somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমন: নিউ ইয়র্ক, এলিস আইল্যান্ড। আমেরিকার স্বপ্নদুয়ার - স্বপ্ন গল্পের ইতিহাস।

০৭ ই আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
এলিস আইল্যান্ড, নিউ ইয়র্ক
"ন্যাশণাল মিউজিয়াম অফ ইমিগ্রেশন"
আমেরিকার স্বপ্নদুয়ার - স্বপ্ন গল্পের ইতিহাস।

(নিউ ইয়র্কের শ্রেষ্ঠ ল্যান্ডমার্ক স্ট্যাচ্যূ অফ লিবার্টি, পেছনে অপরূপ ম্যানহাটান)

সাবধানতা: দীর্ঘ রচনা

মিস্‌ নিউ ইয়র্ক, দুরে স্ট্যাচ্যূ অফ লিবার্টি।

স্ট্যাচ্যূ অফ লিবার্টি এবং লিবার্টি আইল্যান্ড সফর শেষে সেখান থেকে যে শীপে করে এলিস আইল্যান্ডে এলাম তার নাম মিস্ নিউ ইয়র্ক। এর আগে নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে লিবার্টি আইল্যান্ডে যাবার জাহাজের নাম ছিলো লেডি লিবার্টি। জাহাজগুলোর ‘লেডি’ ‘মিস্’ এসব নাম দেখে মনে হচ্ছিলো আমি লুতুপুতু বাচ্চা, জাহাজগুলো নারী। আমাকে কোলে নিয়ে এখান থেকে ওখানে পার করে দিচ্ছে। মিস্ নিউ ইয়র্ক জাহাজে বসে কেমন জানি নরম-নরম আরাম বোধ হচ্ছিলো। কিন্তু আরাম ঠিকমত উপভোগ করার আগেই দেখি এলিস আইল্যান্ড পৌঁছে গেছি।

ন্যাশণাল মিউজিয়াম অফ ইমিগ্রেশন, এলিস আইল্যান্ড, নিউ ইয়র্ক।

লিস আইল্যান্ডে পা রাখতেই চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন ইমিগ্রেশন মিউজিয়াম বিল্ডিং, আশপাশের সবুজ ঘাসঘেরা বাগান আর পাতাভরা গাছ। গ্রীষ্মের সূর্য্যে উত্তপ্ত লিবার্টি আইল্যান্ডের তুলনায় এলিস আইল্যান্ড অনেক বেশী সবুজ, ছায়াঘেরা, স্নিগ্ধ আর শীতল। শরীরে বেশ আরাম পাচ্ছিলাম। আরো ভালো লাগছিলো হাডসন নদীর মোহনায় আটলান্টিকের এই ছোট্ট দ্বীপের উপর দাঁড়িয়ে দুটো নগরী নিউ ইয়র্ক সিটি আর নিউ জার্সির ডাউন টাউন। চোখে পড়ে চমৎকার এবং আইকনিক সব স্কাইস্ক্র্যাপার্স, সূর্য্যের আলোয় উদ্ভাসিত।

