somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প- নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ

১৩ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অন্যান্য সবদিনের মত ক্লান্ত সে দুপুরবেলায় আকাশ কাত হয়ে ঝুলে ছিল জানালা দিয়ে। তাতে রৌদ্র ঝকমক করছিল, বাতাসে পাল ভাসিয়ে শোঁ শোঁ শব্দে উড়ে বেড়াচ্ছিল বড়বাড়ির ছাদ থেকে উড়ানো ঢাউস ঘুড়ি। নাম না জানা একটা পাখি বিচিত্র সুরে ডেকে চলেছিল একটানা। অন্যান্য দিনগুলোর মত ক্লাসরুমে বসে সাধন কিন্তু ওসব দেখে বা শুনে তার মনোযোগের খেই হারিয়ে ফেলছিল না মোটেই। বরং বারবার হাতঘড়িতে সময় দেখছিল সে। বিগত দশ মিনিটে বিশবার ঘড়ির কাঁটা পরখ করে জেনেছে, সাড়ে তিনটা এই বাজলো বলে। মুহূর্তের মধ্যেই ঘড়ির কাঁটা সাড়ে তিনটা স্পর্শ করে আর ইশকুলে ছুটির ঘণ্টা বেজে ওঠে - ঢং ঢং ঢং!

একছুটে সাধন বেরিয়ে আসে তার ক্লাসরুম থেকে। দোতালা থেকে একতলায় নামতে যেখানে হিসেব করলে মোটমাট পনের ধাপ পেরোতে হয়, সাধন সে সিঁড়ি পার হয় মাত্র তিনলাফে। ইশকুল ঘরের সামনেই মাঠ। সে মাঠে কোন বাউন্ডারি নেই। সাধনের ইশকুলের বন্ধুরা ক্লাস শুরুর আগে এখানে ক্রিকেট খেলে, ক্লাস ছুটির পর বিকেলবেলা সারা মাঠ দাপিয়ে বেড়ায় চামড়া ওঠা একটা বিকট বেঢপ ফুটবল নিয়ে। যেদিন অবশ্য জাকির চেয়ারম্যানের ছেলে রাজু খেলতে আসে, সেদিনের হিসেব ভিন্ন। একদম চকচকে নতুন ফুটবল নিয়ে জুতো মচমচিয়ে খেলতে আসে ছেলেটা। বয়সে সাধনদের চেয়ে ছোটই হবার কথা। সাধন এই আসছে শীতে দশে পা দেবে। চেয়ারম্যানের ছেলে মনে হয় না এখনও আট পার করেছে। যেদিন ও খেলতে আসে, বলাই বাহুল্য, সেদিন ও মাঠের সর্বময় কাপ্তান। মাঠের যে প্রান্তে কাঁদা, বল নিয়ে সে প্রান্তে যাওয়া যাবে না। তাতে বল নোংরা হবে। আর যদি কেউ খেলার সময় ভুলক্রমেও ওকে ঠ্যালাধাক্কা দিয়ে ফেলে তাহলে আর রেফারি বা রেডকার্ডের কোন প্রয়োজন পড়ে না। চেয়ারম্যানের যে দু’জন পাইক ওর সাথে করে আসে, তারাই ঐ ছেলের মাথায় ধাঁই ধাঁই চাটি মেরে মাঠ থেকে বের করে দেয়।

সাধনের ভালো লাগে না ওসব। তাই সে তার স্কুলের বন্ধুদের সাথে তেমন একটা খেলে না। ছুটি হলেই বাসায় চলে যায়। লম্বা একটা সময় কাটে তার বনে বাদাড়ে ঘুরে, বইপত্র পড়ে, পুকুরে সাতার কেটে , আর সপ্তাহান্তে বাবা এলে বাবার সাথে গল্প করে। বাবা দূর শহর ঢাকার একটা স্কুলে পড়ান। সপ্তাহ- দুই সপ্তাহে একদিন করে বাসায় আসেন। সাধনকে তখন কে পায়! দিনের বেলা বাবার সাথে ঘুরে বেড়ানো, পুকুরে মাছ ধরা। রাত্রি হলে বাবার কাছ থেকে শহরের গল্প শোনা, বাবার হাতে ভাত খাওয়া, চোখে ঘুম জড়িয়ে এলে বাবা-মায়ের মধ্যে আরাম করে ঘুমিয়ে পড়া। ঠাকুরঘরে ভোরের প্রার্থনায় মা আর সাধনের সাথে সেদিন বাবাও যোগ দেন। পূজো শেষ হলে প্রসাদ হাতে নিয়ে সাধনকে কোলে করে বাড়ির উঠোন জুড়ে হেঁটে বেড়ান তিনি। সাধনের ছোট্ট বুকে হাত রেখে বলেন – ঠাকুরঘরের চেয়েও বড় ভগবান থাকে এইখানে , এই বুকে, বুঝলি? কি সুন্দর যে হয় সে দিনগুলো!

