somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কয়েক ফালি ধোঁকাবাজি

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

’ধোঁকাবাজি’ শব্দটার সাথে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত। তবে শব্দটা কিছুটা বই কেন্দ্রিক। আমাদের প্রতিদিনকার কথাবার্তায় এর খুব একটা চল নেই। যেমন, কেউ আমাদের ধোঁকা দিয়ে ঠকালে আমরা বলে থাকি, হালার পুত! এভাবে ঠকালো! আবার ধোঁকা সফল করতে মিথ্যা বা জালিয়াতির আশ্রয় নেয়াটাও এক সাধারণ ব্যাপার।

যখন বাংলাদেশে হরতাল পালিত হয় তখন ধোঁকাবাজির জয় জয়কার! এম্বুলেন্স ভাড়া যায় বেড়ে! রোগী সেজে ধোঁকা দেয়া লোকের উৎপাতে আসল রোগীদের এম্বুলেন্স পাওয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে এম্বুলেন্সের দেদার ব্যবসা হয় ব্যবসা-বাণিজ্য, এয়ারপোর্ট গমন বা নির্গমন এসব কাজে। এমনকি গাড়ির কপালে ’সংবাদপত্র’, ’সাংবাদিক’, ’পুলিশ’, এসব লিখেও মানুষ ধোঁকাবাজি চালিয়ে যায়। আজকাল হরতাল ছাড়াও ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এ জাতীয় ধোঁকাবাজি জোর তালে চালিয়ে যাচ্ছেন।

অনেকে বলেন, তা কি আর করা; কাজের জন্য একটু আধটু মিথ্যা বা ধোঁকবাজি - সে আর এমন কি! খবরের কাগজে ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে ডাক্তারি কবিরাজি বা মাস্টারি করতে করতে ধরা খাওয়ার ঘটনা প্রকাশ পায় প্রায়ই। আবার ফেসবুক বা অন্য যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য দিয়ে ধোঁকাবাজি করার ঘটনাও আজকাল হরহামেশা প্রকাশ পাচ্ছে। এসবের বাইরে হাজারো ধোঁকাবাজি জন্য মানুষ লাখো উপায় বের করে নিয়েছে। যেমন, বাংলাদেশি গণতন্ত্রে ভোটের রাজনীতি খুব গুরুত্বর্পূর্ণ হওয়ায় ভ্টোরদের সাথে ক্ষমতার স্বাপ্নিকদের এক সূক্ষ ধোঁকাবাজির খেলা চলে।

একবার এক গরীব কৃষক কয়েক মাইল হেঁটে গেছেন ভোট দিতে। গরমের দিন বলে তেষ্টাও তার পেয়েছিল যথেষ্ট। ভোটের মাঠে আসতে জনকয় যুবক তাকে ঘিরে ধরল। আদরের সাথে গাছের নিচে চেয়ারে বসাল। সহানুভূতির সাথে বলল, চাচা মনে হয় অনেক পেরেশান! তড়িঘড়ি বোতলের মুখ ’ফস্’ করে খুলে তারা চাচাকে খেতে দিলো পেপসি। ঠা-া ঠা-া পেপসি খেয়ে চাচার মন গেল নরম হয়ে। ছেলেরা বলল, ভোটটা তাহলে চাচা আমাদের এই মার্কায় দিয়েন। চাচার মনে যে চিন্তাই থাকুক তা গেলো মুছে। চাচা ভোটটা পেপসি-খাওয়ানো মার্কাতেই দিলেন। ভোট দিয়ে বের হয়ে চাচার মনে প্রথম খাওয়া ঠা-া ঠা-া পেপসির সুখটা ফিরে এলো। চাচা ছেেেলদের কাছে এসে বললেন, বাবারা! ভোটটাতো তোমাদের মার্কাতেই দিলাম - তা ওই ’ফস্’ করা জিনিসটা আরেক বার আমারে খাওয়াও তো! ছেলেরা তো হেসে কুটি কুটি। ওদের একজন বলল, চাচা! সে ’ফস্’ করা জিনিসটা কি? চাচা কপাল ভাঁজ করে বললেন, ওই যে তুমরা খাওয়ালে! রোদের মধ্যে হেঁটে এসে ওইডা খেয়েই তো আমার পরাণডা জুড়োয় গেলো। চাচার কথা শুনে ছেলের দল আরেক দফা হে হে করে উঠলো। বলল, চাচা! ও জিনিস তো ভোটের পরে আর ’ফস্’ করে না। চাচা ঘটনাটায় নিতান্ত বেকুব বনে গেলেন।

