somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি দুটি লাইন খুঁজছি

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্টীভ জবসের মৃত্যুতে বিরাট হৈচৈ পড়ে গেছে সারা পৃথিবীতে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো আমাদের দেশের পত্রপত্রিকাগুলো তাকে নিয়ে নানা রকম প্রবন্ধ এবং লেখা ছাপছে। জবস একজন তথ্য প্রযুক্তির কনেেসপ্ট উদ্ভাবক ছিলেন। তার মাথা থেকে আসা স্মার্ট ফোন এবং গান শোনার, ছবি দেখার আই পড কে পশ্চিমা বিশ্ব যুগান্তকারী আবিষ্কার বলে মনে করে। আমার নিজেরও ধারনা জবস একজন অসাধারন মানুষ ছিলেন। তবে আমাদের দেশে অ্যাপল স্মার্টফোন ব্যবহারকারী কয়জন? এই ফোনের দাম যেমন, তাতে এই দেশে এই ফোন সবাই ব্যবহার করতে পারে না। আমেরিকায় এটি কিস্তিতে বিক্রি হয়। পৃথিবীর বহু দেশে এটি কিস্তিতে কিংবা ফোন কোম্পানীর প্যাকেজের সাথে কমদামে বিক্রি হয়। আমাদের দেশে এটি খুব বেশী মানুষের হাতে দেখা যায় না কারন এটির মূল্য অনেকের ধরাছোয়ার বাইরে। তাই জবসের মৃত্যু আসলে আমাদের দেশের অধিকাংশ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে তেমন কোন আলোচনার বিষয় নয়। তারা একদিন আগেও জানতেন না যে জবস মৃত্যুশয্যায়। বাংলাদেশের কোন পত্রিকা সেভাবে তার অসুস্থতা বা পদত্যাগের খবর প্রচার করেনি, যতটা করেছে মৃত্যুর।

জবসকে নিয়ে আমার তেমন কিছু বলার নেই। স্ট্যানফোর্ডে দেয়া তার সমাবর্তন বক্তৃতাটি বরং একটি অসাধারন বক্তৃতা। এটি নিয়েও আমি তেমন কোন আলোচনায় যেতে চাই না। আমি কেবল একটি বাক্য নিয়ে বলতে চাই। তিনি শেষ যে কথাটি বলেছিলেন তার বক্তব্যে সেই কথাটি ছিল, দি হোল আর্থ ক্যাটালগ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক স্টুয়ার্ট ব্র্যান্ডের কাছ থেকে ধার করা। এই কথাটি একটি অসাধারন কথা। পত্রিকাটি বন্ধ হবার সময় এই কথাটি লিখেছিল তাদের প্রচ্ছদে। আজকের বাংলাদেশে যখন বলা হয় , দেশে ষোল কোটি মানুষের বত্রিশ কোটি হাত আছে, তখন আমার এই কথাটি ভালো লাগে না। আমাদের কাজ কি কেবল শারিরীক? আমরা কি কেবল হাত পা সর্বস্ব মানুষ? আমাদের কি কোন সৃজনশীলতা নেই? তাহলে কেন গরু রচনা লেখার সময় আমরা যেমন লিখি যে গরুর চারিট পা, লেজ, খুর আছে, তেমনি আমরা আমাদের হাত পা দিয়ে দেশের জনগনের ক্ষমতাকে কেন হিসাব করি? দেশে ষোল কোটি মানুষ মানে ষোল কোটি মস্তিষ্ক। ষোল কোটি উদ্ভাবনের, ষোল কোটি সৃজনশীলতার সম্ভাবনা হলো ষোল কোটি মস্তিষ্কের ক্ষমতা। সেই ক্ষমতার হিসাব না করে আমরা কেন হাত পা দিয়ে আমাদের জনগণের সম্ভাবনাকে বিচার করি?

