somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনা প্রতিরোধে ইসলামকে যেভাবে ব্যাবহার করা যায়

২৪ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা বৈশ্বিক মহামারীকে সামস্টিকভাবে আমরা কিভাবে অ্যাপ্রোচ করছি, তা জাতি হিসেবে আমরা কতটুকু সচেতন, কতটুকু সৎ, শিক্ষার আলো আমাদের মধ্যে কতটুকু পৌঁছেছে - তা নিজেদের সামনেই স্পষ্ট করে তুলে ধরছে।

অত্যন্ত ব্যাথা ভরা হৃদয়ে আমি লক্ষ্য করেছি, কথিত ধর্ম ব্যাবসায়ি স্বপ্নের মাধ্যমে প্রাপ্ত করোনা ভাইরাসের সাথে কথোপকথন এবং তার তদবির নিয়ে জনসমাবেশে আমজনতার মধ্যে উন্মাদনা সৃষ্টি করতে। যখন এই ভিডিও আমি ইউটিউবে জোরে সাউন্ড দিয়ে বাসায় বসে শুনছিলাম, সেই বিখ্যাত সূত্র - 1 + Q . 7+ 6 = 13 আসা মাত্রই আমার মা (যিনি বছরখানেক আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জয়েন্ট ডাইরেক্টর হিসেবে রিটায়ার করেছেন), হামলে পড়ে একটা কাগজে সে সূত্র লিখে নিলেন। এই যদি হয় একজন উচ্চপদস্থ রিটায়ার্ড সরকারী কর্মকর্তার অবস্থা, তাহলে এই অসাধু ধর্ম ব্যাবসায়িরা - যে অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে শিক্ষার হার কম, যাদের যাচাই বাছাই করে একটা তথ্য গ্রহণ বা বর্জন করবার সক্ষমতা বা অভ্যাস নেই, তাদের কিভাবে প্রভাবিত করছে - তা আমাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ করে তুলছে।

আবার কাউকে কাউকে দেখছি , বিবিধ দোয়াকালামের আশ্রয়ে কিভাবে করোনা মোকাবেলা করা যায় এ নিয়ে আমজনতাকে নসিহত করতে। ব্লগেও এ নিয়ে লেখা দেখেছি। হয়তো এসব দোয়াকালামে কাজ হবে। কারণ, আমি যে ধর্মের অনুসারী - তাতে আমার রবকে আমি রহিম, রাহমান - এই নামে চিনি। যিনি সর্বময় দয়ার অধিকারী। যার ক্রোধের উপর দয়া বিজয়ী হয় বরাবর। দয়া নামক বস্তুটিকে একশো ভাগে ভাগ করবার পর মাত্র একভাগ পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর মধ্যে ভাগ করে দেবার পর নিরানব্বই ভাগ দয়া যিনি নিজের জন্যে রেখে দিয়েছেন। কাজেই , আমি যতই খারাপ চরিত্রের অধিকারী হই না কেন, আমি যতই মানুষের হক মেরে খাই না কেন, হয়তো এই সব দোয়ার বদৌলতে তারপরেও আমি করোনার প্রভাব থেকে বেঁচে যাবো।

কিন্তু জানেন কি, আমি কেন যেন এভাবে চিন্তা করতে পারি না। আমার লজ্জা হয়। যে স্রষ্টাকে আমি হাজির নাজির জেনেও মানুষকে কষ্ট দেয়া বন্ধ করি নি, মানুষের হক নষ্ট করা বন্ধ করি নি, আজ বিপদে পড়ে লেজ গুটিয়ে নামাজ পড়া আর দোয়া পড়া বাড়িয়ে দিলেই আমার কাছে গায়েবি সাহায্য আসবে, আমি ধর্ম এভাবে মানতে পারি না।

