দেখতে দেখতে বছর পার করে দিলে মা, আমাদের ছেড়ে। ওপারের দুনিয়াটা কত কঠিন, আমদের কথা কি মনে পরে মা, সাড়ে তিন হাত কবরের দেয়াল টা অনেক পুরু আমাদের কোন কথা কি তোমার কানে যায়? আজকের এই দিনটাতে তুমি চলে গিয়েছিলে কি করে এতটা নিরবে চলে যাওয়া শিখেছিলে, একটা ফোন ও তো করতে পারতে, এক গ্লাস পানির জন্য ও তো ডাক দিতে পারতে। কিছুই করনি মা।
তুমি কি জানো আমার ক্ষুধার প্লেটে এখনো আমি তোমায় খুঁজি, তরকারির ঝাল লবন কম কি বেশি আমি তাতেও তোমায় খুঁজি, বাসার ডাইনিং টেবিল টা শূন্যতায় ডুবে গেছে, আর কোন খাবারের ঘ্রাণ নাকে লাগে না। বারান্দায় রোদে শুকোতে দেয়া কোন কাপড় নেই, নিরব ঘরের দেয়াল জুড়ে শুধু তুমিহীন কষ্টের রং।
আমাদের জীবন বিস্তীর্ণ অতচ শুন্য মরুর বালির মত, আজ এখানে মমতা খুঁজি তো কাল ওখানে। আগের মত আর বাড়ি যেতে পারিনা, তোমার আমার মাঝে যে আজ সাড়ে তিন হাত স্থায়ী ঠিকানার দূরত্ব, প্রাপক থেকেও শুন্য- আমার কোন চিঠি সেথায় পৌছায় না, রাতের আধারে একলা ঘরে আমার চোখ বেয়ে যে অশ্রু ফোটা ঝরে তার শব্দ কি তুমি শুনতে পাও মা, তাহাজ্জুত কিংবা ফজরের সময় দোয়ার আমার দু হাত তুলে ডুকরে উঠা কান্নার ধ্বনি কি তোমার কবরের দেয়ালে ধ্বনিত হয়? জানি না। অসহায় বুক চিরে জমে থাকা কষ্ট গুলো কি তোমার কবরের ঘাসগুলো নাড়িয়ে দিয়ে যায় মা?
পেয়াজু, ছোলা, মাঝে মাঝে সিঙ্গারা, কয় টাকার জিনিস। কখনোই হিসাব করার কিছু না। অতচ মা তোমার জন্য যখন নিয়ে যেতাম তখন যে খুশি চোখে মুখে দেখা যেত তার মুল্য টাকার অঙ্কে হিসেব করা মুশকিল। এই খুশি গুলো তোমার সাথে চলে গেছে চির বিলীন। ঢাকা থেকে কিছু নিয়ে গেলে, আমার অজান্তে পাশের বাসার মানুষদের ও দেখাতে, আমার ছেলে নিয়ে আসছে ঢাকা থেকে, দুইটা শাড়ি আনছে আবার ওড়নাও আনছে, প্রিন্ট টা অনেক সুন্দর অমুক তমুক জিনিস আনছে, এ খুশি কোন টাকায় কেনা মুল্যের না, এ শুধু আত্মতৃপ্তির খুশি শুধু মায়েদের পক্ষেই সম্ভব তার সন্তানের জন্য। দ্বিধা দন্দের এ পৃথিবীতে এ সুখের আর কোন অস্তিত্ব নেই।
ঢাকা থেকে বাড়ির পথ আগের মতই আছে, জানালার পাশের সিটে এখনো হু হু বাতাস বয়ে যায়, যতটা পথ পেছনে পরে যেত ঠিক ততটাই আনন্দ আর খুশির রেখায় ভরে যেত মুখ, বাড়ি যাচ্ছি কত আনন্দ। অতচ আজ একই পথে যতটা এগোই ততই নিঃশ্বাস গুলো বেড়ে যায়, বুকের ভেতর যে কান্না জেগে উঠে আমি তা কোন ভাবেই আড়াল করতে পারিনা, তোমার মায়ার আঁচলহীন এ জীবনে দুঃখ গুলো আড়াল করতে করতে আমি হেরে যাচ্ছি প্রতিদিন, ডুবে যাচ্ছি ক-ফোটা অশ্রু জলে।
মোবাইলে এখনো তোমার নাম্বার টা সেভ করা আছে, আমার আঙ্গুলের আজও এতটা শক্তি সাহস নেই যে সেটা মুছে ফেলতে পারে।
যেথায় আছো ভাল থেকো মা।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৭:১৪