somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - বস্তা কাঁধে স্যুট পরিহিত লোকটি

২২ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লোকটিকে প্রথম আমরা দেখি সাহেরুনবাগের রড ও লোহালক্করের দোকানগুলোর পাশ দিয়ে, ধূলিধূসর সড়কপথ দিয়ে হেঁটে আসতে। একবার লোকটাকে দেখার পর, তাকে বারবার না-দেখে আমাদের কোনো উপায় থাকে না। আমরা তাকে আবিষ্কার করি পুরো মহল্লাজুড়ে। গোরান টেম্পুস্ট্যান্ডে, সিপাহিবাগ বাজারে, রিয়াজবাগ মসজিদে, বাসাবো খেলার মাঠে প্রাতঃভ্রমণকারী স্বাস্থ্যসচেতন লোকেদের সাথে। সে সকালে হাঁটে, বাজারে যায়, অফিস করে, অফিস থেকে ফিরে আসে, জুমাআর মসজিদে নামাজে যায়, চায়ের দোকানে চা খায়, যেমনটা সবাই করে আর কী।

তার চুল বরাবর পরিপাটি করে আঁচড়ানো। জামা কাপড় ধোপদুরস্ত। যে সময় যেটা পরা উচিত, সে সময় সেটা গায়ে। অফিস টাইমে স্যুট, ঝাঁ চকচকে সু। নামাজের ওয়াক্তে দামি পাঞ্জাবি, পায়জামা, মেশকে আম্বর আতর। বাজারে গেলে ফুলহাতা শার্ট আর দামি প্রিন্টেড লুঙ্গি। মাঝবয়েসি পুরুষ হিসেবে তার মাথার চুলের ঘনত্ব তরুণদের মনেও ঈর্ষা জাগাবে। উচ্চতার কারণে ভিড়ের মাঝেও সে সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয়। গায়ের রং শ্যামলা। টল-ডার্ক অ্যান্ড হ্যান্ডসাম পুরুষের কেতাবি উদাহরণ একদম। তবে, তার চোখদুটো একজোড়া নীড়হারা পাখি। চোখের নিচে কালি।

শারীরবৃত্তীয় কারণ বাদে, লোকটা বিশেষভাবে নজরে পড়ে তার কাঁধে সবসময় একটা বস্তা থাকে বলে। ভাঙারি টোকায় যারা, তাদের বস্তার মতো একটা বস্তা। বিশাল সে বস্তার সাইজ। নিশ্চয়ই তার ভেতরে খুব ভারি কিছু থাকে, যার ভারে তার আংশিক কুঁজো হয়ে হাঁটা লাগে প্রায় সময়ই। তার রাস্তায় হেঁটে বেড়ানোর মতো বৈসাদৃশ্যেপূর্ণ একটি দৃশ্য, আমরা মহল্লাবাসিরা কখনো দেখিনি। এতোটা সুপুরুষ, পোশাক পরিচ্ছদে এতটা কেতাদুরস্ত মানুষের কাঁধে সবসময় ভাঙারির বস্তা, দৃশ্যটা হজম করা মুশকিল। সমস্যা হলো, সে কথা বলে না কারো সাথে। চোখাচোখি হলে মৃদু হাসি, কুশল বিনিময়, ঐ পর্যন্তই। এরপর যতই আলাপ বাড়ানোর চেষ্টা করা হোক, সে হাসিমুখে সে প্রচেষ্টা এড়িয়ে যায়। কাজেই লোকটা কেন শরীরে স্যুট কোট সু চাপিয়ে কাঁধে এক নোংরা ভাঙারির বস্তা নিয়ে ঘোরে, সে রহস্য আর আমাদের উদ্‌ঘাটন করা হয় না।

ওহ, প্রায় সবসময়ই লোকটার সাথে থাকে ৪-৫ বছর বয়সী একটি ছেলে শিশু। বাচ্চাটা তার সাথে থাকলেও, নিজের মতো করেই আনন্দে সময় কাটায়। কখনো রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া কাঠি দিয়ে মাটিতে আঁকিবুঁকি কাটে। কুকুর বেড়াল দেখলে দৌড়ে ধরতে যায়। প্রজাপতির পেছনে ছুটতে ছুটতে হোঁচট খায়। উপুড় হয়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে আবার হেসে ওঠে। কখনো লোকটার কাঁধে চড়ে সূর্যকে মুঠোয় পোরার চেষ্টা করতে থাকে। আমাদের মনে হয়, শিশুটা তার সন্তান।