আল্লাহর হুকুমে মৃত্যু আসবেই, কাজেই মৃত্যু থেকে পালানোর চেষ্টা করে লাভ নেই - শুনতে বেশ ইতিবাচকই শুনায়। আমরা বিশ্বাসীরা এটা আকিদাগতভাবে বিশ্বাসও করি। কিন্তু, কেন যেন মনে হয় - এই আলোচনা তোলার উপযুক্ত সময় এটা না। খানিকটা উন্নাসিকতা, খানিকটা বেপরোয়ামতন এই যুক্তি স্বভাবগতভাবেই অসচেতন, রাস্তায় ক্রমাগত ছ্যাপ থুতু ফেলে চলা এই দেশের মানুষের মধ্যে ধর্মের নামে আরও বেপরোয়াভাব সৃষ্টির সুযোগ তৈরি করে দেবে। তদুপরি, আমরা যারা এই কথা বলছি, আমরা কি আমাদের বাচ্চা কাচ্চা জন্মের পর টিকা দিচ্ছি না? নিজেরা অসুস্থ হলে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি না? সে সময় কি একবারও নিজেকে এই বলে প্রবোধ দিই যে - "কেন এই টিকা, কেন এই চিকিৎসা? আল্লাহর হুকুমে মৃত্যু যখন আসবে, তখন তা কোন টিকা বা কোন ডাক্তার ফিরিয়ে রাখতে পারবে না ..."। যদি সাধারণ অসুস্থতা বা নাজুক তবিয়তের সময়ে এই আলোচনা না তুলি, তবে এই মুহূর্তে, যখন সচেতনতা, সামাজিক প্রতিরোধ সবচে গুরুত্বপূর্ণ বস্তু - করোনার প্রাদুর্ভাব রুখতে, এখন কেন দায়সারা ভাবে আল্লাহর কাছে সবকিছু চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা?

তবে এটা সত্য যে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মভিরু। প্রাত্যাহিক জীবনে প্র্যাকটিস না করলেও তারা মানে এবং বিশ্বাস করে। - কাজেই ধর্মবিশ্বাসকে এড়িয়ে গিয়ে করোনার মোকাবেলা করাটাও বাস্তবসম্মত বলে আমার মনে হয় না। বরং আমার মনে হয়, এ ক্ষেত্রে মসজিদের ইমাম, খতিব, মন্দিরের পুরোহিতরা সচেতন বক্তব্যের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

যেহেতু আমি জন্মসূত্রে, এবং প্র্যাকটিসের দিক দিয়েও একজন মুসলিম, আমার ব্যক্তিগত বুঝ থেকে ইসলামকে কিভাবে করোনা মোকাবেলায় ব্যবহার করা যায় সে সংক্রান্ত একটি সাধারণ প্রস্তাব আছে। তার আগে, আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তার যে অবস্থা দেখলাম , তা শেয়ার করি।

আমি থাকি মুগদা, মান্ডা পেরিয়ে গ্রিন মডেল টাউন নামের একটি আবাসিক এলাকায়। গ্রিন মডেল টাউনে ব্যাংকার, ব্যবসায়ীরা নিজেরা জমি কিনে বাড়ি করে থাকলেও - মুগদা, বিশেষ করে মান্ডা এলাকাটি ঢাকা শহরের সবচে জনবহুল, ঘনবসতিপূর্ণ এবং দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। সরকারী ঘোষণার পরেও আজ দুপুরে বের হয়ে দেখলাম রাস্তা ভর্তি পিঁপড়ের মত মানুষ, যারা খেটে খাওয়া দিনমজুর, অথবা দিনকাবারির ব্যবসায়ী। ক্ষুদ্র ব্যাবসাও যে কত বিচিত্র ধরনের হতে পারে, আমি মুগদা - মান্ডা দিয়ে যাতায়াত না করলে কখনো জানতে পারতাম না।

কথা হচ্ছে, এই সব দরিদ্র মানুষদের ঘরে রাখা যাবে না। কারণ, আক্ষরিক অর্থেই এদের আজকের দিন গেলে কালকের দিনের খাবারের সংস্থান নেই। অদৃশ্য শত্রু করোনার থেকে দৃশ্যমান শত্রু ক্ষুধার আক্রমণ এদের কাছে এখনো ভয়াবহ। এবং এদের জীবন দর্শন আমাদের মত সেইফ চাকুরীর বা ফিক্সড ইনকামের মানুষদের পক্ষে সম্মক উপলব্ধি করা সম্ভব হবে না।