এলিস আইল্যান্ড থেকে অপরূপ নিউ জার্সী।

জেটি থেকে কংক্রীট স্ল্যাবের প্রশস্থ হাঁটাপথ হয়ে একটুখানি এগিয়ে গেলে মেইন ইমিগ্রেশন বিল্ডিংয়ের কাঁচে ঢাকা লম্বা পোর্টিকো। আজকের প্রভাবশালী আমেরিকার সকল ক্ষমতার অন্যতম স্বাক্ষী এই ভবন, এক সময়ের Immigration Inspection Station. ১৮৯১ সালে বিশেষ আইন Immigration Act of 1891-এর মাধ্যমে আমেরিকার ফেডারেল সরকার অভিবাসন বা ইমিগ্রেশন নিয়ন্ত্রনের জন্য সবগুলো স্টেট থেকে দায়িত্ব নিয়ে নেয়। অর্থাৎ অন্য স্টেট (বা রাষ্ট্র) গুলোকে ইমিগ্রেশন নিয়ে মাথা ঘামাতে হবেনা, ফেডারেল সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে ইমিগ্রেশন কন্ট্রোল করবে। ফেডারেল সরকার এজন্য প্রয়োজনীয় ভবন তৈরী সেইসাথে ইমিগ্র্যান্টদের এক্সামিন, চিকিৎসা ইত্যাদির প্রয়োজনে হাসপাতাল বানানোর জন্য এক সময়ের মিলিটারি স্থাপনা এলিস আইল্যান্ডকে বেছে নেয় এবং ল্যান্ডফিল করে এলিস আইল্যান্ডের আয়তন বাড়িয়ে দ্বিগুন করা হয়। আইল্যান্ডের পূর্ব অংশে মূল্যবান জর্জিয়ান পাইন কাঠের তৈরী প্রাসাদোপম একটি ভবন নির্মান করা হয় যার নাম রাখা হয় “দ্য অফিস অফ ইমিগ্রেশন।” পরে এর নাম হয়, “ব্যূরো অফ ইমিগ্রেশন।” পশ্চিম অংশে বানানো হয় হাসপাতাল এবং মর্গ। ১৮৯২ সালের ১ জানুয়ারী তারিখ থেকে, ঠিক এখানেই, কাঠ দিয়ে বানানো ইমিগ্রেশন ভবন তার কার্যক্রম শুরু করে। ১৮৯৭ সালের ১৫ জুন তারিখে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে অনিন্দসুন্দর মূল্যবান জর্জিয়ান কাঠের তৈরী এই ভবনটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। তবে সুখের বিষয় কেউ হতাহত হয় নি, পশ্চিম দিকের হাসপাতাল ভবনেরও কোন ক্ষতি হয় নি।
প্রায় সোয়া তিন বছর পর, ১৯০০ সালের ১২ ডিসেম্বর তারিখে নতুন, আরো দৃষ্টিনন্দন এবং অগ্নি নিরোধক ইমিগ্রেশন কন্ট্রোল অফিস কার্যক্রম শুরু করে যার সামনে আজ আমি দাঁড়িয়ে।

কনজার্ভেটরি থেকে দেখা যাচ্ছে ইমিগ্রেশন ভবনের চুড়া।

কশত কুড়ি (১২০) বছর গড়িয়েছে, এখনও সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে সুন্দর ভবনটি। এখানে আর ইমিগ্রেশন কন্ট্রোল হয় না, এটা এখন স্মৃতিঘেরা যাদুঘর। বর্তমান নাম, “এলিস আইল্যান্ড ন্যাশণাল মিউজিয়াম অফ ইমিগ্রেশন।” পৃথিবীর কোথাও ইমিগ্রেশন যাদুঘর আছে বলে আমার জানা ছিলোনা, পরে জেনেছি অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন আর জার্মানীর হামবুর্গেও ইমিগ্রশন জাদুঘর আছে। হামবুর্গের ইমিগ্রেশন যাদুঘর আমেরিকায় ইমিগ্রেশন প্রত্যাশিদের হাব (Hub) হিসেবে ব্যাবহৃত হত, সেই হিসেবে এলিস আইল্যান্ড আর হামবুর্গের ইমিগ্রেশন যাদুঘরের সাথে নাড়ির সম্পর্ক আছে।

লিবার্টি আইল্যান্ডে অনেকক্ষন খোলা আকাশের নীচে ঘুরে প্রচন্ড গরমে রোদে পুড়ে ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত ছিলাম। তাই ইমিগ্রেশন মিউজিয়ামের নীচতলার রেস্ট্যূরেন্ট 'এলিস ক্যাফে'তে চলে গেলাম সরাসরি, আগে ঠান্ডা হয়ে পেট পুজো তারপর অন্য কিছু। আমি চিংড়ি বা গলদা চিংড়ির বিশাল ফ্যান নই, তবে ফ্রেশ লবস্টার স্যান্ডইচের অর্ডার দিয়েছি কেননা লবস্টারগুলো এই আটলান্টিকের মোহনা থেকেই শিকার করা। এক কথায় অসাধারণ, জীবনে এত স্বাদের গলদা-চিংড়ি স্যান্ডউইচ আর কোথাও খাইনি। ধীরে সুস্থ্যে খানাপিনা শেষ করে মিউজিয়াম দেখতে বের হলাম।

