somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন এবং আন্তর্জাতিক প্রতারনা

১৯ শে জুলাই, ২০১১ বিকাল ৫:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনাদের মনে আছে যে একবার সারা পৃথিবীতে প্রচারণা চলেছিল, সেরা মানব নির্মিত সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের। যেখানে নাম করা কিছু জায়গা বাদ দিয়ে নতুন সপ্তাশ্চর্য ঘোষণা করা হয়েছিল? সারা পৃথিবীতে চলেছিল এক ধরনের প্রচারণা, যার মূল বাহক ছিল ইন্টারনেট। আমাদের মতো কিছু দেশে এই নিয়ে বেশ হৈচৈ হলেও , বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলি এটিকে কোন পাত্তা দেয় নাই। এই প্রতিযোগিতা বা নির্বাচনের কোন আন্তর্জাতিক গ্রহনযোগ্যতাও কোথাও পরিলক্ষিত হয় নাই। একটি ইন্টারনেট ভিত্তিক সংস্থা অনলাইন ভোটিং এর মাধ্যমে এই তালিকাটি ২০০৭ সালে প্রকাশ করে। তারা আমেরিকান আইডল এর মতো ফোন আর ইন্টারনেট ভোটিং এর মাধ্যমে যে তালিকাটি দেয় , সেখানে পিরামিড ছিল না। ব্রাজিল এর ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার, তাজমহল, জর্ডানের পেট্রা, চীনের গ্রেট ওয়াল, ইনকা সভ্যতার নিদর্শন মাচু পিচু, মেক্স্রিকোর চিচেন ইটজা এবং রোম এর কলোসিয়াম। দক্ষিন আমেরিকার তিনটি, এশিয়ার তিনটি এবং ইউরোপের একটি প্রাচীন নির্মানকে ভোটাভুটি করে আশ্চর্য বানিয়ে দিয়ে তারা সপ্তমাশ্চর্যের পুরোনো তালিকাটিকে বদলে দিতে চেষ্টা করেছিল।

এবার তাহলে দেখা যাক পুরোনো তালিকাটি কি ছিল। পুরোনো তালিকাতে ছিল দ্য কলোসাস অব রোডস, গিজার পিরামিড, ব্যাবিলনের শূণ্যোদ্যান, আলেক্স্রান্দ্রিয়ার বাতিঘর, হ্যালিকার্ণেসাস এর সমাধি, অলিম্পয়ার জিউস এর মূর্তি এবং ইফেসাসে আর্টেমিসের মন্দির। কেন নতুন তালিকার দরকার পড়লো? যুক্তি আছে। এই আশ্চর্যগুলির সবকটি এখন আর দেখা যায় না। কলোসাস তৈরী হয়েছিল ৩০৫ খ্রীষ্ট পূর্ব সালে রোডস দ্বীপে। ২২৬ বিসি তে এটা ভূমিকম্পে হাটু থেকে ভেঙ্গে যায় এবং সেভাবেই থাকে। ৬৫৪ খ্রীষ্টাব্দে এটাকে আরবরা ভেঙ্গে সিরিয়ান এক ইহুদি ব্যবসায়ীর কাছে বেচে দেয়। এটা এখন আর নেই কারন এটা ছিল ব্রোঞ্জের তৈরী । হয়তো কোন তামার পয়সার মধ্যে কিংবা ব্রোঞ্জ মেডেলে চলে গেছে তার ধাতু। আলেক্্রান্দ্রিয়ার বাতিঘর টি তৈরী হয়েছিল ৩০৫ বিসি তে এবং এটার ধ্বংসাবশেষ টিকে ছিল ১১৫৬ সাল পর্যন্ত। আবু হাজাজ আল আন্দালুসির বর্ণনায় এটার কথা পাওয়া যায়। ৯৫৬ ও ১৩০৩ সালের ভূমিকম্পে এটা ধ্বংস হয়ে যায়। ১৩২৩ সালে ইবনে বতুতা বলেছেন যে তিনি এর ধ্বংসাবশেষে প্রবেশ করতে পারেন নাই। পরে ১৪৮০ সালে এটার কিছু পাথর ব্যবহার করে সেখানে মিশরের শাসক কাতিবি একটি দুর্গ তৈরী করেন। ব্যাবিলনের শুণ্যোদ্যান আসলে ছিল কিনা এটা নিয়ে তর্ক আছে। অনেকে মনে করেন এটা শুধু কবিদের বর্ণনা। তবে যারা বলেন এটি ছিল তাদের বর্ণনা অনুযায়ী এটা আসলে ছাদের উপর করা রুফটপ গার্ডেন। এটার কোন অস্তিত্ব নেই এখন। এশিয়া মাইনরের ছোট্ট রাজ্য হ্যালিকার্নেসাসের শাসক মউসল এর কবরের উপর তার স্ত্রী রানী আর্টেমিসের বানানো স্মৃতিসৌধটিও এখন আর নেই। এর ধ্বংসাবশেষ আছে। এটির নামেই ইংরেজী মউসোলিয়াম শব্দটি এসেছে। অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তিটিও নেই। ওটা ৪৩২ বিসি তে ফিডিয়াসের বানানো ছিল। রোমান স¤্রাট ক্যালিগুলা এটাকে ভেঙ্গে রোমে নিতে চেয়েছিলেন। সেটা সম্ভব হয়নি। তবে এটা পরে কনস্টান্টিনোপলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এটি কোন আগুন বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হয়ে যায় বলে মনে করা হয়। ফিডিয়াসের কারখানা খুজে পাওয়া গেছে যদিও। পিরামিড এখনো টিকে আছে। ইফেসাস শহরে আর্টেমিসের মন্দির বা ডায়ানার মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এখনো আছে।

