somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জর্জ ওয়াশিংটনের ঈস্বর হয়ে উঠা

০১ লা জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমেরিকার ইতিহাসে ফ্রিম্যাসনদের ভূমিকার কথা অস্বীকার করা যাবে না কখনও। আমেরিকা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ফ্রীম্যাসনদের কল্যানে। আমেরিকা প্রতিষ্টায় এই সিক্রেট সোসাইটির ভূমিকা অতুলনীয়। আজকের যেই আমেরিকার স্বপ্ন দেখেছিল তারা ১৭০০ সালে। যেখানে কোন ধর্মের প্রাধ্যান্য থাকবে না, থাকবে শুধু মানবতার জয়গান। আজকের আমেরিকা সেই দর্শন থেকে সরে আসলেও আমেরিকার শুরুটা কিন্তু এই রকম ছিল না। আমেরিকার পত্তনটা হয়েছিল জর্জ ওয়াশিংটনের হাত ধরে। এবং তিনি ছিলেন একজন সব্বোর্চ্চ স্তরের ডিগ্রি ধারী ফ্রীম্যাসন।
মুক্তচিন্তার অধিকারী ফ্রীম্যাসনরা ওয়াশিংটন ডি.সিকে রাজধানী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করলে তার পরতে পরতে রেখে গিয়েছে ম্যাসনিক ছাপ।
ম্যাসনদের একটা প্রচলিত বিশ্বাস আছে যে, প্রতিটি মানুষই ঈস্বর হয়ে উঠতে পারে। সেই ধারনা থেকে ওয়াশিংটন ডি.সি ইউনাইটেড স্টেট এর ক্যাপিটাল বিল্ডিংএর ডোমে আকাঁ দ্য এ্যাপিথোসিস অব ওয়াশিংটন, বাংলায় যার অর্থ করলে দ্বারায় ওয়াশিংটনের ঈস্বর হয়ে উঠা।
১৮৫৬ সালে ইতালীয় শিল্পী কনস্টেন্টিন র্বামুডা এই ফ্রেসকো পেইন্টিং করেন। ৪৬৬৪ স্কয়ার ফিট ব্যাসার্ধ নিয়ে আকাঁ এই ফ্রেসকো ফ্লোর থেকে ১৮০ ফিট উচু। ১৯৬৩ সালে এই ডোম তৈরী হবার পর র্বামুডা ফ্রেসকো পেইন্টিং শুরু করেন এবং গ্রহযুদ্ধ শেষ হবার ১১ মাস পর এর কাজ শেষ করেন। তাকে এই কাজের জন্য ৪০,০০০ মার্কিন ডলার দেওয়া হয়, বর্তমানে যার বাজার মূল্য ৬ লক্ষ মার্কিন ডলার।
ইতালীয় চিত্র শিল্পী তার এই কাজের পূর্বে ভ্যাটিকানের পোপ ১৬কম জর্জের অধীনে ৩ বছর কাজ করেছিলেন। তিনি ১৮৫২ সালে আমেরিকার নাগরিকত্ব নেন। এবং জীবনের শেষ ২৫ বছর তিনি যুক্তরাস্ট্রের রাজধানীর বিভিন্ন কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখেন।
চিত্র কর্মে ম্যাসনিক সিম্বল
জর্জ ওয়াশিংটনের স্বর্গে পৌছে নিজে ঈস্বরের রূপান্তরিত হওয়াকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই ফ্রেসকো। ম্যাসনরা ছিল ক্লাসিকাল মিথের অনুরাগী। আর তাই এই পেইন্টিং ভরে উঠেছে বিভিন্ন রোমান মিথের সিম্বলে। বলা ভাল ওয়াশিংটন ডি.সি গড়ে উঠেছে রোম শহরের আদলে।
এপোথিসিস অব ওয়াশিংটন ফ্রেসকোতে বেগুনী পোশাক পরিহিত ওয়াশিংটনকে দেখা যাচ্ছে। তিনি ১৩ জন কিশোরী ও রোমান দেবতাদের সাথে নিয়ে আছেন। এখানে বেগুনী রংটাকে দেওয়া হয়েছে রাজকীয় মর্যাদা। এবং তার পায়ের কাছ দিয়ে চলে গেছে একটি রংধনু। তাকে উচু করে ধরেছে বিজয়ীর দেবী এবং তার বাম পাশে আছে স্বাধীনতার দেবী।
এই দুই দেবী ছাড়াও তাকে ঘিরে রয়েছে ১৩ জন কুমারী, যা ছিল শুদ্ধতার প্রতীক। এই ছাড়া এই ১৩ জন কুমারী একই সাথে আমেরিকার ১৩ টি উপনিবেশের প্রতীকও। কিছু কুমারী মেয়ে ওয়াশিংটনের দিকে মুখ ফিরিয়ে রয়েছে। আসলে ফ্রেসকোটা আঁকা হয়েছিল আমেরিকার গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে। পিছনে তাকানো কুমারীরা আসলে ইউনিয়ন বিরোধী রাজ্য গুলো বোঝানো হয়েছে।
এছাড়া ওয়াশিংটনের দুই পাশে দুই দেবী অবস্থান করছে। এবং ফ্রোসকোটা গোলাকার হওয়ায় আরো কিছু দেব-দেবী চলে আসেছে এই ফ্রোসকোতে। রোমানদের প্রধান ছয় দেবতা এখানে স্থান পেয়েছে।