আটালান্টিকের ফ্রেশ লবস্টার, সাথে হ্যান্ডমেইড ক্রিস্পস। প্রচন্ড ক্ষুধায় মনে হচ্ছিলো অমৃত।

ত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। পৃথিবীর নানা দেশের, নানান জাতের মানুষ তখন জাহাজে করে আসতো। কারন সে আমলে এখনকার মত আধুনিক বিমানবন্দর ছিলোনা। ছিলো মাঝখানে বিশাল মহাসাগর তারপর বন্দর, জাহাজে করে যাত্রীদের পার হতে দীর্ঘ সময় লেগে যেত। তবুও নিয়ম করে মেডিক্যাল চেকাপ আর ইমিগ্রেশন ইন্টারভিউ হত। অবশ্যই তখনকার প্রেক্ষাপট ছিলো ভিন্ন, তাই নিয়মকানুনও এখনকার চেয়ে ভিন্ন। আমি কল্পনায় বোঝার চেষ্টা করছি, আজ হতে শতবর্ষ পূর্বে অতল আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে স্টীম জাহাজে করে দুলতে দুলতে, দলে দলে মানুষ এসে জমায়েত হচ্ছে এখানে। কেউ জানেনা এই দেশ দেখতে কেমন, হয়তো শুনেছে সে এক সম্ভাবনার দেশ। যেখানে আছে প্রাচুর্য্য, গেলেই পাওয়া যায় কাজ, নেই খাবারের অভাব, নেই কমিউনিস্ট বা মিলিটারি শাসন। নেই ধর্মীয় কঠোরতা, আছে অপার স্বাধীনতা এবং প্রাণখুলে কথা বলার অধিকার। আর আছে অনেক রোদ, আলো-বাতাস। কিন্তু সেখানে গেলেই যে থাকতে দেবে এমন কথা নেই। যদি ফেরত পাঠিয়ে দেয়?

ক্লাসিফিকেশন ভেদে ইমিগ্র্যান্টদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে

“ ডাক্তার, ইমিগ্রেশন সবাই ইউনিফরম পরা, ভীষন ভয় পাচ্ছিলাম। ইউনিফরম আমাদের কাছে চরম আতংকের বিষয়। ইউনিফরমওয়ালাদের থেকে বাঁচার জন্য রাশিয়া থেকে পালিয়ে এসেছি। ” - ক্যাথরিন বেইচক, রাশিয়ান ইহুদী ইমিগ্র্যান্ট, ১৯১০

গ্রাউন্ড ফ্লোরের কমন এরিয়া থেকে আমার মিউজিয়াম দর্শন শুরু। ১২০ বছর আগে এটা ছিলো ভয়াবহ ব্যাস্ত জায়গা যেখানে ইমিগ্র্যান্টরা জাহাজ থেকে নেমে মালপত্র সহ জমায়েত হত। আছে ব্যাগেজ রুম, যা এলিস আইল্যান্ডের অন্যতম ট্যূরিষ্ট এ্যাট্রাকশন। আরো আছে আমেরিকায় ইমিগ্রেশনের নানান নিদর্শন, গিফট শপ, ইনফরমেশন ডেস্ক, অডিও ট্যূর নিতে চাইলে হেডফোন, গাইড ইত্যাদির কালেকশন পয়েন্টও এখানে। সাথে আছে আমেরিকায় ইমিগ্রেশন ইতিহাসের দুটি ধারার নিদর্শন, প্রথমটি হচ্ছে পিপলিং অফ আমেরিকা (The Peopling of America 1550 – 1890), যেখানে প্রথম ভুল করে আমেরিকা আবিষ্কার, পরে বৃটিশ সেটলারদের আগমন সম্পর্কে সম্যক ধারনা দেওয়া হয়েছে। পরেরটি হল আমেরিকায় ইমিগ্রেশনের নবযুগ বা নতুন ধারা, দিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে বর্তমান পর্যন্ত (New Eras of Immigration, 1945-Present)।

