somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামহোয়্যার, নরওয়ে ও বাংলাদেশ: ভবিষ্যতের সেতু

২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৫ রাত ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এই লেখাটি প্রকাশ পেয়েছে 20 ডিসেম্বর, 2005, আড্ডার ইংরেজী ভার্সনে)
নরওয়ে মধ্যরাতের সূর্যের দেশ- এই প্রশ্নটি ছোটবেলায় স্কুলের কুইজে প্রায়শঃ আসত। তারপর এতো বছর পর, হঠাৎ করে ইন্টারনেটপ্রেমীরা বাংলা কীবোর্ডের মাধ্যমে ব্ললগিং করতে পারবে এই সুযোগ প্রকাশ পাওয়ার খবরটা বাংলাদেশে মধ্যরাতের সূর্যের মতো অবিশ্বাস্য মনে হলো। সামহোয়্যার ইন, নরওয়েজীয়ান কোম্পানি, বাংলাদেশের কিছু সংখ্যক নিবেদিত করিৎকর্মা তরুনদেরকে নিয়ে পিএইচপি প্লাটফর্মের মাধ্যমে বাংলায় বল্লগিং করার সুবর্ণ সুযোগ আমাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিল। সামহোয়্যার ইনকে ধন্যবাদ জানাবার জন্যে নরওয়ে ও বাংলাদেশকে নিয়ে মজার কিছু তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। নরওয়ে 1973 সাল থেকে বাংলাদেশে শিকা, বেসরকারী খাত, মানবাধিকার, সুশাসন ও সংস্কৃতি সেক্টরে সাহায্য করে আসছে।

নরওয়ে 1905 সালে সুইডেন থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন হয়। 91 বছর এক সাথে থাকার পর তারা এক ফোটা রক্ত না ঝড়িয়ে আলাদা হলো। অন্যদিকে, বাংলাদেশ 1971 সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়। 24 বছর এক সাথে থাকার পর আমরা তিরিশ ল প্রাণের বিনিময়ে মুক্তি সংগ্রাম করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনি।

নরওয়েতে এক মাইল হাঁটলে পরে 15 জন লোকের সাথে দেখা হবে। কারণ, এখানে সাড়ে চার কোটি লোক থাকে বাংলাদেশের চেয়ে দ্বিগুন বড়ো এলাকায়। বাংলাদেশে এক মাইল হাঁটলে পরে 1,015 জন লোকের সাথে আপনি ধাক্কা খাবেন। কারণ এখানে 14 কোটি লোক বাস করে নরওয়ের অর্ধেক এলাকায়।

নরওয়ে ও বাংলাদেশ উভয়ই তাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য অহংকার করে। বাংলাশে পাওয়া যাবে রূপালী নদীর পানি, নরওয়েতে পাওয়া যাবে বরফ ও তুষারে ঢাকা সাদা পাহাড়। নরওয়ে বাংলাদেশে তুষার ও বরফ রপ্তানীর কথা ভেবে দেখতে পারে যাতে আমরা আমাদের মাথা ঠান্ড রাখতে পারি। নরওয়ে আমাদের দেখিয়ে দিতে পারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কিভাবে সরকারী কার্যক্রম ও লেনদেন করা যেতে পারে। আমি নরওয়ের পর্যটন সাইটটা (ইংরেজী আড্ডায় লিংক পাওয়া যাবে) দেখে এতোই মুগ্ধ হয়ে পড়ি যে মনে হচ্ছিল ফিনমার্ক শহরে কুকুর টানা শ্লেজ গাড়ীতে আমি ঘুরে বেড়াচ্ছি। বাংলাদেশের কম্পিউটার বিশারদরা কি আমাদের সুন্দরবনের উপর এরকম ট্রাভেল সাইট তৈরী করতে পারেন না? প্লিজ!

