somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নের পদযাত্রা (প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যদের জন্য লেখা)

০২ রা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যদি হঠাৎ নিজেকে প্রশ্ন করেন এই সপ্তাহে আপনি কোন বইটা পড়েছেন? উত্তর পেয়েছেন? আমরা অনেকেই এখন আর বই পড়ি না। আসবাবপত্রের দোকানে টিভি, ডিভিডি পেলয়ার রাখার টেবিল পাওয়া যায়, শোপিস আর তৈজসপত্র রাখার আলমারী পওয়া যায়, লক্ষ টাকা দামের কিচেন ক্যাবিনেট, সোফাসেট আর ম্যাগাজিন র‌্যাক পাওয়া যায়, বুকশেল্ফ নামের বস্তুটি পাওয়া যায় না। আমরা বই পড়ি না, তাই তারাও বই রাখবার আসবাব তৈরী করেন না, এমনকি ইেিন্টরিয়র ডিজাইনাররা কাপড় রাখার জন্য ওয়াল ক্যাবিনেট বানান ফ্ল্যাট বাড়িতে, বই কোথায় থাকবে সেটা ভাবেন না। অথচ আপনি যে কোন উন্নত দেশে গেলে দেখবেন তারা ট্রেনে, বাসে, বাস স্টপে সময় পেলেই বই পড়ছে। আমাদের বড় বড় শপিং মলগুলিতে এতো রকম দোকান থাকে, বইয়ের দোকান থাকে না। জামা কাপড়ে সুন্দর হই আমরা, মনটা সুন্দর করবো কি দিয়ে? উন্নতি কি শুধু দালানকোঠায়? উন্নয়ন কি শুধূ মোবাইল ফোনের মধ্যে? উন্নয়ন কি শুধু টিভি চ্যানেলে আর কোকড়া চুল সোজা করার মধ্যে? মানুষ উন্নত হয়েছে জ্ঞানের চর্চার মধ্যে দিয়ে। মানুষ এগিয়ে গেছে চিন্তার জগতকে শানিত করে। বই ছাড়া চিন্তাকে শানিত করার, নিজেকে উন্নত করার শ্রেষ্ঠ কোন উপায় নেই। নিজেকে উন্নত করার আর যতো উপায় আছে, সেখানেও বই রয়েছে পিছনে। কেমন বই পড়বো? সবধরনের বই পড়বো। উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, গবেষণালব্ধ জ্ঞান। পাঠকমন যতো বই পড়বে ততোই শাণিত হতে থাকবে। ছোটবেলায় যেমন দুধ দিয়ে শুরু করে এখন সবই খাচ্ছেন, ঠিক তেমনি হয়তো রহস্যোপন্যাস বা প্রেমের কাহিনী দিয়ে শুরু হবে পড়া, কিন্তু যতোই দিন যাবে ততোই আপনার মন আরো বেশী ক্ষুধার্ত হয়ে উঠবে নতুন নতুন বইয়ের জন্য। বইয়ের অনেক দাম। বিদেশে তারা এজন্য সব ধরনের পাঠককে দেবার জন্য পেপারব্যাক এডিশন বের করে। বই সবাই কিনবে সেটাও ঠিক না। বই ধার করবে। লাইব্রেরী অথবা বন্ধুদের কাছ থেকে। বইয়ের যতœ নেয়া শিখতে হবে স্কুল জীবন থেকে। দুর্ভাগ্য আমাদের যে স্কুলগুলিতে লাইব্রেরী নাই। পাবলিক লাইব্রেরীগুলিতে বই এর দুর্দশা দেখে যে কারো কান্না পায়। তাহলে কি করবো আমরা? বন্ধুসভার সদস্যরা নিজেরাই চাইলে গড়ে তুলতে পারো পাঠাগার। প্রথমে একটি জায়গা চাই। হতে পারে সেটি কোন এক অবস্থাপন্ন সদস্যের বাড়ীতে অথবা সম্ভব হলে জনপ্রশাসনের সংগে কথা বলে কম্যুনিটি সেন্টারের কোন একটি কক্ষে। চাই আলমারী বা শেল্ফ। হয়ে যাক পাড়ার কোন এক মুরুব্বীকে ধরে সেটির সংস্থান। এবার বই। তৈরী হোক একটি বইয়ের তালিকা। প্রত্যেকে তালিকা থেকে বেছে নিয়ে মাসে একটি বই দান করো সেখানে। বাসার পুরোনো বইগুলি থেকে দিতে পারো দুয়েকটি বই। ৩০ জন সদস্যের