প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রী হয়ে আসা ইমিগ্র্যান্টদের এই লম্বা ইন্সপেকশন প্রসেস পার হতে হত না। ফেডারেল জয়েন্ট টীম জাহাজে উঠে এই শ্রেণীর যাত্রীদের দায়সারা গোছের ইন্সপেকশন সেরে নিতো। আমেরিকান ফেডারেল সরকারের এই ধারণার পেছনে যুক্তি হল যারা ফার্স্ট ক্লাস টিকেট কেনার সামর্থ রাখে তারা আমেরিকার বোঝা হয়ে দাঁড়াবেনা এটা প্রায় নিশ্চিত। তবে প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের কাউকে অসুস্থ্য পাওয়া গেলে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে এলিস আইল্যান্ড থেকে মেডিক্যাল ক্লীয়ারেন্স নিতে হত।
জাহাজে করে আসা ইমিগ্র্যান্টদের সবাই তো আর প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রী ছিলোনা। দরিদ্র আর অধিকারবঞ্চিত মানুষদের স্বপ্ন ছিলো যে কোনভাবে আমেরিকা পৌঁছাবার। তারা ছিলো সংখ্যাগরিষ্ঠ “*Steerage” আর তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রী যারা জাহাজের জনাকীর্ণ, অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশের বাংক ক্লাসে করে উত্তাল আটলান্টিক পাড়ি দিতো। তাদের প্রায় সবাই সী-সিক থাকতো। (*স্টিয়ারেজঃ- জাহাজের পেছনদিকের খোলের ভেতরের অংশবিশেষ যেখানে গরীব যাত্রীদের কম মূল্যে চড়ার সুযোগ ছিলো, অনেকটা চীৎ-কাত হোটেলের মত।)

“ হায় ঈশ্বর, আমি খুবই অসুস্থ্য ছিলাম, সী-সিক। সবাই সিক। আসলে আমি ওই জাহাজের অভিজ্ঞতার কিছুই মনে করতে চাই না। এক রাতে প্রার্থনা করছিলাম আমি যেন সাগরে ডুবে মরে যাই। চরম অসুস্থ্য ছিলাম, জাহাজের সবার অবস্থাও তখন আমার মতন। ” - বার্থা ডেভলিন, আইরিশ ইমিগ্র্যান্ট, ১৯২৩।

প্যাসেঞ্জার জাহাজ নিউ ইয়র্ক সিটির হাডসন রিভার অথবা ইস্ট রিভারের জেটিতে ভীড়তো। প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রীরা কাস্টমস, ইমিগ্রেশন সেরে সরাসরি ইউনাইটেড স্টেটস্-এ ঢুকে যেতে পারতো। স্টিয়ারেজ এবং তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের জেটি থেকে বার্জ বা ফেরীতে করে নিয়ে আসা হত এলিস আইল্যান্ডে। স্টিয়ারেজ এবং তৃতীয় শ্রেণীর অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশের কারনে অসুস্থতা, কিংবা তাদের দেশ থেকে বয়ে আনা রোগবালাই যাচাই করার জন্য সবার আগে মেডিক্যাল চেকআপ করা হত। যারা মেডিক্যাল ক্লীয়অরেন্স পেতোনা তাদের পাঠানো হত ইমিগ্রেশন হাসপাতালে।

ভিসাপ্রার্থী অপেক্ষামান ইমিগ্র্যান্টদের ডাইনিং হল।

ডাইনিং হল অফ এলিস আইল্যান্ড:-
মিগ্রেশন প্রত্যাশীদের জন্য বিনে পয়সায় খাবারদারের অভাব ছিলোনা কখনো। গরুর মাংসের স্ট্যু, সেদ্ধ আলু, সাদা পাউরুটি আর বাটার, হেরিং মাছ, বেকড্ বীন, প্রুন-স্ট্যু, কলা, স্যান্ডউইচ এমনকি আইস ক্রিমও। নারী এবং শিশুদের জন্য দুধ আনলিমিটেড। শুধু তাই নয়, প্রচুর পরিমানে ইহুদী ইমিগ্র্যান্টদের সমাগম হত বিধায় ১৯১১ সাল থেকে কোশার* কিচেন খোলা হয় (* ইহুদীদের শাস্ত্রীয় বিধানসম্মত খাবার)। বিনে পয়সার খাবারের পাশাপাশি দ্বীপ ছেড়ে যাওয়ার সময় ইমিগ্র্যান্টদের অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার কেনার ব্যাস্থাও ছিলো।