নরওয়ের লোকজন সকালে নাস্তায় মাছ খেয়ে থাকে, সামুদ্রিক মাছ এদের দ্বিতীয় বৃহওম রপ্তানী পণ্য। বাংলাদেশে গ্রামের লোকজন সকাল বেলা মাছের শুটকী দিয়ে পান্তা ভাত আনন্দের সাথে খেয়ে থাকে। বাংলাদেশের গ্রামের লোকজন কি নরওয়ে থেকে এসেছে? নরওয়ের লোকজন বাসার দোচালা ছাদের উপর ঘাস লাগিয়ে থাকে, অনেকে ভাববেন, নরওয়ের গরুগুলো কী ছাদে উঠে ঘাস খায়? আসলে, ওটা ওদের প্রকৃতি প্রেম। তবে, নরওয়ের গরুগুলো পাহাড়ে উঠে ঘাস খায়। নরওয়ে থেকে কিছু গরু নিয়ে আসলে বাংলাদেশের গরুগুলোকে শিখাতে পারত বেঁচে থাকার তাগিদে কিভাবে পানির নীচে গিয়ে মাছ ধরা যেতে পারে।

ধনী দেশ হিসেবে নরওয়েতে গাড়ী চালানো নিরুৎসাহিত করার জন্য ইচ্ছে করেই গাড়ী চালানোটা অত্যন্ত ব্যয়বহূল করে রেখেছে। প্রকৃতিকে রার জন্য এই ব্যবস্থা। বাংলাদেশে গাড়ী ব্যবসায়ীদেরকে রার জন্য জনাকীর্ন রাস্তায় নতুন নতুন গাড়ী নামানো হয় যাতে গাড়ীভিওিক আমাদের সংসকৃতির আরো বিকাশ ঘটে।

নরওয়েতে অনেক বড়ো সড়ক শেষ হয় কোন লেকের ধারে গিয়ে পর্যটকদের আকর্ষনের জন্য। বাংলাদেশে বড়ো লেক ও হাওড় ভরাট করে আমরা সড়ক তৈরী করি যাতে দ্রুত আমরা হাইরাইজ এপার্টমেন্টে ঢুকতে পারি।

খ্রীস্টান প্রধান নরওয়েতে কেবল তিন ভাগ লোক নিয়মিত চার্চে যায়। হয়তো তাদের আধ্যাত্মিকতা বাস করে ঘরের ভেতর, তাই খোদার সন্ধানে তাদেরকে চার্চে যেতে হয় না। অন্যদিকে, মুসলমান প্রধান বাংলাদেশে ঘর থেকে আধ্যাত্মিকতা পালিয়ে যাচ্ছে, কারণ, এখানকার ইসলামী দলগুলো খোদাকে তাদের একমাএ সম্পওি করে রাস্তায় নিয়ে গেছে।

দ্বিপাকি সম্পর্কের ধারায়. বাংলাদেশ নরওয়ের সারতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। নরওয়েতে 6 থেকে 16 বছর পর্যন্ত বাধ্যতামূলক বিনামূল্যে শিার ফলে তাদের সারতার হার 99%। আমি জানি না, তাদের 1% নিরতার কারণ কী? বাংলাদেশ সহজে 1% নরওয়েজীয়ানকে স্থান দিতে পারে আমাদের নিররদের মাঝে। বিনিময়ে নরওয়ের বন্ধুরা 100% সারতার জন্য গর্ববোধ করতে পারবে। আমরা তাদের নিররদেরকে সাইজ করে কয়েকদিনের মধ্যে শিখিয়ে দিতে পারব বেঁেচ থাকার শিা।

নরওয়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অতি নিম্ন বলে ওদেশে বৃদ্ধদের হার দ্রুত বাড়ছে। আমরা এব্যাপারে নরওয়েকে কারিগরি সাহায্য দিতে পারি। নরওয়ের নববিবাহিত দম্পতিদেরকে আমরা বাংলাদেশের গ্রামে নিয়ে এসে হাতে কলমে সন্তান উৎপাদন বৃদ্ধির আনন্দ ও তৃপ্তির শিা দিতে পারি।

নরওয়ে নারীদের উন্নয়নে স্থাপন করেছে দৃস্টান্ত যেখানে পুরুষ ও নারীর মধ্যে তেমন ব্যবধান নেই। বাংলাদেশ নারীদের উন্নয়নের জন্য দুই নেএীকে সামনে দিয়ে রেখেছে যাতে তারা এদেশের নারীদের উন্নয়নের চিএ তারা তুলে ধরতে পারে। নরওয়ে স্যামী ট্রাইবকে যেভাবে প্রতিসঠিত করেছে তা আমাদের পার্বত্য চট্রগ্রামের উপজাতীয়দের উন্নয়ণের জন্য উৎসাহের উৎস হতে পারে।

নরওয়েতে কর ব্যবস্থায় সকলকে ট্যাঙ্ দিয়ে জীবন যাপন করতে হয় যাতে দারিদ্র সীমা থেকে তারা মুক্তি না পায়, বাংলাদেশে ট্যাঙ্ ফাঁকি দিয়ে জীবন যাপন করতে হয় যাতে আমাদের দরিদ্র শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, ও করকর্মকর্তারা নিছক দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্তি পায়।

নরওয়ে ষাটের দশকে তেল ও গ্যাস পেয়ে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে ফেলে। বাংলাদেশে গ্যাস পাওয়ার পর টেংরাটীলা জালিয়ে দিয়ে আমরা নিশ্চিত করেছি যাতে দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তন না হয়।

নরওয়ে রাজতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখেছে, যে ব্যাপারে জনগণের কোন মাথা ব্যথা নেই। বাংলাদেশে রাজতন্ত্রের ধারা সূচনা করলেই নিবের্াধ বাঙালীরা তা নস্যাৎ করে দেয়। কখন এই অভাগা দেশবাসী বুঝবে যে আমাদেরও রাজকুমার ও রাজকুমারীর প্রয়োজন আছে। ইদানীং এব্যাপারে জনগণের আগ্রহ সৃস্টি করার জন্য আমরা সভা-সমিতি ও টিভিতে চেস্টা করছি।

2005 সালে নরওয়ে বসবাসের জন্য পৃথিবীতে শ্রেসঠ স্থান হিসেবে নির্বচিত হয়েছে। বাংলাদেশ বসবাসের জন্য পৃথিবীতে শ্রেসঠ অনুপযুক্ত স্থান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে রাজনৈতিক বিবাদ ও মার-দাঙ্গার জন্য। দয়া করে, আল্লাহ সমুদ্র দিয়েছেন দেিণ, না হলে একদিন পুরো দেশবাসী পালিয়ে যেত আর রাজনৈতিক দলগুলো মহাসমাবেশে কোন মানুষ না পেয়ে বড়ই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ত। কী মজা।

বিশ্বসাহিত্য নিয়ে পড়তে চাইলে নরওয়ের বিকল্প নেই। নরওয়ের নাট্যকার হেনরিক ইবসেনের (1828-1906) 100 বছর উদযাপন হবে আগামী বছর। শেঙ্পীয়ারের পর, ইবসেনকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় নাট্যকার। তার লেখা নাটকের প্রিয় সংলাপ দিয়ে শেষ করছি আজকের মতো:

"বর্তমান পৃথিবীতে নিবের্াধরা হচ্ছে সংখ্যাগরিসঠ। হায় খোদা, এই নিবের্াধরা শাসন করবে বিচনদের। হঁ্যা, আপনি আমাকে চীৎকার করে নীরব করে দিতে পারেন, কিন্তু পারবেন না সদুওর দিতে। আমি ও আমরা অল্প ক'জন ঠিক দিকে আছি। সংখ্যালঘু আমরা ক'জন সবসময়ই ঠিক দিকে থাকি" (জনগণের শত্রু, 1882)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×