মাত্র কিছুদিন আগেও ইন্টারনেটকে শেকল পড়ানোর বিরুদ্ধে সোচ্চার সেমিনার, ওয়ার্কশপগুলোতে যখন উপস্থিত থাকতাম তখন বক্তা, রিসোর্স পারসনরা ইন্টারনেট নিয়ে অনেক আলোচনা কররেও তাদের সবার মুখেও তখন "ব্লগ", "ব্লগার" শব্দটি আসতো না।
কিন্তু বর্তমানে সাধারণ জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে গেছে এই "ব্লগার" শব্দটি। কিভাবে পৌঁছালো তা বলাই বাহুল্য। বর্তমান সময়ের তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনের আগুন প্রজ্জ্বলিত হয়েছে মুলত ব্লগারদের দ্বারাই।
ব্লগাররাই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতাদের যথোপযুক্ত সাজার দাবীতে যেমন অনলাইনে বিশেষ করে ব্লগে সোচ্চার ছিল তেমনি আশানুরূপ রায় ঘোষিত না হওয়ায় রাজপথেও সোচ্চার হয়েছে একই ভাবে।
অনলাইন মুক্তিযোদ্ধা
মাত্র কিছুদিন আগেই এক পাবলিক ডায়লগে একজনঅনলাইন এক্টিভিস্ট হতাশা ব্যক্ত করছিরেন এই ভেবে যে, বর্তমান প্রজন্ম আন্দোলনের ফেসবুক ইভেন্টে লাইক দিয়ে বা ব্লগে কী-বোর্ড ফাটিয়েই ক্ষান্ত। সেই সন্দেহ, হতাশা, ধারণাকে পুরোপুরি মিথ্যে প্রমাণিত করে দিন-রাত রাজপথে থাকছে এই ফেসবুক ইভেন্টে লাইক দেওয়া, ব্লগে কী-বোর্ড ফাটানো ব্লগাররাই।
সামহোয়্যারইন ব্লগ
বাংলা ভাষায় ব্লগের কথা বলতে গেলে অবশ্যই সামহোয়্যারইন ব্লগের কথা প্রথমেই বলতে হয়। প্রায় দেড় লক্ষাধিক নিক-এর বেশি রেজিস্ট্রেশন করা এই এই ব্লগের নিজের নিকটিকে পরিচিত করানো সম্ভব খুব সহজেই। তাই সাধারণ ব্লগ হিসেবে সামহোয়্যানইন ব্লগকেই অনেকেই নিজের বা গোষ্ঠির পরিচিতির জন্যে বেছে নেয়।
ছাগু ব্লগ হিসেবে সামহোয্যারইন
শুনতে হাস্যকর হলেও সত্যি যে মাত্র কিছুদিন পূর্বেই আমার সহব্লগাররা সামহোয়্যারইন জামাত-শিবির প্রশ্রয় দানকারী ব্লগ হিসেবে অভিযোগে অভিযুক্ত করে প্রতিবাদে নিজেদের পোস্ট ড্রাফটে নিয়ে যায়। অথচ তখন কি সংবাদ মাধ্যমগুলো এমন সোচ্চার ছিল ব্লগ নিয়ে? না সরকার সোচ্চার ছিল?
নাস্তিক ব্লগ হিসেবে সামহোয়্যারইন
অনেক সময়ই সামহোয়্যারইন এর বিরুদ্ধে নাস্তিক তোষণকারী ব্লগ হিসেবেও অপবাদ শুনতে হয়।
প্রায় দেড় লক্ষাধিক নিক আছে যেই ব্লগে সেই ব্লগে বিভিন্ন মানসিকতার নিক থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
অনেকেই খ্যাতির লোভে, নাম কামাতে ধর্মের বিরুদ্ধে চুলকানীমূলক পোস্টের অবতারণা করে থাকে। এতে পোস্ট দাতা সাধারণত গালি খেলেও নিকটি কিন্তু পরিচিতি পেয়ে যাচ্ছে।
আচ্ছা একটা প্রশ্নে জবাব দিন তো, সাধারণত নির্বাচিত পাতায় জামাতী বা চুলকানী ওয়ালা নাস্তিকতার কোন পোস্ট কি দেখা যায়?
আস্তিক, নাস্তিক পরিচয় নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই। আমার সমস্যা হলো চুলকানী স্বভাবওয়ালাদের নিয়ে, আমার সমস্যা দায়িত্বহীন আচরণকারীদের নিয়ে যাদের কারণে ভুক্তভোগী হয় সমগ্র গোষ্ঠী।
দায়িত্বশীল ব্লগিং
যার যা খুশি লেখার স্বাধীনতা সামহোয়্যারইন ব্লগে আছে। এই স্বাধীনতা ব্লগ কতৃপক্ষই দিয়ে দিয়েছে। পোস্ট পাবলিশ হওয়ার পর মডারেটর প্রয়োজন বোধে তাতে হস্তক্ষেপ করে থাকেন।
সাধারণত অনেকেই দায়িত্বশীল ব্লগিং করে থাকেন, এই সংখ্যাটাই আসলে অনেক বেশি। কিন্তু দশ মন দুধের মধ্যে যেমন একফোঁটা চোনা পড়লে তা নষ্ট হয়ে যায়, তেমনি সংখ্যায় খুবই নগন্য কিছু দায়িত্বহীনদের কারণে তার দায় পড়ছে সবার উপরে।
জনসাধারণের কাছে ব্লগ এবং আমাদের করনীয়
খুব দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, ব্লগ নিয়ে খুব সম্প্রতি সাধারণ জনগনের কাছে এর প্রকৃত রূপটি পুরোপুরি প্রকাশে সমর্থ্য হচ্ছে না এর অপপ্রচারের কারণে।
-ছবির হাটেঁ গঞ্জিকা কি আগেও সেবন হতো না? তবে তার দায় কেন আন্দোলন কারী ব্লগারদের উপর বর্তাচ্ছে?
-ফটোশপি এডিট করা বিভ্রান্তিমুলক ছবি দিয়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে কারা?
এসব বিষয়ে আমাদেরকে অনেক বেশিই সচেতন হতে হবে।
সংবাদ পত্রে, টেলিভিশন মিডিয়ায় সহব্লগারদের অনেকেই কর্মরত আছেন। তারা কি পারেন না ব্লগের ভালো ভালো পোস্টগুলিকে নিয়ে আলোচনা করে জনগনের সামনে তুলে ধরতে?
সবশেষে বলি, আমার/আপনার দায়িত্বশীল ব্লগিং-ই উপস্থাপন করতে পারে "ব্লগার" শব্দটিকে একটি নির্ভরযোগ্য, দায়িত্বশীল গোষ্ঠী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:০৭