somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঠিক বা ভুল, পরিক্ষার ফলাফল।

০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা সবাই জানি আজ দুপুরে এইচএসসি পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হবে। সবার প্রতি রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা।

প্রতি বছর দেখে আসছি পরিক্ষার পরের কয়েকদিন পরিক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ার কারণে অনেকে আত্মহত্যা করেছে। প্রতিবার এই খবরটা দেখার পর আমার মনে হয়েছে এই মানুষগুলো জীবনকে ভয় পায়। কারণ অধিকাংশ আত্মহত্যা করে ফেল করার কারণে অথবা জিপিএ-৫ না পেয়ে। পরিক্ষায় পাশ ফেল দিয়ে জীবনকে মূল্যায়ন করা ঠিক নয়। কিন্তু এই সব ছেলেমেয়ে তাই করেছে।

গত বছর একটা ব্যাতিক্রম খবরও পেয়েছিলাম। ভুল ফলাফল শুনার পর আত্মহত্যা করেছে কিন্তু তারপর দেখা গেছে সঠিক খবরটা হচ্ছে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। আত্মহত্যাকারীর পরিবারের এখন কি অবস্থা একটু চিন্তা করুন।

জীবনে জয় পরাজয় থাকবেই তাই বলে জীবন শেষ করে দিতে হবে??

একদিক দিয়ে ভালই করেছে এরা । এই সব ছেলেমেয়ে যারা জীবনকে ভয় পায় তারা জীবনকে নিয়ে এই কাজ ছাড়া আর কি-ই বা করতে পারবে। বরং মরে গিয়ে সমাজ থেকে ভীতুর সংখ্যাটা কমিয়ে দিচ্ছে।( এমন ক্ষোভ ছাড়া আমার কাছে আর কোন উপায় নাই ক্ষোভ প্রকাশ করার।)

এই সব আত্মহত্যার পিছনে আমাদের হাতও কম না। বরং আমরাই এদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছি। কিভাবে???

একটা ছেলে অথবা মেয়ে খুব ভাল রিজাল্ট করল আমরা তাকে মাথায় তুলে নাচব কিন্তু খারাপ করল ত হয়েছে। নানা ভাবে তাকে অপদস্ত করাই আমাদের কাছ। খুব অবাক লাগে এই সব কাজ কর্ম দেখে। একটা উদাহারণ দেই বিগত বছরের, বুঝতে সহজ হবে।

গত বছর আমার এক পরিচিত ছোট ভাই পরিক্ষায় ৪.৩২ পেয়েছে। পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকে কারণ ভাল একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হবে এই আশায় কোচিং করার সুবাদে।

রিজাল্ট পাওয়ার পর এমনিতেই তাকে বিমর্ষ লাগছিল। সে আশা করেছিল তার রিজাল্ট এর চেয়ে ভাল হবে। এই রিজাল্ট শুনার পর তার বাবা মা ভাইবোন কেউ তার সাথে যোগাযোগ করেনি। দুখিঃত করেছে । তারা বাবা তাকে ফোন দিয়ে বলেছে বাড়ী আস তোমাকে আর পড়াশোনা করতে হবে না।

সেই ছেলের আরেক বন্ধু জিপিএ-৫ পেয়েছে। বন্ধুটি কোন দিন তার রিজাল্ট ছোট ভাইয়ের বাবাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ না করলেও এই রিজাল্ট এর পরের দিন সেই প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। আর খুব গর্ব করে শুনাল তার ফলাফল। একজন ব্যার্থ ছেলের বাবার কাছে এটা নিশ্চয় ভাল লাগার কথা নয়।

এখানেই শেষ নয় আরো আছে। তার আরো কয়েকটা বন্ধু ফোন দিলে বলল যা ফলাফল তাকে কোন ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল বিষয়ে পরিক্ষা দিতে পারবে না। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানদন্ড আর বিষয় নিয়েও মানদন্ড করল। আমি এই বিষয়ে বলব না। যা বলছিলাম তাই বলি।

ত এই খবর তার বাবার কানেও গেল। তিনি আরো বিমর্ষ হয়ে পড়লেন ছেলের এমন ভবিষ্যত দেখে। এবার কোন কিছু যাছাই না করেই ছেলেকে দিলেন বকা। এখানেও শেষ হলেও পারত কিন্তু শেষ ত এখানেও না আরো আছে।

পাশের বাড়ীর আরো কয়েকজন পরিক্ষা দিয়েছিল। যাদেরটা এর তুলনায় ভাল হয়েছিল তারা শুরু করেছিল তাদের অত্যাচার। নানান কটুক্তি ছড়ানো শুরু হয়েছিল।

পরিক্ষার ফলাফলের পর আমাদের দেশে মিষ্টি খাওয়ানোর ধুম পড়ে। সেই মিষ্টি নিয়ে হাজির পাশের বাড়ীর আন্টিগুলো।
কোথায় একটু শান্তনা দিবে তা না করে শুরু করল নিজেদের প্রসংশা আর অন্যের কটুক্তি। আমার ছেলে/মেয়ে এই করেছে সেই করেছে তারটা পারেনি। ওমুক নকল করে পাশ করেছে, পরিক্ষার হলে এই করেছে সেই করেছে। অত্যাচারের মাত্রা আরো বাড়তে থাকে। আমার ছেলে/মেয়েকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এই সেই কতকিছু বানাব।

ভাবুন ত তখন এই ছেলেটার বাবা মায়ের মনের অবস্থা কি হয়???

মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই একজনের উপর রাগ করে অন্যের উপর রাগ ঝাড়বে। সোজা বাংলায় নিজের সন্তানের উপর গিয়ে পড়বে সেই রাগটা।

আরো অনেক আছে যেইগুলো নাই বা বললাম। এবার ভাবুন ত এই ছেলেটা কি করবে তখন। চোখের সামনে এমন অন্ধকার দেখার পর তার কি করা উচিৎ??

সবার সাথে তাল মিলিয়ে আমি নিজেও বলব ধের্য্য ধরতে। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ের সাথে সংগ্রাম করার নামই জীবন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে হয়ত সে আরা বিমর্ষ হয়ে পড়ে। আর এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতেই বেছে নেয় আত্মহত্যার মত ঘৃণিত কাজ।
আমি নিজেও এই অবস্থাটার মোকাবেলা করে এসেছি। আমি জানি কতটা যন্ত্রণাদায়ক এই অবস্থাটা।

কবে যে মুক্তি পাবে সমাজ আমাদের এই অবস্থা থেকে??

কত কাল কাদবে মানুষ এই অবস্থায়। কত কাল হারিয়ে যাবে এই ভাবে একটি পরিবারের স্বপ্ন।

আমরা যদি এই সব না করে বরং ছেলে/মেয়েটার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়ীয়ে দিয়ে তাদের পাশে থাকতাম তবে কি এমন হত?

হয়ত হত তবে এত মহামারী আকারে না বরং তা অনেকাংশেই কম হত।

একটু ভাবুন আপনার কি করা উচিৎ এমন পরিস্তিতিতে?? সময় এখানেই শেষ নয় আপনার জীবনেও এমন সময় আসতে পারে।

একটা পরিক্ষার ফলাফল দিয়ে জীবন কে মূল্যায়ন না করে জীবনকে জীবন দিয়ে মূল্যায়ন করুন।

ভবিষ্যত ফলপ্রত্যাশীদের কাছে আমার অনুরুধ থাকবে তোমরা এমন ঘৃণিত কাজ করিও না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:২৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×