একটি পাঠাগারে এভাবে বছরে ৩৬০ টি বই পেতে পারো। কোন একটি পত্রিকাকে বলো এক কপি সৌজন্য সংখ্যা দিতে তোমাদের পাঠাগারে। প্রথম আলো তো আছেই ভালো কাজের জন্য দাঁড়িয়ে। এবার পালাক্রমে একেকজন বেছে নাও বই ইস্যু করার কাজ। লাগবে বই ইস্যু করার জন্য লাইব্রেরী কার্র্ড, কিছু স্টেশনারী, কাগজ, কলম, ফাইল আর একটি ডেট স্ট্যাম্প। সব মিলিয়ে ১০০০ টাকার সামগ্রী বছরে। ৩ বছরে এই লাইব্রেরীতে থাকবে প্রায় ১০০০ বই। ৬৪ টি জেলায় যদি গড়ে ওঠে একটি পাঠাগার। তিনবছরে ৬৪ হাজার বই থাকবে বন্ধুসভার জেলা লাইব্রেরী গুলিতে। থানাপর্যাায়ে গড়ে তুলতে পারলে মোট বই হবে ৪ লক্ষ চুয়ান্ন হাজার এবং সেই বই পড়তে পারবে কমপক্ষে এক কোটি পাঠক সারা বছরে। বার্গার প্যাস্ট্রি এভাবে ভাগ করে সারা বছর খাওয়া যায় না। হাজার হাজার টাকা খরচ করে তৈরী করা সোজা চুল আবার কুকড়ে যাবে বছর ঘুরতেই কিন্তু বই থেকে যা পাওয়া যাবে তা থেকে যাবে সারা জীবন। বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারীর আগে সহজ মনে হবে প্রশ্ন। আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে পাঠাগারের সদস্যরা কারন তাদের সাথে থাকবেন আইনস্টাইন, হকিং আর রবীন্দ্রনাথ। চেতনার আলোতে আলোকিত হবে বাংলাদেশ। দেশের মানুষ যতো পড়বে ততোই দেশ এগিয়ে যাবে। জুলভার্ন জীবনে কখনো তার নান্তেস শহরের বাড়ীটির চিলেকোঠা থেকে বের হয়ে ইউরোপের অন্য দেশগুলিও দেখেন নাই। অথচ তিনি লিখেছেন আশী দিনে বিশ্বভ্রমনের মতো কাহিনী যেখানে দেশগুলির নির্ভুল বর্ননা আছে। তিনি বলেছিলেন এসব তিনি জেনেছিলেন বই পড়ে। সমুদ্রের তলদেশ নিয়ে লিখেছিলেন, সাবমেরিন আর রকেটের ধারনা দিয়েছিলেন এমনকি হিসেব কষে বলে দিয়েছিলেন রকেটের ন্যুনতম গতি কতো হলে মাধ্যাকর্ষনের টান ছাড়িয়ে চাঁদে যাওয় সম্ভব। যদি জুলভার্ন শত বছর আগে পারেন তবে আমাদের দেশে ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে অন্তত একজনতো পারবে হয়তো নবায়নযোগ্য নতুন শক্তির ধারনা দিতে। শুধু এই একটি ধারনা বদলে দিতে পারে আমাদের সবার ভবিষ্যত। আমরা ভাবি আমাদের সামর্থ্য কম। কথাটি ঠিক নয়। জগদীশচন্দ্র বসু যদি শতবছর আগে রেডিও ওয়েভ নিয়ে সফল গবেষণা করেন এই দেশে তবে আমরা এখন কেন পারবো না? চীন ২৫ বছর আগে কেবল একটি সোনার পদক পেয়েছিল অলিম্পিকে, ২৫ বছর পর তারা অলিম্পিকে সবচেয়ে বেশী পদক পেয়েছে। ২৫ বছরে একটি দেশ বদলে যেতে পারে। যদি এখনি শুরু করি তবে ২০৩৩ সালে বাংলাদেশ কেন পারবে না অন্তত কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বসেরা হতে। এই স্বপ্ন নিয়ে বিতর্ক শেখাই স্কুলের শিশুদের। এই স্বপ্ন নিয়ে দিন বদলাতে চাই, নিজেকে বদলাতে চাই। হাজার স্বপ্নের পাথরে সাজানো পথএর কোন শেষ নেই। যেখানে পথের শেষ সেখানেই আবার পথ শুরু হয়। বন্ধুসভাকে সাথে নিয়ে সফল হোক সেই শুভযাত্রা।
১৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×