সাধনের ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া চিন্তাভাবনাগুলো ইশকুলের মাঠ পেরিয়ে বড় সড়কে উঠে আসা মাত্রই আবার একীভূত হয়ে যায়। এই রাস্তা ধরে সোজা এগোলে প্রথমে পড়বে পাঁচুয়ার বাজার। সেই বাজার পেরিয়ে আরও এক কিলোমিটারের মত হাঁটলে প্রথমে পড়বে ভাঙ্গা পোলটা। সেটা পেরোলেই ছোট্ট একটা মাঠ, সেটা পেরুলে ধুয়াসার গ্রাম। আর গ্রামের মুখেই সেই বড় বাড়িটা।

সাধন দ্রুতলয়ে হাঁটতে থাকে। মধ্যখানে রাস্তা সরু হয়ে আসে। দু’পাশে ক্ষেতে পানি আনার জন্যে কাটা খাল। কোন স্রোত নেই তাতে। সাধন মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে যায়। এই এক নূতন খেলা আবিষ্কার করেছে সে। বাবার সাথে যেবার ঢাকা গেল সে, পদ্মানদী পার হতে হয়েছিল তাদের লঞ্চে করে। ক্লান্ত সে লঞ্চভ্রমণের একপর্যায়ে বাবা তাকে নিয়ে ডেকের একদম সামনে নিয়ে দাঁড়িয়েছিল কিছুক্ষণ। নদীর পানি লঞ্চের নীচে পড়ে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে দু’ভাগে কেটে ছড়িয়ে পড়ছিল। লঞ্চ এগিয়ে যাচ্ছিল একদম বীরের মত প্রমত্ত পদ্মার বুক চীরে। সেই ছলাৎ ছলাৎ শব্দে নদী দুভাগ হয়ে যাবার মত গা শিরশিরে একটা অনুভূতি হয় সরু রাস্তা দিয়ে দুপাশে মরা খালের মধ্যে দিয়ে ছুটে গেলে। মনে হয় মরাখাল ও যেন প্রাণের স্পন্দন ফিরে পেয়েছে। বয়ে যাচ্ছে নদীর মত, দু’পাশ দিয়ে।

পাঁচুয়ার বাজারে ঢুকে অর্ধেকটা পেরিয়ে যাবার মুখে এসে সাধনের মনে হয়, কেউ ডাকছে তাকে। সে ভয় পেয়ে ইতিউতি তাকায়। কান খাড়া করে শুনে বোঝে, ডাকটা আসছে দু’দোকান পেছনের গণেশ ময়রার মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের ভেতর থেকে। সাধন পিছিয়ে গিয়ে দোকানের ভেতর উঁকি মেরে দেখে, তার হারুন কাকু।

-“এই, তুমি আমাদের রতন মাষ্টারের ছেলে সাধন না? এদিকে আসো তো বাবা, ভালো করে দেখি মুখ খানা...”

সাধন মিষ্টির দোকানের ভেতরে ঢোকে।

-“এতো দেখছি সাধনই। বাবা এই পানে আজকে এলে কি মনে করে? ইশকুল করো নি?”
-“ হ্যাঁ কাকু, ইশকুল ছুটি হল তারপরেই না এলাম”
-“ ইশকুল ছুটি হয়েছে তো বাড়ি না গিয়ে ইদিক কই যাও?”

সাধন ইতস্তত করে। সত্য কথাটা সে বলতে পারবে না। কিন্তু মিথ্যা করে কিছু একটা সে বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপন করতে পারবে কিনা – তাও সে নিশ্চিত নয়। কিছু সময় আমতা আমতা করে পরে নিজেই বলে
-“ কাকু ফুটবল টুর্নামেন্ট হচ্ছে পাশের গ্রামে। তাই দেখতে যাচ্ছি”
-“ ফুটবল টুর্নামেন্ট হচ্ছে, কই, আমি তো জানি নে” বলে হারুন কাকু একটু ভ্রু কুঁচকায়। পরক্ষনেই তার চোখ পড়ে সাধনের টানা ক্লাস করে ছুটে বেড়ানো সাধনের ক্লান্ত মুখের দিকে। লম্বা সাদা শার্টটা হাফ হাতা, কিন্তু কাটা হয়েছে এমন মাপে যে স্পষ্টতই শার্টটা তার কনুই ঢেকে আরও দুই আঙ্গুল নীচে নেমে আছে। নীলরঙের ফুলপ্যান্টের নীচের অংশ জুতোর তলে গিয়ে ক্ষয়ে ছিঁড়ে গেছে। ফর্শা, একদম শুভ্র মুখের শিশুটির কপাল থেকে টপটপিয়ে ঘাম ঝরছে।