জালালুদ্দিন রুমী মানুষের হৃদয়কে কাবার চেয়েও মহান বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, স্রষ্টা নিজ হাতে যে অন্তর তৈরী করেছেন, তার চেয়ে মহান আর কিছু হয় না। তাহলে আমরা কেন আমাদের অনন্ত সম্ভাবনার এই মানুষকে কেবল হাত পা দিয়ে উৎপাদন করাবো ভাবছি? একজন মানুষ চাইলে গোটা ইতিহাস বদলে দিতে পারে। গত শতাব্দির শুরুতে রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে যে বালিকা নিজে নিজে পড়তে শিখেছিল, কুপির বাতি আড়াল করে যে রাতে নিরবে শিখেছিল বাংলা ও ইংরেজী, সেই বালিকার হাত ধরে বাংলার মুুসলিম নারীদের পড়াশোনার যাত্রা শুরু। সেইদিনের সেই বোকা বালিকাটির সংগ্রাম শুরু না হলে আজকে দেশে কি করে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেত্রী সহ বড় বড় পদে নারীদের পেতাম? সেইদিনের সেই ক্ষুধা, চিত্তের গহীনে আলো জ্বালানোর যে অপার বুভুক্ষা, সেটি যদি বেগম রোকেয়ার না থাকত, সমাজের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মতো বোকা যদি তিনি না হতেন, তবে কি আজ দেশের সব মেয়েরা বিনা বেতনে স্কুলে, কলেজে এমনকি ¯œাতক পর্যায়েও বিনা বেতনে পড়তে পারত? তাই বোকা হওয়া দরকার। এই ক্ষুধা থাকা দরকার।

মার্টিন লুথার কিং। আমেরিকার ঘৃণ্য বর্ণবাদের বিরুদ্ধে , সেগ্রেগেশন আইনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছিলেন। এই যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬০ এর দশকে কালোদের বসতে হতো বাসের আলাদা সীটে, ক্যান্টিনের আলাদা টেবিলে। অনেক ক্লাব ও ক্যাফেতে তাদের প্রবেশাধিকার ছিল না। মোহাম্মদ আলী তার অলিম্পিকের স্বর্ণপদক নদীতে ছূড়ে ফেলে দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কারন তাকে একটি ক্যাফেতে ঢুকতে দেয়া হয় নি, পানি খেতে চাইলে সেটাও দেয়া হয় নি। সেই আমেরিকাতে বর্ণবাদের বিপরীতে, কালোদের সমান অধিকারের দাবীতে যখন মার্টিন সংগ্রামে এলেন, তখন একের পর এক হুমকী এসেছে। এসেছে প্রলোভন। অধিকারের জন্য ক্ষুধার্ত মার্টিনের বোকামীর মাশূল তাকে দিতে হয়েছিল। মেমফিসের এক মোটেলের বারান্দায় তাকে দুর থেকে গুলী করে মেরে ফেলেছিল আততায়ী। সেটি ছিল ১৯৬৮ সাল। আর ঠিক তার চল্লিশ বছর পরে সেই আমেরিকাতে, প্রেসিডেন্ট পদে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তিটি কালো এক মানুষ। বারাক ওবামা। সেইদিন বোকা মার্টিন এর স্বাধীনতা ও সাম্যের ক্ষুধা না জাগলে আজকে কি ওবামা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন?

মহাত্মা গান্ধী আর নেতাজী সুভাষ। গান্ধীজির অহিংস আন্দোলনের পথের সাথে মতের অমিল ছিল সুভাষের। মহাত্মা বোকার মতো আকড়ে থাকলেন অহিংসার নীতি। সুভাষ ততোধিক বোকার মতো মহাত্মার মতের বিপরীতে গিয়ে কংগ্রেস ছাড়লেন। তারপর সশস্ত্র বিপ্লব গড়ে তুলতে গিয়ে একসময় প্রান হারালেন এক রহস্যজনক দুর্ঘটনায়। দুজনেরই ক্ষুধা ছিল। স্বাধীনতার ক্ষুধা, গণতন্ত্রের ক্ষুধা। দুজনেরই বোকামী ছিল। এই বোকারা না থাকলে, আজকের ভারত কি এই রকম একটি রাষ্ট্র হিসেবে মাথা তুলে দাড়াতে পারত? মাত্র ৬৪ বছরে ভারত যেখানে পৌঁছে গেছে, সেটি কি সেইসব মানুষদের বোকামী না হলে হতো?

