প্রথম কারণঃ "এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সুরা রচনা করে নিয়ে এস। আর যদি না পার- অবশ্য তা তোমরা কখনও পারবে না, তাহলে সে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর।" (বাক্বারাঃ ২৩, ২৪)
আরবের নেতৃস্থানীয় লোকগুলো কোরান ও ইসলামকে সম্পুর্ণ উৎখাত এবং রাসূল (সাঃ) কে পরাজিত করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল কিন্তু তারা এ সামান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হল না। তাই আল্লাহতা'লা ঘোষনা করেনঃ
"বলুন, যদি মানব ও জ্বীন এই কোরানের অনুরূপ রচনা করে আনার জন্য জড়ো হয়, এবং তারা পরষ্পরের সাহায্যকারী হয়; তবুও তারা এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না।" (বনী ইসরাঈলঃ ৮৮)
দ্বিতীয় কারণঃ কোরআন কিছু গায়েবী সংবাদ এবং ভবিষ্যতে ঘটবে এমন অনেক ঘটনার সংবাদ দিয়েছে, যা হুবহু সংঘঠিত হয়েছে। যেমন- রোম ও পারস্যের যুদ্ধে রোমকরা পরাজিত হওয়ার পর কোরআন ঘোষনা করেছে, কয়েক বছরের মধ্যে রোম পারস্যকে পরাজিত করবে। (সুরা আর রূমঃ ২- ৪)। এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর মক্কার সর্দারগন হযরত আবু বকর (রাঃ) এর সাথে বাজী ধরে। শেষ পর্যন্ত কোরানের ভবিষ্যতবাণী অনুযায়ী রোম জয়লাভ করল এবং বাজীর শর্তানুযায়ী যে মাল দেয়ার কথা ছিল, তা তাদের দিতে হল। অবশ্য রাসূল (সাঃ) এ মাল গ্রহণ করেন নি। কেননা এরূপ বাজী ধরা শরীয়ত অনুমোদন করে না।
তৃতীয় কারণঃ কোরআনকে বারংবার পাঠ করলেও মনে বিরক্তি আসে না। বরং যত বেশি পাঠ করা হয় ততই তাতে আগ্রহ বাড়তে থাকে। দুনিয়ার যত ভাল ও আকর্ষণীয় পুস্তকই হোক না কেন, দু-চারবার পাঠ করার পর তা আর পড়তে মন চায় না।
চতুর্থ কারণঃ কোরআন ঘোষনা করেছে যে, কোরানের সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ গ্রহণ করেছেন। কেয়ামত পর্যন্ত এর মধ্যে বিন্দুবিসর্গ পরিমান পরিবর্তন- পরিবর্ধন না হয়ে তা সংরক্ষিত থাকবে।
"নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাযিল করেছি এবং আমিই এর নিশ্চিত রক্ষক।"
(হিজরঃ ৯)
পঞ্চম কারণঃ কোরআনে এলম ও জ্ঞানের যে সাগর পুঞ্জীভূত করা হয়েছে, অন্য কোন কিতাবে আজ পর্যন্ত তা করা হয়নি। ভবিষ্যতেও তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই সংক্ষিপ্ত ও সীমিত শব্দসম্ভারের মধ্যে এত জ্ঞান ও বিষয়বস্তুর সমাবেশ ঘটেছে যে তাতে সমগ্র সৃষ্টির সর্বকালের প্রয়োজন এবং মানবজীবনের প্রত্যেক দিক পরিপূর্ণভাবে আলোচিত হয়েছে। আর বিশ্বপরিচালনার সুন্দরতম নিয়ম এবং ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবন থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের নির্ভুল বিধান বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও জীব-বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতির সকল দিকের পথনির্দেশ সম্বলিত এমন সমাহার বিশ্বের অন্য কোন আসমানী কিতাবে দেখা যায় না।
কোরআনের অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যথাযোগ্য বিস্তারিত আলোচনা সম্ভব না হলেও যতটুকু বলা হলো, এতেই সুস্থ বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তিমাত্রই একথা স্বীকার করতে বাধ্য হবে যে, কোরআন আল্লাহরই বানী এবং রাসূল (সাঃ) এর সর্বশ্রেষ্ঠ মু'জেযা।
(উৎসঃ মারেফুল কোরআন)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৬ ভোর ৬:৩৪