শীতের সকালের মিঠে আলোয় কুয়াশা ভেজা কংক্রিটের বেঞ্চটা স্বপ্নের ভাউচারে মুছে জড়োসড়ো হয়ে বসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা। পাশেই দাঁড়িয়ে গল্প করছে দুই বন্ধু। তাদের অনেকদিন পর দেখা। প্রায় ত্রিশ পঁত্রিশ বছর পর। দু’জনারই বয়স প্রায় ষাটের ঘরে।
তাদের কথোপকথন অন্যদিকে তাকিয়ে শুনছিলাম খুব মনোযোগ দিয়ে । অতীতের কথাগুলো পুরোনো স্মৃতিগুলো। জায়গা, জমি, ছেলে, মেয়ে, নাতি, পুতি, টাকা, পয়সা, মসুরের, ডালের দাম, ছোট ছোট ছাওয়ালপালের মুরুব্বিদের অসম্মান, মোবাইলে ঘসাঘসি, সকালে রান্না শুরু করা গরুর গোশত বিকালে চুলা থেকে নামিয়ে টেনে ছিড়তে না পারা কোন কিছুই বাদ গেল না।
হঠাৎই দুই বন্ধু উপসংহারে পৌছাল আমাদের সময়টাই সবচেয়ে ভাল ছিল। কথাটা কানে যেতেই তাদের দিকে ফিরে তাকালাম। প্রশ্নের ভঙ্গিতে উপসংহারটা ছুড়ে দিলে আমার দিকে। আমি শুধু ঈষৎ সম্মতিসূচক মুচকি হাসি দিলাম কারন অসম্মতি জানিয়ে মুরুব্বিদের কিছু বলাটা নানা সমস্যা তৈরী করে কারন অধিকাংশ প্রবীণরা অগণতান্ত্রিক হয়। তাদের মতের বাহিরের কোন মতামত বা মতবাদ গ্রহণ করতে চাই না তা যত ভালই হোক না কেন।
ভাবতে থাকলাম তাদের বক্তব্য অনুযায়ী শীতের দিনে লেপ তোষক বিহীন বাঁশের মাচায় ঘুমানো লন্ঠনের আলোয় মাঠে হাগতে যাওয়া, ফ্যান এসি লাইট ঘড়ি টেলিভিশন, মোবাইল, ইন্টারনেট, পানির ট্যাংকি বিহীন সকালে কাঁচা মরিচ সহযোগে গমের ভাতের নাস্তার ব্যবস্থা করে তাদের সোনালী অতীতে ফেরত পাঠালে কেমন হয়????????।!!!!
ট্রেনে বসে ভাবতে থাকলাম আচ্ছা মুরুব্বি দু’জন আমাদের সময়টা বলতে তাদের ১৮/২০ বছর বয়সকে বোঝাল কেন? বর্তমানকে কেন বোঝাল না? সবচেয়ে বেশী সম্পদ, টাকা, পয়সা, প্রভাব, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা, ক্রয়ক্ষমতা, যা ইচ্ছে তাই করার স্বাধীনতা ভোগ করছে তারা এই বর্তমানে বা আজ। গতকালের চেয়েও আজ সে বেশী টাকার মালিক। তার বলয়ের ভেতরের সবাই তার কথা শুনতে বাধ্য না মানলে শাস্তি ভোগে বাধ্য। এ সময়টা তো তাদেরই। সময়ের সবচেয়ে সেরা সরটুকু তাদের জন্য বরাদ্দ। তারা তাদের এ সবচেয়ে সোনালী সময়টুকুকে নিজেদের বলেই স্বীকৃতি দেয় না নিতেও চাই না। কিন্তু কেন? বর্তমান সময়টাকে কেন তারা নিজেদের বলে ওন করে না?????
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫২