আমরা অনেকেই যত সহজ ভাবি,''ধর্ম'' বিষয়টা অতটা সহজ না। বিভিন্ন ধর্মের বিকাশ আর উৎপত্তি দুটাই অত্যন্ত জটিল। আমাদের চারপাশে এখন একেশ্বরবাদী ধর্মের প্রাধান্য দেখতে পাই। অথচ একটা সময় এটা কল্পনাও করা যেত না। মিশরে বা ইজিপ্টেও নানা ধরনের দেবতার পুজা করা হত। আমন-রা,আইসিস ইত্যাদি নানা দেব দেবী ছিল এবং এদের পূজারীরা একে অপরের দেব-দেবীদের অস্বীকার করত না। এমন পরিবেশে ইজিপ্টে একেশ্বরবাদী ধর্ম নিয়ে এলেন ফারাও আখেনাতন ।
সেটা খৃস্টের জন্মেরও ১৩৫০ বছর আগেকার ঘটনা।
ক্ষমতায় আরোহনের সময় তার নাম ''আখেনাতন'' ছিল না। তার নাম ছিল আমেন হোতেপ-৪। তখনকার দিনে দেব দেবীর নামের সাথে মিল রেখে ফারাও দের নাম হত। এভাবে ''আমন'' এর সাথে মিলিয়ে ''তুতেনখা-আমন"(তুতেনখামেন)।
তেমনি আমেন হোতেপ নামটাও সেই ''আমন'' দেবতার নামের সাথে মিলিয়ে রাখা। তো ক্ষমাতায় আরোহনের ৫ বছরের মাথায় তিনি রাষ্ট্রীয় ভাবে নতুন একেশ্বরবাদী ধর্ম চালু করলেন। ধর্মটি ছিল ''আটন'' ধর্ম। এর মানে তিনি শুধু সূর্্য দেবতার পূজা রাষ্ট্রীয় ভাবে অনুমোদন করলেন। নাম থেকে ''আমন'' কথাটি বাদ দিয়ে আটন বা আতান এর সাথে মিলিয়ে নতুন নাম রাখলেন ''আখেনাতন''।
সূর্য পূজা বা আটন ধর্ম প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই তিনি বাকি সব ধর্ম নিষিদ্ধ করে দিলেন। এতে আগে রাজকীয় পৃষ্ঠ-পোষকতা পাওয়া ''আমন'' ধর্মের অনুসারী ও প্রিস্টরা ক্ষুব্ধ হলেন।
আখেনাতন সূর্যের পূজা করলেও সেটা বস্তু কেন্দ্রিক পূজা ছিল না। সূর্যকে পূজা করতেন স্বর্গীয় অস্তিত্বের প্রতীক হিসেবে,যার শক্তি বিকরিত হয় তার রশ্মি থেকে। ছবিতে দেখুন,সেই আমলেই কত সুন্দর ভাবে গোলাকার সূর্য থেকে রশ্মি বিকিরনেছবি তুলে ধরা হয়েছে...
তো আমরা পবিত্র কুরআন ও বাইবেল থেকে মানুষের বহু দেবতা পূজার প্রতি টেন্ডেনসি দেখতে পাই।তেমনি আখেনাতনের সময়ও মানুষ একেশ্বরবাদী ধর্মটা ভালো ভাবে নিলনা। ফারাও আখেনাতন রহস্যময় কারনে মারা গেলেন।সেই সাথে ইজিপ্ট থেকে আটন ধর্ম ঝেটিয়ে বিদায় করে দেয়া হল। আমন এর প্রিস্টরা আখেনাতনের নাম পর্যন্ত মুছে দিল। ''আখেনাতন'' নামটি জনগনের কাছে ঘৃন্য বলে বিবেচিত হল।
যাইহোক, আধুনিক যুগে বিশেষজ্ঞদের কাছে ''আখেনাতন'' নামটি একেশ্বরবাদের জনক নামে পরিচিত হয়েছে। তবে তার এই সূর্য দেবতার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত প্রীতির কারনও তারা বের করতে চেয়েছে।
সাম্প্রতিক কালে আখেনাতন এর ফ্যামিলি ট্রি ঘেটে ও নানা পর্যবেক্ষন করে বিজ্ঞানীরা বের করেছেন যে, আখেনাতন এক জটিল জেনেটিক রোগে ভুগছিলেন।রোগের নাম মারফানস সিনড্রম ।
এই রোগে হাতের আঙ্গুল,পায়ের পাতা অস্বাভাবিক লম্বা হয়ে যায়।
তিনি অতিরিক্ত সূর্যের আলো ছাড়া দেখতে পেতেন না। হালকা আলোয় তিনি অনেকটা অন্ধ হয়ে যেতেন।তাছাড়া ঠান্ডাও সহ্য করতে পারতেন না তিনি। সূর্যের প্রতি তার এই নির্ভরশীলতাই হয়ত এই আতন ধর্ম প্রতিষ্ঠার পেছনে কাজ করেছে। ছবিতে দেখুন আখেনাতন এর বোনের ছবি। তার মাথাটি অস্বাভাবিক ভাবে বড়। এটাও জেনেটিক রোগের কারন।
আমরা হয়ত সবাই আখেনাতনের কথা শুনি নি।কিন্তু নেফারতিতির কথা ঠিকই শুনেছি। আসলে নেফারতিতি ছিলেন আখেনাতন এর স্ত্রী।
আখেনাতনের মৃত্যুর পর হারেম হাব ইজিপ্টের বিশৃংখলা দূর করেন আর ইজিপ্ট ভুলে যায় আখেনাতনের কথা।