আমাদের দৃষ্টিতে লোকটাকে দয়ালুই মনে হয়। বাজার বয়ে আনা মজদুর, রিকশাওয়ালা, চায়ের দোকানি- সবার সঙ্গেই সে হাসিমুখে কথা বলে। সবাই তাকে বেশ ভালো জানে ও আন্তরিক একজন মানুষ মনে করে। রাস্তার কুকুরদের খাওয়ায় সে নিয়মিত। হ্যাঁ, এটাও একটা অবাক করা ব্যাপার যে, বস্তাকাঁধে ঘোরা টোকাইদের দেখামাত্রই কুকুররা ধাওয়া করলেও এই লোকটাকে কুকুর কখনোই তাড়া করে না। লোকটার ভেতরে একটা নৃশংস সত্তাও বাস করে, এটা আমরা মহল্লাবাসিরা আবিষ্কার করি এই তো, কিছুদিন আগে। ঝাঁকের একটা কুকুর তেড়ে গিয়েছিল কী মনে করে, চায়ের দোকানের অদূরেই খেলতে থাকা তার সন্তানের দিকে। লোকটা তখন পাউরুটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে লোকমা বানিয়ে ছুঁড়ে দিচ্ছিল কুকুরগুলোর দিকে। আগ্রাসী কুকুরের ঘেউ ঘেউ আর সন্তানের চিৎকার কানে পৌঁছানো মাত্রই সে চকিত ঘুরে রিফ্লেক্স অ্যাকশনের ওপর একটা পাথর ছুঁড়ে মারে কুকুরটার দিকে। পাথরটা নিখুঁত নিশানায় কুকুরটার মাথায় গিয়ে আঘাত করলে আমরা প্রাথমিকভাবে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি। সন্তান যখন তার দুপায়ের পেছনে আশ্রয় খুঁজছে, লোকটা তখনো থামে না। সে নিচ থেকে একটা থান ইট কুড়িয়ে বারবার সেটা ছুঁড়ে ছুঁড়ে থেতলে ভর্তা বানিয়ে দেয় কুকুরটার মাথা। আমরা পুরো ঘটনাটিকে বাৎসল্যবোধের উন্মাদনা ভেবে নিই, এবং এ নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করি না। মহল্লার পশুপ্রেমিদের মিটিং মিছিল শুরু হওয়ার আগেই কুত্তার মরা লাশ ছুঁড়ে ফেলে দিই ডাস্টবিনে।

একদিন লোকটার সঙ্গে আমাদের কিছুটা লৌকিকতাবিহীন পরিবেশে আলাপের সুযোগ হয়। সময় তখন সন্ধ্যা হয় হয়। সে এসে বসে আমাদের সঙ্গে, চায়ের টঙ্গে। বোঝা যায়, অফিস ফেরতা সে। বস্তাটা কাঁধ থেকে নামিয়ে ধপ করে পাশে রাখে। আদা দিয়ে লাল চা অর্ডার করে।

‘নুসরাত ফতেহ আলি খাঁ সাহেবের কাওয়ালির সবচেয়ে সুন্দর ব্যাপার হলো, তাতে প্রেমে পড়ার প্রথম দিনগুলির অনুভূতির জিকর করা হয়,’

লোকটা, এতোগুলো দিনে, এই প্রথমবারের মতো নিজ থেকে আলাপ শুরু করে। তার কথার সূত্র ধরেই আমরা ডেকসেটে বাজতে থাকা নুসরাত ফতেহ আলি খাঁ সাহেবের কাওয়ালি 'রাশকে ক্বামার'- এর রিমিক্স ভার্শনের ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠি।

“‘ক্বামার’ শব্দটাকে আমরা বাংলা কোমরের সাথে মিলিয়ে ফেলি। কিন্তু কোমর, বা কটিদেশের সঙ্গে এর আসলে কোন সম্পর্ক নেই। ক্বামার অর্থ চাঁদ। আরবি শব্দ এটা। কোরআনে এই নামে একটা সূরাও আছে সম্ভবত।”

‘সবসময় দেখি লগে একটা বস্তা লয়া ঘুরেন। আপনার এই বস্তার ভিতরে কী?’

