somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামিক মূল্যবোধ ভিত্তিক সমাজ গঠনে করণীয়

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলামিক সরকার গঠন বা ইসলামিক আইনের বাস্তবায়ন করা বাংলাদেশে এখন সম্ভব নয়। আমাদের দেশের ৯০% মুসলিম হলেও পাঁচওয়াক্ত নামায আদায়কারী, সচ্চরিত্রের অধিকারী পরিপূর্ণ মুসলিমের সংখ্যা কম। ইসলাম সম্পর্কে তাদের অধিকাংশেরই সঠিক জ্ঞান নেই। এমতাবস্থায় একজন সৎ, চরিত্রবান, ইসলামি আইন বাস্তবায়নে ইচ্ছুক প্রার্থী হলে তার নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সমাজে সৎ লোকের সংখ্যা বেশি হলেই একজন সৎলোক নির্বাচিত হতে পারবে।

ইসলামিক দল কোনভাবে জয়লাভ করলেও ইসলামিক আইন বাস্তবায়ন করতে পারবে না। কারণ বাংলাদেশ স্বাবলম্বী নয়। ইসলাম বিদ্বেষী বন্ধুদেশ এবং দাতাগোষ্ঠী তা হতে দেবে না। তাই বাংলাদেশকে প্রথমে স্বাবলম্বী হতে হবে। দ্বিতীয় বাধা আসবে দেশের অভ্যন্তরের অমুসলিমদের পক্ষ থেকে নয়; বরং একশ্রেণীর নামধারী মুসলিমদের থেকে।
যুগ যুগ ধরে প্রচলিত অমুসলিমদের রীতি-নীতি হঠাৎ করে উঠানো যাবে না, বাধা আসবেই। মানুষকে জোর করে নামাযী বানানো যাবে না, বানিয়ে লাভও নেই কারণ এ নামায আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পড়া হবে না।

তাই প্রথমে আমাদেরকে সমাজের মুসলিমদেরকে প্রকৃত মুসলিম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে আমাদের উত্তম কর্মের মাধ্যামে শুধু পোশাক আশাক আর চেহারা বদলানোর মাধ্যামে সমাজে ইসলামের আদর্শ বাস্তবায়িত হবে না বরং প্রচলিত ইসলামী চেহারার মানুষেরা যে আধুনিক সমাজে অযোগ্য দু:খজনক হলেও এটা এখন অনেকটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে বিশেষ করে আমাদের তরুন সমাজের মনমানসিকতায়। আর দেশের ৫০% হচ্ছে আজ তরুন প্রজন্ম। এ বাস্তবতা বুঝে আমাদেরকে ইসলামের পক্ষে কাজ করার কৌশল অবলম্ভন করতে হবে। প্রযুক্তির সুফল যেমন হয়েছে কুফলও তেমন আছে অফুরন্ত তা স্বীকার করতেই হবে। আজকের তরুন সমাজের পক্ষে অশ্লিলতা বা কুচিন্তা, মাদকাসক্তিসহ ইত্যাদি ইসলাম বিরোধী পাপ কর্মের জড়িত হওয়া যত সহজ তা আগে ছিলনা।   

পরিপূর্ণ মুসলিম হতে হলে প্রথমে প্রয়োজন ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। তাই তাদেরকে জ্ঞান অর্জনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় জ্ঞান তাদের নিকট পৌঁছে দিতে হবে। উপকার বা লাভ ছাড়া কেউ কোন কাজ করতে চায় না। তাই প্রকৃত মুসলিম হলে কি কল্যান বয়ে আনবে সমাজে তা তাদেরকে বুঝাতে হবে।
মানুষ যখন দেখবে একজন মুসলিম চেহারার মানুষকে দেখা যায় মানুষের কল্যানে সবার আগে অগ্রসর হতে, আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানকে জানার জন্য এগিয়ে আসতে, কতাবার্তায় আবেগ নয় যুক্তিকে  প্রাধান্য দিতে তখন সে চরিত্রের মানুষেরাই সমাজে অন্যের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা অর্জন করতে আশা করতে পারে এবং তারাই সমাজে নেতৃত্বের পরিবর্তন আনতে পারে।