-“ আহারে দ্যাখো দিখি, দ্যাবশিশুর মত মুখখানি দৌড়ে দৌড়ে শুকিয়ে একদম অতটুকু হয়ে গেছে রে! এ গণেশ, একটা ঝোলাগুড়ের সন্দেশ আর একটা রসগোল্লা আর ঠাণ্ডা দেখে বড় একগ্লাস পানি দেও তো জলদি এদিকে” – সাধনের চিবুক ছুঁয়ে চেঁচিয়ে ওঠেন হারুন কাকা। সাধন একদম হা হা করে ওঠে

-“ না কাকু! খাবো না কিছু এখন একদম! হাতে সময় নেই যে, খেলা শেষ হয়ে যাবে!”
-“ তা যেও। কিন্তু দানাপানি পেটে না পড়লে যে রাস্তায় ছুটতে ছুটতেই অজ্ঞান হয়ে যাবে। এক ঢোকে গিলে খেয়ে চলে যেও।”
কাকু বলে বটে একঢোক, কিন্তু একঢোকে ঐ পেল্লাই সাইজের রসগোল্লা আর মাখো মাখো সন্দেশ পেটে সেঁধানোর ক্ষমতা সাধনের ছিল না। বার বার পানি খেতে হচ্ছিল, সন্দেশ গলা দিয়ে নামাতে। কোন ক্রমে খাওয়া শেষ করেই সাধন ছুটে বেরিয়ে দেখে ঘড়ির কাঁটা প্রায় চারটা ছুই ছুই করছে।

-“ দেখো বাবা, বেশী রাত করোনা যেন! দিনকাল খারাপ পড়েছে, কখন ছেলেধরা এসে ক্যাঁক করে ধরে ঝোলায় পুরে নিয়ে চলে যায় তার কোন ঠিকঠিকানা নেই! আর শোনো, তোমার বাবাকে বোলো হারুন কাকু স্মরণ করেছে। এবার এলে যেন একবার দেখা করে যায়। হারামি আমাদের ভুলেই গ্যাছে একদম!”

হারুন কাকার চিৎকার বাতাসে ভেসে এসে মৃদুভাবে সাধনের কানে ধাক্কা দেয়। সাধন তেমন গা করে না। রাত তো হবেই না, সন্ধ্যে ঘনাবার আগেই সে রওনা দেবে বাড়ির দিকে। হাটের শেষপ্রান্তে এসে অন্যান্য দিনগুলোর মত একটা গাছ বেশ করে সাধনের চোখে পড়ে। গাছটায় আগাগোড়া ছোট ছোট লাল-সবুজ কাগজের তৈরি তাদের জাতীয় পতাকায় মোড়ানো। সূতলি দিয়ে কে যেন পেঁচিয়ে বেঁধে রেখেছে সব। পতাকার চটে যাওয়া রঙ দেখে বোঝা যায়, গেল বছরের বিজয় দিবসে টাঙ্গানো। আচ্ছা, এ বছরের স্বাধীনতা দিবস না বিজয় দিবস, ঐযে যখন সাধন আর বাবা মিলে এরকম ছোট ছোট পতাকা টাঙ্গায়, কবে আসবে সেটা? আর কয়দিন বাকি? বাবা এলে এবার জিজ্ঞেস করতে হবে। দুর্গা পূজো গেল, এই তো এখনও একমাসও হয় নি বোধয়।

বিজয় দিবসে কি করে তারা? বাবা একদিন অতিরিক্ত ছুটি পায়। তারপর, ১৬ ডিসেম্বরের আগের রাত্রে সাধন, বাবা আর মা মিলে তাদের আধপাকা বাড়ি, বাড়ির উঠোন, ভেজা কাপড় শুকোতে দেবার জন্যে পোঁতা বাড়ির উঠোনে বাঁশ, উঠোনের আশেপাশের গাছের ডাল – সবকিছুতেই সূতলি বেঁধে ছোটছোট কাগজের পতাকাগুলি টাঙ্গিয়ে দেয় আঠা দিয়ে। বিজয় দিবসের দিন সকাল বেলা বাবা ঘুম থেকে উঠে পরিষ্কার সাদা পাঞ্জাবী পড়ে সাধনকেও সুন্দর একটা ধোয়া কাপড় পড়ায়। রেডিও ছাড়লে তাতে বেজে ওঠে – ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠ্যাকাই মাথা! সাধনকে কোলে নিয়ে আরেক হাত ছড়িয়ে দিয়ে বাবা চিৎকার করে – “আমার দেশ! আমার দেশ”। একপর্যায়ে সাধনও আনন্দের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে ছোট ছোট দু’হাত মেলে চিৎকার করে- “আমার দেশ! আমার দেশ!” । বস্তুত, ১ লক্ষ ৪৬ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এই দুঃখিনী দেশটিকে যারা স্বাধীনতার গর্ভযাতনায় ছটফট করতে দেখেছে – সেই ১৯৫২ থেকে নিয়ে ১৯৬৯, ১৯৬৯ থেকে নিয়ে ১৯৭১ এর উৎকণ্ঠার ৯টি মাস, তাদের মত করে এই দেশকে, এই দেশের মাটি, বায়ু, জলকে কে ই বা উপভোগ করতে পারে?