কলম্বাস। কিছু নেই তার। নতুন ভুমি আবিষ্কার করবেন বলে বের হয়েছেন। নতুন দেশ না পেলে থামবেন না। সময়টা এখনকার মতো নয়। সেই সঠিক মানচিত্র, নেই রেডিও , নেই আধুনিক ঔষধ এবং জিপিএস। সমুদ্র যাত্রা মানে অনেকটা কয়েকমাসের জন্য নিরুদ্দেশ যাত্রা। সম্পদ ও নতুন অভিজ্ঞানের জন্য অভিযাত্রীর যে ক্ষুধা ও বোকামী সেটি না থাকলে আজকে আমেরিকাতে কি শ্বেতাংগদের এই রকম নিবাস হতো? আমেরিকা নামের দেশটি কি এমন শক্তিশালী একটি দেশে পরিনত হতো?

মাত্র আঠারো জন অশ্বারোহী নিয়ে ইখতিয়ারুদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজী চলে এলেন বাংলায়। লক্ষন সেন বিনা যুদ্ধে পরাজয় মেনে নিলেন। মাত্র আঠারোজন নিয়ে একটি দেশে ঢুকে পড়া, এর চেয়ে বড় বোকামী কি আর হয়? রাজ্য জয়ের এই অদ্ভুত ক্ষুধা ও বোকামী ছিল আলেক্স্রান্ডারেরও। একের পরে এক রাজ্য জয় করে যখন তিনি ভারতে এসে পুরু রাজকে পরাজিত করলেন, তখন নিজের চেয়েও বড় বোকাকে পেলেন আলেক্সান্ডার। পুরু রাজকে বন্দী অবস্থায় তার সামনে আনার পর সম্রাট তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাজা, আমার কাছ থেকে আপনি কি ব্যবহার আশা করেন। মৃত্যুমুখে পতিত হতে পারেন জেনেও বোকার মতো পুরু রাজ বলে বসলেন, আমি একজন রাজা হিসেবে আরেকজন রাজার কাছ থেকে রাজার মতোই ব্যবহার প্রত্যাশা করি। আলেক্স্রান্ডার শুধু পুরু রাজকে রাজ্যই ফিরিয়ে দেন নি, তাকে বন্ধু হিসেবেও বরণ করলেন। আত্মসম্মানবোধ কতটা প্রখর হলে একজন এমন কথা বলতে পারে?

মীর নিসার আলী, তীতুমীর। বোকার হদ্দ। বাঁশের কেল্লা বানিয়ে বৃটিশের কামানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। নেই অস্ত্র, সেই অর্থ। সেদিন তিতুমীরের মতো ক্ষুধার্ত স্বাধীনতাকামীরা না থাকলে আজ কি আমরা এইরকম সংগ্রামী জাতিতে পরিনত হতে পারতাম। বাংলাদেশে দারিদ্র আছে। এই দরিদ্র জাতি বারবার ঝড়, জলোচ্ছাস, নদীভাংগনের মুখোমুখি হয়। বন্যা, খরা লেগেই থাকে। আছে জলাবদ্ধতা। পেটের ক্ষুধাতো আছেই। তারপরেও আমরা এখন ষোল কোটি লোকের জন্য খাদ্যের জোগান দেই, সব শিশুকে টিকা দেই। মায়ের ও শিশুর মৃত্যুর হার কমাই, সব মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিত করি, সকল শিশুকে স্কুলে পাঠাই। আমরা এখনো ক্ষুধার্ত এবং বোকা। এই ক্ষুধা ও বোকামীই আমাদের শক্তি।