“এলিস আইল্যান্ডে এসে যা দেখেছি আমি জীবনেও ভুলবোনা। আমার প্রথম অনুভূতি, ‘মাই গশ্! এত দেশের মানুষ! একসাথে?” - ভুলবোনা প্রথম আমেরিকান খাবার, বড় বড় জগভর্তি দুধ আর সাদা পাউরুটি। জীবনে প্রথম সাদা পাউরুটি আর বাটার খেয়েছিলাম। ওখানে এত দুধ, এত দুধ! আমি আকন্ঠ পান করেছি কারন আমার দেশে যথেষ্ট দুধ পেতাম না। আমি বললাম, ‘মাই গড, আমরা এখানে অনেক ভালো থাকবো। অনেক অনেক খাবার খেতে পারবো’। ” - মার্টা ফোরম্যান, সাবেক চেকোস্লোভাকিয়ান ইমিগ্র্যান্ট, ১৯২২।


দ্বিতীয় তলায় বিশাল রেজিস্ট্রী রুম যা আজ শুধুই কালের সাক্ষী। দোতলা-তেতলা জুড়ে কমন ছাদ, গম্বুজ, বড় বড় জানালা বড়সড় এই রেজিস্ট্রী রুমের বিশেষত্ব। নার্ভাস ইমিগ্র্যান্টরা জাহাজ থেকে নেমে সবার আগে এখানে এসে লাইনে দাঁড়াতো। নবাগতদের ভীড়, নানান ভাষার মানুষের উচ্চশব্দের কথোপকথন সব মিলিয়ে আনন্দ, সম্ভাবনা আর শিহরণ মেশানো অদ্ভুত অথচ বিভ্রন্তিকর পরিবেশ। সবার আগে মেডিক্যাল চেকআপ; এলিস আইল্যান্ডের ডাক্তারেরা মূলতঃ চর্মরোগ, শরীরের তাপমাত্রা (জ্বর), জন্মগত কোন সমস্যা, পঙ্গুত্ব, শ্বাসপ্রশ্বাসে অস্বাভাবিকতা, কাশি, উকুন, চোখ ওঠা রোগ ইত্যাদি পরীক্ষা করতো। এছাড়া দুর্বলচিত্তের কিনা সেটা পরীক্ষা করা হত নিউরোসাইকোলজিকাল টেস্ট এর মাধ্যমে।

“আমার বোনের হাতের উপর কতগুলো আঁচিল দেখে ওরা ওর পিঠে কোটের উপর চক দিয়ে বড় করে ‘X’ (ক্রস মার্ক) এঁকে দিলো। ‘X’ দেওয়া মানে রিএক্সামিন করার জন্য আরেক লাইনে পাঠানো। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে কাকে রাখবে আর কাকে ডিপোর্ট করবে। আমার বোনকে ফেরত পাঠাতে আমি দেবোনা, সব ছেড়েছুড়ে আমেরিকা এসেছি। দেশে ফিরে কোথায় যাবে সে? একজন বুদ্ধি দিলো কোট উল্টে পরার জন্য, এবং তাতে কাজ হল। ” - ভিক্টোরিয়া সাইফাত্তি ফারনান্দেজ, মেসিডোনিয়ান ইমিগ্র্যান্ট ১৯১৬।

মেডিক্যাল ক্লীয়ারেন্স পেলে ইমিগ্রেশন। এলিয়েনদের দীর্ঘ লাইনের শেষে ভিন্ন ভিন্ন ডেস্কের পেছনে উঁচু টুলে বসা ইমিগ্রশন ইন্সপেক্টরস্, সাথে দোভাষী। এলিয়েনদের ইংরেজী জানতে হবেনা, একটু বুদ্ধিশুদ্ধি থাকলেই চলবে। এলিয়েনদের নিয়তি নির্ভর করছে ইমিগ্রশন ইন্সপেক্টরদের উপর। সব ঠিকঠাক হলে সর্বোচ্চ দুই মিনিটে ইমিগ্রশন শেষ, - Wellcome to America!

