সুরা আল মায়েদ ( ৫-৫১)
হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।
(৫-৫৫)
তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ তাঁর রসূল এবং মুমিনবৃন্দ-যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র।
(৫-৫৭)
হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও।
সুরা আনফালে ( ৮--৭৩)
আর যারা কাফের তারা পারস্পরিক সহযোগী, বন্ধু। তোমরা যদি এমন ব্যবস্থা না কর, তবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বিস্তার লাভ করবে এবং দেশময় বড়ই অকল্যাণ হবে।
সুরা আত তাওবাহ ( ৯--২৩ )
হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরকে ভালবাসে। আর তোমাদের যারা তাদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা সীমালংঘনকারী
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এই ধরনের আরো অনেক আয়াত এবং হাদিস আছে , অমুসলিমদের সাথে সম্পর্কের ব্যপারে । এই ধরনে আয়াত হাদিসের পিছনে কি ধরনের প্রজ্ঞা ছিল সেটা বিবেচ্য বিষয়, এই নির্দেশনা গুলি শুধু সেই কালের জন্য নাকি কেয়ামত পর্যন্ত পালনিয় সেটা বিশ্লেষনের জন্য নীচে আলোচনা করছি ।
একটা গাছের জন্য সুর্যের আলো, বাতাস, পানি ইত্যাদি খুবই জরুরী কিন্তু গাছটি যখন চারা থাকে তখন এই আলো, বাতাস, পানি চারা গাছটির মৃর্তুর কারন হতে পারে । চারা গুলো রক্ষার জন্য হ্য় আমরা চারা গাছ গুলোকে ঢেকে রাখি বা ছায়াতে রাখি বা কভার করে রাখি, যখন বড় হয় তখন মুক্ত আলো বাতাসে নিয়ে আসি।
যখন কোন নতুন ধর্ম বা তথ্য যখন সৃষ্ঠি হয় , তখন ওগুলোর অবস্থা ঐ চারা গাছের মতই থাকে । যেমন একটা নতুন ধর্মের আবির্ভাব হোল , তখন কিছু মানুষ তাদের আদি ধর্ম ত্যাগ করে নতুন ধর্মটা গ্রহন করলো । এই ধরনের মানুষের ভিতরে তার আদি ধর্মের প্রভাব প্রোকটভাবে থেকে যায় এবং এর প্রভাব মুক্ত হতে কয়েক জেনারেশন লেগে যায় । এই সমস্যাটা ইসলামের প্রাথমিক যুগে দেখা গিয়েছিল যাদের পূর্ব ধর্ম পৈতলিক বা অন্য ধর্ম ছিল । তখন দেখা যেত এই সব সদ্য গ্রহনকরা মুসলমানরা নামাজ পড়ার সময়ে বোগলে ছোট ছোট পুতুল বা মুর্তি নিয়ে দাড়াত , এটাকে বন্ধ করার জন্য নামাজের নিয়তের পরে দুই হাত কানের কাছে নিয়ে আল্লাহু আকবর বলার নিয়ম নামাজে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এতে যাদের বোগলে পুতুল মুর্তি থাকতো সেগুলো মাটিতে পড়ে যেত । এই ভাবে অনেক পূর্ব ধর্মের কালচার সদ্য ইসলাম গ্রহন করা মানুষদের ভিতরে দেখা যেত এবং এটা যে কোন ব্যক্তি যিনি ধর্ম পরিবর্তন করেছেন তাদের মধ্যে দেখা যায়।