একপর্যায়ে বাবা সাধনকে কোল থেকে নামায়। দাওয়ায় বসিয়ে ১০ বছর আগে ফেলে আসা স্বাধীনতার নয়টি মাসের কথা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে স্মরণ করে সাধনকে নিয়ে। সাধনের মা কিছুক্ষণ পর সকালের নাস্তা নিয়ে আসেন। মৃদুস্বরে বাবাকে ধমকে দেন – “ও আমার মাস্টারমশাই, বাকি গল্পটুকু না হয় ওবেলা করলেন। এখন বাজারে গিয়ে কিছু মাছ মাংস নিয়ে আসুন। বিজয় দিবসের দিন ভালো কিছু খাওয়াদাওয়া হোক!”

যাক, এই মুহূর্তে সাধনের মাথায় রাজ্যের টেনশন কাজ করছে। ঘড়ির কাঁটা চারটা ছুঁইছুঁই। যদি এর মধ্যেই ও চলে যায়? কি হবে তখন? ছোট্ট সাধন তার যুক্তিগুলো ঠিক গুছিয়ে আনতে পারে না। ভিতরে একটা উৎফুল্লতা কাজ করছে বটে, কিন্তু চাপা একটা বেদনাও সাধনের শিশু মনে কাজ করতে থাকে। বাবা তাকে বারবার করে শিখিয়েছে, কখনো মিছে কথা না বলতে। কিন্তু আজ একটি কারনে তাকে দু’জনের সাথে দুবার মিথ্যা বলল। এক তো মায়ের কাছে, বিকেলবেলা স্কুল থেকে ফিরতে দেরি হবে কেন সে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে। আর এক- এইযে এখন, একই ব্যাপারে হারুন কাকার কাছেও তার মিথ্যা বলতে হল।

মিথ্যা সাধন বলে না একেবারেই। দশ বছরের ছোট্ট এ জীবনে সে সজ্ঞানে কখনো মিথ্যা বলে নি। কারণ বাবা শিখিয়েছেন, মিথ্যা বললে ভগবান রাগ করেন। ভগবানের রাগ কি – সাধন খুব একটা না বুঝলেও বাবা কষ্ট পাবে সে মিথ্যা বললে, এটা অনুভব করেই সাধন মিথ্যা বলা থেকে মনেপ্রাণে বিরত থাকে।

তবে আজ সত্য বলার সাহস সাধন করে উঠতে পারে নি। কারণ এমন এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে সে পড়েছে, যার ভালোমন্দ ঠাহর করতে পারে নি সে এখনও।

ঘটনার সূত্রপাত ঠিক একসপ্তাহ আগে। সাধন তার ক্লাসমেট কালামের সাথে সেদিন সত্যসত্যই খেলা দেখতে আসে পাঁচুয়ার বাজার পেরিয়ে এই ধুয়াসার গ্রামে। সেদিনই ঘটনাটি ঘটে।

তার বন্ধু কালামের মুখেই নারী আর পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক যে মা-ছেলে , ভাই-বোনের বাইরে কিছু হতে পারে, সেটা জেনেছে সে। কালাম ওকে কিসব উদ্ভট সব ছবিও দেখিয়েছে, একদমই ভালো লাগে নি সাধনের। কিন্তু একটা ছেলে একটা মেয়েকে বিয়ে করে আজীবন একসঙ্গে কাটিয়ে দেয়, কালামের বলা এই কথাটা খুব সুন্দর লেগেছে ওর। এই সূত্র ধরেই সাধন তার বাবা-মায়ের মধ্যকার সম্পর্কটাও ব্যাখ্যা করতে পেরেছে।

