আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন যে, বনী ইস্রাঈল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল, আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। সবাই জাহান্নামে যাবে একটি দল ব্যতীত। সাহাবাগন জিজ্ঞেস করলেন, সেটি কোন দল হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আমি এবং আমার সাহাবাগন যে পথে আছি এ পথের উপর যারা থাকবে। (তিরমিযী- ২৬৪১, ইবনে মাযাহ- ৩৯৯২)
যত দলই সৃষ্টি হোক না কেন একটি দলই শুরু থেকে জান্নাতি হবে, যারা রাসূল (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরামের আক্বিদা ও আমলের সঠিক অনুসারী হবে।
বর্তমানে দেখা যায় কিছু দল নিজেদেরকে জান্নাতি দল দাবি করে, বাকিরা এ হাদীসের ব্যাপারে উদাসীন। তারা এ ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করে না; করলেও ভুল ভাবে এ হাদীস প্রচার করে। তারা বলে হাশর মাঠে ৭৩ কাতার হবে, ৭২ কাতার জাহান্নামে যাবে আর ১ কাতার জান্নাতে যাবে। তারা দল না বলে কাতার বলে, যাতে মানুষ প্রশ্ন করতে না পারে সেই জান্নাতি দল কোনটি? আপনারা কোন দলে?
আল্লাহতা'লা বলেছেন, "যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তারাই জান্নাতে যাবে।" (বাক্বারাঃ ৮২)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন, ঈমানের শাখা সত্তরটিরও বেশি। এর সর্বোচ্চ শাখা হচ্ছে "আল্লাহ ব্যতীত ইলাহ নেই" একথা স্বীকার করা, আর এর সর্বনিন্ম শাখা হচ্ছে, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা (মুসলিম, হা- ৬০, ইফা)। এছাড়া ধৈর্য, লজ্জা, সদাচরণ, সৎস্বভাব, আল্লাহ ও রাসূলকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসা, ইত্যাদি ঈমানের অঙ্গ।
সৎকর্ম হল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) যা করার আদেশ করেছেন তা পালন করা। সর্বোত্তম সৎকাজ হল যথাসময়ে সালাত আদায় করা, বিচার দিবস আল্লাহতা'লা সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নিবেন। তাই জান্নাতে যেতে চাইলে সবাইকে পাঁচওয়াক্ত সালাত আদায় করতেই হবে। তারপর যাকাত, সিয়াম, হজ্জ্ব ইত্যাদি সৎকাজসমূহ যথাসাধ্য পালন করতে হবে।
"যারা পাপকর্ম করে এবং যাদের পাপ তাদের পরিবেষ্টন করে তারাই জাহান্নামবাসী।" (বাক্বারাঃ ৮১)
সবচেয়ে বড় পাপ অর্থাৎ জাহান্নামে যাওয়ার প্রধান কারণ হল- শিরক। আল্লাহতা'লা ঘোষনা করেনঃ
"নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে (অংশীদার স্থির করে) আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান জাহান্নাম।" (মায়েদাঃ ৭২)
জাহান্নামে যাওয়ার আরেকটি কারণ হল- বিদআত। রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেনঃ
"ধর্মের নামে সকল নতুন কাজ হল বিদআত, সকল বিদআত হল গোমরাহি বা পথভ্রষ্টতা।" (মুসলিম- ১৫৩৫)
"সকল পথভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।" (নাসাঈ- ১৫৬০)
"যে ব্যক্তি বিদআত সৃষ্টি করে বা কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেয় তার উপর আল্লাহ, ফেরেস্তা এবং সকল মানুষের লানত। তার ফরজ ও নফল কোন ইবাদত কবুল হবে না।" (বুখারী- ৭৩০৬)
"জেনেশুনে বিদআতকারীর কোন আমল কবুল হবে না যতক্ষন না সে তওবা করে ফিরে আসে।" (বুখারী- ৩১৭২)
এছাড়া মিথ্যা, গীবত, চুরি, ডাকাতি, হত্যা, ব্যভিচার, মদ্যপান, সুদ, ঘুষ, পিতামাতার নাফরমানি, অশ্লীলতা এবং সকল মন্দ কাজ জাহান্নামে যাওয়ার কারণ। তাই জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে বাঁচতে হলে এসকল পাপকর্ম থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
শিরক-বিদআত মুক্ত কোন দল আশেপাশে থাকলে তাদের সাথে যোগদান করতে হবে আর না থাকলে একা একা ইবাদত- বন্দেগী করাই যথেষ্ট হবে। কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
"হক- এর অনুসারী দলই হল জামা'আত, যদিও তুমি একাকী হও।" (ইবনে আসাকির- ১৩, মিশকাত- ১৭৩ টীকা নং ৫)
নিজে ইবাদত করার পাশাপাশি পরিবার-পরিজনকেও তাকিদ দিতে হবে। আল্লাহতা'লা বলেছেন, "মুমিনগন, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর যার ইন্দন হবে মানুষ ও পাথর।" (তাহরীমঃ ৬)
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "ব্যক্তি তার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।" (বুখারী, মুসলিম)