রমজান মিয়া, চা বিক্রেতা, সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় আলাপে আগ্রহ না দেখিয়ে তার সহজাত প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আমাদের সবার হয়ে বস্তা সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করে সে।

‘ওহ্, এর ভেতর?’ লোকটার ঠোঁটে সলজ্জ হাসি ফুটে ওঠে। এ পর্যায়ে আমাদের ভেতর বিন্দু বিন্দু শিশিরের মতো কিছু কষ্ট এসে জমা হয়, এই মৃদুভাষী ব্যক্তিটিকে খুব ব্যক্তিগত এক প্রশ্ন করে ফেলায়।

‘এর ভেতর আমার স্ত্রীর লাশ,’ লোকটা ঠোঁটের কোণে সেই লজ্জা লজ্জা হাসি ধরে রেখেই বাক্যটি সমাপ্ত করে।

‘গুড় আছে না রমজান?’ কেউ একজন প্রশ্ন করে। ‘চায়ে একটু গুড় দাও। চিনিতে ক্ষতি, গুড় তো ন্যাচারাল মিষ্টি।’

রমজান মিয়া এক চা চামচের তিনভাগের দুইভাগ গুড় নিয়ে চায়ের কাপে ঘুঁটা দেয় জোরে জোরে। একজন নাকের ডগায় পেপার ধরে পেপার পড়তে থাকে জোরে জোরে। তার কাছ থেকেই আমরা জানতে পারি, আমেরিকা যতই নাক গলাতে আসুক, বাংলাদেশে নির্বাচন হবে সময়মতো।

এমন সময় লোকটার ফোন বেজে ওঠে। স্যামসাং কোম্পানির সাধারণ বাটন ফোন। লোকটা ফোনটা একনজর দেখে পকেটে ঢুকিয়ে রাখে। তারপর তার বস্তার মুখ খোলে। অপটু হাতের গিঁট, খুলতে খুব একটা কষ্ট হয় না তার।

বস্তার মুখ খুললে আমরা দেখি, তার ভেতরে এক অপূর্ব সুন্দর মেয়েলোক বসা। সম্ভবত ভদ্রলোকের স্ত্রীর লাশ, যেমনটা তিনি বললেন।

‘এতো হইচই কেন চারপাশে? কোথায় তুমি?’ সুন্দরী মহিলার কুশ্রী চিৎকারে আমরা হতচকিত হয়ে পড়ি। লোকটা থমকে যায়। বাচ্চা চমকে উঠে তার পা আঁকড়ে ধরে। রমজান ডেকসেটের আওয়াজ কমাতে কমাতে প্রায় বন্ধই করে দেয়।

‘তিনটা গাধা আর তুমি মিলে মোট কয়টা গাধা হয়?’ ভদ্রলোকের স্ত্রী তাকে প্রশ্ন করেন। ভদ্রলোক কোনো উত্তর দেন না। মাথা নিচু করে বসে থাকেন নীরবে। আমরা কানিয়ে কানিয়ে দেখি, ভদ্রলোক ছাড়া আমরা মোট তিনজন বসা এই চায়ের দোকানে।

‘আর তুই এতো বাইরে বাইরে ঘুরিস কেন সারাদিন?’ ভদ্রমহিলার অসম্ভব সুন্দরী মুখশ্রী রাগে আগুনের মতো গনগন করতে থাকে। সে তার পুত্রের হাত ধরে টেনে তাকে বস্তার ভেতর সাধানোর চেষ্টা করে কিছুক্ষণ। পুত্র ছুটে বেরিয়ে যায় দোকান থেকে। আমরা খেয়াল করি, লোকটার হাতে একটুকরো পাথর উঠে এসেছে কীভাবে যেন। সে পাথর এইহাত থেকে ওইহাত করছে থেকে থেকে। মাথা এখনও নিচু। সরাসরি তাকাচ্ছে না তার স্ত্রীর দিকে।

‘এখন থাকুক এসব,’ লোকটা অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে।

‘সারাজীবন ওই এক কথা, এখন থাকুক, এখন থাকুক,’ মহিলা গজগজ করে ওঠে চুপ হয়ে যায়।

লোকটা হাতের পাথর ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আবারো যত্ন করে তার বৌয়ের লাশ ঠেলে ঢুকায় বস্তার ভেতর। তারপর যত্ন করে ফুলতোলা গিঁট দেয়। ভাঙারির বস্তায় নকশী গিঁট আমাদের বিস্মিত করে কিছুটা। তারপর লোকটা বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। কাঁধে তুলে নেয় ছেলেকে, অন্যহাতে বস্তা রাস্তার ওপর ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে টেনে এগিয়ে চলে। সে আমাদের দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলে আমরা যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।

গল্পটি আজ বাংলা ট্রিবিউনের সাহিত্য পাতায় প্রকাশিত

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:৫৮
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:০৭




মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…
১. প্রথমে বলেছেন মৃতদের পেটে কাটাছেড়ার ডাহা মিথ্যা। পরে স্বীকার করেছেন দাগ থাকে।
২. আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেয়া হয় না। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×