কালামের সাথে ধুয়াসার গ্রামে ফুটবল খেলা দেখতে এসে সে এমন মায়াকাড়া একটি মুখ দেখেছে, যেমনটি সে আগে কখনো দেখেনি। একসপ্তাহ আগে ঠিক এইদিনে, এইসময়ে পৃথিবীর অঙ্কের খেলায় অপটু অপরিপক্ব সাধন প্রথমবারের মত মেয়েটিকে দেখে এবং তার শিশুমনে একদম সিলমোহরের মত আঁকা হয়ে যায়। ঘটনার ফলশ্রুতিতে উপসর্গও দেখা দিচ্ছে এমনসব, যা সামলাতে অনভিজ্ঞ সাধনের একদম হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রথমত, প্রতিদিন ইশকুল ছুটির পর বাড়িতে না গিয়ে সে ছুটে চলে আসে ওর গ্রামের থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে এই ধুয়াসার গ্রামে, মেয়েটিকে একনজর দেখতে। বেশীক্ষণ নয়, চারটা থেকে উর্ধে সাড়ে চারটা পর্যন্ত মেয়েটি গ্রামের মুখের এই ছোট্ট মাঠটিতে আরও গোটাকয় ছেলেমেয়ের সাথে মিলে খেলে। কখনো ছোঁয়াছুঁয়ি, কখনো বরফপানি, কখনো কুতকুত।

সাধন মাঠের একপ্রান্তে বসে একমনে চেয়ে থাকে মেয়েটির মুখের দিকে। আর মনেমনে ভাবে, এই মেয়েটির হাত ধরে গিয়ে সে যদি বাড়ি হাজির হয়, হুট করে একদিন- মা কি খুব রাগ করবে? বকবে, মারবে তাকে? নাকি মেয়েটাকে? মেয়েটাকে কিছুতেই কিছু বলতে দেবে না সে! শিশু সাধনের বুকের মাঝে পুরনো প্রবাদ অনুযায়ী ঘুমন্ত শিশুর পিতা জেগে ওঠে। আচ্ছা, মেয়েটাকে তাহলে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সে বিয়ে করবে কিভাবে? বিয়ে হয় কখন? কালামকে বললে সে কি একটা ব্যাবস্থা করে দিতে পারবে না? এইসব ভাবতে ভাবতে সে যখন তন্ময় হয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটির মুখের দিকে, সে হঠাৎ খেয়াল করে সেই মেয়েটাও তার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক দৃষ্টিতে। কি লজ্জা! কি লজ্জা! সাধন ধরা পড়ার সাথে সাথে ডানে বামে বোকার মত তাকায়, গাছের পাতার রঙ দেখে, বাতাসের সরসর শব্দ শোনে, পড়ন্ত বিকেলে আকাশের মেঘে রঙের খেলা দেখে। মেয়েটা, আবার খেলায় ব্যাস্ত হয়ে গেলে সাধন আবার দু’চোখ ভরে দেখে নেয় তাকে। সাড়ে চারটা নাগাদ ও খেলা থামিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেলে সাধন ওকে মাথা থেকে বের করতে পারে না। ওর কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ি রওনা দেয়। বাড়িতে ফিরে এলে রাত্রে তার পড়ার টেবিলে, খাবার সময় মনে মনে চলতে থাকে কথা। রাত্রি গহীন হলে সাধন যখন মায়ের কোল ঘেঁষে ঘুমুতে যায়, তখন জানালা দিয়ে জোছনা ঢুকে মশারির ওপর নকশা তৈরি করলে দুধের পাত্রে সর ভেসে ওঠার মত করে মেয়েটির মুখ ভেসে ওঠে সাধনের মুখ বরাবর, মশারির ছাতে। সাধনের ঘুম আসে না।

পোল পেরোলে মাঠটা পড়ে। গ্রামের মুখ ঐ দেখা যায়। সাধন প্রায় ছুটে এগোয়। কে জানে আজ আর কতক্ষণ থাকবে মেয়েটি। সাধনও বাড়ি ফিরতে দেরি করতে চায় না। ভাগ্য ভালো, মা এখনও সন্দেহ করে নি। সরল মনে বিশ্বাস করে নিয়েছে ওর কথা।

ঐ তো মেয়েটি! অন্যান্য দিনগুলোর মতই সে তার সাথের ছেলেমেয়েদের নিয়ে খেলছে। কি খেলছে সে আজ? ওহো, কানামাছি! সাধনের মন আনচান করে ওঠে ওর সাথে কথা বলবার জন্যে। কিন্তু কি কথা বলবে সে? নাম জিজ্ঞেস করবে? কোথায়, কোন স্কুলে পড়ে – এটা জিজ্ঞেস করবে? তারপর কোন ক্লাসে পড়ে – সেটা? নাকি সোজা গিয়ে বলবে, সে ওদের সাথে খেলতে চায়? কিন্তু সঙ্গেসঙ্গে সাধনের একটু ইতস্তত বোধ হয়, কারণ সে তার ইশকুলের ছেলেদের সবসময় ফুটবল, ক্রিকেট খেলতে দেখছে। কখনো কখনো কাবাডিও খেলে তারা, কিন্তু কানা মাছি খেলতে তো দেখেনি কখনো! ও গিয়ে খেলতে চাইলে মেয়েটা হেসে উঠবে না? তখন সাধন আর কথা এগুবে কিভাবে? সাধন ভেবে পায় না। বোকা বোকা মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকে।