যেহেতু অধিকাংশ প্রাচীন স্থাপত্য আর নেই, তাই এই তালিকাটি গ্রহনযোগ্য ছিল। এটি নিয়ে যে প্রতিযোগিতা সেটিও খুব দীর্ঘ ছিল না। তবে এটি বেশ প্রচার পেয়েছিল, প্রধানত বিভিন্ন দেশের মানুষের আগ্রহ ও পত্র পত্রিকার কারনে। পিরামিড বাদ পড়ার পর অনেকেই এটিকে নিয়ে অসস্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন। কারন এটা অস্বাভাবিক যে টিকে থাকা একটি সুপ্রাচীন স্থাপত্য হঠাৎ ব্রাজিলের রিডিমারের মতো একটি কুদর্শন ঢ্যাংগা মূর্তির কাছে বাদ হয়ে যাবে। অ্যাংকরভাট নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। অনেকে বলেছেন চীনের প্রাচীরের চেয়ে অ্যাংকরভাট অনেক বেশী দাবীদার ছিল আশ্চর্য হিসাবে ঘোষিত হবার।

কারা এই প্রতিযোগিতার আয়োজক। নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন নাম দিয়ে স্ইুস চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংগ্রাহক বার্ণার্ড ওয়েবার এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটার সাথে সুইস সরকারের কিছু সম্পর্ক আছে বলে জানা যায়। পর্তুগালের লিসবনে তারা তাদের প্রথম প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষনা করেন ২০০৭ সালের জুলাই মাসে। তারা দাবী করেন যে প্রায় ১০ কোটি ভোটার এস এম এস ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতায় ভোট দিয়েছিলেন। প্রথম দিকে বিভিন্ন ছোট ছোট দেশ এই প্রতিযোগিতার ব্যাপারে বিরাট আগ্রহ দেখায়। তবে এক পর্যায়ে তাজমহল কম ভোট পেয়ে বাদ হবার আশংকা দেখা দিলে ভারতে এটি নিয়ে বিরাট হৈচৈ পড়ে যায় এবং ভারতীয় মিডিয়ার আগ্রহের কারনে এই প্রতিযোগিতা হালে পানি পেয়ে যায় এবং ভারত থেকে কোটি কোটি ভোট পড়তে থাকে। জর্ডানের রানী রানিয়া নিজে প্রচারনায় নেমে পড়েন এবং সত্তর লাখ লোকের দেশ জর্ডান থেকে এক কোটি চল্লিশ লাখ ভোট পড়ে পেট্রার পক্ষে বলে ধারনা করা হয়। ব্রাজিলের ফোন কোম্পানীগুলি ফ্রী এস এম এস ও কল করতে দিয়ে তাদের রিডিমার স্ট্যাচুকে জিতিয়ে দেয়। ভারতেও একই রকম কান্ড হয়েছিল।এক জন লোকের একাধিক ভোট দেবার এবং যতখুশী ভোট দেবার ক্ষমতা থাকায় এই প্রতিযোগিতার সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। শুরুতে মনোনয়ন দেবার সময় ইউনেস্কো তাদের সহযোগিতা করলেও পরে তারা ঘোষণা দিয়ে এই কাজ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। ইউনেস্কো থেকে বলা হয়, “এই প্রতিযোগিতা একটি ব্যক্তিগত উদ্যোগ। এর সাথে ইউনেস্কোর কোন সম্পর্ক নেই, এবং এটি পৃথিবীর সব ধরনের মানুষ নয়, বরং ইন্টারনেট ও ফোন ব্যবহারকারীদের মতামত মাত্র।”

