বাংলা গল্পের জন্ম উনবিংশ শতাব্দীর শেষাংশে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘যুগলাঙ্গুরীয়’ (১৮৭৪) ও ‘রাধারাণী’ (১৮৭৫) গল্পের মাধ্যমে বাংলা ছোটগল্পের সূচনা বলা যায়। এছাড়াও পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গল্প লেখার প্রয়াস চালান। নিজস্ব স্বকীয়তার মাধ্যমে ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় ছোটগল্পকে আরো সমৃদ্ধ করেন। এরপরে স্বর্ণকুমারী দেবী ও নগেন্দ্রনাথ গুপ্তও গল্পে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তবে বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক গল্পকার হিসেবে আবির্ভূত হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৮৭৪ সালে তার প্রথম গল্প ‘ভিখারিণী’ প্রকাশিত হলেও ১৮৯০ সালে প্রকাশিত ‘দেনা-পাওনা’ গল্পটিই শুধু তাঁর না, বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক গল্প। ত্রিশ বছর বয়স থেকে গল্প লিখতে শুরু করা গল্পের পথিকৃত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট ১১৯টি গল্প লিখেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমসাময়িক ছোটগল্পকারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা ‘কি ও কেন’, ‘বুলতি’, ‘পাথেয়’, ‘দুঃখের দেওয়ালী’, ‘মা ফলেষু’, ‘সন্ধ্যা শঙ্খ’ ও ‘নমস্কারী’ তার উল্লেযোগ্য গল্পের বই। তিনি ব্যঙ্গগল্পের অন্যতম পথিকৃৎ। তারপরেই এসময়ের গল্পকার হিসেবে প্রমথ চৌধুরীর নাম আসে। ‘চার-ইয়ারি কথা’, ‘আহুতি’, ‘নীললোহিত’ ইত্যাদি তাঁর গল্পের বই। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় প্রায় ত্রিশ বছর ধরে শতাধিক গল্প লিখেছেন। ‘নবকথা’, ‘ষোড়শী’, ‘গল্পাঞ্জলী’, ‘গল্পবীথি’, ‘পত্রপুষ্প’, ‘গহনার বাক্স’, ‘বিলাসিনী’, ‘যুবকের প্রেম’, ‘নতুন বই’, ‘জামাতা বাবাজী’ ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ।
বাংলা ছোটগল্পের জগতে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আবির্ভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ‘মন্দির’, ‘মহেশ’ বা ‘বিলাসী’র মত কালজয়ী গল্পের কারণে পাঠকমনে তিনি স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, প্রবোধকুমার সান্যাল প্রমুখ গল্পকারও উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বিভাগপূর্বকালে ছোটগল্প রচনায় খ্যাতি লাভ করেছিলেন এমন আরো কয়েকজন লেখক হলেন: দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার, রাজশেখর বসু, সোরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়, সতীনাথ ভাদুড়ী, বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, মনোজ বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সৈয়দ মুজতবা আলী প্রমুখ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:২০