somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাসমান লাশ

১৩ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হৈচৈ চেচামেচিতে সামসু মাঝির ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে ঘুমায় নৌকায়। নৌকাটা বেশ জোরে জোরে দুলছে। সে চোখ খুলে ছইয়ের দিকে তাকিয়ে রইল। ছইয়ের ফাঁক-ফোকর দিয়ে ভোরের আলো আসছে। এত হৈচৈ কিসের? কোন যাত্রাপার্টি বা বেদেদের নৌকা এলো না তো! এরা এলে খালের পাড়ে ভীড় লেগে থাকে। লোকজন উঁকি-ঝুকি দিয়ে তাদের কার্যকলাপ দেখার চেষ্টা করে। সামসু মিয়া উঠে বসল। পাশে তার স্ত্রী এবং ছেলে বেঁহুসের মতো ঘুমাচ্ছে। সে নিঃশব্দে ছইয়ের বাইরে এলো এবং চমকে উঠল। গ্রামবাসী খালের পাড়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। খালের মধ্যে কার যেন একটা লাশ ভাসছে। তরতাজা লাশ। আগ্রহী দু’একজন মাঝি কোমড় পানিতে নেমে লাশটা টেনে উঠানোর চেষ্টা করছে। করিম ব্যাপারী উঁচু গলায় ধমকে উঠলেন।
ঐ মিয়া লাশ উঠাও কেন? আগে পুলিশরে খবর দাও। কার না কার লাশ? পরে ঝামেলায় পড়বা।
যারা লাশ উঠাতে যাচ্ছিল, তারা থমকে দাড়াল। কিছুক্ষন ইতস্তত করে পাড়ে উঠে এলো। গ্রামবাসী হুমড়ি খেয়ে লাশ দেখছে। বোঝার চেষ্টা করছে-এটা তাদের পরিচিত কারো লাশ কিনা। যেই দেখছে, না তাদের পরিচিত কেউ না। তারা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলছে এবং নানা মন্তব্য করছে। কিন্তু পুলিশকে খবর দিতে কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
সামসু মিয়া ঘুম থেকে উঠে নৌকায় বসেই হাত মুখ ধোয়। আজ হাতমুখ ধুতে গা ঘিন ঘিন করছে। লাশ পানিতে ভাসছে। সেই পানিতে হাতমুখ ধোয়া! সে লাফ দিয়ে পাড়ে নামল।
মাঝিরা ভীড় করে দাড়িয়ে আছে। করিম ব্যাপারী মাঝিদের দিকে তাকিয়ে ভৎর্সনার স্বরে বলছেন,
দাড়ায় দাড়ায় তামাশা দেখলে হইব? লাশ পঁচলে সমস্যা হইব তোমাদেরই। নৌকায় তোমাদের সংসার। দূর্গন্ধে পানি ব্যবহার করতে পারবা?
সামসু মিয়া চিন্তিত মুখে লাশের দিকে তাকিয়ে রইল। এই খালের পানিই এখন তাদের ভরসা। গোসল থেকে শুরু করে রান্না-বান্না সবই করতে হয় এই পানি দিয়ে। দূরন্ত পদ্মা তার ভিটেমাটি খেয়ে ফেলেছে। সে উঠে এসেছে নৌকায়। সাথে স্ত্রী-ছেলে, হাড়িপাতিল। শুধু সে একা না। তার মতো শত শত মানুষ পদ্মার শিকার। তারা সংসার পেতেছে নৌকায় ।
হারুন মাঝি চিন্তিত মুখে বলল, ব্যাপারী সাব কি করতাম?