পেছন থেকে সশব্দে মাথায় চাঁটি এসে পড়া মাত্র সাধন প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন্তু মাটিতে একদম উপুড় হয়ে পড়ার আগেই পেছনের হাতটা শক্ত করে তার শার্টের কলার টেনে ধরে। পরে আবার হ্যাঁচকা টানে সাধনকে চিত করে ফেলে দেয়। শক্ত মাটিতে পড়া মাত্রই সাধনের মাথা দুম করে মাটিতে ঠুকে যায়। সাধন ডুকরে কেঁদে ওঠে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে। কনুইয়ে ভর দিয়ে কোনক্রমে উঠে বসে তার সামনে দাঁড়ানো তিন মূর্তিমানকে দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু সূর্য আড়াল করে দাঁড়ানোর ফলে সে স্পষ্ট তাদের মুখ দেখতে পায় না।

“গত একসপ্তাহ ধইরা তরে এইহানে রোজ দেহি। কারবার কি তোর? সত্য ক!” - যে ছেলেটা সাধনের গায়ে হাত তুলেছে, সে চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো সাধনের কানে ঢোকায়। এগিয়ে এসে সাধনের কলার ধরে হ্যাঁচকা টানে সাধনকে তুলে আনলে সাধন আবার কেঁদে ওঠে।

“চুপ! একদম চুপ হারামজাদা! নইলে অ্যাক্কেলে জানে মাইরাহালামু! আমাগো গ্রামের মাইয়ার দিকে হাঁ কইরা চাইয়া থাকোস হাভাইত্তার মতন! মাইয়া দেখস নাই জীবনে? গাইল্লা দিমু দুই চোখ!”

পিছন থেকে অপর এক ছেলে হাঁক পাড়ে –
“আরে এ মালেইক্কা, খাঁড়া! এইয়া তো দেহি পাশের গাওয়ের রতন মাষ্টারের পোলা মনে হয়!”

মালেইক্কা বা মালেক নামের ছেলেটি, যে এতক্ষন সাধনের ওপর হম্বিতম্বী চালাচ্ছিল, সে আবার সাধনের কলার ধরে সাধনের মুখের দিকে গভীরভাবে তাকায়। সাধন ওর মাথার মাঝখানে করা সিঁথির ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে পড়া তেল, তেল চকচকে কপাল, কপালের এ প্রান্তে জোড়া ভ্রু, গালে বসন্তের খাঁজকাটা দাগ, সদ্য গজিয়ে ওঠা ফিনফিনে গোঁফের সারির সাথে সাথে স্পষ্টভাবে ওর চোখের হিংস্রতা পড়তে পারে। মুখ থেকে বেরিয়ে আসা ভকভকে বিড়ির গন্ধ সাধনের নাকে সজোরে ধাক্কা মারে।

“তুই রতন মাষ্টারের পোলা? তোর বাপ ঐযে ঢাকার কোন ইশকুলে পড়ায় না দপ্তরীর কাম করে যে রতন প্রামাণিক, হ্যায়?”

জবাবে সাধন হাঁসফাঁস করতে করতে কোনক্রমে মাথা ঝাঁকায়। ছেলেটা শক্ত একটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় সাধনকে। সাধন গায়ের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাঁড়ায়।
“এইখানে আহস ক্যান? আইয়া পরে আমগো গ্রামের মাইয়ার দিকে চোখ তুইলা তাকাস কোন সাবাসে?”

ছোট্ট সাধন নিজেও জানে না কেন, তবুও, ওর মনে কোথা থেকে অসীম সাহস এসে ভর করে, গলায় অধিকারের দাবী নিয়ে শক্ত ভাষায় জবাব দেয় -
“আমার ভালো লাগে ওকে!”

