আশ্বিনের শেষ সময়। মধ্যরাতে শীত শীত লাগে। হালকা বাতাস বইছে, আমার শীত শীত লাগছে তবু বসে থাকতে ভাল লাগছে। বারান্দর সিড়ির পাড়েই রজনীগন্ধা ফুলের গাছ। সুভাষ ছড়াচ্ছে। ফুলের গন্ধে মহুয়া ভাব। শুনেছিলাম রজনীগন্ধা গাছের নিচে সাপ থাকে। আমি এখনো সাপ দেখতে পাইনি। রাস্তার পাশে একটা কাঠালী-চাপা গাছ আছে। প্রচন্ড গন্ধ ছড়ায়, তীব্র গন্ধ সহ্য করা যায় না।
পাশের বাসার মেয়েটা ইংরেজী গান শুনছে। শহর থেকে এসেছে, আধুনিক মর্ডান মেয়ে। মধ্য রাতেও উচ্চ শব্দে গান বাজাচ্ছে। বিরক্ত লাগছে। এখন যদি অামার মন কেমন করে এই রবিন্দ্র সঙ্গীত বাজত তবে ভালো লাগত।
আচ্ছা রুপা কি করে এখন, নিশ্চয় রবিন্দ্র সঙ্গীত ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, নয়ত জানালার পাশে বসে তারা দেখছে। আকাশে অনেক তারা। যে বছর বেশি তারা উঠে সেই বছর নাকি দেশে মন্দা যায়। এখন ত আর মন্দা হয়না। আমি দেখিনি মন্দা হতে, তবে শুনেছি আগে প্রায় বছরেই মন্দা হত।
গত দুইদিনে রুপাকে বেশ কয়েকবার স্বপ্নে দেখেছি। প্রথমবার গত রাতে, রুপা একটা আসমানী রঙ এর শাড়ী পড়ে আমার রুমে আসে। আমার টেবিলের উপর বসে। আমি বললাম টেবিলে না বসে চেয়ারে বসতে কিন্তু সে বলল, তার টেবিলের উপর বসতেই ভাল লাগে। টেবিলের উপর বসে পা দোলানো যায় এই যুক্তিতে। অন্য অারেকটা যুক্তি আছে তার কাছে কিন্তু সেটা বলবে না।
পরের বার ত দিবা স্বপ্ন। চেয়ারে হেলান দিয়ে বই পড়ছিলাম,বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রুপা আমার পাশে এসে দাড়ায়। আবার শাড়ি পড়ে, তবে এবার রঙটা ভিন্ন। কি রং বলতে পারব না। পৃথিবীতে রং এর অভাব নেই। কত রকমের রঙ হতে পারে এটা মেয়েরাই ভালো বলতে পারবে।
রুপা আমি তোমার হাত ধরতে পারি? অবশ্যই পারেন তবে শক খাওয়া যাবে না, রুপা বলল। আমি বললাম কেন? মেয়েদের হাত ধরলেই কি সবাই শক খায় নাকি। রুপা বলল, সবার কথা জানিনা কিন্তু শুনেছি পুরুষেরা প্রথম মেয়েদের হাত ধরলে নাকি শক খায়। আমি বললাম ঠিক আছে আমি শক খাব না। আমি হাত বাড়ীয়ে দিলাম কিন্তু রুপা পিছিয়ে গেল।
মাথায় প্রচন্ড একটা আঘাতে আমার ঘুম ভাঙল। বুঝতে পারলাম আমি বাস্তবে নয় স্বপ্নেই রুপাকে দেখছিলাম।
সর্বশেষ স্বপ্নটা দেখেছি আজ রাতের এগারটার দিকে। মাথাটা ব্যাথা করছিল শুয়েছিলাম। জোর করেই ঘুমিয়ে গেলাম। দেখলাম, বারান্দায় বসে আছি, গন্ধরাজের সৌন্দয্য উপভোগ করছি, আকাশে এক ফালি চাঁদ উঠেছে। একটা সিগারেট হাতে, দেয়াশলাই এর আগুন ধরাতে যাব এমন সময় নীল শাড়ী পড়ে রুপার আগমন। আপনাকে না বলেছি, আপনি সিগারেটা খাবেন না তারপরেও সিগারেট খাচ্ছেন কেন? আচ্ছা আপনার কাছে সিগারেট কয়টা আছে? রুপা বলল।
মাত্র একটা আছে। আমি বললাম।
তাহলে সিগারেটটা দিন, আমি খাব।
তুমি সিগারেট খাবে। বুঝেছি যাও আমি সিগারেট খাব না। বলেই সিগারেটটা ফেলে দিলাম। রুপা বলল আপনার পাশে বসা যাবে। আমি কিছু বলার আগেই রুপা আমার পাশে বসে পড়ল।
সত্যিই এখন একটা সিগারেট ধরাতে ইচ্ছা করছে। সিগারেটে নাকি আনন্দ আছে। অন্যকে পুড়িয়ে শেষ করার আনন্দ। থাকতেও পারে, এটা সাইকোলজিক্যাল বিষয় তারাই ভালো বলতে পারবে। ইদানিং সিগারেটর এর বিজ্ঞাপন গুলো খুব সুন্দর বানায়। নিরুৎসাহিত করার নামে উৎসাহিত করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:২৪