প্রথম প্রতিযোগিতার পর তারা বলেছিল যে এই কাজে আয়োজকদের কোন আর্থিক লাভ হয় নাই বরং তারা এটা বিভিন্ন দাতাদের সহযোগিতায় সম্পন্ন করেছে । তবে তারা সেবার নানা রকম প্রচারণা সত্ত্ব বিক্রি করে টাকা কামিয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো তারা ভোটের সংখ্যা প্রকাশ করেনি এবং টাকা পয়সার হিসাব দেবার ব্যাপারেও নিরব থেকেছ। এর পরপরই তারা শুরু করে দেয় প্রাকৃতিক আশ্চর্য নির্বাচনের প্রতিযোগিতা। শুরুতে আমাদের দেশের কক্সবাজার ও সুন্দরবন, দুটোই তালিকায় থাকলেও পরে তারা সুন্দরবনকে রেখে কক্সবাজারকে বাদ দিয়ে দেয়। অথচ প্রথমে তারা সুন্দরবনকেই বাদ দিতে চাইছিল, কারন এটি দুটি দেশে অবস্থিত এবং দুটি দেশ থেকে সরকারীভাবে যৌথ মনোনয়ন না পেলে তারা এটাকে তালিকায় রাখবে না বলে জানিয়েছিল। এটি আসলে কৌশল মাত্র। এস এম এস ও টিভি সত্ত্ব বেচতে হলে ভারত অনেক বেশী লোভনীয়, তাই ভারতকে এই খেলায় ঢোকানোটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য যদিও এই বনের মূল অংশ বাংলাদেশেরই মালিকানায় আছে।