জবাব দিয়ে সাধন নিজেই অবাক হয়ে যায় যে ও এটা কি বলল! মালেকের চোখে চোখ তুলে তাকিয়ে থাকলেও ভেতরে ভেতরে কুঁকড়ে গিয়ে অপেক্ষা করে আরও কিছু কিল চাপড় মুখে- পীঠে এসে পড়বার। কিন্তু সাধন অবাক হয়ে দেখে, মালেক এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গোর মুখ থেকে রাগ চলে গিয়ে তাতে বিস্ময়ের একটা চিহ্ন ফুটে উঠছে।

“মাষ্টারের পুত কয় কি রে!” – মালেকের সঙ্গের ছেলেটি বলে ওঠে।
“এ হাউয়া” - মালেকের মুখে চাপা হাসি খেলে যায়, “তুই বোঝস যে তুই কি? আবার যে পীরিত চোদাইতে চাস?”
“কি আমি?” সাধন অবাক হয়ে প্রশ্ন করে। সে মানুষ, আবার কি? আড়চোখে তাকিয়ে দেখে মেয়েটি খেলা থামিয়ে তাকিয়ে আছে এদিকে।

“তুই? তুই হইলি গিয়া মালু!”

পুনরায় গলার স্বর যথাসম্ভব মোটা করে চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলে মালেক, এবং শেষ শব্দটির উপর অনাবশ্যক জোর দেয়। সাধন বুঝতে পারে না যে ঐ শব্দটি দাঁড়া মালেক তাকে কি বোঝাতে চাইল। জীবনে প্রথমবারের মত শব্দটি শুনল সে। সাধনের শূন্যদৃষ্টি দেখে মালেক তার সমস্যা ধরতে পারে।

মালেক নয়, মালেকের ওপর সঙ্গী ছেলেটি এবার সপ্রতিভ হয়ে ওঠে –
“মালু বোঝস না? মালু হইল আকাডা, হিন্দু! আমরা যেমন মুছলমান, আমগোর ধোন যেমন কাডা, তেমনি তোরা ব্যাবাকটি হইলি গিয়া আকাডা মালু! মুছলমান মাইয়ার দিকে চোখ তুইলা তাকাস তুই কোন সাবাসে রে?”

একসাথে এতগুলো শক্ত কথা সাধন কখনোই শোনে নি। তবে সে ছোট হলেও বোঝে, তার থেকে গায়ে গতরে বেশ লম্বা চওড়া ছেলেগুলো তাকে মালু নামের কিছু একটার সাথে তুলনা করছে। কিন্তু তারা এই একটা শব্দ উচ্চারণ করলেই সাধনের আর ওদের মধ্যে কি পার্থক্য তৈরি হয়ে যায়? কেমন ধারার পার্থক্য? রক্তের রঙ কি অন্য সবার মত সাধনেরও লাল নয়? দুটো হাত, দুটো পা, একটা মাথা কি ওর ও নেই। সাধন, ছোট্ট সাধন, কিছুই বোঝে না, কোনক্রমেই হিসাব মেলাতে পারে না। ওর বাবা, রতন মাষ্টারের শেখানো কথাগুলি কেবল মাথায় ঘুরপাক খায় – “মানুষে মানুষে ভেদ নাই, ভগবানের বাস বুকে” ।

শেষবারের মত সাহস সঞ্চয় করে সাধন বলে –
“কিন্তু মানুষে মানুষে কিসের ভেদ? সবার রক্তের রঙ ই তো লাল!”

বয়সের তুলনায় অনেক অনেক ভারি দুটো কথা সাধন বলে, অনেকটা মুখস্তের মত, না বুঝেই। সাধনের কথা শুনে মালেক ও তার সাঙ্গোপাঙ্গো দুটো একদম বোকা বনে যায়। কিন্তু মালেকের নোংরা রসবোধ চাগাড় দিয়ে ওঠে-

“না, সবার রক্ত লাল না। মালুগো রক্ত কালা! যা, ভাগ এহান থে! আর জানি কক্ষনো তরে পুলের এই পাড়ে না দেহি!”

সাধনকে আবারো জোরে একটা ধাক্কা দেয় মালেক। সাধন টাল সামলে পড়তে পড়তে বাঁচে কোনরকমে। একবার মাথা তুলে দেখে- মালেক হাসছে, ওর সাথের দুটো ছেলে হাসছে, মেয়েটা ... মেয়েটা ... সেও কি হাসছে? অমনি তো মনে হয়!