যাই হোক, ধোঁকবাজি মানুষের একটি চিরকালীন প্রবৃত্তি। তবে কাজটি সবাই করে না বা করতেও পারে না। যেমন, ভালো কাজ সহ বিদেশে পাঠাবার আশ^াস দিয়ে কেউ কেউ ধোঁকাবাজী করে চলেছে। আবার কয়েক গুণ লাভের লোভ দেখিয়ে টাকা বাগিয়ে চম্পট দেয়া লোকও আছে অনেক। তবে তারা ১৬ কোটির এক ভগ্নাংশ মাত্র।

জানা ও অজানা অজস্র ধোঁকবাজি প্রতি নিয়ত তাদের কাজ করে যাচ্ছে। এসব ধোঁকার অনেকগুলো দলবদ্ধ ধোঁকাবাজী। একক ব্যক্তির ধোঁকার থেকে দলগত ধোঁকার পরিধি অনেক বড় ও ব্যাপক। যেমন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের দলে ভিড়িয়ে অনেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে ব্যাংক থেকে। আইন বা প্রশাসন তাদের কিছুই করতে পারছে না।যত দিন যাচ্ছে ধোঁকবাজির কায়দা কানুন তত সূক্ষ হয়ে উঠছে। অনেক সময় তাই ধোঁকবাজি ধরা কঠিন হয়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার অনেকে ধোঁকাবাজী ধরতে চান না তাতে যদি পয়সা-পাতি কিছু হাতে আসে!

মানুষ মানুষকে ছাড়াও হাজার বছর ধরে নিরীহ প্রাণিকেও ধোঁকা দিয়ে আসছে। যেমন, কথিত আছে, হযরত ইমাম বোখারী (রাঃ) অনেক দিন ধরে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে কোনো এক স্থানে হাদিস সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। গিয়ে দেখেন এক লোক তার ভেড়া/বকরীকে খালি পাত্র নিয়ে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করছে। লোকটা এমনভাবে ভেড়া/বকরীকে ডাকছিলো যেন তার হাতের খালি পাত্রে খাবার আছে! সেটা দেখে তিনি ওই ব্যক্তির কাছ থেকে হাদিস সংগ্রহ না করে ফিরে আসেন।

কেবল প্রাণিজগত নয়, জড় বস্তুকে ধোঁকা দেয়াও আজকাল লাভজনক হয়ে উঠেছে। যেমন, কম্পিউটারকে ধোঁকা দিয়ে অন্যের একাউন্টের টাকা নিজের একাউন্টে সরিয়ে নেয়া, ওয়েবসাইট হ্যাক করে অন্যের তথ্য চুরি করা ইত্যাদি। প্রযুক্তির উৎকর্ষ যত হচ্ছে ধোঁকার প্রসারও যেন ততো বাড়ছে। তবে কোনো কোনো ধোঁক কারও ক্ষতি না করে উপকারেও আসতে পারে। যেমন, আমাদের বাসার লিফটের ৬ নং বাটনটা নষ্ট হয়ে গেছে। সেই বাটন বদলাতে নাকি অনেক খরচ! তাই ৬ তলার মানুষেরা প্রথমে ৭ নং বাটন চাপেন, পরে লিফটটা ৫ এলে তারা ৭ নং বাটনে আরেক বার চাপ দিয়ে ৭ ডি-সিলেক্ট করেন। লিফটটা এতে ধোঁকায় পড়ে যায়। কি করবে বুঝতে না পেরে সে ৬-এ থামে।

এসবের বাইরে এসে, মানব মনের যুক্তি-বোধের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন মনীষী সক্রেটিস। তিনি বলছেন, যদি আমাদের কোনো বন্ধু আত্মহত্যার জন্য ছুরি জোগাড় করেন তাহলে তাকে ধোঁকা দিয়ে ছুরিটা সরিয়ে রাখলে তা তো ভালো কাজ। আবার চমৎকার অনেক অসত্য বলে অসুস্থ শিশুকে ওষুধ খাওয়ানোও তো উপকারী।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×