রেজিস্ট্রি রুমের আরেক প্রান্তে, যেখানে মাথার উপর দু পাশ থেকে ঝুলে আছে আমেরিকার গর্বিত পতাকা সেখানে একটা ছোট্ট আদালত, The Hearing Room. ইমিগ্রেশন বা আন্য যে কোন অপরাধ সংক্রান্ত দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার জন্য। যদি কোন ইমিগ্র্যন্টকে আমেরিকান ট্যাক্সপেয়ারদের ‘বোঝা’ মনে করা হত, অথবা কেউ যুদ্ধাপরাধী বা খুনি, ডাকাত কিংবা অপরাধী, তাদের বিচারের মাধ্যমে ডিপোর্ট করা হত। ১৫ থেকে ২০% পরদেশী (Alien) দের আমেরিকায় এ্যাডমিশন আটকে দেওয়া হত যা হিয়ারিং পর্যন্ত গড়াতো। প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টি হিয়ারিং হত। তবে ডিপোর্ট করা হয়েছে মাত্র ২%।
মেডিক্যাল, ইমিগ্রেশন, কাস্টমস্ ইত্যাদি শেষ করে কোন প্রকার ঝুট-ঝামেলা ছাড়া এলিস আইল্যান্ড থেকে ক্লীয়ারেন্স নিয়ে ফের নিউ ইয়র্কে পৌঁছতে এলিয়েনদের তিন থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগতো।

অপরাধী ইমিগ্র্যান্টদের জন্য, কোর্টের হিয়ারিং রুম।

মিগ্র্যান্টদের “এলিয়েন” নামকরণ আমার একদম পছন্দ হয় নি। যদিও আভিধানিকভাবে এই শব্দ মোটেও ভুল নয়। তবে আমার কাছে এলিয়েন মানে মহাশূন্য থেকে আশা কিম্ভুত প্রানী যারা মানবজাতির চেয়ে অনেক এ্যাডভান্সড।

ইমিগ্র্যান্টদের সাথে করে নিয়ে আসা পন্য সামগ্রী, যেগুলোকে বলা হয় "ট্রেজারস্‌ ফ্রম হোম"।

হিয়ারিং রুমের পাশে আছে ‘এক্সিবিটস’ (প্রদর্শন সামগ্রী) যেগুলো ট্যূরিষ্টদের নিয়ে যায় সুদুর অতীতে, আন্দোলিত করে সবার মন। পাশে একটা রুমের উপরে সাইন দেখা যায়, “Through America’s Gate” এলিস আইল্যান্ডে আসার পর এলিয়েনদের একের পর এক যে সকল পরীক্ষা নীরিক্ষার ধাপ পার হতে হত সেগুলোকে আলাদাভাবে প্রদর্শিত করা হয়েছে।

"ট্রেজারস্‌ ফ্রম হোম"

মিউজিয়ামের ভেতর বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যাবতীয় প্রদর্শনীগুলোকে সম্মিলিত ভাবে নাম দেয়া হয়েছে “Treasures from Home”. প্রদর্শনীর মধ্যে আরো আছে প্রচুর দূর্লভ ছবি, ছাপানো আছে ইমিগ্র্যান্টদের কিছু চমৎকার মন্তব্য যেগুলো পড়ে ভালোলাগা আর শিহরণ মেশানো অদ্ভুত অনুভূতি হয়।
দ্বিতীয় তলার এক্সিবিট উইংয়ে সযত্নে রাখা আছে উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে আগত ইমিগ্র্যান্টদের বয়ে নিয়ে আসা নানাবিধ সরঞ্জাম যার মধ্যে কাপড়, জামা, জুতো, থেকে শুরু করে বাইবেল বা অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ, পারিবারিক কাগজপত্র, ছবি, পেইন্টিংস, সেলাই মেশিন, উল, হাঁড়ি পাতিল, ঘটি, বাটি, নানান যন্ত্রপাতি সব রয়েছে। বিভিন্ন জাতির ভিন্ন ভিন্ন টেকনলজীর নিদর্শন দেখে দারুন ভালোলাগা আর রোমঞ্চ মেশানো অনুভূতি হয়। নিজের জন্মভূমি, পরিবার, আত্মীয় সব চীরকালের জন্য পেছনে ফেলে এক বুক আশা নিয়ে পাড়ি দিয়েছে বিশাল মহাসাগর। দুচোখ ভরা স্বপ্ন, অনেক ভালোবাসায় গড়ে তুলবে এক নতুন জীবন।

