somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বরং ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে আমরা সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ।স্বাধীন বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। ৫৬ হাজার বর্গমাইল এদেশের আকাশে ৪২ বছর পূর্বের এদিনটিতে প্রথম উঠেছিলো এক স্বাধীন, সমুজ্জ্বল, অত্যুজ্জ্বল অন্যরকম সূর্য। ১৯৭১-এর এদিনে যে সূর্যের উদয় হয়েছিলো তা ছিলো বাঙালি মুসলমানদের বিজয়ের সূর্য। এদিন তাই এ ভূ-খ-ের বাঙালি মুসলিম জনগোষ্ঠীর হাজার বছরের ইতিহাসের মহান গৌরবময় দিন।
পঁচিশে মার্চ কালো রাত্রিতে শুরু হওয়া পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যাযজ্ঞ আর নৃশংসতার দীর্ঘ ৯টি মাসে রক্তস্নাত পথে পাড়ি দিয়ে ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর চার পাঁচ লাখ নির্যাতিতা মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিলো অমূল্য এই স্বাধীনতা।
১৯৭১ সালের এই দিনেই আজকের পৌষেরই এক পড়ন্ত বিকেলে স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিলো বীর বাঙালি মুসলিমরা। ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রস্তুত হয়েছিলো মঞ্চ। পাশের ঢাকা ক্লাব থেকে তাৎক্ষণিকভাবে আনা হয়েছিলো একটি টেবিল ও দুটি চেয়ার। পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক জোন-বি এবং ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজির নেতৃত্বে ৯১ হাজার ৫৪৯ জন পাকিস্তানি সেনা মিত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল জ্যাকবের তৈরি করা আত্মসমর্পণ দলীলে বিকেল চারটা ৩১ মিনিটে সই করে।
১৯৭১ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি বাহিনী দালিলিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এই দিন থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অনেক রক্ত, অনেক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
তাই আনন্দ উৎসব এবং শোক-শ্রদ্ধার এক অভূতপূর্ব সম্মিলনে দেশের সর্বত্রই আজ পালিত হবে ৪২তম বিজয় দিবস অর্থাৎ মুক্তযুদ্ধে বিজয়ের ৪২তম বার্ষিকী। তবে আনন্দঘন এই দিনেও শহীদ পরিবারের সদস্যদের বুকের ভেতর থামেনি রক্তক্ষরণ। স্বজন হত্যার বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে আজ তারা অনেকটাই ক্লান্ত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি। গণহত্যার জন্য ক্ষমা চায়নি পাকিস্তান। বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন দেশে এখনো অবহেলিত, অপমানিত। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীরা প্রকাশ্যে রাজনীতি করছে, মন্ত্রী হয়েছে। গেল নির্বাচনেও মনোনয়ন পেয়েছিলো ২৫ যুদ্ধাপরাধী।
অপরদিকে বিজয়ের ৪২ বছরে এসেও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ হয়নি। এ নিয়ে রয়েছে নানা মতভেদ। কারণ দেশে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে প্রকাশ করা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন তালিকা। এতে অমুক্তিযোদ্ধাদের সনাক্ত করা যেমন কঠিন হয়ে পড়েছে, তেমনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নির্ধারণেও রয়েছে অস্পষ্টতা। খোদ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি এম তাজুল ইসলামের অভিযোগ, দেশের প্রায় সাড়ে ৫২ হাজার বাংলাদেশী নাগরিকের হাতে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট রয়েছে।
তবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মতে এ সংখ্যা আরো বেশি। সংস্থাটির মতে, সারা দেশে অমুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় ৬২ হাজার।
অভিযোগ রয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কিছু অসৎ কর্মচারী আর একশ্রেণীর দালালের কারণে হয়রানি ও অবহেলার শিকার হচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। দ্রুত কাজ করে দেয়ার কথা বলে বখশিশের নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। যাঁরা দিতে পারছেন না, তাদের কাজ আর হচ্ছে না। ঘুরতে হচ্ছে মাসের পর মাস।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিলো। চার দশকেরও অধিক সময় পাড়ি দেয়ার পরও এ স্বপ্ন কতটা পূরণ হয়েছে- আজ সেই হিসাব নেয়ার দিন।
স্মর্তব্য, ৪২ বছর একটি রাষ্ট্রের পরিপূর্ণতার বছর। বাংলাদেশকে এখন কোনোক্রমেই আর শিশু রাষ্ট্র বলা যায় না।
অতএব, আজ আমাদের অনুভবে অন্তরের অন্তঃস্থিত প্রগাঢ় প্রশ্নের জোরদার বহিঃপ্রকাশ দরকার যে, আমাদের রক্তের, গর্বের মাতৃভূমি-
কেন এখনো বিশ্বের অনুন্নতশীল দেশের সারিতে?