বাংলাদেশ সহ ২৭ টি দেশে তারা এই এস এম এস ভোটিং এর আয়োজন করছে যার ব্যবসাটা এই রকম। আমাদের বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাসান মাহমুদ সাহেব এই প্রতিযোগিতার জন্য এস এম এস পাঠানোর বিষয়ে একটি প্রেস সম্মেলন করে বলেছেন যে প্রতিটি সিম থেকে বিশ টি এসএম এস পাঠালে বাংলাদেশ একশ কোটি ভোট পাবে। মজার বিষয় হলো এই প্রতিযোগিতার আয়োজকরা ভোটের কম বেশী দিয়ে বিজয়ী নির্বাচন করেন বলে স্বীকার করেন না, ভোটের সংখ্যাও প্রকাশ করেন না। প্রতিটি এস এম এস এর জন্য খরচ হবে দুই টাকা। তাহলে সম্ভাব্য আয় ২০০ কোটি টাকা। এর থেকে ৬৮ পয়সা পাবে সেই আয়োজক সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন। তার মানে মোট ৬৮ কোটি টাকা পাবে সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন। সরকার আবার এই এস এম এস এর জন্য ভ্যাট মাফ করে দিতে চেয়েছেন। তার মানে সরকারের ক্ষতি হবে ত্রিশ কোটি টাকা কারন প্রতিটি এস এম এস এর জন্য ভ্যাট ত্রিশ পয়সা। যে নম্বরটিতে এস এম এস পাঠাতে হবে সেই ১৬৩৩৩ নম্বরটির মালিক কে বা কারা সে বিষয়ে সরকার নিরব থেকেছেন। এই নম্বরটির মালিক যদি কোম্পানী গুলি হয় তবে তারা পাবে বাকি ১৩২ কোটি টাকা। আর যদি এই নম্বরটির মালিক হয় কোন ব্যক্তি তবে সেই ব্যক্তি এই ১৩২ কোটি টাকার অন্তত ৪০% ভাগ পাবে, যার পরিমান ৫২ কোটি আশি লাখ টাকা। আমাদের সকল মিডিয়া এটি নিয়ে নীরব থেকেছে। কেন, সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। এবার আমাদের প্রশ্ন কেন এই ভোটের জন্য বাংলাদেশের মানুষের এত পয়সা গুনতে হবে? সুন্দরবন দেখতে টুরিস্ট আসবে? যদি আসে তবে তারা আসবে ভারতের দিক থেকে। কারন এটি একলা আমাদের নয়, এবং ভারতের প্রচারযন্ত্র আমাদের চেয়ে অনেক বেশী পারদর্শী। লোকে যেমন রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে ভারতীয় বলে মনে করে তেমনি সুন্দরবনকেও ভারতীয় বানিয়ে দেবে ইন্ডিয়ান প্রচারযন্ত্র। এটা কোন খারাপ কিছু নয়। মিডিয়ার শক্তিতে যে এগিয়ে সে সুযোগ নেবে এটাই স্বাভাবিক। আবার ভারতের মোবাইল অপারেটররা যদি একই ভাবে ব্যবসা করেন, তবে কত টাকা যাবে এই সংগঠনের পকেটে? এই টাকা দিয়ে কি করবে এই সংগঠনটি? তারা বলেছে এই টাকা তারা বিজয়ী স্থানগুলির রক্ষনাবেক্ষন ও উন্নয়নে দেবে। ভুলে যাবেন না প্রথম বার প্রতিযোগিতা করে তারা বলেছিল যে তারা কোন টাকা বাঁচাতে পারেনি। প্রথম প্রতিযোগিতাটি কম সময়ে শেষ করলেও এবার তারা সময় নিয়েছে প্রায় চার বছর। এর কারন তারা এবার পয়সা বানানোর নানা রকম ধান্দা বের করেছে।

মালদ্বীপ সরকার এরি মধ্যে এই প্রতিযোগিতা থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করেছে। ২৪ এপ্রিল ২০১১ তাদের মন্ত্রীসভার বৈঠকে তারা এই সিদ্ধান্ত নেয়। কারন আয়োজকরা তাদের কাছে বিরাট অংকের, প্রায় পাঁচ লক্ষ ডলার ফী দাবী করেছিল। তাদের পর্যটন মন্ত্রনালয় এটি প্রত্যাখ্যান করে কারন তারা এই প্রতিযোগিতার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে আস্বস্ত হতে পারে নাই। অথচ আমরা ডংকা বাজাতে শুরু করেছি। দয়া করে এই লিংকটি দেখুন। Click This Link

ইন্দোনেশিয়াও এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের পর্যটন মন্ত্রনালয়কে এই আয়োজকরা পুরষ্কার বিতরনীর সকল খরচ বহন করে হোস্ট নেশন হতে চাপ দেয়। সরকার রাজী না হওয়াতে তারা কমোডো ন্যাশনাল পার্কের প্রস্তাবকারী হিসেবে মন্ত্রনালয়ের নাম কেটে দেয় এবং এটিকে বাদ দেয়ার হুমকি দেয়। তাদের মন্ত্রী জিরো ওয়াচিক এই সংগঠনের বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ার ভাবমূর্তী নষ্ট করার চেষ্টার দায়ে মামলা করার কথাও বলেছেন। এই লিংকটি দেখুন Click This Link এবং এই লিংকটি দেখুন Click This Link ইন্দোনেশীয় সরকারের কাছে চেয়েছিল দশ মিলিয়ন বা এক কোটি ডলার।