পবিত্র কোরআনপাকে আল্লাহ বলেন, "যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে তাদের জন্য আছে ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা।" (হজ্জ্বঃ ৫০)
"যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে আল্লাহ তাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করে দেন।" (মুহাম্মদঃ ২)
"মুমিনদের সাহায্য করা আল্লাহর দায়িত্ব।" (আর রূমঃ ৪৭)
"নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মীদের সাথে আছেন।" (আনকাবুতঃ ৬৯)
"আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি লাভ করে।" (রাদঃ ২৮)

সব মানুষই সুখী হতে চায়। ইসলাম পালনে পরিপূর্ণ সুখী হওয়ার উপাদান রয়েছে। মুমিন হলে সম্মানজনক জীবিকা, আল্লাহর সাহায্য এবং শান্তি লাভ করা সম্ভব। মুমিনগন একে অপরের ভাই (হুজুরাতঃ ১০), আল্লাহ সদাচারীদের ভালবাসেন (মায়েদাঃ ১৩), আল্লাহ সু-বিচারকারীদের ভালবাসেন (মায়েদাঃ ৪২),আল্লাহ অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অপছন্দ করেন (বাক্বারাঃ ২০৫), রাসূল (সাঃ) বলেছেন, পূর্ণ মুসলিম সে পুরুষ বা নারী যার যবান ও হাত থেকে অন্য পুরুষ বা নারী নিরাপদ থাকে (মিশকাতঃ ৬), কোন মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকি, তার সাথে লড়াই করা কুফুরী (বুখারী- ৪৮), প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, সম্ভ্রম ও ধন-সম্পদ অন্য মুসলিমের জন্য হারাম (মুসলিম-২৫৬৩)।

ইসলামের এ আদর্শগুলি মুসলিমদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করে সমাজ থেকে হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা, ঝগড়া-বিবাদ দূর করে সমাজে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তবে সেটা করতে হলে যারা ইসলামের কথা বলেন বা ইসলামী আদর্শের কথা বলেন তারা তাদের বাস্তব জীবনে তার প্রচলন করে অর্থাৎ নিজেদের কর্মে তার প্রতিফলন কিভাবে সম্ভব তার ট্রেনিং গ্রহণ করার প্রয়োজন সব চেয়ে বেশী। এভাবে প্রতিটি সমাজকে যদি ইসলামিক সমাজ হিসেবে গড়ে তোলা যায় তাহলেই বাংলাদেশে ইসলামী সরকার গঠন করা সহজ হবে।

তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে,তোমাদেরকে অবশ্যই শাসনকতৃত্ব দান করবেন। (আন নূরঃ ৫৫)

যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই কাফের। (মায়িদাঃ ৪৪)

কোন দেশ ইসলামিক আইন দ্বারা পরিচালিত না হলে তার জন্য জবাবদিহি করবে যারা ক্ষমতায় আছে তারা। সে দেশের জনগণকে দায়ী করা যেতে পারেনা বিশেষ করে যদি সমাজে সত্যিকার গণতন্ত্র না থাকে। তাই কোন সমাজে যদি অত্যাচারী শাসক ক্ষমতায় বসে পড়ে যারা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থকেই বড় করে দেখে এবং নিজের দেশের স্বার্থ ছাড়া বিদেশীদের স্বার্থ রক্ষা করায় সচেষ্ট সেখানে সাধারণ মানুষ অসহায় পড়বেই যদি সমাজের মানুষেরা ইসলামে সঠিক আদর্শের অনুসারী না হয় ।