সাধনের মাথা কাজ করে না। ছোট্ট সাধন বুঝে উঠতে পারে না - ঠিক কি যুক্তিতে ছেলেগুলো তার আর মেয়েটির মধ্যে একটা অদৃশ্য কিন্তু অলঙ্ঘনীয় ভেদরেখা টেনে দিতে চাইছে। সাধন বুঝে উঠতে পারে না, যেমন সে কখনো বোঝেনি - যে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে সাধনের জন্মের বছর হানাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল পূর্ব বাংলার সাতকোটি মানুষ, তার এবং তার স্কুলমাস্টার বাবার এবং বহু বাঙ্গালীর অগোচরেই প্রতিক্রিয়াশীল একদল মানুষের বিষ নিঃশ্বাসে বহুআগেই সে স্বপ্ন বানের জলে ভেসে গিয়েছে। সাধনের চিন্তায় এটা কখনো খেলে নি , প্রতিটি বিজয় দিবসে যে প্রাণের উচ্ছাসে সাধনকে কোলে করে ওর বাবা শিশুর মত চিৎকার করে উঠতো - "আমার দেশ! আমার দেশ!" বলে, বস্তুত তার প্রতিটি চিৎকার শূন্যে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এসেছে বিদ্রুপের হাসি রূপে, বারবার, প্রতিবার। সাধনের বোঝার বয়স হয় নি, আর সাধনের বাবার হিন্দু মুসলিম ভেদাভেদহীন দেশের দৃশ্যকল্প আঁকা স্বপ্নালু চোখে ঠুলি এঁটে থাকায় তিনিও বোঝেন নি, নতুন দিনের স্বপ্ন বলে সামনে কিছু নেই। সামনে যা আছে, তা কেবলই সাম্প্রদায়িকতার আঁচড়ে রক্তাক্ত নিকষ কালচে লাল গাঢ় অন্ধকার!

দশ বছরের ছোট্ট সাধন বুড়ো মানুষের মত ঘাড় গোঁজ করে পা টেনে টেনে হেঁটে এগোয়। পেছনে পড়ে থাকে ধুয়াসার গ্রাম, তার শিশুমনে দোলা দিয়ে যাওয়া মেয়েটির নিষ্পাপ মুখ, মালেক এবং ওর দলবলের ভেঙচি কাটা অট্টহাসি, কাঁচাপাকা পোল। সবকিছু পিছে বিলীন হয়ে যাবার পর ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামে। বাড়ি ফেরার কোন দুশ্চিন্তা সাধনের মাথায় কাজ করে না। একটা বাক্য, কেবলমাত্র একটা বাক্য হাতুড়ীর মত আঘাত করতে থাকে ওর মাথায় – “তুই মালু! মালুগো রক্ত কালা!”

কালো ! কালো! সাধনের রক্তের রঙ লাল নয়? কালো? সাধন কিছুতেই ভুলতে পারে না। পরীক্ষা... পরীক্ষা করে দেখা দরকার... সাধন ত্রস্ত চোখে ডানে বামে তাকায়। রাস্তার ধারে নূতন গড়ে ওঠা একটা ইটের দালানের পাশে ইটপাথরের স্তূপ নজরে পড়ে ওর। প্রায় ছুটে এগিয়ে গিয়ে দুটো থান ইট তুলে নেয় সাধন দু’হাতে বহু কষ্ট করে। একটা ইট মাটিতে বিছিয়ে তাতে বাম হাত রাখে। ডান হাতটায় অপর ইটটা তুলে ধরে মাথার ওপরে শক্ত করে বাম হাতে আঘাত হানার জন্যে। কিন্তু টাল সামলাতে পারে না, শক্তিতে কুলায় না। ইট মাথার ওপর থেকে পেছনে পড়ে যায়। আবার কোনক্রমে টেনে তোলে ইটটা সাধন, ডানহাতে, মাথার ওপরে। চোখ বন্ধ করে এবার নির্ভুল আঘাতে প্রায় থেঁতলে দেয় তার বাম হাতের সব কয়টি আঙ্গুল! তীব্র ব্যাথার ঝলক হাতের কবজি থেকে নিয়ে শিরদাঁড়া বেয়ে একদম ব্রহ্মতালুতে গিয়ে আঘাত করে। সাধনের চোখ বুজে আসে। কিন্তু না! অজ্ঞান হওয়া চলবে না! রক্তের রঙ... রক্তের রঙ দেখতে হবে... সাধন কোনক্রমে ডান হাতে ধাক্কা দিয়ে ইটটা ফেলে দেয় বামহাতের ওপর থেকে।

রক্তের রঙ... রক্তের রঙ... সব মানুষ সমান... আমার দেশ... আমার দেশ... মানুষে মানুষে... ভেদাভেদ... নাই... রক্ত... রক্ত... রঙ...

অস্পষ্ট বাষ্পে ভেজা চোখে সাধন দেখে লাল নয়, কালচে রক্তের সরু ধারা মাটিতে গড়িয়ে না পড়ে তার হাতের কবজি বেয়ে ক্রমশ উপরে উঠে আসছে... !

জনমানবহীন সন্ধ্যার আঁধার ঘেরা সেই জনপদ হতে তীক্ষ্ণ শিশুকণ্ঠের একটি তীব্র চিৎকার শোনা যায় –
“মা! মাগো! আমার রক্তের রঙ কালো মা!”

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:১৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×