বড় ইচ্ছা হচ্ছিল তাকে নিয়ে একটি কবিতা লিখি। শিরোনাম ঠিক করে দুটো চরণও লিখেছিলাম এভাবে- 'হে শ্বেতশুভ্র বেশধারী/দাড়ি, মোচ আর কেশধারী'। কিন্তু একটি ঘটনা দেখার পর আর এগোতে পারলাম না। কারণ কবিতার অমর্যাদা হবে।
আমার নায়ককে একদিন রাত ৮টার দিকে দেখলাম একটি বাড়ির সামনে একা দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁপছেন। তার দামি গাড়িটি ৮-১০ গজ দূরে। ড্রাইভার স্টার্ট দিয়ে সাহেবের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু সাহেব আসতে পারছেন না। ৩-৪টা নেড়ি কুত্তা তাকে ঘিরে ধরে ঘেউ ঘেউ করছে। আশপাশে লোক নেই। সম্ভবত ড্রাইভারও ভয় পাচ্ছে অথবা তার মালিকের দুরবস্থায় তামাশা দেখছে।
একটু দূরে দাঁড়িয়ে আমিও কিছু একটা করব বলে ভাবছিলাম। এমন সময় বাড়ির দারোয়ান এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করল।
কবিতা লিখতে গিয়ে আমার কুত্তার কথা মনে হলো। আমরা এদের যতই খারাপ বলি না কেন প্রকৃতি কিন্তু এদের অসাধারণ কতগুলো ক্ষমতা দিয়েছে। এরা ভালোমন্দ মানুষ চিনতে পারে। বিশেষত চোর-ডাকাত। এরা নাকি কবরের আজাবও শুনতে পায়। এ জন্য ভুলেও কোনো কুত্তা কবরস্থানে সচরাচর যায় না। গেলেও করুণ সুরে চিৎকার করে কাঁদে।
আমার নায়ককে যেভাবে কুত্তায় সমাদর করছিল তাকে নিয়ে কবিতা রচনায় আমার আর রুচি হলো না। আমার নায়ক ইদানীংকালে সফেদ-সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে ঘুরে বেড়ান। তার চুল, দাড়ি ও মোচও অস্বাভাবিক সাদা। এসব পোশাক-আশাকে এবং মুখশ্রীতে মানুষের প্রতি একধরনের অসাধারণ ভক্তিভাব চলে আসে।
কিন্তু তাকে দেখলে রাজ্যের সব ঘৃণা, বিরক্তি আর অভিশাপ মন থেকে বের হয়ে আসে। আমার কবিতার নায়ক বোধহয় তা বুঝতে পারেন। আর এ জন্যই তিনি আরও বেপরোয়া, দুর্দান্ত এবং দুর্দমনীয় হয়ে উঠছেন। রাষ্ট্রশক্তির সঙ্গে তার দহরম-মহরম সর্বকালে এবং সব সময়ই ছিল। তিনি জানেন রাজপুরুষদের দুর্বলতা। তাই তো রাজাজ্ঞা পেতে তার দেরি হয়নি কখনো। নিজের অপকর্ম কীভাবে ঢেকে রাখা যায় তার বহু উপায় তিনি জানেন।
কিন্তু সাম্প্রতিককালে কুকর্ম আর পাপের পাত্র পরিপূর্ণ হয়ে উপচে পড়ছে। পাপের নহর দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও প্রবাহিত হচ্ছে। মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডককে তিনি দেখেছিলেন কয়েকটি তরুণীসহ ইংল্যান্ডের নর্থ হ্যাম্পশায়ারে। তখন থেকেই তার মনে বিচিত্র সব রঙ খেলাধুলা করছে।
নিজের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মেয়েরা কয়েক মাসের বেশি কেন চাকরি করতে চায় না, তা তিনি এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না। মাঝেমধ্যে মনে হয় সবকিছু ছেড়েছুড়ে দরবেশ হয়ে যাবেন। বিশেষ করে যখন নিজের প্রিয়তমা কন্যার করুণ মৃত্যুর কথা স্মরণ করেন। কিন্তু ইদানীংকালে দরবেশ শব্দ শুনলে তার চোয়াল কেন জানি প্রচণ্ড শক্ত হয়ে যায়। রাতে ঘুম আসে না।
রাজধানীর ক্যাপিটাল মার্কেটের ধারে কাছ দিয়েও তিনি হাঁটেন না। আকাশ ও বাতাস থেকে অসংখ্য মানুষের আহাজারি তার কানে ভাসতে থাকে। নির্বোধের মতো কতগুলো মানুষ নাকি আত্মহত্যা করেছে। তাদের প্রেতাত্মা অনেক দিন ঘুমের ঘোরে জ্বালাতন করত। ভয়ে তিনি সারা রাত ড্রইংরুমে আলো জ্বেলে কেবল টিভি দেখতেন।
অবশেষে এক জ্যোতিষীর পরামর্শে সুইজারল্যান্ড থেকে কালো রংয়ের একটি বিড়াল কিনে এনেছেন। রাতে বিড়াল নিয়ে ঘুমানোর পর প্রেতাত্মার উৎপাত আর হচ্ছে না।
ক্যান্টনমেন্টকে তার ভীষণ ভয়। তার ঘনিষ্ঠরা পরামর্শ দিয়েছেন ওদিকে ভুলেও যাবে না। কারণ, জুনিয়র অফিসাররা নাকি তাকে দেখলে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। রাজ্যের লাখ লাখ পরিবারের মতো জুনিয়র কর্মকর্তারা সর্বস্ব হারিয়েছেন কেবল তার জন্য।
ক্ষমতার কেন্দ্রে যেসব লোক তাকে সমীহ করত তারা আজ ফিরেও তাকায় না। বিশেষ করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোড় নেওয়ার পর থেকে শরীর-স্বাস্থ্য ভালো যাচ্ছে না। মন বলে তো কোনোকালেও কিছু ছিল না। তাই ওটা ভালোমন্দ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু যেহেতু দেহ আছে তাই ওটা নিয়ে একটু ভাবতে হয় বইকি?
এসব ভাবতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া-নাওয়া হারাম হয়ে গেছে। গায়ের রঙ ও কাপড়ের সাদা রঙ কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। ইদানিং সাদা রঙের জন্য তার মায়া হচ্ছে। রঙটির ভাবগাম্ভির্য ও পবিত্রতা নষ্ট না করলে এমন কী ক্ষতি হতো।
আর মানুষেরও যে কী হয়েছে! সব সময় সস্তা সেন্টিমেন্ট নিয়ে চলে। সাদা মানে পবিত্র। সাদা মানে শান্তির কবুতর। অথচ কুকুর, ভল্লুক, সিংহ, হাতি এমনকি শুয়োরের রঙও যে সাদা হতে পারে তা কেউ বলে না।
আমি নিজে আমার কবিতার নায়ককে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। কেমন যাবে তার আগামীর দিনগুলো! কিংবা কী হবে তার বা তার মতো বহুরূপী শ্বেতশুভ্র বেশধারী এবং দাড়ি, মোচ আর কেশধারীদের।
লেখক--গোলাম মাওলা রনি: সংসদ সদস্য, পটুয়াখালী-৩
হে শ্বেতশুভ্র বেশধারী ‘দরবেশ’ এখন তোমার কী হবে
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।