সোজা থানায় যাও। পুলিশ এসে লাশ উঠাক।
খালের পাড়ের বাজারে করিম ব্যাপারীর বিশাল দোকান। পাড়ের লোকজন করিম ব্যাপারীকে মানে। আর ব্যাপারী সাহেব তো ঠিক কথাই বলেছেন। পানি দূর্গন্ধ হলে তারা বিপদে পড়বে।
সামসু মিয়া থমথমে মুখে বলল, চল থানায় যাই।
থানার অসি সাহেবকে খালের পাড়ে নিয়ে আসতে আসতে প্রায় দু’ঘন্টা পার হয়ে গেল। ততক্ষনে জোয়ার শুরু হয়ে গেছে। জোয়ারের টানে লাশ ইছাপুর গ্রাম থেকে আরও উত্তরের দিকে সরে গেছে।
ওসি সাহেব তিন চারজন কনস্টেবল নিয়ে খালের পাড়ে দাড়িয়ে কিছুক্ষন লাশের অবস্থান দেখলেন। তারপর ঘুরে দাড়িয়ে বললেন, এই লাশ আমরা তুলতে পারব না। এটা এখন আমাদের এখতিয়ারে নাই। পাশের জৈনপুর গ্রামের সীমানায় চলে গেছে। যা করার ওখানকার থানার অফিসারদেরকে করতে হবে।
তারা একটা সিএনজি নিয়ে এসেছিলেন। চারদিকে ভটভট শব্দ তুলে মুহূর্তে চলে গেলেন। লাশটা জোয়ারের টানে ভাসতে ভাসতে আরো দিকে যাচ্ছে।
সামসু মিয়া হাঁটতে হাঁটতে জৈনপুর গ্রামের দিকে চলল। তার সাথে অন্যান্য মাঝিরা। জৈনপুর থানায় খবর দিয়ে তারা ওসি সাহেবকে নিয়ে এলেন।
ওসি সাহেব ভ্রু কুঁচকে বললেন, আমাদের খামোকা খবর দিয়েছেন। এই লাশ এখন আমাদের আওতায় নাই। আপনারা মুরাদপুর থানায় খবর দেন।
সামসু মিয়া চুপ করে দাড়িয়ে রইল। তার রাগ লাগছে। হাটতে হাটতে এতদুর এসেছে। এখানে এসেও একই কথা শোনে! বেলা অনেক হয়েছে। ক্ষিধেয় তার পেট চো চো করছে। সে একদলা থু থু ফেলে বলল, শালা দিনডাই মাটি।
অন্যান্য দিন এইসময় এক থাল পান্তা খেয়ে সে বেড়িয়ে পড়ে। তার আরেকটা নৌকা আছে। যাত্রী নিয়ে একগ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ছুটে।
হারুন মাঝি বলল, সামসু ভাই অখন কি করতাম। ফিরা যাইবেন?
না। তুই এখানে দাড়া। লাশটার দিকে খেয়াল রাখ। মজিদ, খালেক তোরা আয় আমার সাথে। মুরাদপুর থানায় যাই।
তারা সবাই মুরাদপুর থানায় এলো। মুরাদপুর থানার ওসি সব শুনে ঝিম মেরে বসে রইলেন।
সামসু মিয়া বিনীত ভঙ্গিতে বলল, স্যার লাশটা এখন আপনাগো থানার আওতায় আছে। আপনারা যদি তাড়াতাড়ি একটু উঠানোর ব্যবস্থা করতেন। লাশ পঁচলে পুরা খালের পানি দুষিত হইব।
ওসি সাহেব অনিচ্ছা স্বত্বেও তার বিশাল ভুড়ি নিয়ে উঠে দাড়ালেন। তারা রওনা হবেন, এমন সময় হারুন মাঝি দৌড়ে এলো।
হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, সামসু ভাই লাশটা ভাটার টানে আবার আমাগো গ্রামের দিকে ফিরা যাইতাছে।
ওসি সাহেব ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়লেন। বললেন, আমাদের এখন করার কিছু নেই।
সামসু মিয়া বলল, স্যার আপনারা ইচ্ছা করলে লাশটা থামাইয়া উঠায় ফেলতে পারেন।
ওসি সাহেব ধমকের সুরে বললেন, ঐ মিয়া তুমি পুলিশের কাজকর্ম কিছু বোঝ? পুুলিশের কোড অব কন্ডাক্ট আছে। বিভিন্ন ধারা উপধারা আছে। ৫৫ ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে-এক অঞ্চলের থানার কাজকর্মে আরেক অঞ্চলের থানা হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। তোমার সাথে এইসব আলাপ করে কী লাভ?
সামসু মিয়া থানা থেকে বের হয়ে এলো। কেন জানি তার মুখে কিছুক্ষন পরপর থু থু জমছে। সে শব্দ করে থু থু ফেলল এবং অস্ফুট স্বরে বলল, শালা!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৯:৪২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×