শুরুতে আমরাও না বুঝে এই কাজে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম অনেকে। আমি নিজেও ভেবেছিলাম এতে বাংলাদেশের লাভ হবে। আসলে এতে বাংলাদেশের লাভের পরিমান অতি অল্প। কেন সেটা বুঝিয়ে বলি। প্রথমত এই সংগঠনের কোন আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতা বা গ্রহনযোগ্যতা নেই। এর মূল অফিস সুইজারল্যান্ডে হলেও এর কোন অফিস ঠিকানা আপনি নেট এ খুঁজে পাবেন না। পাবেন স্পেনের একটি ঠিকানা। এদের ওয়েবসাইটে নিজেদের বিষয়ে এদের বক্তব্য খূবই অস্পষ্ট।

এদের অর্জিত অর্থের পরিমান কত হবে বলে আপনাদের ধারনা? যদি কেবল বাংলাদেশ ও ভারত থেকে এস এম এস আসে ২০০ কোটির বেশী তবে সারা পৃথিবী থেকে কত কোটি ভোট আসবে বলে ধারনা করছেন? এই টাকা থেকে কত অংশ তারা ব্যয় করবেন বিজয়ী দেশগুলিতে তার কোন বর্ননা নেই। উল্টা তারা টাকা চাইছেন। যেমন মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়া এরি মধ্যে সরকারী ভাবে অন্তত ১৫ লক্ষ ডলারের কথা বলেছে। বাংলাদেশী টাকায় এর পরিমান একশ কোটি টাকারো বেশী। বাংলাদেশ সরকার কত দিয়েছে তাদের? এটা আমরা জানি না।

এই সংগঠন না বললেও আমাদের সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ম্যানগ্রোভ বন। ইউনেস্কো একে এরি মধ্যে পৃথিবীর সম্পদ বা ওয়ার্লড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষনা করেছে। তাই কোথাকার কোন সংগঠন একে কি প্রথম না দ্বিতীয় বানালো তাতে কিছু আসে যায় না। পর্যটকরা এসব দেখে বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন না। বরং তারা জানেন তারা কোথায় যেতে চান। তাই পিরামিড লিস্টে না থাকলেও সেটি দেখতে সকলেই যান, কিন্তু ব্রাজিলের রিডিমার দেখার জন্য নতুন করে পর্যটকের সংখ্যা বাড়েনি। যদিও রিডিমার লিস্টে প্রথম দিকে আছে।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প মজবুত না। সুন্দরবনে কেউ বেড়াতে আসলে তারা থাকা, খাওয়া, নিরাপত্তা এবং অন্যন্য ভৌত সুবিধা দিতে এখনি হিমসিম খেতে হয়। বেসরকারী কিছু অপারেটর মূলত এই কাজটি করেন। যদি হঠাৎ অনেক পর্যটক চলে আসেন, তাদের যতœ নেবার সামর্থ্য নেই আমাদের। আমরা কি আশা করছি তারা এদেশে বেড়াতে এসে বাসে লাইন দেবার মতো লাইন দিয়ে অপেক্ষা করে সুন্দরবন দেখবেন? সুন্দর বনে অতিরিক্ত পর্যটকের আনাগোনা বনটিকে এমনিতেও ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং করবে। সিডর এর পর বনে যাতায়াত বন্ধ রাখার ফলে বনটি আবার মাথা তুলে দাড়াতে পেরেছে। এটি বেশী পর্যটক আসলে বিপন্ন হবে। সুন্দরবনে বিপন্ন প্রজাতি বাঘের বসবাস। অতিরিক্ত শব্দ, লোক সমাগম বাঘের প্রজননকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে পর্যটকএনে বেশী পয়সা বানানোর সুযোগ এখানে নেই। পরে বন থাকবে, বাঘ থাকবে না। বনের মধ্যে অতিরিক্ত মানুষের আনাগোনা, অন্যান্য প্রানীদেরও বিরক্ত করবে।