বোকার মতো কিছু ছেলে চিৎকার করে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে তার ভাষনের উত্তরে বলেছিল, না না। তারা মায়ের ভাষায় কথা বলার, মায়ের ভাষাকে রাষ্ট্রের ভাষার মর্যাদায় দেখতে চেয়েছিল। এরা গণতন্ত্র চেয়েছিল। সাম্য চেয়েছিল। পাকিস্তানের শোষনের বিপরীতে সমান অধিকার চাইতে গিয়ে গোটা জাতি একত্রিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালে প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যার যা আছে তাই নিয়ে নেমে পড়েছিল এই জাতি। যে মানুষ কখনো একটি ঢিল ছোড়ে নি, সে গ্রেনেড ছুড়েছে। যে মানুষ কখনো একটা পিপড়া মারে নি, সে পাকিস্তানী সৈন্য মেরেছে। এই বোকামীর ফসল, এই স্বাধীনতার ক্ষুধার ফসলই তো আজকের বাংলাদেশ।

আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ। টেলিভিশনের খ্যাতির বিরাট প্রলোভন উপক্ষো করে, শিক্ষকতার পরে বাকি সময়টুকু ঢেলে দিয়েছিলেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র গড়ে তুলতে। দেশের সবার কাছে বই পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। বিশ্ব সাহিত্যের দরবারের সংগে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। আজকে বাংলামোটরে দাঁড়িয়ে পড়েছে তার বোকামীর চিহ্ন, বহুতল ভবন। আজও সেই বোকামীর গান, আলো আমার আলো ওগো, বাজিয়ে বইয়ের গাড়ী ঘুরে বেড়ায় দেশের বিভিন্ন শহরে।

জবস যথার্থই বলেছিলেন, বোকা হও, ক্ষুধার্ত হও। আজকে পশ্চিমে এই দুটোরই বড় অভাব। আর আমাদের দেশে এমন কথা বলার লোকের অভাব। আমাদের বোকামী ও ক্ষুধা দুটোই আছে, কিন্তু কে বা কারা আমাদের দুই হাত দুই পা দিয়ে হিসাব করা শিখিয়েই যাচ্ছেন। অথচ আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হতে পারে আমাদের উদ্ভাবনী শক্তি, আমাদের অপার চিন্তা শক্তির যথাযথ বহিপ্রকাশ। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গবেষণার হার অনেক কম। এই দেশে কেউ শিক্ষক হতে চায় না। আমাদের দেশে সবাই এখন কেবল টাকা কামাতে চায়। কেবল বাড়ী আর গাড়ী করতে চায়। আমাদের দেশে এখন ব্যবসা প্রশাসণ অর্থনীতির চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারন ওটা পড়লে অনেক বেতনে চাকুরী হয়।

আমাদের দেশে এখন শিক্ষকতার চেয়ে ব্যাংকের চাকুরী বেশী ভালো, প্রশাসনের চেয়ে পুলিশের। দেশের সেনাবাহিনীর কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামের চেয়ে কংগো বেশী ভালো। সিয়েরা লিওনে গিয়ে মরলেও কোন ক্ষতি নেই। দেশের চেয়ে বিদেশে পুলিশী দায়িত্ব পালনে সবার বেশী আগ্রহ, অন্য দেশের অফিসারের অধীনে আমাদের অফিসারদের কাজ করতেও কোন সমস্যা নেই। কারন অনেক টাকা পাওয়া যায়। অথচ এই শান্তি রক্ষায় আমেরিকানরা যায় না। কারন এতে তাদের যে খরচ সেটি অনেক বেশী। তারা তাদের সেনাদলকে কখনো বিপদের মুখে রাখবে না। তারা তাদের সেনাদের দিয়ে যুদ্ধ করাবে। তাদের রাখবে আফগানিস্তান আর ইরাকে লুটপাট করার জন্য। তাদের সেনাদের জন্য নাইট ভিশন, জিপ্এিস, ড্রোন, নানা রকম আধুনিক প্রযুক্তির সমাহার ঘটাবে। আর আমাদের সেনা অফিসারেরা বাতিল উড়োজাহাজে ঘরে ফিরতে গিয়ে মারা যাবেন। টাকার জন্য আমরা এখন সব মেনে নিতে পারি।

