somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা

১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বাভাবিক ভাবেই কিছু লিখার আগে আমি আমার বন্ধু ইকরামের সাথে কথা বলি। এই বিষয়েও লিখব বলে ভাবছি ঠিক তখনই একটা ঘটনা ঘটে যায় আমার সামনে। আমার বন্ধুটি কেন জানিনা, আমি কিছু বলার আগেই সে বুঝে ফেলে। ঐদিন সে আমাকে ফোন দেয়। যখন আমি এই সমাজ ব্যবস্থা আর ঘটনাটা নিয়ে কথা বলি তখন সে আমাকে বলে, বাদ দাও সমাজের কথা। আমি আর আমার পরিবার এর বাইরে কোন সমাজ নেই। আমার সমাজ শুধুই আমার পরিবার।চলুন কিছু ঘটনা পড়ি, তাহলে বিষয়টা পরিস্কার হবে।

প্রথম ঘটনাঃ

নিপার পরিবারে ছয়জন সদস্য। মফস্বল শহরে তাদের বাড়ী। চার বোন আর বাবা মা এই। নিপা সবার বড়, নিলা, সায়মা আর সুমী এই হচ্ছে তাদের বোনের পরিচয়। তার মধ্যে নিলা অসুস্থ। বছরখানেক হল সে অসুস্থ। কোন ভাবেই কিছু হচ্ছে না। ডাক্তার,কবিরাজ কোন কিছুই বাদ যাচ্ছে না তার চিকিৎসার জন্য। যেখানে যার কথা শুনছে তার কাছেই নিয়ে গেছে। শিক্ষিত পরিবার প্রথমে ডাক্তার দেখালেও কোন কিছু হচ্ছিল না। শহরের বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েছে, এই টেষ্ট ঐ টেষ্ট কত কিছু করাল কিন্তু কোন রোগ করা পড়ছে না। শেষে লোক মুখে কবিরাজের কথা শুনে সেখানেও দৌড়ানো শুরু করল কিন্তু তাতেও কিছু হচ্ছে না। দিন দিন নিলার শারিরিক অবস্থা খারাপ থেকে খারাপ হতে লাগল। অবস্থার অবনতি দেখে সবাই খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। পাড়াপ্রতিবেশিরা বলাবলি শুরু করল, নিলা আর বাচঁবে না, মরে যাবে। কথাগুলো নিলাকে শুনিয়েই বলা শুরু করল। মেয়েটা মানসিক ভাবে আরো ভেঙ্গে গেল আর খাওয়া দাওয়া বন্দ করে সারাদিন কান্নাকাটি করেই কাটিয়ে দেয়। কলেজ পড়ুয়া মেয়েটা সারাদিন রুম অন্ধকার করে বসে থাকে আর কি যেন ভাবে। কিছুদিন এভাবে কাটার পর একদিন সত্যি সত্যি মেয়েটা মারা যায়। রাতের অন্ধকারে সবার অজান্তেই মেয়েটার নিথর দেহ পরে থাকে তার রুমে। সমাজের যে মানুষগুলো তাকে এই ভাবে জীবনের শেষ দিনগুলো বিষাধে ভরিয়ে দিয়েছিল তারাই আসে আবার শান্তনার বাণী শুনাতে তার পরিবারকে।

দ্বিতীয় ঘটনাঃ

গ্রামের মন্ডল এর মেয়ের শশুড় বাড়ির জন্য কাজের মেয়ে চাই। গ্রামের এক গরিব পরিবার থেকে এক মেয়েকে পাঠানো হলো। মাস ছয়েক ভালোই কাটল। তার কিছুদিন পর মেয়েটাকে আর খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। মেয়ের মা গ্রামের মেম্বার,চেয়ারম্যান এর কাছে নালিশ করে। মেম্বার,চেয়ারম্যান মন্ডল এর নাম শুনেই উল্টো তার মেয়েকে চোর সাব্যস্ত করে দিল। থানায় গেল পুলিশ আসল কিন্তু মন্ডল এর কথা শুনে এলাকা বাসি সহ সবাই মেয়েটাকেই চোর স্যাবস্ত করে বলল, সে নাকি বাসা থেকে ত্রিশ হাজার টাকা চুরি করে পালিয়েছে। গত আড়াই বছরেও মেয়েটাকে খুজে পাওয়া যায় নি।

তৃতীয় ঘটনাঃ

লিজা,তামান্না,আর বৃষ্টি তিন বান্ধবী এক সাথে ক্লাস টেনে পড়ে। প্রতিদিন এক সাথে স্কুলে যায়। রাস্তায় কিছু বখাটে তাদের ডিস্টাব করে। এক পর্যায়ে বাদ্য হয়ে সমাজের মাথাদের কাছে তাদের পরিবারগুলো বিচার দেয়। বিচার হল, এদের প্রত্যেকে সবার সামনে চড়-থাপ্পর মারা হল। আর তাদের সাবধান করে দেওয়া হল যাতে ভবিষ্যতে এমন না করে। কিন্তু বখাটেগুলো এই বিচারে চরম অপমানিত বোধ করল, আর মেয়েগুলো দিকে ক্ষিপ্ত হল। কিছুদিন পর তামান্নাকে এরা ধরে ধর্ষণ করল। লজ্জায় মেয়েটা কি করবে কিছু ভেবে পায় না। আবার বিচার বসল, সমাজের সবাই মেয়েটাকে দোষারুপ শুরু করল। শেষ পযন্ত কোন উপায় না দেখে তামান্নার বাবা থানায় গেল। অপরাধীর সাজা হল। ( যদিও অধিকাংশক্ষেত্রে হয় না, আমরা ধরে নিলাম সাজা হল।) কিন্তু মেয়েটার প্রতি সমাজের মানুষগুলো ভিন্ন দৃষ্টিতে তাকাতে থাকল। সবাই ঘৃণার চোখে তাকাতে শুরু করল তার উপর। নানা কটু কথায় তামান্নার কান ভারি করে তুলল। এক সময়ের সেরা বন্ধবী লিজা, আর বৃষ্টিও তাকে এড়িয়ে চলা শুরু করল। লিজা, বৃষ্টির পরিবার তামান্নার সাথে মিশতে নিষেধ করে দিল। মেয়েটা কোন অপরাধ না করেও এক ঘরে হয়ে গেল।