চারা গাছকে বেড়ে ওঠার জন্য সরাসরি আলোবাতাস থেকে আড়াল করে রাখা হয় ঠিক তেমনি সদ্য পুর্ব ধর্ম ত্যাগকারি মানুষদের কে সামাজিক অন্য ধর্মের মানুষের সাথে মেলামেশরা ব্যপারে প্রাচীর তৈরী করা আবশ্যক হয়ে ওঠে । আমরা অন্য ধর্ম গুলো যখন বিকশিত হচ্ছিল দেখি ,তখন তাদের ধর্ম গুরু সমস্ত অনুসারীদের নিয়ে বহু দুরে কোন বন বা মুক্ত এলাকাতে চলে গিয়ে আলাদা একটা জনপদ গড়ে তুলতো , এর কারন তারা যেন অন্য ধর্মের মানুষের সংপর্শে আসতে না পারে যাতে তারা তাদের পূর্ব ধর্মের প্রভাব হতে মুক্ত হতে পারে । এই ভাবে বহু জেনারেশন পার হওয়ার পর তারা অন্য সমাজের মানুষের সাথে মিলা মেশার সুযোগ পেত, যখন তাদের নতুন ধর্মের আচার কানুন নতুন জেনারেশনের মধ্যে এমন দৃঢ় ভাবে গেথে যায় , সেখানে অন্য বিশ্বাষ সেটাকে নড়াতে পাড়ে না ।
ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে ও মুসলমানদের নিয়ে একটা আলাদা জনপদ গড়ার প্রয়োজন পড়ে কিন্তু মরু ভুমির ভিতর কোন বনান্চল বা আইসোলেটেড এলাকা পাওয়া সম্ভব ছিল না যেখানে থেকে নতুন জনপদ গড়ে তুলা যাবে। তখন বাধ্য হয়ে মদিনার মত জনবহুল এলাকাতে মুসলমানদে আস্তানা গড়া হয় । বিভিন্ন ধর্মের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য কিছু কোরানের আয়াত এবং হাদিস আমরা দেখতে পাই যে গুলো মুলত নতুন মুসলমানরা যাতে অন্য কালচারের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারে । যেহেতু মুসলমানরা বনান্চলের বদলে জনপদের অবস্থান করছিল, তাই তাদের টিকে থাকার জন্য সেনা বাহিণীর ন্যয় জনপদ গড়ে তুলতে হয় । বনান্চলে থাকলে নিরাপত্তার জন্য এই ধরনের বাহিণীর হয়ত প্রয়োজন হয় না । যেহেতু মুসলমানের সংখ্যা ছিল ৪/৫ শত তাই তাদের সবাই ছিল সেই জিহাদি সেনাবাহিণীর সদস্য । এই সময়ে মুসলমানদের কোন সিভিলিয়ন সোসাইটি গড়ে ওঠেনি , গোটা মুসলমান সমাজটা ছিল সামরিক সমাজ। সেনা বাহিণীকে ক্যান্টনমেন্টের ভিতর যেভাবে সমগ্র সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয় , ঠিক তেমনি , মক্কার ঐ সব সদ্য ইসলাম ধর্ম গ্রহনকারি মুসলমানদের আসোলেটেড করে রাখা হয় ।
এই সমস্ত আয়াত হাদিস গুলো মূলত ঐ সময়ের মুসলমানদের জন্য প্রয়োজন ছিল যাতে তারা ভিন্ন সত্তা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে, যাতে অন্য সমাজের প্রভাব তাদের উপরে না পড়ে । চারা গাছকে যেমন আচ্ছাদন দিয়ে রেখে বাড়ার সুযোগ দেওয়া হয় ঠিক ইসলাম নামক চারা গাছকে প্রাথমিক যুগে এই সমস্ত কোরানের আয়াত এবং হাদিস গুলো দিয়ে বিচ্ছিন্ন রাখা হয় । যখন চারা গাছ বেড়ে ওঠে তখন যেমন আচ্ছাদন সরিয়ে মুক্ত আলো বাতাসে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া হয় ।
যখন একই ভাবে ইসলাম নাম নতুন ধর্ম যখন বেড়ে ওঠে এবং কয়েক জেনারেশন , শতক পার হয়ে শক্ত জনপদে পরিনত হয় , তখন ঐ কোরানের আয়াত এবং হাদিস গুলোর কার্যকারিতা থাকে না । প্রাথমিক যুগে সমগ্র মুসলমান সমাজ ছিল সামরিক সমাজ কিন্তু কয়েক দশক পড়ে মুসলমানদের সিভিল সমাজ গড়ে ওঠে ।
কোরান নিজেই বলেছে কোরানের কতক আয়াত রুপক অর্থে , কতক আয়াত তাৎখনিক ঘটনার পরিপেক্ষিতে এবং কতক গুলো আয়াত সর্বযুগের জন্য ।
অন্য ধর্মের বা কালচারে মানুষের সাথে মিলামেশার নিশেধাজ্ঞার আয়াত হাদিস গুলো সর্বযুগিয় নির্দেশ নহে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:০৯