বাংলাদেশে এখনি চাই বোকামীর চাষ। চাই মানুষের আবাদ। এই দারিদ্রে জন্ম নিয়েছিলেন লালন, হাসন, জসিমুদ্দিন, আব্বাসুদ্দিন। এই দরিদ্র দেশে জন্ম নিয়েছিলেন সুভাষ, সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, রফিক, বরকত, সালাম, জব্বার। এই মাটিতে প্রান দিয়েছেন আসাদ, মতিউর, ড. জোহা, মুনীর চৌধুরী, শহিদুল্লাহ কায়সার, আলতাফ মাহমুদ, রুমি কিংবা আজাদ। এই দেশে জেেন্মছেন জগদীশ চন্দ্র, জীবনানন্দ, কুদরত ই খুদা, সত্যেন বসু। আমাদের সারা দেশে এমন অনেক বোকা আর ক্ষুধার্ত মানুষ এখনো জন্মাচ্ছে।

আমরা ১৯৯০ সালে কয়েকজন তরুন স্বপ্ন দেখেছিলাম দেশে সবাই সুন্দর করে কথা বলবে। সহনশীল ও যুক্তিশীল সামজ তৈরী হবে। মাত্র চল্লিশ টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের। এখনো আমরা জানি না কি করে চলে আমাদের এই সংগঠন। কেবল জানি আমরাও বোকা এবং ক্ষুধার্ত। আমাদের ক্ষুধা একটি সমতাভিত্তিক, আইন ও গণতন্ত্রভিত্তিক সমাজ তৈরী করার। আমাদের বোকামীর সীমা নেই। আমরা দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাই। কথা বলতে উদ্বুদ্ধ করি। যুক্তি দিয়ে কথা বলতে শেখাই। আমি এবং আমরা এখনো ভাবি, আজ নেই বলে কালও থাকবে না, এমন কোন কথা নেই। আমাদের পকেট শুন্য কিন্তু আমাদের মাথা পরিপূর্ণ। আমাদের হৃদয় উপচে পড়ে দেশের জন্য ভালোবাসায়। আমরা মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকি কোন সুদিন দেখবো বলে নই। আমরা ভাবি চল্লিশ বছর পরে কেউ স্টিভের মতো এমন একটি ভাষন হয়তো এই দেশেই দেবে।

স্টিভ জবসের এই ভাষনটির পুরোটা না পড়লেও চলে। কেবল শেষ দুটি শব্দ পড়লেই চলে। স্টুয়ার্ট ব্র্যান্ডের মতো একজন স্বল্পপরিচিত সম্পাদক দুটি লাইন লিখে মন জাগিয়ে দিয়ে গেছেন স্টিভ জবসের। পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু একজন স্টিভ জবস যখন তৈরী হয় একটি পত্রিকার বিদায় বেলার দুটি লাইন থেকে, তখন বিপরীত স্রোত নিয়েও আমার মনে স্বপ্ন তৈরী হয়। হয়তো এই পত্রিকায় ছাপা দুটি লাইন থেকে কোন নতুন মানুষ তৈরী হচ্ছে এই দেশে।

আমি এখন কেবল দুটি লাইন খুঁজছি। এমন দুটি লাইন যা লিখে বিদায় নেব। আর চল্লিশ বছর পরে সেই লাইন দুটি কারো বক্তৃতায় উচ্চারিত হবে। সেই মানুষটি হয়তো লিখবেন এই দুটি লাইন কিংবা বলবেন তার বক্তব্যে। হয়তো কেউ কখনো আমার নামটিও বলবে। এইটুকু লোভ আর ক্ষুধার জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন।

বাঙ্গালী জাতির জীবনে এমন দুটি লাইন একবারই এসেছিল। কারো কাছ থেকে ধার করে নয়। কোন সম্পাদকের বন্ধ হয়ে যাওয়া পত্রিকা থেকে নয়।

এই দুটি লাইন ছিল, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম , এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

[* লেখাটি সাপ্তাহিক বিপরীত স্রোতে ছাপা হয়েছিল...*]
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×