যুদ্ধঃ রোমান যুদ্ধ দেবী এথিনি আমেরিকার প্রধান যুদ্ধ পরামর্শক হিসাবে এই চিত্রকর্মে আর্বীভূত হয়েছেন। তিনি এই চিত্রকর্মে স্বাধীনতা বা কলম্বিয়া নামেও পরিচিত। চিত্রকর্মে তিনি আমেরিকানদের যুদ্ধের প্রশিক্ষন দিচ্ছেন। স্বাধীনতার তরবারী, আমেরিকান প্রতিকযুক্ত বর্ম ও ঈগল নিয়ে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমেরিকানদের।


বিঞ্জানঃ রোমান ঞ্জানের দেবী মিনার্ভা এখানে আর্বিভূত হয়েছেন শিক্ষক হিসাবে। বিখ্যাত বিঞ্জানী ও আইন প্রনেতারা তার কাছ থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন।


সমুদ্রঃ চারদিকে সমুদ্র বেষ্টিত হবার কারনে আমেরিকানরা ঠিকই বুঝেছিল সমুদ্রের গুরুত্ব। তাই সমুদ্রে নিজেদের আরো দক্ষ করে তোলে তারা। তৈরী করতে থাকে বেশি বেশী বানিজ্যপোত ও রনপোত। তাই সমুদ্র দেবতা নেপচুনও বাদ জান নি এখান থেকে।


বানিজ্যঃ ব্যবসা ছাড়া কোন জাতি উন্নয়ন করতে পারে না। আর তাই রোমান বানিজ্য দেবতাও বাদ জান নি এখানে। মার্কারী নিজে বানিজ্য সম্পর্কে শিক্ষা দিচ্ছেন আমেরিকানদের। এবং তার হাতে থাকা মুদ্রার থলি তিনি বাড়িয়ে ধরেছেন আমেরিকানদের উদ্দেশ্য।


যন্ত্র উন্নয়নঃ রোমান শিল্প দেবতা ভলকান নিজে যন্ত্র উন্নয়নের তদারকি করছেন। তার পায়ের নিচে থাকা কামান আমেরিকানদের যন্ত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির কথাই উল্রেখ করছে। তার পিছনে স্টীম ইঞ্জিন যন্ত্র ক্ষেত্রে তৎকালীন এগিয়ে যাওয়া আমেরিকানদেরই প্রতিচ্ছবি।


কৃষিঃ আমেরিকা পৃথীবির প্রধান খাদ্য দ্রব্য উৎপন্ন কারী দেশ। তাই উর্বরতার দেবী সিরিছও আছেন এই অবদানে। তার পায়ের নিছে থাকা গম ও ভুট্টা আমেরিকানদের উন্নত কৃষি ব্যবস্থার কথাই বলে।
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×