somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্যামল কান্তিকে নিয়ে আপাততঃ খেলা শেষ! আবার কোন ইস্যু তৈরি করবে মৌলবাদীরা?

২৮ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শ্যামল কান্তিকে নিয়ে আপাততঃ খেলা শেষ! আবার কোন ইস্যু তৈরি করবে মৌলবাদীরা?
আবুল খায়ের মোহাম্মদ রফিকুল হক

এই দেশে মৌলবাদীদের খাপছাড়া আর নানারকমের শয়তানী খেলার যেন শেষ নাই। আর তারা সবসময় শয়তানী করার উদ্দেশ্যে তাদের রাজনীতি ও ধর্মকর্ম পরিচালনা করে থাকে। এদের কোনো সত্যিকারের ধর্মবোধ বা মনুষ্যত্ব নাই। এই তো কয়েকদিন আগে তারা নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে নিয়ে যাচ্ছেতাই খেলা খেললো। আর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলো এদেশের ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার’ বামপন্থী নামক পতিতসমাজ। এদের আস্ফালনে ও হুংকারে মনে হচ্ছিলো বিষয়টা বুঝি আন্তর্জাতিক আদালতে গড়াবে। তারা পরিকল্পিতভাবে দেশের ভিতরে বিশৃঙ্খলাসৃষ্টির উদ্দেশ্যে একজন শ্যামল কান্তিকে নিয়ে অনেকদূর যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু মহান আল্লাহর রহমত থাকায় তারা সেই অপকর্মটি করার সুযোগ পায়নি। তাদের সমস্ত শয়তানী ভেস্তে গেছে।

শ্যমল কান্তির জন্য কারও কোনো দরদ দেখিনি। শুধু দেখেছি, লোকদেখানো মায়াকান্না। আর এটিকে পুঁজি করে যার-যার, নিজের আখের গুছিয়ে নেওয়া। এই শ্যামল কান্তিকে নিয়ে ক’দিন কিছুসংখ্যক লোক ব্লগে-ফেসবুকে লেখার খুব সুযোগ পেয়েছিলো। তারচেয়ে তাদের বড় লাভ হয়েছিলো—এই শ্যামল কান্তিকে পুঁজি করে তারা ঢাকঢোল পিটিয়ে সরকারকে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশে গালি দেওয়ার একটা বিরাট সুযোগ পেয়েছিলো। আর এই নিয়ে সস্তা-লেখার একটা জোয়ার বয়ে গিয়েছিলো দেশের ফেসবুকে-ব্লগে। হুজুগে বাঙালি তো!

যে যাই বলুক না কেন—শ্যামল কান্তি দাদা একেবারে নিদোর্ষ নয়। দুনিয়ায় এতো মানুষ থাকতে তাকেই কেন কানধরে উঠবস করতে হলো? জানি, এর জবাব কেউ দিতে পারবে না। সবাই তো এখন ইনিয়েবিনিয়ে, বানিয়েটানিয়ে, ঝাঁকিয়েবাঁকিয়ে কথাবার্তা বলতে ভীষণ ওস্তাদ। আর এই দেশের মানুষের মতো মনগড়া-ব্যাখ্যা আর কেউ দিতে পারবে না। মনগড়া-ব্যাখ্যা দিতে-দিতে একদিন নিজামী-সাঈদীরা পবিত্র কুরআনের মনগড়া-ব্যাখ্যা দিয়েছে। দলের স্বার্থে-জামায়াতীদের স্বার্থে এখনও পবিত্র কুরআনের মনগড়া-ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য সাঈদী জেলখানায় শুয়ে আছে!

আমাদের একটা কথা সবসময় মনে রাখতে হবে যে, শিক্ষক হলেই কিন্তু তার সাত খুন মাফ নয়। তাকেও সমাজের আট-দশটা সাধারণ মানুষের মতো মানুষ ভাবতে হবে। তিনি কিন্তু একনিমিষে কোনো দেবতা হয়ে যান না। আর তিনি কোনো দেবতাও নন। তিনি একজন মানুষ মাত্র। যদিও আমরা ইতোমধ্যে ভিকারুন্নেসার ‘অপদেবতা’ পরিমলকে দেখেছি। আর তার শাস্তিও হয়েছে।