সংগঠনটির কর্মকর্তারা দুবাই গিয়ে সেখানের একটি দ্বীপকে এই প্রতিযোগিতায় এনেছেন। তারা দেশে দেশে ঘুরছেন। মাঝে কোলকাতা থেকে কিছু ডক্টরেট দেয়া হতো। বাংলাদেশের একটি পত্রিকার সম্পাদক, একজন নামকরা গায়িকা, হালে একটি চ্যানেলের মালিক এরকম ডক্টরেট কিনে এনেছেন। সেভেন ওয়ান্ডার্স সংগঠনটি সেই রকম একটি সংগঠন যারা ব্যক্তিগত লাভের জণ্য প্রচারনা চালিয়ে এরি মধ্যে স্বীকৃত কিছু প্রাকৃতিক আশ্চর্যকে প্রতিযোগিতায় নামিয়ে পয়সা কামাচ্ছেন। এভারেস্ট, সুন্দরবন, কক্সবাজার, নায়াগ্রা কিংবা গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ, গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের জন্য কি ভোটাভুটি কার প্রমান করার দরকার আছে তাদের অভিনবত্ব বা শ্রেষ্ঠত্ব? ভোটে বাদ পড়ে গেছে বলে কি কক্সবাজার পর্যটন তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবে?

বাংলাদেশে পর্যটক আনতে হলে চাই পর্যটন মহাপরিকল্পনা। চাই পরিকল্পিত বিনিয়োগ। মালয়েশিয়ার গেনটিং বা পেনাং, সিংগাপুরের সেন্টোসায় যেভাবে পরিকল্পিত বিনিয়োগ এনে একে পর্যটনের ক্ষেত্রে পরিনত করা হয়েছে , সেভাবে চেষ্টা না করে, এস এম এস পাঠিয়ে ২৩০ কোটি টাকার খেলা করে, এই হাস্যকর পুরস্কার বা প্রতিযোগিতা আমাদের কিছুই দেবে না। আমরা কেবল কক্সবাজারে যদি পর্যটনের জন্য নানা ধরনের আয়োজন, যেমন প্যারা সেইলিং, হট এয়ার বেলুন, কেবল কার, থীম পার্ক, গলফ ক্লাব, ক্যাসিনো বা অন্যান্য পর্যটন আকর্ষন গড়ে তুলতাম, তবে অতি সহজে অনেক বেশী পর্যটক পেতাম। রাজশাহী কিংবা কক্স বাজারে চাইলে বাঞ্জি জাম্পিং এবং স্কাইডাইভিং এর ব্যবস্থাও করা সম্ভব। সম্ভব ট্রেকিং, হাইকিং, সাইক্লিং, মোটর র‌্যালী, রেসিং ট্র্যাক, স্কুবা ডাইভিং এর ব্যবস্থা করা। চাইলে সেন্ট মার্টিন বা কুতুবদিয়াকে প্রাকৃতিক সামুদ্রিক জাদুঘরে পরিনত করা সম্ভব। আন্ডার ওয়াটার অ্যাকুরিয়াম বানানো সম্ভব।

সেসব না করে, আমরা যোগ দিয়েছি পয়সা দিয়ে যত খুশী, যেমন খুশী ভোট দেবার খেলায়। এই খেলায় জেতার চাইতে হেরে যাওয়া ভালো। কারন যে ভোটে যার যত টাকা, তার তত ভোটের সম্ভাবনা, সেই ভোটে যারা অংশ নেয় তারা হয় নির্বোধ নয়তো দূর্নীতিবাজ। আসুন আমরা সবাই মিলে মালদ্বীপের মতো এই প্রতিযোগিতাকে প্রত্যাখ্যান করি। না বুঝে, বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে একসময় এর জন্য ক্যাম্পেইন করেছিলাম, তখন এই টাকা লেনদেন এর বিষয়টি যদিও ছিল না। আমাদের সাথে তখন জাফর ইকবাল স্যার সহ অনেক গুণীজন ছিলেন। আমার মতো নাদানি যারা করেছিলেন তাদের সবার হয়ে ক্ষমা চাইছি এবং এই লেখাটি লিখে সেই অবুঝ কাজের সামান্য দায় মোচন করার চেষ্টা করলাম।
২৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×