যদি হঠাৎ নিজেকে প্রশ্ন করেন এই সপ্তাহে আপনি কোন বইটা পড়েছেন? উত্তর পেয়েছেন? আমরা অনেকেই এখন আর বই পড়ি না। আসবাবপত্রের দোকানে টিভি, ডিভিডি পেলয়ার রাখার টেবিল পাওয়া যায়, শোপিস আর তৈজসপত্র রাখার আলমারী পওয়া যায়, লক্ষ টাকা দামের কিচেন ক্যাবিনেট, সোফাসেট আর ম্যাগাজিন র্যাক পাওয়া যায়, বুকশেল্ফ নামের বস্তুটি পাওয়া যায় না। আমরা বই পড়ি না, তাই তারাও বই রাখবার আসবাব তৈরী করেন না, এমনকি ইেিন্টরিয়র ডিজাইনাররা কাপড় রাখার জন্য ওয়াল ক্যাবিনেট বানান ফ্ল্যাট বাড়িতে, বই কোথায় থাকবে সেটা ভাবেন না। অথচ আপনি যে কোন উন্নত দেশে গেলে দেখবেন তারা ট্রেনে, বাসে, বাস স্টপে সময় পেলেই বই পড়ছে। আমাদের বড় বড় শপিং মলগুলিতে এতো রকম দোকান থাকে, বইয়ের দোকান থাকে না। জামা কাপড়ে সুন্দর হই আমরা, মনটা সুন্দর করবো কি দিয়ে? উন্নতি কি শুধু দালানকোঠায়? উন্নয়ন কি শুধূ মোবাইল ফোনের মধ্যে? উন্নয়ন কি শুধু টিভি চ্যানেলে আর কোকড়া চুল সোজা করার মধ্যে? মানুষ উন্নত হয়েছে জ্ঞানের চর্চার মধ্যে দিয়ে। মানুষ এগিয়ে গেছে চিন্তার জগতকে শানিত করে। বই ছাড়া চিন্তাকে শানিত করার, নিজেকে উন্নত করার শ্রেষ্ঠ কোন উপায় নেই। নিজেকে উন্নত করার আর যতো উপায় আছে, সেখানেও বই রয়েছে পিছনে। কেমন বই পড়বো? সবধরনের বই পড়বো। উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, গবেষণালব্ধ জ্ঞান। পাঠকমন যতো বই পড়বে ততোই শাণিত হতে থাকবে। ছোটবেলায় যেমন দুধ দিয়ে শুরু করে এখন সবই খাচ্ছেন, ঠিক তেমনি হয়তো রহস্যোপন্যাস বা প্রেমের কাহিনী দিয়ে শুরু হবে পড়া, কিন্তু যতোই দিন যাবে ততোই আপনার মন আরো বেশী ক্ষুধার্ত হয়ে উঠবে নতুন নতুন বইয়ের জন্য। বইয়ের অনেক দাম। বিদেশে তারা এজন্য সব ধরনের পাঠককে দেবার জন্য পেপারব্যাক এডিশন বের করে। বই সবাই কিনবে সেটাও ঠিক না। বই ধার করবে। লাইব্রেরী অথবা বন্ধুদের কাছ থেকে। বইয়ের যতœ নেয়া শিখতে হবে স্কুল জীবন থেকে। দুর্ভাগ্য আমাদের যে স্কুলগুলিতে লাইব্রেরী নাই। পাবলিক লাইব্রেরীগুলিতে বই এর দুর্দশা দেখে যে কারো কান্না পায়। তাহলে কি করবো আমরা? বন্ধুসভার সদস্যরা নিজেরাই চাইলে গড়ে তুলতে পারো পাঠাগার। প্রথমে একটি জায়গা চাই। হতে পারে সেটি কোন এক অবস্থাপন্ন সদস্যের বাড়ীতে অথবা সম্ভব হলে জনপ্রশাসনের সংগে কথা বলে কম্যুনিটি সেন্টারের কোন একটি কক্ষে। চাই আলমারী বা শেল্ফ। হয়ে যাক পাড়ার কোন এক মুরুব্বীকে ধরে সেটির সংস্থান। এবার বই। তৈরী হোক একটি বইয়ের তালিকা। প্রত্যেকে তালিকা থেকে বেছে নিয়ে মাসে একটি বই দান করো সেখানে। বাসার পুরোনো বইগুলি থেকে দিতে পারো দুয়েকটি বই। ৩০ জন সদস্যের একটি পাঠাগারে এভাবে বছরে ৩৬০ টি বই পেতে পারো। কোন একটি পত্রিকাকে বলো এক কপি সৌজন্য সংখ্যা দিতে তোমাদের পাঠাগারে। প্রথম আলো তো আছেই ভালো কাজের জন্য দাঁড়িয়ে। এবার পালাক্রমে একেকজন