somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিভাবকদের চৈতন্য হবে কি?

১৯ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বছরখানেক আগের কথা। রাস্তায় চলাফেরার সময় বিভিন্ন স্কুল-কলেজমুখী শিক্ষার্থীর দিকে নিজের অলক্ষ্যে চোখ পড়তেই দেখতাম ছাত্রীদের মুখে বিশেষ কিছু অক্ষর সংবলিত একই রং ও নকশার মাস্ক পরা। শুরুতে সেভাবে দৃষ্টিগোচর না হলেও বারবার চোখে পড়ায় সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই হয়। প্রত্যেকের মাস্কের রং কালো ও বামপাশে সাদা রঙে ইংরেজি হরফে লেখা ‘BTS, আর তার ঠিক ওপরেই একটি লোগো আঁকা। একদিন আমি কৌতূহলবশত তাদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা খিলখিল করে হাসতে শুরু করে, যেন এ বিষয়ে জ্ঞান না রেখে আমি মস্ত বড় অপরাধ করে ফেলেছি। পরক্ষণে আমি এর অর্থ উদ্ধারের জন্য গুগলে অনুসন্ধান করে জানতে পারি, ‘বিটিএস’ হলো সাত সদস্যের দক্ষিণ কোরিয়ান বয় ব্যান্ড, যারা মূলত গানবাজনা করে। আর ছাত্রীরা এই মিউজিক ব্যান্ডেরই ‘ডাই-হার্ড ফ্যান’। বিটিএস ভক্তদের বলা হয় ‘বিটিএস আর্মি’।

সময়ের পরিক্রমায় একটু একটু করে আমার অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারী হয়েছে এবং বিটিএস ভক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে জ্যামিতিক হারে। এখন রাস্তাঘাট, বাজার কিংবা স্কুল-কলেজ সর্বত্র এই বিটিএস ভক্তদের ছড়াছড়ি। বিশেষত স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের মুখে পরিহিত মাস্ক দেখলেই বলে দেওয়া যায় এরা বিটিএস সদস্যদের আশেকান। ক্লাসের ফাঁকে, দলবেঁধে স্কুল-কলেজে আসা-যাওয়ার সময় কিংবা বাসায় পড়ার টেবিলে-সবখানেই এদের আলোচনা কেন্দ্রীভূত হয় ‘বিটিএস’কে ঘিরে। এই কোমলমতি মেয়েদের যখন পড়ার টেবিল আর বাড়ির আঙিনা হইচই করে মাতিয়ে রাখার কথা, তখন তারা মোবাইল ফোনের স্ক্রিন দেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিচ্ছে অনায়াসে। বিটিএস গায়কদের অদ্ভুত চেহারা আর পপ গানের প্রেমে পড়ে এই প্রজন্মের মেয়েরা এখন নানা রঙের স্বপ্নে বিভোর। বিটিএস সদস্যদের একান্ত আপন করে পাওয়ার তীব্র বাসনায় কেউ কেউ হাতে ট্যাটু আঁকছে, আবার কেউ কেউ অশোভন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে ভিডিও বানিয়ে সেই ভিডিও টিকটক, লাইকি, ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে নিজেদের ভালোবাসার জানান দিচ্ছে।

সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ ‘টিকটক’ ও ভিডিও শেয়ারিং সাইট ‘লাইকি’ এ ক্ষেত্রে নতুন হাওয়া লাগিয়েছে। উঠতি বয়সি ছেলেমেয়েদের মাঝে টিকটক ও লাইকি ভিডিও বানানোর উন্মাদনা বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। রাতারাতি ভাইরাল হওয়া কিংবা সেলিব্রিটি বনে যাওয়ার নেশায় তারা বিকৃত ও অশ্লীল সব অঙ্গভঙ্গি করে গান-সংলাপের সঙ্গে ঠোঁট মেলাচ্ছে, অদ্ভুত সব নাচ, পোশাক ও হেয়ার স্টাইল প্রদর্শন করে ভিডিও বানাচ্ছে। এসব করতে গিয়ে তারা হরহামেশাই নানা অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং ‘কিশোর গ্যাং’-এ জড়িয়ে পড়ছে। আধিপত্য বিস্তার, ইভটিজিং, মাদক গ্রহণ, চাঁদাবাজি ও চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটাচ্ছে এই ‘কিশোর গ্যাং’ সংস্কৃতি। বিকালবেলা খেলাধুলা শেষ করেই সন্ধ্যা হলেই বাসায় গিয়ে পড়ার টেবিলে বসার কথা ছিল শিশু-কিশোরদের। অথচ এই সময়ে বাজারের মোড়, চা-বিড়ির দোকান ও পাড়ার অলিগলিতে তাদের আনাগোনা ক্রমশ বাড়তে থাকে, মধ্যরাত অবধি চলতে থাকা তাদের আড্ডার কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে, ভেঙে পড়ছে সামাজিক শৃঙ্খলা।

করোনাভাইরাসের চেয়ে বেশি সংক্রামক এই বিটিএসভক্ত ও টিকটক ব্যবহারকারী কিশোর-কিশোরীরা। করোনা একজন একজন করে আক্রান্ত করলেও তা ভয়ানকভাবে সংক্রমণ করছে পুরো প্রজন্মকে। একজন মনোযোগী শিক্ষার্থী যখন তাদের সংস্পর্শে আসছে, সেও তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রিডিং রুম থেকে ক্রমান্বয়ে দূরে সরে যাচ্ছে, আসক্ত হচ্ছে মোবাইল ফোনে। তাদের চিন্তাজগতের সংকীর্ণতা ও মানসিক দৈন্য আগামীর স্বনির্ভর বাংলাদেশ নির্মাণের পথে অন্তরায় ও প্রধান বাধা। শিশু-কিশোরদের হাতে হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়াকেই তাদের এই পদস্খলন, দৈন্যদশাও বিগড়ে যাওয়ার প্রধান এবং একমাত্র কারণ বলা যেতে পারে। ছেলেমেয়েদের একটু আবদারেই বাবা-মা তাদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছে। ফলস্বরূপ নিজের সন্তানরা যে পথচ্যুত হচ্ছে, এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে বিন্দুমাত্র হাপিত্যেশ নেই। নিজ হাতে সন্তানদের ভবিষ্যৎ ও অপার সম্ভাবনাকে গলা টিপে হত্যা করে একটি জাতিকে পঙ্গু করার দায়ভার আমাদের এই অভিভাবকরা এড়াতে পারবে কি? ঔদাসীন্য মনোভাব ও নীরবতা ভেঙে অভিভাবকদের আদৌ চৈতন্য হবে কি? কিংবা এহেন সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য দেশের নীতিনির্ধারকরা কোনো উপায় বাতলে দেবেন কি?


লেখক:
জিসান আহমেদ,
শিক্ষক ও সমাজকর্মী,
মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর।

লেখা: অক্টোবর ০৭, ২০২২ খ্রি.
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:২০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×