পবিত্র মাহে রমযানের একেকটি দিন যাচ্ছে আর একটু একটু করে পবিত্র ঈদুল ফিতরের চাঁদ একটু একটু করে উঁকি মেরে পশ্চিম আকাশে ঈদের ডাঁক দিয়ে যাচ্ছে । বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগুরু দেশ । তাই বাস্তবিক অর্থে এদেশের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে আজ ঈদের আনন্দ-উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে । আরও সংক্ষেপ করে বললে প্রাপ্ত বয়সীদের তুলনায় নাবালক শিশুদের ঈদের প্রস্তুতী চলছে তুমল গতিতে । ফলশ্রুতিতে দেশের প্রধান ঈদ মার্কেট-শপিং কমপ্লেক্স গুলো পা ফেলার মতো অবস্থা নাই । এক মিনিট চোখ বুঝে বসুন্ধরা, নিউমার্কেট বা যাদের এসব মার্কেটে যাওয়ার সুযোগ নেই অর্থ্যাৎ স্ব স্ব এলাকার স্থানীয় কিংবা ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানগুলোর উপর নির্ভরশীল সেসব মার্কেটের কথা চিন্তা করুন । কি দেখছেন ??
দোকানীরা অনেক পরিমাণে ব্যস্ত ?? নাকি শিশুদের পোষাক ক্রয়ের তুমুল প্রতিযোগীতা । কি মনে হচ্ছে শিশুরা যেন নতুন পোষাক ছাড়া ঈদ কল্পনা করতে পারেনা ??
উপরোক্ত দৃশ্য বলবে বাংলাদেশেই সম্ভবত শিশুরা তাদের শৈশবকাল অনেক আনন্দে কাটিয়ে দেয় । যদি আপনি আমি উক্ত ধারণার সাথে একমত পোষণ করি তাহলে বলব এটা আমাদের ভূল ধারণা ।
হয়ত কথাটা খুব কঠিন হয়ে গেল । আসুন পরিস্কার করে বলি । ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর একটি লাল-সবুজের পতাকা আর সাথে করে ৫৬হাজার বর্গমাইলের ভূমি নিয়ে যে দেশ বিশ্ব মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করেছিল আজ হাটি হাটি পা করে প্রায় ৪৫ বছর পার করে ফেলেছে । নিরেট বছর হিসেবে এই সময় নেহাত কম নয় । এই সময়ে আমরা কতটুকু উন্নতি করতে পেরেছি এটা বির্তকের একটি বিষয় হতে পারে । তবে আমি বির্তকে যেতে ইচ্ছুক নই । কেননা বির্তকে যুক্তি দিয়ে জয়ী হওয়া সম্ভব কিন্তু এক্ষেত্রে সত্য উন্মোচিত হয়না বলে জানি ।
অগণিত শহীদদের আত্মত্যাগ ও অসংখ্য মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা যে দেশকে স্বাধীন করেছি । যাকে নিয়ে আমরা বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে অসংখ্য মিছিল-মিটিং, সভা-সেমিনারে বক্তিতা দিয়ে গলা ফাটিয়ে ফেলি সেই দেশকে কতটুকু এগিয়ে নিতে পেরেছি আজ তা একটি বড় প্রশ্ন । যে স্বাধীনতা আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছিল ধণি-গরীবের একটি সমানতারাল বাংলাদেশের, সেই বাংলাদেশ আজ কোথায় ???
আজ বাংলাদেশের পথে প্রান্তরে হাজারও মানুষ কে ভাসমান হিসেবে দেখতে পাই । যাদের মাথা গুজাবার একটু ঠাই নেই । দিনশেষে যারা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়ে দেয় । তাদের কি নূন্যতম নাগরিক অধিকার নাই ?? নাকি তারা বাংলাদেশী নয় ??? তারাও তো এদেশ মাটি মায়ের সন্তান কিন্তু কি কারণে তারা আজ অবহেলিত ??? কোন উত্তর হয়ত আপনি দাড়া করাবেন যুক্তি দিয়ে, আমি বলব যুক্তি দিয়ে নয় মানবতা দিয়ে তাদের কথা আপনি একটু ভাবেন, হয়ত আপনার শরীর শিউরে উঠবে, অজান্তে নয়ন হতে বেড়িয়ে আসবে এক ফোটাঁ নির্বাক অশ্রু । এসব খোলা আকাশের নিচে বসবাস কারী উদভাস্তু লোকদের পরবর্তী প্রজন্মের অবস্থা আরও ভয়াবহ । আমি তাদের কথা বলার চেষ্টা করছি ।
চলুন তাহলে ঘুড়ে আসি কমলাপুর রেলওয়ে থেকে..........................
এসব পরিবারের অধিকাংশ সন্তান বড় হয় রাস্তার ফুটপাতে কিংবা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের মতো সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে!!!! তারা পায় না তাদের নূন্যতম মৌলিক অধিকার টুকু । যাদের শৈশব কাটে মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করে । যারা একবেলা ঠিক মতো খেতে পারেনা । যারা অন্যের ফেলা দেওয়া জামা কাপড় পরে অভ্যস্ত । বিদ্যালয়ের দেওয়ালের পাশে যারা কোন দিন যেতে পারেনা । তাদের কাছে কোন উৎসব আনন্দ হয়ে নয় কষ্টের বরফ হয়ে দেখা দেয় ।
তাদের কাছে ঈদ কিংবা পূজা অথবা অন্য কোন উৎসব আনন্দের উপলক্ষ হয়ে নয় বরং দেখা দেয় বিষন্নতার প্রতিরূপ হয়ে । তারা যখন দেখে তাদের পাশ দিয়ে কোন বাবা বা কোন মা তাদের সন্তান কে অতি আদর করে হাত ধরে নিয়ে যায় হয়ত এটা দেখে তাদের অন্তর ফেটেঁ যায়, চোখ বেয়ে নেমে আসে নিরব কান্না ।তাই তারা কোন ঈদের জন্যে তারা অপেক্ষা করেনে বরং তারা যদি কোন তিন বেলা পেট ভরে খেতে পারে সেদিনই হয় তাদের কাছে ঈদ কিংবা নববর্ষ ।
বছর ঘুরে আমাদের মাঝে ফিরে আসে ঈদ । আমরা শুধু আনন্দ কে সাদরে গ্রহণ করি । একটু ত্যাগ করতে চাইনা । তাই আজ কবি জসিমউদ্দীনের ভাষায় বলতে চাই ............................
সবার সুখে হাসব আমি
কাদঁব সবার দুঃখে
নিজের খাবার বিলিয়ে দিব
অনাহারীর মুখে
আমরা চাই ঈদ কিংবা কোন আনন্দ উৎসব কোন বিশেষ শ্রেণীর জন্য শুধুমাত্র না হয়ে সামগ্রিক সকলের উৎসবে পরিণত হউক । এটাই হউক আজকের প্রত্যাশা ।
।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৬ রাত ২:৫৩