লেখাগুলো বছরখানেক আগে ফেইজবুকে দেওয়ার জন্যই লিখেছিলাম। আমার ভাবনাটা শুধুই আমার ভিতরে আর ফেইজবুকেই সীমাবদ্ধ ছিল। কারণ তখন ব্লগে লেখা পড়া হলেও লিখার সাহস হয়নি। আজকে হঠাৎ লেখাদুটো চোখের সামনে ভাসল তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
১। বলতে পারেন শিক্ষা জীবনের বাধ্যতামূলক বইয়ের পড়া আমাদের মনে থাকে না কেন?? কিংবা অনেকবার পড়ার পর তা মুখস্ত হয় কেন??? অথচ আমরা যদি কোন ম্যাগাজিনে অথবা সাধারণ জ্ঞানের বই কিংবা পত্রিকা থেকে বা অন্য কোন মাধ্যমে একটা তথ্য পাই তা আমাদের অনেক দিন মনে থাকে কেন???
আমাকে প্রশ্ন করা হলে আমার উত্তর হল একটা আমাদের জোর করে পড়ানো হয় আরেকটা আমরা নিজের ইচ্ছায় পড়ি। একটা পড়তে আমাদের ভাল লাগে আরেকটা পড়তে ভাল লাগে না।
মানুষ একটু স্বাধীন থাকতে পছন্দ করে বেশি। আর পুস্তকের বিদ্যাটা একটু জোড় করে করানো হয় যা একটু স্বাধীনতা বিরোধী। যার কারণে অনেকেই তা পছন্দ করে না।
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশেই মানুষ তার পছন্দের কাজ বা পড়াশোনা করার সুযোগ পায় না। তাদের জোর করে অপছন্দের বিষয় পড়তে হয় বা কাজ করতে হয়। যা একজন মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন।
অবার কিছু মানুষ আছে যারা তাদের পছন্দের বিষয় পড়ার সুযোগ পায় আর তারা সেই বিষয়ে বেশ ভালই করে কিন্তু তার সংখ্যা কত?? খুব কম।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করে চাকুরি করার জন্য আর সেই জন্য সবার পছন্দ বা অপছন্দ যাইহোক না কেন মেডিকেলে পড়তে চায়। কারণও আছে পাশ করতে পারলে চাকুরি নিশ্চিত। একটা সময় ইঞ্জিনিয়ার এর খুব কদর থাকায় অনেকেই এই দিকে ঝুঁকেছিল অনেক। এখনো আছে তবে আগের তুলনায় কম।
কিছুদিন আগে শুরু হয়েছে বিবিএ এর বাজার। বিবিএ করলেই চাকুরী নিশ্চিত। আর সেই কারণে দেশ ভারি হয়ে গেল বিবিএ এর ছাত্র দিয়ে। সত্যি বলতে কি আমার বাবা-মা ও চাই আমি যেন একটা ভাল চাকুরি করতে পারি আর সেই লক্ষ্যে তারা আমাকে বিবিএ তে ভর্তি করেছে। আমার পছন্দ সাহিত্য অথচ আমি পড়ছি কি? ব্যবসায় শিক্ষা। চাকুরী করার কোন ইচ্ছা আমার নাই কোনদিন ছিলও না। শুধু বাবা- মায়ের ইচ্ছা পূরণ করা জন্য নিজের অপছন্দের বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছি।
যাইহোক এখন শুরু হয়েছে আইবিএ। ইন্টার পাশ করার ছাত্রদের মাথায় চিন্তা এখন দুইটা হয় মেডিকেল অথবা আইবিএ বা বিবিএ। ব্যাতিক্রমও আছে কিন্তু এর আধিক্যই বেশি।
আমি খুব অবাক হই যখন একজন শিক্ষক বলেন এখন যদি ভালমত পড়াশোনা না কর তবে চাকুরি ত পাবেই না যদিও পাও তবু কোন উন্নতি করতে পারবে না। এই কথাটা কোন শিক্ষক বলে না কিছু শিখার জন্য শিখ। এখনকার শিক্ষা কর্মমূখী শিক্ষা আর শিক্ষার গন্ডিটা কর্ম পযন্তই হয়ে যাচ্ছে। কেই আর জ্ঞানের জন্য কিছু শিখছে না। যা শিখছে তা এই কর্মের ভিতরই সীমাবব্ধ রাখছে নিজের জীবনে আর কিছু প্রয়োগ করছে না।
জানার জন্য আর মানার জন্য জ্ঞান অর্জন করি। শিক্ষাকে বিক্রি করে আমার পেট চালাতে হবে না।
২। বাংলাদেশের লেখাপড়াটা তোতা পাখির মত না হয়ে ক্ষুদার্থ মানুষের মত হওয়া উচিৎ ছিল। তোতা পাখিকে যা শিখানো হয় তাই শিখে আর ক্ষুদার্থ মানুষ চোখের সামনে খাবার পেলেই খাওয়া শুরু করে।
বাধ্যতামূলক বই পড়া ছাড়া বাইরের বই পড়াটা বাংলাদেশের তরুণ সমাজ প্রায় ভুলেই গেছে। নিজের নিয়মিত পড়াশোনার বই পড়েই শেষ করতে পারে না সেখানে বাইরের অন্য একটা বই পড়ার সময় কোথায়। তবু যদি একটু সময় পায় তবে তা কাটে ফেইজবুকে। মানুষ এখন বই কিনে অথবা পড়ে বার্ধক্য বয়সে একাকিত্ব কাটানোর জন্য।
ক্লাসে স্যার পড়ানোর সময় বলে বেশি বেশি বই পড়বে। আরো কত কিছু, কত জ্ঞান বই পড়ার জন্য। অথচ আজকে ক্লাসে একটা পড়া দিয়েছে কাল যদি সেটা না পার তবে তুমি ক্লাসের গর্দভ একটা ছেলে। কোনদিন শুনিনি স্যার এমন বলেছে কাল পড়া পড়ে আস আর ছাত্র সেই পড়া না পড়ে অন্য কোন বই পড়ে এসেছে তার জন্য স্যার তাকে সাধুবাদ দিচ্ছে।
গন্ডির বাইরে পড়াশোনা করলেই তিরস্কার সর্বস্তর থেকে। আসলে আমরা কি শিখছি?? বই ত পড়ছি না যেন পাথরের দেয়াল ভেঙ্গে তা গিলে গিলে খাচ্ছি আর আশা করছি সেই দেয়াল ডিঙ্গিয়ে পাব চাকুরি নামক সোনার হরিণ।
বর্তমান সময়ে জ্ঞান সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে একটা কাগজের উপর কয়েকটা লেখা যার নাম সাটিফিকেট তার ভিতরে। যার যত সার্টিফিকেট আছে সে তত শিক্ষিত।
দূর ছাই ভাল লাগে না এই সব ধরাবাধা নিয়মনীতি। ক্ষমা করবেন, আমি আনিছের কাছে এই পড়াশোনার কোন দাম নাই। কিছু হবে না এই মোটা মোটা বই মুখস্ত করে। যা শিখার শিখুন নিজের জীবন থেকে।
নেপোলিয়ান বলেছিলেন আমাকে একটা শিক্ষিত মা দাও আমি একটা শিক্ষিত জাতি দেব। আমি বলি কি আমাকে একটা স্বশিক্ষিত নেতা দাও আমি সুন্দর সুখি সম্বৃদ্ধ একটা দেশ দিব।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৪৫