চতুর্থ ঘটনাঃ

নিলয়। ভার্সিটির ছাত্র। গ্রামের কুসংস্কার দূর করার জন্য কাজ করছে। এলাকার দারিদ্র অসহায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে। পাশাপাশি সমাজের ভিতরে বিদ্যমান সমস্যাগুলো দূর করার জন্য একটা ক্লাব করেছে। সেখানে গ্রামের অনেক শিক্ষিত কিছু ছেলে মেয়ে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। কিন্তু এটা পছন্দ হয় না সামাজের কপিতয় মানুষের। নিলয় এর বাবার কাছে তাদের অভিযোগ, তোমার ছেলেটা নষ্ট হয়েছে, পড়াশোনা বাদ দিয়ে কি করছে এইসব। রাজনীতি করবে, নেতা হবে। ছেলেটা একেবারে নষ্ট হয়েছে। কিছু মানুষের আবার চুলকানি একটু বেশি বেড়ে যায়। যেভাবেই হোক নিলয় এর কাজ কর্ম বন্ধ করতে হবে। ভিন্ন ভাবে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা শুরু করে। এক সময় নিলয় হতাশ হয়ে পড়ে। কাজ কর্ম বন্দ করে দেয়।

পঞ্চম ঘটনাঃ

রহিম মিয়ার দুই ছেলে এক মেয়ে। মেয়ে এবার মেট্রিক পাশ করে ইন্টারে ভর্তি হয়েছে। বয়সের তোলনায় একটু বেশিই বড় হয়ে গেছে মেয়েটা। সমাজের নজর পড়েছে তার উপর। পাড়া-প্রতিবেশি থেকে শুরু করে সবাই রহিম মিয়াকে ধরেছে এবার মেয়ের বিয়ে দাও। মেয়ে বড় হয়ে গেছে। এমন একটা ভাব যেন রহিম মিয়ার চেয়ে তাদের দ্বায়ীত্বটাই বেশি। একটা সময় বাধ্য হয়ে রহিম মিয়া তার মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজী হয়। বাল্য বিবাহ হবে, পুলিশ ঝামেলা করতে পারে এই ভয়ে চুপিচুপি বিয়ে দিতে চায়। চেয়ারম্যান এর কাছ থেকে নতুন জন্মসনদ নিয়ে আসে যাতে পুুলিশ ঝামেলা করতে না পারে। বিয়েও হয়ে যায়। বাল্য বিয়ের ফলাফল আমার ভালো করেই জানি।


এই হচ্ছে আমাদের সমাজের বর্তমান অবস্থা। আমি স্বীকার করি কিছু ব্যাতিক্রম আছে কিন্তু সেই সংখ্যাটা কত? হাতে গুনা কয়েকটা।

ছোট বেলায়, পরিবেশ পরিচিত ও সমাজ বই এ পরেছিলাম, আমাদের চারপাশের সবকিছুকে নিয়েই আমাদের পরিবেশ। আর এই পরিবেশ বসবাস কারী কিছু মানুষ  যারা সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে নিজের সুখ,দুঃখ, বিপদ-আপদে পাশে থাকে, একে অন্যকে সাহায্য করে। বর্তমানে কি এই কথাগুলো বিদ্যমান আছে। আমার দেখা আমার সমাজে নাই। এখানে কে কাকে বাশঁ দিয়ে উপরে উঠতে পারবে সেই চেষ্টাই করছে।

আমি এখানে মাত্র কিছু ঘটনার কথা বললাম, এছাড়াও আরো কত ঘটনা যে আমাদের সমাজে ঘটে তা আপনারাই আমার থেকে ভালো বলতে পারবেন।

সমাধান কোথায়? মানুষের মন মাসিকতার পরির্বতন ই এই ক্ষেত্রে একমাত্র সমাধান।


যাইহোক, আশার কথা শুনাই। আমার দেশের জনসংখ্যাকে সব সময় সমস্যা হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। কিন্তু আমি এই বিশাল জনসংখ্যাকে নিয়েই অনেক আশাবাদী। ষোল কোটি মানুষের বত্রিশ কোটি হাত, আর প্রতিদিন প্রতিটা হাত যদি দশটা করে কাজ করে তাহলে তিনশো বিশ কোটি কাজ হয়। স্বপ্ন ত আমি দেখতেই পারি দেশটা একদিন সত্যিই অনেক উন্নত হবে। নতুন একটা বাচ্চা যখন পৃথিবীতে আসে আমি তখন স্বপ্ন দেখি, এই বাচ্চাটাই একদিন দেশটাকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত হিসাবে উপস্থাপন করবে।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×