মুসলিমের প্রতি আল্লাহর আদেশ হলো :
 "মুমিনগন,তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। (তাহরীমঃ ৬)
ব্যক্তি তার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (বুখারী, মুসলিম)
তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা সৎকাজের প্রতি আহবান জানাবে,নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং নিষেধ করবে অন্যায় কাজ থেকে। (আল ইমরানঃ ১০৪)

রাসূল (সাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম করে বলছি, অবশ্যই তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবে। নইলে আল্লাহ সত্বর তোমাদের উপর শাস্তি প্রেরণ করবেন অতঃপর তোমরা দোয়া করবে, কিন্তু তা আর কবুল করা হবে না। (তিরমিযী)

ইসলামকে একটি জীবন ব্যবস্থা হিসাবে পরিপূর্ণ করতে অবশ্যই রাষ্ট্রের প্রয়োজন আছে কিন্তু মনে রাখতে হবে মুহাম্মদ (সা.) ব্যক্তি জীবন দিয়েই ইসলাম প্রচার শুরু করেছিলেন, রাষ্ট্র দিয়ে শুরু করেন নি। তিনি মসজিদে নববীতে সাহাবাগনকে (রা.) শিক্ষা দান করতেন। বাংলাদেশের প্রতিটি মসজিদে এরকম শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা যায়। এজন্য মসজিদের ইমামকে কাজে লাগানো যেতে পারে। একটি সাধারণ উদাহরণ দিয়ে যদি বলি যেমন মসজিদের ইমামকে যদি দেখা যায় প্রতিদিন মসজিদের সামনে যে ফকিরগুলা আসে "তাদের যন্ত্রনায় চলা যায় না!" এ কথা না বলে পাড়ার ছেলেদেরকে নিয়ে এই ফকিরদের আসলেই কি সমস্যা তা দেখতে একেক করে পালা ক্রমে তাদের বাড়ীতে গিয়ে দেখে আসেন এবং তার সাহায্যের জন্য সবাইকে বলেন তাহলে সমাজে কি হবে একটু চিন্তা করেন। কিন্তু দেখা যায় পাঁচওয়াক্ত নামায পড়ানো ছাড়া মূলত তাঁর আর কোন কাজ থাকে না। ছেলে-বুড়ো যারা কোরান পড়তে জানেনা তাদেরকে তিনি বিনামূল্যে কোরান শিখাবা আগ্রহ নাই! অবশ্য এজন্য সমাজ থেকে বাড়তি সম্মানীর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সপ্তাহে কয়েকদিন মসজিদে আসর বা মাগরিবের পর ইসলামিক মাহফিল হতে পারে। যেখানে কোরানের তাফসির, হাদীসের উপর আলোচনা, ঈমান, নামাযের গুরুত্ব ও ফজীলত, যাকাতের গুরুত্ব, নবী-রাসূল, সাহাবাগনের জীবনী, চরিত্র গঠনের উপায়, মুসলিমদের অধঃপতনের কারণ, আদর্শ সমাজ গঠনের উপায়, মাসলা- মাসায়েল শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ভিত্তিক আলোচনা হতে পারে, যার মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি মানুষ ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। সমাজের সৎ লোকদের নিয়ে একটি দল গঠন করা হবে যারা সৎ কাজের আদেশ করবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং সমাজের সংস্কার করবে। মোট কথা সল্প পরিসরে একেকটা ছোট ছোট পরিকল্পনা হাতে নিয়ে প্রতিটি মসজিদে এভাবে কাজ শুরু করলে দেখা যাবে এক দিন সমাজে পরদুঃখকাতরতা তথা অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল একটি সমাজ প্রতিষ্ঠিত করা যাবে। ইসলাম যে সমাজে মানুষকে মানুষের উপকারে আসতে শিক্ষা দেয় তা বাস্তবে প্রমাণ করতে হবে। শুধু হাদিস আর কোরআন জেনে ভাষন দেয়ার দিন এখন শেষ। এখন প্রয়োজন সত্যের পথে বাস্তব প্রদক্ষেপ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×