ইমিগ্র্যান্টদের বুদ্ধিমত্বা পরীক্ষা করা হত বিভিন্ন রকম নিউরো সাইকোলজিক্যাল টেস্টের মাধ্যমে।

লিস আইল্যান্ডের “America’s Gate” সবার জন্য উম্মুক্ত বলা হলেও এলিয়েনদের বিশেষ এ্যাপটিচ্যূড টেস্ট পাশ করে বের হতে হত। যেমনঃ-
১. প্রাপ্তবয়স্ক এলিয়েনদের জন্য ডা. হাওয়ার্ড নক্স (Dr Howard Knox’s neuropsychological testing) আর ডা. গ্রোভার কেম্ফ (Dr Grover Kemf)-এর ডিজাইন করা নিউরোসাইকোলজিকাল টেস্টিং এর একটি অংশ ফিচার প্রোফাইল টেস্ট যেখানে আলাদা কাঠের কয়েকটি টুকরো (প্রোফাইল) একসাথ করে মানুষের চোখ, নাক, মুখ কান আর মাথা একসাথ করে দেখাতে হয়। সময় দশ মিনিট।
২. আট বছরের বাচ্চা এলিয়েনদের জন্য ফাইভ ব্লক ফ্রেম টেস্ট, সময় আট মিনিট।
৩. এডাল্টদের জন্য গুইন ট্রাইএঙ্গুলার টেস্ট যেখানে একটি চতুর্ভূজ এবং একটি ত্রিভূজাকৃতির কাঠের খাঁজে চারটা আলাদা ত্রিভুজ নিখুঁতভাবে বসাতে হবে। সময় পঁতাল্লিশ সেকেন্ড।
৪. নয় বছরের বাচ্চা এলিয়েনদের জন্য সিগুইন ফরমবোর্ড টেস্ট যেখানে দশটি বিভিন্ন ধরনের কাঠের শেইপ কে যথাস্থানে রাখতে হবে। সময় বিশ সেকেন্ড।
রো আছে কিউব এমিটেশন টেস্ট, সিমিলারিটি, ডিসিমিলিরাটি টেস্ট, ইমেজ টেস্ট। এগুলো এতই সাধারণ মানের যে সবাই সঠিক উত্তর দিতে সমর্থ। অবশ্য এই অতি সাধারণ টেস্টও অনেকে পাশ করতো না, তাদের সময় দেওয়া হত এবং রিটেস্ট নেওয়া হত। বারবার টেস্ট নেবার পরও পাশ না করলে তাদের ফীবলমাইন্ডেড বা দুর্বলচিত্তের মানুষ হিসেবে গণ্য করা হত এবং ডিপোর্ট করা হত।

হাওয়ার্ড নক্স এর নিউরোসাইকোলজিক্যাল সাইকোম্যাট্রিক টেস্ট।

“ওরা আমাকে প্রশ্ন করেছিলো, ‘দুই আর এক মিলে কত হয়? দুইয়ে দুইয়ে কত হয়?’ কিন্তু আমার পেছনে বাচ্চা একটা মেয়ে সে-ও আমার এলাকা থেকে এসেছে, ওকে জিজ্ঞেস করে, ‘সিঁড়ি কিভাবে ধুতে হয়, উপর থেকে নীচে নাকি নীচ থেকে উপরের দিকে?’ মেয়েটির সাফ জবাব, ‘আমি সিঁড়ি ধুতে আমেরিকায় আসিনি’। ” - পাওলিন নটকফ্, পোলিশ ইহুদী ইমিগ্র্যান্ট, ১৯১৭।