অপরাধ এমন একটা জিনিস—আর এটা যে-কারও দ্বারাই যখনতখন হওয়া সম্ভব। আর মানুষ জন্মগতভাবে অপরাধী নয়—সামাজিকভাবেই তার দ্বারা অপরাধ-সংঘটিত হয়। অপরাধ করলে শাস্তি হবে। আর তার জন্য দেশে আইন-আদালত রয়েছে। এটিকে বাদ দিয়ে একটি অপরাধের ভিত্তিতে একজন প্রধান শিক্ষককে জনসমক্ষে কানধরে উঠবস করানো হয়েছে! একাত্তরে এই দেশে পাকবাহিনী বহু ছাত্র-শিক্ষককে কানধরে উঠবস করিয়েছে। আর ‘হিন্দু-না-মুসলমান’ তা যাচাইবাছাই করার জন্য একাত্তরে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-নির্বিশেষে বহু পুরুষকে উলঙ্গ করেছিলো পাকি-কুত্তারা। সেদিন পাকিস্তানীদের এই অপকর্ম নিজের চোখে দেখেও তার বিরুদ্ধে এদেশের অনেক পাঁঠা কোনোদিনও একটি কথাও বলেনি। কারণ, তাদের পাকিস্তানীবাবারা যা করেছে, তা ভালোর জন্যই করেছে, আর তা ইসলামরক্ষার জন্যই করেছে! এইতো মৌলবাদীদের জীবনদর্শন। তারাই এবার দেখলাম ফেসবুকে, ব্লগে এতো-এতো লিখে নানারকম সরকারবিরোধী বক্তব্য থেকে শুরু করে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য ও লেখা পর্যন্ত লিখে ফেললো! কীসের জন্য? এসব কার স্বার্থে? আসলে, এর পিছনে তাদের স্বার্থ কী তা আমাদের আজ জানতে হবে।

দেশে এখন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের নিয়মিত ফাঁসি-কার্যকর করা হচ্ছে। আর তাই, দেশবিরোধী ছোট-বড়-মাঝারি সব সাইজের যুদ্ধাপরাধী এখন দেশের ‘সোনালি আঁশে’ ফাঁস খেয়ে ‘জান্নাতের পথে’ সগৌরবে যাত্রা করেছে! এদের ফাঁসি ঠেকাতে তারা কত বিদেশীশক্তিকে এখন নিয়মিত বাপ ডাকছে। কিন্তু তাদের কোনো বাপেই কাজ হচ্ছে না। বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের নিয়মিত ফাঁসি হচ্ছে, আর তা ভবিষ্যতেও হবে, ইনশা আল্লাহ। আর এতেই দেশের একটি চিহ্নিত ও কুখ্যাত দুষ্কৃতিকারীচক্র ও পাকিস্তানীগোষ্ঠী একেবারে ক্ষেপে গেছে। সেই ২০১০ সাল থেকে শুরু হয়েছে তাদের গাত্রদাহ। তাদের কলিজা পুড়ে কাবাব হয়ে গেছে। কারণ, তাদের একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী-বাপদের এখন নিয়মিত ফাঁসি হচ্ছে।

একাত্তরের রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ঠেকাতে না পেরে দেশের ভিতরে নিয়মিত গোলোযোগসৃষ্টির উদ্দেশ্যে রাজাকারগোষ্ঠী এখন একের-পর-এক মরণ-কামড় দিচ্ছে। তারা যেকোনো একটা অজুহাত পেলে অমনি মাঠে নেমে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই: যেকোনোমূল্যে এই সরকারের পতন ঘটানো।
একজন শ্যামল কান্তিকে নিয়ে তারা সেই পথেই অগ্রসর হয়েছিলো। এই ঘটনাটিকে পুঁজি করে দেশের মৌলবাদীশ্রেণীটি আঁটসাঁট বেঁধে অগ্রসরও হয়েছিলো। কিন্তু তারা এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে জনজীবনে সন্ত্রাসসৃষ্টি করতে সমূলে ব্যর্থ হয়েছে। শ্যামল কান্তিকে তার স্বপদে বহাল করা হয়েছে। আর বলা হয়েছে: তিনি চাইলে আদালতে মামলাও করতে পারবেন। আর কী চাই? ঘটনা তো মিটে গেছে।
এই পরীক্ষায় মৌলবাদীরা ফেল করেছে। সঙ্গে তাদের বামপন্থীদোসররাও পরাজিত হয়েছে। এর আগে তারা নারায়ণগঞ্জেরই একটি হত্যাকাণ্ড—ত্বকীহত্যাকাণ্ড নিয়ে খুব হৈচৈ করেছিলো। আর দোষ দিয়েছিলো ওসমানপরিবারকে। এরা সবসময় অন্যের ঘাড়ে দোষচাপাতে ও ঘোলাপানিতে মাছশিকার করতে খুব পারদর্শী। এদের মধ্যে বিন্দুপরিমাণ মানবতাবোধ নাই। আর তারাই এখন একজন শ্যামল কান্তিকে নিয়ে খুব হৈচৈ করছে! তাদের উদ্দেশ্য কখনও ভালো নয়।

শ্যামল কান্তি নিয়ে হয়তো একটি ভুল হয়েছে। তাই বলে তার ভুলকে কেন্দ্র করে দেশের ভিতরে নাশকতাসৃষ্টি করতে হবে? আর একজন শ্যামল কান্তির জন্য দেশবিরোধী-পাপ করতে হবে?

কিন্তু এখন ভাবছি: একটা ইস্যু তো গেল! আবার কোন ইস্যু তৈরি করবে মৌলবাদীরা?

শুভেচ্ছান্তে
আবুল খায়ের মোহাম্মদ রফিকুল হক
ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×