কিন্তু এও সত্য যে - এদের ঘরে রাখা না গেলে করোনা মহামারী প্রতিরোধ করাও সম্ভব হবে না। এই সমস্ত শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ জুড়ে আছে বাংলাদেশের সব স্তরের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাথে। ওরা নিরাপদ না হলে, প্রকৃতপক্ষে আমরাও নিরাপদ থাকবো না।

এই অবস্থা নিরসনে ইসলামকে যেভাবে কাজে লাগানো যায়, একজন ক্ষুদ্র বিশ্বাসী মুসলিম হিসেবে আমার সে বিষয়ে প্রস্তাবনা হল যাকাত, যা ইসলামের অন্যতম প্রধান এক স্তম্ভ, তা সচেতনভাবে প্রতিটি উপার্জন সক্ষম মুসলমানের এখন থেকেই আদায় করা শুরু করা। বাংলাদেশে যতজন বিশ্বাসী মুসলিম আছে, তারা সবাই যদি যাকাত আদায় করে, আর যারা এখনো উপার্জনক্ষম হইনি, তারা যদি টেকআউটের একটা বার্গার কম খেয়ে সেই পয়সা দান করে দিই - এই গরীব মানুষগুলো হয়তো ভাত, আলুসেদ্ধ খেয়ে বাঁচতে পারবে। তারা যে বাঁচতে চায় না, বা করোনার ব্যাপারে জানে না তা কিন্তু না। সমস্যা হচ্ছে, তারা নিরুপায়। পেট চালাতে হলে বের হতেই হয়। আমরা যদি আমাদের দিক থেকে যাকাত, দান সদকার হাত বাড়িয়ে দিই (যেটা ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্যমণ্ডিত একটা দিক) , তবে গরীব মানুষদের জীবন একটু সহজ হয়। আমরাও আর একটু নিরাপদ থাকতে পারি - এই মহামারীর মোকাবেলায়।

পারলে নিজেদের কাজের লোকদের পুরো মাসের বেতন দিয়ে তাদের ছুটি দিয়ে দিই। রিকশায় উঠলে ভাড়া পাঁচটাকা - দশটাকা - বিশটাকা যে যার সামর্থ্য মত বাড়িয়ে দিই। গনপরিবহন ব্যাবহার করলে, তাদের কর্মীদের সাথে আর একটু মানবিক ব্যাবহার করি। এরা সবাই নিজেদের সুবিধামত সময়ে আমার আপনার মত সাধারণ মানুষদের ভুগিয়েছে, দুর্ব্যবহার করেছে, কটু কথা বলেছে। কিন্তু এখন তাদের প্রয়োজনের সময় যেন আমরা, সমাজের খানিকটা সুবিধাভোগী মানুষরা কঠোর না হয়ে পড়ি। আমাদের যেন মনে থাকে যে দিনের শেষে আমি আপনি কোন পাকা দালানের মধ্যেই ঘুমোচ্ছি, তারা কিন্তু ফেরত যাচ্ছে তাদের বস্তিতে। ইসলাম মানে স্রেফ না বুঝে দোয়া আউড়ে যাওয়া তো নয়, এই সমস্ত সুন্দর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের চর্চা আপনাকে আল্লাহর কাছে সেরা মুসলমানে পরিণত করবে, যদিও আপনি মাদ্রাসায় না পড়েন, ইমাম বা খতিব না হন।

প্রতি ওয়াক্তের প্রার্থনা শেষে নিজের, নিজের পরিবারের, নিজের এলাকাবাসীর, নিজের শহরের, নিজের দেশের, নিজের কওমের, সমগ্র বিশ্ববাসীর নিরাপত্তা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির নিমিত্তে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা জারি রাখি।

একটা ক্ষুদ্র অনুরোধঃ আপনি যদি নাস্তিক হন, আপনার বিশ্বাসের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু এই লেখার কমেন্ট সেকশানে আস্তিক নাস্তিক বিতর্ক না সৃষ্টি করার অনুরোধ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:৪৬
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×