কাহিনীতে হঠাৎ জটিল একটা টুইস্ট । নায়িকা-কে ঘরে একা পেয়ে গেছে ফ্রেঞ্চ-কাট দাড়িওয়ালা খলনায়ক । কিছু একটা হয়ে যেতে পারে । এদিকে এই মুহূর্তে নায়কের পক্ষে ঘটনার স্থান অর্থাৎ ঝিকাতলা এলাকায় আসা সম্ভব না । কারণ সে পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় জামে পড়েছে ।
নায়িকা ভিলেনকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলছে 'শয়তান !!! তুই আমার দেহ পাবি, কিন্তু মন পাবি না ।'
ভিলেন কাঠি দিয়ে দাঁত খুচাতে খুচাতে উত্তর করছে 'আমার তো দেহই লাগবাম । মন দিয়া আমি কি করবাম? আমি কি রবীন্দ্রনাথ যে মন নিয়া গীতিকাব্য রচনা করবাম ? আমার সিস্টেম হইল --ধরবাম তক্তা মারবাম পেরেক ।কেডা তক্তা আর কেডা পেরেক এইটা কি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবাম ?'
দৃশ্যটা টান টান উত্তেজনাকর হওয়ার কথা । কিন্তু কেন যেন ঠিক জমছে না । ভিলেন একটা কাঠি দিয়ে এমন ভঙ্গিতে দাঁত খুচাচ্ছে যে মনে হচ্ছে এইসব ধর্ষন-টর্ষন করার চেয়ে এই মুহূর্তে তার দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়াটা অধিক জরুরী ।
পরিচালক জানশের তীরন্দাজ বললেন । কাট - কাট । এটা তার প্রথম ছবি । এখানে উল্টো-পাল্টা করলে হবে না । তিনি ভিলেনের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত গলায় বললেন 'এই যে ভাই ভিলেন --আপনি হঠাৎ নেত্রকোনার ভাষা বলা শুরু করলেন কেন ? ভিলেনের বাড়ি নেত্রকোনা এমন তো কিছু সিনেমার কোথাও এ্যাসটাবলিস করা হয় নাই ।সিনেমার এ পর্যায়ে এসে হঠাৎ আঞ্চলিক ভাষা -- -করবাম - খাইবাম - যাইবাম ।অডিয়েন্স তো কনফিউজড হয়ে যাবে ।'
এ্যাসিসটেন্ট ডিরেক্টর ফজলুর রহমান বলল 'বস এখানে একটা ডায়গলও বাদ পড়ছে । ভিলেন নায়িকাকে উদ্দেশ্য করে উত্তেজিত কন্ঠে বলছে -- কাপড় চোপর খুলে এদিকে আস । আচ্ছা্ বস কাপড় চোপরের জায়গায় কি ব্লাউজ-পেটিকোট দেয়া যায় ? তাহলে আরকি বিষয়টা দর্শকদের কাছে আরেকটু ক্লিয়ার হয় ।'
জানশের তীরন্দাজ খুবই বিরক্ত হলেন । ফজলুকে কঠিন একটা ধমক দেয়া দরকার । কঠিন অশ্লীল কোন গালি দিলে আরও ভাল হয় । কিন্তু সমস্যা হলো প্রচন্ড রাগে কোন গালিই মনে পড়ছে না । মাথার ভেতর শুধুই ঘুরছে একটা কবিতা 'আমি হব সকাল বেলার পাখি'।
খুবই আশ্চর্য ব্যাপার ।
ব্লগার ভাইদের মধ্যে কেউ যদি ধর্ষনের রগরগে বর্ণনার আশায় এই পোস্টে প্রবেশ করে থাকেন তাহলে ঘটনার এ পর্যায়ে সামান্য হতাশ হতে পারেন । কারণ সেই দিকে আমরা আপাতত: যাচ্ছি না ।আমরা এই মুহূর্তে এই সিনেমার সেট থেকে ফাস্ট ফরোয়ার্ড হয়ে দেড় বছর সামনে চলে যাচ্ছি ।
জানশের তিরন্দাজের ছবি হিট করেছে । ছবির নাম তিনি প্রথমে দিয়েছিলেন 'এক আকাশ নীল । পরে চিন্তা ভাবনা করে নতুন নাম দিয়েছেন 'ইবলিসের ঘরে খবিশ । নতুন এই নামটা ভাল হয়েছে ।দর্শক পছন্দ করেছে ।
তবে এই মুহূর্তে তিনি চিন্তিত অন্য একটা বিষয় নিয়ে । পত্রিকায় খবর বেড়িয়েছে তিনি ছবির নায়িকা ফেন্সিকে বিয়ে করে ফেলেছেন । আগামীকাল তার বউ জেবুন্নেসা খানম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবে । খুবই চিন্তার কথা ।
মানুষ একটু বিখ্যাত হলে আরেকটা বিয়ে করে এইটা তো খুবই সাধারণ ঘটনা । ধর্মেন্দ্র, আমীর খান, কুমার শানু, ক্রিকেটার আজহারউদ্দিন, সঙ্গীত জগতের কবীর সুমন, সাবিনা ইয়াসমীন, হুমায়ূন আহমেদ, অপি করিম, এরশাদ, নায়ক আলমগীর অনেকেই দুই বা দুইয়ের অধিক বিয়ে করেছে । তার বেলায় এত চিল্লা-পাল্লা কেন?