কেন স্বাধীনতার ৪২ বছরেও হয়নি মুক্তিযোদ্ধা সনাক্ত?
কেন আজো মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করে খায়?
কেন আজো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটের জন্য হন্যে হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে?
কেন এখনো অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরও দেশের অন্তত এক-চতুর্থাংশ মানুষের দিনে দু’বেলা পেট ভরে খাওয়া জোটে না?
কেন হাজার হাজার কোটি টাকার সাহায্যের পরও সিডরে, আইলা ক্ষতিগ্রস্তদের এখনো ঘরবাড়ি হলো না?
কেন খোদ রাজধানীর ফুটপাতে শুয়ে থাকে লাখ লাখ লোক।
কেন কেবল রাজধানীতেই ৬০ লাখ লাঞ্ছিত বস্তিবাসীর বাস?
কেন স্বাধীনতাউত্তর ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ তকমার পর আজো-
চাল সিন্ডিকেট, তেল সিন্ডিকেট,
চিনি সিন্ডিকেট, বহাল তবিয়তে থাকে?
কেন এদেশে ক্ষমতাসীনরা হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে?
কীভাবে স্বাধীন দেশে রাজাকাররা মন্ত্রীর পতাকা গাড়িতে উড়িয়ে ঘুরতে পারে?
কেন বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে বিবৃত ‘দেশকে স্বাধীন করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ’ বলার পরও ‘মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি ও চেতনা ছিলো দ্বীন ইসলাম’ সে কথা প্রতিফলিত হয় না?
কেন আজ দ্বীন ইসলামের নামে ঘৃণিত রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের কেনার হাট বসাতে পারে?
কেন আজ রাজাকার জামাতীরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বৃত্তি প্রদানসহ বিভিন্ন প্রলোভনে প্ররোচিত করতে পারে?
একথা আজ সর্বত্র বিস্তার করা দরকার যে, স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকাররা স্বাধীনতার বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতার কোনো সুফল পেতে পারে না।
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট কোনো সমাবেশই কেবল নয়; বরং কোনো ধরনের কোনো সমাবেশের অনুমোদন তারা পেতে পারে না।
পাশাপাশি আমরা বলব দ্বীন ইসলাম উনার আঙ্গিকেই স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের শাস্তি হওয়া দরকার। হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে যে কেউ একটা বদ কাজ করলো পশ্চিম প্রাপ্ত থেকে যে কেউ তা সমর্থন করলো তার সমান গুনাহ তার হবে।” আমরা তাই শুধু কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সন্তুষ্ট নই। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থনকারী সব রাজাকার তথা গোটা জামাতে মওদুদী এবং তাদের আদর্শে বিশ্বাসী ও সমর্থনকারী সব শিবির কর্মী এবং তাবৎ ধর্মব্যবসায়ীদেরও যথাযোগ্য বিচার চাই।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমেরিকার মতো একটি খ্রিস্টান দেশ থেকে যদি তাদের রাজাকারদের উৎখাত করা হতে পারে, তবে তা ৯৭ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশে তা হতে পারবে না কেন? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৭৮২ সালে যেসব আমেরিকাবাসী ব্রিটেনের পক্ষ নিয়েছিলো স্বাধীনতার পর তাদের প্রত্যেককে আমেরিকা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো।
আমাদের দেশের রাজাকারদের মতো ওদেরকে বলা হতো ‘লয়েলিস্ট’। আমেরিকায় যদি কোনো ‘লয়েলিস্ট’ না থাকতে পারে, তবে আমাদের দেশে দ্বীন ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো মতেই কোনো রাজাকার থাকতে পারে না। সঙ্গতকারণেই আমরা স্পষ্ট ও বুলন্দ আওয়াজ এবং তীব্র উচ্চারণ করছি, ‘রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ চাই; দ্বীন ইসলামের মধ্যে রাজাকারের ঠাঁই নেই।’
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৭
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×