বেছে নাও বই ইস্যু করার কাজ। লাগবে বই ইস্যু করার জন্য লাইব্রেরী কার্র্ড, কিছু স্টেশনারী, কাগজ, কলম, ফাইল আর একটি ডেট স্ট্যাম্প। সব মিলিয়ে ১০০০ টাকার সামগ্রী বছরে। ৩ বছরে এই লাইব্রেরীতে থাকবে প্রায় ১০০০ বই। ৬৪ টি জেলায় যদি গড়ে ওঠে একটি পাঠাগার। তিনবছরে ৬৪ হাজার বই থাকবে বন্ধুসভার জেলা লাইব্রেরী গুলিতে। থানাপর্যাায়ে গড়ে তুলতে পারলে মোট বই হবে ৪ লক্ষ চুয়ান্ন হাজার এবং সেই বই পড়তে পারবে কমপক্ষে এক কোটি পাঠক সারা বছরে। বার্গার প্যাস্ট্রি এভাবে ভাগ করে সারা বছর খাওয়া যায় না। হাজার হাজার টাকা খরচ করে তৈরী করা সোজা চুল আবার কুকড়ে যাবে বছর ঘুরতেই কিন্তু বই থেকে যা পাওয়া যাবে তা থেকে যাবে সারা জীবন। বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারীর আগে সহজ মনে হবে প্রশ্ন। আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে পাঠাগারের সদস্যরা কারন তাদের সাথে থাকবেন আইনস্টাইন, হকিং আর রবীন্দ্রনাথ। চেতনার আলোতে আলোকিত হবে বাংলাদেশ। দেশের মানুষ যতো পড়বে ততোই দেশ এগিয়ে যাবে। জুলভার্ন জীবনে কখনো তার নান্তেস শহরের বাড়ীটির চিলেকোঠা থেকে বের হয়ে ইউরোপের অন্য দেশগুলিও দেখেন নাই। অথচ তিনি লিখেছেন আশী দিনে বিশ্বভ্রমনের মতো কাহিনী যেখানে দেশগুলির নির্ভুল বর্ননা আছে। তিনি বলেছিলেন এসব তিনি জেনেছিলেন বই পড়ে। সমুদ্রের তলদেশ নিয়ে লিখেছিলেন, সাবমেরিন আর রকেটের ধারনা দিয়েছিলেন এমনকি হিসেব কষে বলে দিয়েছিলেন রকেটের ন্যুনতম গতি কতো হলে মাধ্যাকর্ষনের টান ছাড়িয়ে চাঁদে যাওয় সম্ভব। যদি জুলভার্ন শত বছর আগে পারেন তবে আমাদের দেশে ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে অন্তত একজনতো পারবে হয়তো নবায়নযোগ্য নতুন শক্তির ধারনা দিতে। শুধু এই একটি ধারনা বদলে দিতে পারে আমাদের সবার ভবিষ্যত। আমরা ভাবি আমাদের সামর্থ্য কম। কথাটি ঠিক নয়। জগদীশচন্দ্র বসু যদি শতবছর আগে রেডিও ওয়েভ নিয়ে সফল গবেষণা করেন এই দেশে তবে আমরা এখন কেন পারবো না? চীন ২৫ বছর আগে কেবল একটি সোনার পদক পেয়েছিল অলিম্পিকে, ২৫ বছর পর তারা অলিম্পিকে সবচেয়ে বেশী পদক পেয়েছে। ২৫ বছরে একটি দেশ বদলে যেতে পারে। যদি এখনি শুরু করি তবে ২০৩৩ সালে বাংলাদেশ কেন পারবে না অন্তত কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বসেরা হতে। এই স্বপ্ন নিয়ে বিতর্ক শেখাই স্কুলের শিশুদের। এই স্বপ্ন নিয়ে দিন বদলাতে চাই, নিজেকে বদলাতে চাই। হাজার স্বপ্নের পাথরে সাজানো পথএর কোন শেষ নেই। যেখানে পথের শেষ সেখানেই আবার পথ শুরু হয়। বন্ধুসভাকে সাথে নিয়ে সফল হোক সেই শুভযাত্রা।
স্বপ্নের পদযাত্রা (প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যদের জন্য লেখা)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মিশন: কাঁসার থালা–বাটি
বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।