জানশের তিরন্দাজ কথাটা খারাপ বলেন নাই । সত্যিই তো প্রায়ই দেখা যায় যারাই বিখ্যাত হয় আগের বউ ছেড়ে নতুন একটা বিয়ে করে । কারণটা কি? বিষয়টা নিয়ে আমার বন্ধু উড়াল পঙ্খীর সাথে আলোচনা হলো ।
উড়াল পঙ্খীর আসল নাম মোহাম্মাদ সায়েদুর রহমান । সে বিশাল মানবতাবাদী । আদিবাসীদের অধিকার আদায় জাতিয় মিছিলের অগ্রভাগে সাধারণত তাকে দেখা যায় । বছর দুয়েক আগে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নামের ভেতর সে কোন ধর্মীয় বিষয় রাখবে না । তাই এফিটেভিট করে নতুন নাম নিয়েছে উড়াল পঙ্খী বা ফ্লাইং বার্ড ।
উড়াল পঙ্খী বলল 'দোস্ত-- খিদা হইল চার প্রকার । একটা হইল চ্যাটের খিদা (যৌনতার কথা বলা হচ্ছে), প্যাটের খিদা (চ্যাটের সাথে মিলানোর জন্য প্যাট বলা হচ্ছে, আসল শব্দটি হলো পেটের ক্ষুধা), একটা হইল হৃদয়ের খিদা আর সবশেষে হইল মস্তিুস্কের খিদা । এইটা কিন্তু সিরিয়াল অনুসারে মানুষের শরীরের নীচের থেকে আস্তে আস্তে উপরে উঠছে । চিন্তা কইরা দেখ ।'
চিন্তা করলাম । সিরিয়াল ঠিক আছে ।
উড়াল পঙ্খী বলল 'আমরা যারা মানুষ হিসেবে একটু নীচের দিকে তারা প্যাটের ক্ষুধা আর চ্যাটের ক্ষুধা মিটাতে পারলেই খুশি মনে জীবনটা পাড় করে দেই । কিন্তু যখন আমরা প্রেমে পড়ি তখন আমাদের ক্ষুধাটা আরেক স্তর উপরে ওঠে । আমরা তখন হৃদয়ের ক্ষুধা অনুভব করি । তিরন্দাজের ক্ষেত্রে যা হয়েছে তা হলো সে প্রথম দুটোর খিদের নিশ্চয়তা অর্জন করেছে । এখন আর এই দুটোতে তার মন ভরছে না । তাই সে এখন ভাবছে নতুন একটা বিয়ে করি । তবে অধিকাংশ মানুষ এত স্তরে বেশিদিন অবস্থান করতে পারে না । প্রেমে সমাপ্তি কিংবা বিয়ের পর পরই তাদের জীবন আবার আগের সেই দুটো খিদের ভেতরেই সীমাবন্ধ হয়ে পড়ে । এক্ষেত্রে অবশ্য কবিরা ব্যতিক্রম । তারা তাদের হৃদয়ের এই খিদেকে দীর্ঘদিন জিইয়ে রাখতে পারেন ।
সবশেষে হলো মস্তিস্কের ক্ষুধা । পৃথিবীর কম সংখ্যক মানুষই এ পর্যায়ে যেতে পারে । আর যারা যেতে পারে তারা কখনও সুখী হয় না । তাদরে ইন্টেলেকচুয়াল হাইট আর সৃজনশীলতা এতটাই উচ্চ মার্গের হয় যে তারা তাদের সমকক্ষ কোন সঙ্গী পেতে সারাজীবন পাড় করে দেয় । অনেক লেখক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী এই স্তরে যেতে পারেন । কিন্তু লক্ষ করে দেখবি এদের পারিবারিক জীবন খুবই এলোমেলো ।'
চিন্তা করে দেখলাম । কথাটা সত্যি মনে হচ্ছে ।
উড়াল পঙ্খী বলল 'অনেক জ্ঞানের আলাপ হইল । এখন পকেট থিকা একশ টাকার একটা নোট বাইর করতো চান্দু । সামনের মাসে সাওতালদের একটা প্রোগ্রাম আছে টাকা লাগবে ।'
উড়াল পঙ্খীর সাথে কথা বলে বাইরে বেরিয়ে এলাম । আকাশে মেঘ করেছে । চারপাশে ঠান্ডা একটা বাতাস । উড়াল পঙ্খী আধা পাগল হলেও মাঝে মধ্যে দুই একটা কথা ভালই বলে ।
পাঁচ টাকার একটা ট্যাবলয়েট পত্রিকা কিনলাম । বড় বড় শিরোনামে লেখা তিরন্দাজ নায়িকা ফেন্সিকে বিয়ে করার কথা স্বীকার করেছে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১২ সকাল ৯:৫৫