somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কী শিখব কেন শিখব, কী জানব কেন জানব

২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জানার শেষ নেই, শেখার সীমাও অপরিসীম। আমরা যতই জানি চিরদিন জানতে বাকী থাকে আরও অনেক কিছু। যত কিছু আমরা শিখি না কেন আরও অনন্ত পড়ে থাকে আমাদের শেখার অপেক্ষায়। জানার তুলনায় না-জানার এই ব্যাপকতা অনুধাবন করে অনেকে বলেছেন, জানার কোনো শেষ নাই জানার চেষ্টা বৃথা তাই!

এ কথা ঠিক যে সমস্ত বিশ্বচরাচর আর এর মাঝে বিরাজমান বস্তুলোককে জানা কখনো শেষ হবে না। তবুও জানার ও শেখার যে কোনো প্রচেষ্টা এক ধরনের স্বার্থকতা। যদি পড়তে শিখি তাহলে হাজার জিনিস জানার দুয়ার খুলে যায়। যদি লিখতে শিখি তাহলে নিজের জানা অনেক কিছু অন্যকে জানাতে পারি। কৃষি কাজ শিখে ফসল ফলাতে পারি। পশুপালন শিখে আয়-উপার্জন করতে পারি, প্রোটিনের চাহিদা পুরন করতে পারি অনেকের।

যেহেতু আমাদের জীবন সংক্ষিপ্ত এবং এই অল্প সময়ে একজন মানুষ সব কিছু শিখতে ও জানতে পারেন না। অবশ্য তার দরকারও নেই। নিঃসন্দেহে আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কোনো কোনটা জানা অন্য কিছু জানার চাইতে বেশি প্রয়োজনীয়। এই প্রয়োজন নির্ভর করে আমাদের পরিবেশ, পরিস্থিতি ও অবস্থানের ওপর। হয়ত আমার প্রয়োজন কৃষিকাজ শেখা আর আপনার প্রয়োজন গাড়ি চালানো শেখা। এরকম শত শত কাজ আমাদের শিখতে হয় জীবন ধারন ও যাপন করার জন্য। আমাদের এই শেখা, জানা ও কাজে যত ভিন্নতা থাক না কেন মানুষ হিসাবে আমাদের প্রয়োজন ও দূর্বলতা একই ধরনের।

হয়ত কয়েক ক্লাস স্কুলে গিয়ে কারও কারও পড়তে ভালো লাগে না। কেও হয়ত আনন্দ পান ব্যবসা করে। কেউ করেন শিক্ষকতা। কারও বা আবার মন কাড়ে উদ্ভিদ তৃণলতা আর পশুপাখির সান্নিধ্য। কিন্তু কোনো একজন মানুষ এর সব কিছুতে নিয়োজিত হতে পারেন না। অর্থাৎ, আমাদেরকে শেখার ও জানার বিষয়বস্তু অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে হয়। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ নিজেই ঠিক করতে পারেন তার জানার বিষয়বস্তু, শেখার ক্ষেত্র। অন্যদিকে, শিশুরা নির্ভরশীল তাদের অভিভাবক, রাষ্ট্র ও সমাজের ওপর। অভিভাবক, রাষ্ট্র ও সমাজ নির্ধারণ করে শিশুদের শিক্ষণীয় বিষয়, জানার বিষয়বস্তু।

ইংরেজি ২০১৫ সালে বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে গেলে দেখা যাবে যে অগণিত শিক্ষনীয় বিষয়ের নিচে চাঁপা পড়ে যাচ্ছে শিশুদের প্রাণ। স্কুল, কোচিং আর জিপিএ-র যাতাকলে কী নির্মম পিষ্ট হচ্ছে তাদের জীবন! মানব সন্তান হয়েও তারা মানব-শিশুর জীবন যাপন করতে পারছে না। জানার প্রতি তাদের স্বতঃস্ফূর্ত মানব-প্রবৃত্তি ব্যাহত হতে হতে মরে যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। সৃজনশীলতার দেখা তাই খুব কমই মিলছে; এমনকি শিল্প-সাহিত্য বা বিজ্ঞানেও তা দুর্লভ হয়ে উঠেছে।

সব কিছু দেখে মনে হয় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যেন এক অবিবেচনাপ্রসূত লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটে চলেছে। এ শিক্ষার লক্ষ্য কী গন্তব্যই বা কোথায় তা কে জানে? তবে তা যে আজও ’মাছিমারা কেরানী’ তৈরির থেকে বেশি দূর এগিয়েছে এরকম ভাববার যথেষ্ট কারন নেই। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার এই ভার বইতে বইতে বেহাল শিশুদের দিকে তাকিয়ে মহামান্য বিচার বিভাগ স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীদের বইয়ের ভারী ব্যাগের ব্যাপারে বক্তব্য দিয়েছেন। শিক্ষা অধিদপ্তর বা শিক্ষাবিদরা কী করছেন বা কী ভাবছেন বা আদৌ কিছু ভাবছেন কিনা তা এখনও অজানা।

শিক্ষাবিদ না হয়েও একজন সাধারন মানুষ হিসাবে বলা যায়, প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাপ কেন শিশুর মেধা ও মগজের ওপর চাপানো? প্রাইমারি স্কুল শেষে একজন শিশুর কাছ থেকে কী আমাদের আশা করা উচিত? সে যদি বাংলায় বুঝে পড়তে ও লিখতে পারে, যোগ-বিয়েগে-গুণ-ভাগ করতে পারে তবে তার বেশি আর কি দরকার?

মাধ্যমিক পর্বের প্রথম দিকে খুব বেশি বিষয় যোগ না করে কিছু স্বাস্থ্য ও পরিবেশ জ্ঞান, সামাজিক বোধ (Civic Sense) বা যা-কিছুর বাস্তব প্রয়োজন রয়েছে এসব রাখা যেতে পারে। আমাদের চারদিকে বাস্তব জীবনের জ্ঞান বা সামাজিক বোধের জ্ঞানের ক্ষরা যে কোনো মহা-ক্ষরার থেকেও প্রবল।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সব থেকে বড় ত্রুটি এর উদ্দেশ্যহীনতা। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা কী শিখছেন কেন শিখছেন তা জানেন না। লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী বা তাদের অভিভাবকদের জানা নেই যে বছর বছর লক্ষ মানবের কোটি কোটি ঘন্টা অমূল্য সময় কোন কারনে অপচয় হচ্ছে অকাতরে। এর উত্তর যে শিক্ষা ব্যবস্থার কর্তা ব্যক্তিদের জানা আছে এমনও মনে হয় না। মানব জীবনের সময়ের এ শোচনীয় অপচয় হয়ত তাদের চোখেও পড়েনি! তবে এটা অনস্বীকার্য যে অনেকের কাছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার এ নেতিবাচক দিক সুস্পষ্ট। কিন্তু প্রথাগত এই শিক্ষা ব্যবস্থার জোয়াল আমাদের কাঁধ থেকে কবে নামবে বা আদৌ নামবে কিনা তা এখনও অজানা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:১৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×