somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংস্কারের ৩ টি সুপারিশ

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনুস গত ২৫শে আগস্ট জাতীর উদ্দেশ্যে ভাষণে গুণগত পরিবর্তনের জন্য নাগরিক সুপারিশের ডাক দিয়েছেন। আমার মতে গুণগত পরিবর্তনের প্রথম ধাপটি হতে পারে বর্তমান সংবিধানকে স্থগিত করে একটি সাংবিধানিক নাগরিক এসেম্বলি সত্যাপনের মাধ্যমে। যেই এসেম্বলি আগামী ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে একটি নতুন সংবিধানের রূপরেখা তুলে ধরবে এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে নতুন সংবিধানের চূড়ান্ত কাঠামো।

এই আলোচনার খোরাক হিসাবে ভবিষ্যৎ সংবিধান রচয়িতাদের উদ্দেশ্যে ৩টি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা সামনে রাখতে চাইঃ

প্রথমত, নতুন সংবিধানে বাংলাদেশে প্রাদেশিক শাসন ব্যাবস্থার সুপারিশ থাকতে হবে। বাংলাদেশের মতো একটি ‘বহুল জনসংখ্যার বৃহৎ রাষ্ট্রে’র জন্য প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশের এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা স্বৈরতন্ত্রের হাতকে প্রসারিত করেছে এবং সুষম উন্নয়নের আকাংখাকে দুরাশায় পরিণত করেছে। তাছাড়া এব্যাবস্থা অঞ্চলভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর বিকশিত হওয়ার সুযোগও ধ্বংস করেছে। প্রাদেশিক ব্যাবস্থা চালু হলে অঞ্চলভিত্তিক দল ও অঞ্চলভিত্তিক নেতার আবির্ভাব হবে, যেটি প্যান-বাংলাদেশভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সর্বগ্রাসী রাজনীতি প্রতিহত করবে। উল্লেখ্য, আশেপাশের সকল প্রতিবেশী রাষ্ট্রে প্রাদেশিক ব্যাবস্থা বিদ্যমান, এমনকি নেপালের মতো একটি দেশেও ২০১৫ সালে প্রাদেশিক ব্যবস্থার পক্ষে সংবিধান রচনা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, জাতীয় সংসদকে ২টি কক্ষে বিভক্ত করতে হবে। উচ্চ কক্ষের নাম হবে আইন সভা যার সদস্য সংখ্যা হবে ৫০টি এবং নিম্ন কক্ষের নাম হবে সাধারণ সভা যার সদস্য সংখ্যা হবে ৩০০টি। জনসংখ্যার অনুপাতে প্রদেশগুলো থেকে জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষের আসন বন্টিত হবে। উচ্চকক্ষের ৫০টি আসন সমান অনুপাতে প্রদেশগুলোর মধ্য বন্টিত থাকবে। বর্তমানে বিদ্যমান ৫০টি নারী সংরক্ষিত আসন বিলুপ্ত হবে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকৃত প্রতিটি রাজনৈতিক দলগুলোকে তাঁদের অংশগ্রহণকৃত আসনগুলোর নুন্যতম ১০ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন দিতে হবে। এছাড়া, সংখালঘু সম্প্রদায়ের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় জাতীয় সংসদের নিম্ন কক্ষের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারি দলগুলি তাঁদের মনোনয়নকৃত প্রার্থীদের নুন্যতম ১০ শতাংশ প্রার্থী সংখালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ রাখতে বাধ্য থাকবে।

উক্ত ২টি ব্যাবস্থার মাধ্যমে জাতীয় সংসদে আরও যোগ্য এবং মেধাবী রাজনীতিবিদের আগমন ঘটবে এবং সংসদ অনেক বেশি অংশগ্রহণমূলক হবে। বিশেষ করে উচ্চ কক্ষের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতার বিধি বিধান থাকতে হবে। কারণ এই কক্ষটি আইন প্রণয়নের সাথে সরাসরি জড়িত থাকবে। এছাড়া মহিলা এবং সংখ্যালঘুদের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক সবগুলো রাজনৈতিক দলগুলো এই নিয়ম মানতে বাধ্য থাকিবে। ফলে, সাংবিধানিকভাবে নারী এবং সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব কিছুটা হলেও নিশ্চিত হবে। কোন মৌলবাদী বা একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় আদর্শের দলের পক্ষে এই নিয়মের ব্যত্যয় করা সম্ভব হবে না, এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের স্বার্থে তাঁদের মনোনীত প্রার্থীর ১০ শতাংশ করে ঐ ২টি পক্ষের জন্য বরাদ্দ রাখতে তারা বাধ্য হবে।

সর্বশেষ প্রস্তাবনাটি হল, একজন ব্যাক্তি পরপর ২ বারের বেশি প্রধানমন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন না করতে পারার বিধান। একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে রাষ্ট্রপতিসহ সাংবিধানিক দ্বায়িত্ব পালনকৃত প্রতিটি ব্যাক্তির ক্ষেত্রে। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাবলে সংসদ নেত্রী হওয়ার যে বিধানটি আছে, সেটিও বিলুপ্ত করতে হবে।বিলুপ্ত করতে হবে ৭০ অনুচ্ছেদের মতো অগণতান্ত্রিক ধারাগুলি। এছাড়া রাজনৈতিক দলের নির্বাচন করার বৈধতা পেতে হলে সেই দলের সংবিধান, জাতীয় সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তার ভেটিং করতে হবে মহামান্য হাইকোর্টের দ্বারা।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:০৯
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×