
মায়ের জন্য ভালোবাসা অকৃত্রিম। জন্মের পর প্রথম মায়ের স্পর্শ পেয়ে দেহ-মন শিহরণ জাগে মানব-দেহের। মা যেভাবে নি:শ্বার্ত ভালোবাসে তার সন্তানদের এমন ভালোবাসা কী পৃথিবীর আর কারো মাঝে পাওয়া যায়? মাকে ভালোবাসার জন্য কী কোন নির্দিষ্ট দিনক্ষণের প্রয়োজন আছে? জীবনের প্রতিটি দিন, প্রতিটিক্ষণই সন্তানের জন্য মা দিবস। মায়ের জন্য ভালোবাসা চিরন্তন, অনাবিল।
আমার মা কয়েক বছর আগে গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বেশ কিছু দিন, চিকিৎসকগণ বলেছিলেন বেশি দিন বেঁচে থাকা সম্ভব নয়, কিন্তু মহান আল্লাহর কৃপায় অপারেশন সফল হয় এবং সবার দোয়ার ফলে আমার আম্মা পুরো সুস্থ হয়ে উঠেন, আলহামদুলিল্লাহ। যে ক’দিন মা হাসপাতালে ছিলেন আমি বুঝতে পেরেছিলাম সংসারে মার ভূমিকা কত মহান। মা সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে যান, প্রতিদিন মার কাছে একবার ফোনে কথা না বললে ভালই লাগে না। কোন দিন ফোন না দিলে মা ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেন আজ তো ফোন দাও নি, ব্যস্ত ছিলে? মার কাছে কি কোন ব্যস্ততা টিকে? গ্রাম থেকে কেই আসলে তার কাছে মা কত কিছুই না দিয়ে দেন, রান্না করা খাবারও পাঠিয়ে দেন। মা কি জিনিস, যার নেই সে ভাল করে টের পায়।

পিতামাতার সেবাযত্ন, খোঁজ খবর শুধু এক দিনের জন্য নয় বরং সারা জীবনভর সেবা করার শিক্ষা আল্লাহপাক আমাদের দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাআলা বলেন, আর তোমার প্রভু-প্রতিপালক একমাত্র তারই ইবাদত করার এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার তাগিদপূর্ণ আদেশ দিয়েছেন। তোমার (জীবদ্দশায়) তাদের একজন বা উভয়েই বার্ধক্যে উপনীত হলে তুমি তাদের উদ্দেশ্যে বিরক্তিসূচক ‘উহ’-ও বলো না এবং তাদেরকে বকাঝকা করো না, বরং তাদের সাথে সদা বিনম্র ও সম্মানসূচক কথা বলো। আর তুমি মমতাভরে তাদের উভয়ের ওপর বিনয়ের ডানা মেলে ধর। আর দোয়ার সময় বলবে, ‘হে আমার প্রভু-প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি সেভাবে দয়া করো যেভাবে শৈশবে তারা আমায় লালন-পালন করেছিল’ (সুরা বনী ইসরাঈল, ২৩-২৪)।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার একজন লোক মহানবীর (সা.) কাছে জিজ্ঞাসা করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! মানবজাতির মধ্যে কোন ব্যক্তি আমার নিকট সদয় ব্যবহার ও উত্তম সাহচর্যের সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত?’ উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলো, ‘এবং তারপর?’ তিনি (সা.) উত্তর দিলেন, ‘তোমার মা’। লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করলো, ‘এবং তারপর’? তিনি (সা.) উত্তর দিলেন তোমার পিতা’। (বোখারি, মুসলিম)
অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, ‘লোকটি জিজ্ঞাস করলো, হে আল্লাহর রাসুল! কোন ব্যক্তি আমার সাহচর্যের বেশি উপযুক্ত? তিনি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার পিতা, তারপর তোমার নিকটাত্মীয়গণ’ (বোখারি ও মুসলিম)।
মহানবী (সা.) সমাজে যেভাবে একজন নারীকে মা হিসাবে, স্ত্রী হিসাবে মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন তেমনি তিনি তাদেরকে দিয়েছেন সমঅধিকার। ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এতে নারী-পুরুষ সকলের অধিকারসমূহ সুষ্ঠু ও নির্ভুলভাবে বিন্যস্ত রয়েছে। বিশ্ব নবী (সা.) একজন নারীকে মা হিসেবে যে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন, তার দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া ভার। পৃথিবীতে একজন মানুষের প্রতি অন্য যে মানুষের অবদান, দয়া ও সহানুভূতি সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন মা।
অনেক ত্যাগ ও দুঃখ-কষ্ট করে একজন মা বড় করে তোলেন তার সন্তানকে। নিজে না খেয়ে সন্তানকে খেতে দেন। নিজে শত কষ্ট সহ্য করলেও সন্তানের সামান্য কষ্ট মা সহ্য করতে পারেন না। মাকে অসহ্যকর কষ্ট দিয়ে, মায়ের কোলে তিলে তিলে বড় হয়ে সেই মাকে ভুলে যাওয়ার খবর প্রতিনিয়ত পাওয়া যায়। এমন উন্মাদ সন্তানও রয়েছে যারা এই প্রিয় মা বাবাকে হত্যা পর্যন্ত করে। বড়ই কষ্ট হয়, যখন শুনতে পাই কোন সন্তান পিতা-মাতার গায়ে হাত উঠিয়েছে বা ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। যারা এমন করে তারা আসলে সন্তান নামে কলঙ্ক। তারা ইহকালেই জাহান্নাম অর্জন করে নেয়।
বুক ফেটে যায় কান্নায় যখন দেখতে পাই প্রিয় বাবা মাকে রেখে আসা হয় বৃদ্ধাশ্রমে। মা দিবসে বছরে একবার গর্ভধারিণী মায়ের কাছে যাওয়া হয় বা ফোনে ‘হাই-হ্যালো’ করা হয়। আর অসহায় মা নীরবে বোবাকান্না কাঁদেন বৃদ্ধাশ্রমের চার দেয়ালে। অনাহারে অর্ধাহারে ভোগেন। কথা বলার মতো কেউ নেই। এমন সন্তানদের কী হবে একটু চিন্তা করে দেখুন। তারা কী আল্লাহপাকের হাত থেকে রেহাই পাবেন। এছাড়া তারা যখন বৃদ্ধ বয়সে উপনিত হবেন তাদের যে এমন অবস্থা হবে না এটা কি কেউ বলতে পারেন?
তাই সময় থাকতে এ জগৎ থেকেই জান্নাতের টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। আল্লাহতাআলা আমাদের সকলকে বিবেক দিন, আমরা যেন আমাদের মাতা-পিতার সাথে উত্তম আচরণ এবং তাদের সেবায় সর্বদা নিয়জিত থাকি।
ছবি: গুগল
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



