ালি তার ভাল লাগে না । সবচেয়ে বড় কথা আমার এতো সুন্দর এডিট করা ছবিটা (ভয়াবহ !) যেটা হাজারো তরুনি অজ্ঞান করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে তবে সেটা ভয়ে নাকি সৌন্দর্যে তা আমি অবশ্য জানি না , ঐ ছবি নাকি ভাল হয় নাই ! এইগুলা কোন কথা হৈলো ? তারপরও মানুষ বলে মেয়েটা নাকি অনেক লক্ষী , আমিও কিছু কিছু নিদর্শন পাইছি বটে । কিন্তু তাতে কি ? এই মেয়ে ভাল তাতে কি ? তাকে সহ্য হয় না ।

উত্‍সর্গটা এই লম্বু অর্নব ফায়েক আর অসহ্য বালিকা ফারিহা জহিরকে করলাম । আর হ্যা এইটার পর কোন গল্প লেখতাম না কিন্তু । এইটাই শেষ ।
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×