ডা. হাওয়ার্ড নক্স সর্বপ্রথম নিউরোসাইকোলজিকাল টেস্টিংয়ের প্রচলন করেন। এই টেস্টের মাধ্যমে এলিয়েনদের আমেরিকায় ইমিগ্রেশন পাবার যোগ্যতা বিবেচনা করা হত। টেস্টে ইংরেজী ভাষা জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। এত সাধারণমানর পরীক্ষা নেওয়ার পেছনে তাঁর যুক্তি হল, এলিয়েনরা দীর্ঘ সময় ধরে সমুদ্রপাড়ি দিয়ে নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করে নতুন দেশে নতুন জীবন গড়ার উদ্দেশ্যে আসে, তাদের মন এবং শরীর থাকে খুব দুর্বল। সুতরাং এই টেস্টগুলোই তাদের জন্য উপযোগী। ডা. হাওয়ার্ড এন্ড্রূ নক্স ১৯১২ থেকে ১৯১৬ সাল, এই চার বছর এলিস আইল্যান্ডের দায়িত্বে ছিলেন তবে তাঁর নিউরোসাইকোলজিকাল টেস্ট এলিস আইল্যান্ডের শেষ দিন পর্যন্ত প্রচলিত ছিলো এবং এর ব্যাবহার বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বহুক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।
১৯৫৪ সালে এলিস আইল্যান্ড ইমিগ্রেশন কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।

ইমিগ্রশন সাইকোলজিস্ট ড. হাওয়ার্ড নক্স সম্পর্কে ফ্রেমে বাঁধা কিছু কথা।

১৮৯২ থেকে ১৯৫৪ সাল, এই ষাট বছরে ঐতিহাসিক এলিস আইল্যান্ডের ইমিগ্রেশন ইন্সপেকশন স্টেশন হয়ে আমেরিকায় প্রবেশ করেছে এক কোটি বিশ লাখ এলিয়েন। তাঁদের জীবিত বংশধরদের সংখ্যা আমেরিকার বর্তমান জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। এক সময় যাদের এলিয়েন ডাকা হত তারা এবং তাঁদের বংশধরেরা বর্তমান আমেরিকার বিজ্ঞান, শিল্প, প্রযুক্তি, রাজনীতি, সাহিত্য, খাবার-দাবার বহুক্ষেত্রে অবদান রেখেছে। দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষগুলো গড়ে তুলেছে আজকের অসাধারণ, ধনী এবং পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্র. . . আজকের আমেরিকানরা বলে. . .
America, The Great.
GOD BLESS AMERICA.

আটলান্টিকের বুকে আমেরিকার স্বপ্ন দুয়ার এলিস আইল্যান্ডের স্বর্গীয় উদ্যান। সামান্য তফাতে লিবার্টি আইল্যান্ড। ।

লেখা এবং ছবি © আফলাতুন হায়দার চৌধুরী।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১:২৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ পিতা-মাতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি নেই, তাই শূন্য লাগে

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৬

তোমার চলে যাওয়ার পর
ঘরে আর আলো জ্বালাই না,
অন্ধকারে নিজের মতো করে
সবকিছু চিনে নেই।

জানো, আজ সকালে চা বানাতে গিয়ে দেখলাম
চিনি শেষ,
ভাবলাম ঠিক আছে,
মিষ্টি না থাকলেও চা হয়।

রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ
তোমার মতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি

লিখেছেন মুনতাসির, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৯

অনেকেই বলেন, ৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি। এই কথাটার সূত্র ধরেই এগোনো যায়। ৫ আগস্টের পর আমাদের কোন কোন পরিবর্তন এসেছে, সেটাই আগে দেখা দরকার। হিসাব করে দেখলাম, বলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে উড়ে গেল মাদ্রাসার দেয়াল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৯



ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছেন।

বিস্ফোরণে মাদ্রাসার একতলা ভবনের পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষের দেয়াল উড়ে গেছে। ঘটনাস্থলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তেল আর জল কখনো এক হয় না......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩৫



জুলাই ছিলো সাধারণ মানুষের আন্দোলন, কোন লিডার আমারে ডাইকা ২৪'এর আন্দোলনে নেয় নাই। কোন নেতার ডাকে আমি রাস্তায় যাই নাই। অথচ আন্দোলনের পর শুনি আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড নাকি মাহফুজ। জুলাই বিপ্লবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×